অতি চিকন করে বানানো আটার ফালি। তাতে মেশানো হয় দুধ ও চিনি। এরপর চলে রান্না; এর ওপর বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে পরিবেশন করা হয়। ঈদুল ফিতরের অবিচ্ছেদ্য এই মিষ্টান্নের নাম সেমাই। ঈদের দিন অতিথি আপ্যায়নে যার কদর যুগ যুগ ধরে।

একসময় হাতে তৈরি সেমাইয়ের কদর ছিল ঘরে ঘরে। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট কারখানায় উৎপাদন করা হতো খোলা সেমাই। এখন সময়ের বিবর্তনে বাজার দখল করে নিয়েছে প্যাকেটজাত সেমাই। ঈদের বাজারে কমবেশি সব পণ্যের দাম বাড়লেও প্যাকেটজাত সেমাইয়ের দাম বাড়েনি। গত বছরে মতো একই দামে বিক্রি হচ্ছে এসব সেমাই।

বিক্রেতারা বলছেন, এবারও সেমাইয়ের চাহিদা কম। ফলে বাজারে দামের তেমন পার্থক্য নেই। লাচ্ছা ও চিকন—দুই ধরনের সেমাই এখন বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে খোলা ও মোড়কজাত দুভাবেই বিক্রি হয় সেমাই। চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে জানা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

২০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত চিকন সেমাইও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। ব্র্যান্ডভেদে ঘি ও কিশমিশযুক্ত প্যাকেটজাত সেমাই পাওয়া যাচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। গত এক বছরে এসব সেমাইয়ের দাম বাড়েনি বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।  বরং এ বছর প্যাকেটভেদে দাম কমেছে ৫ টাকা পর্যন্ত।

কমেছে খোলা সেমাইয়ের কদর

গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেমাইয়ের বাজার এখন জমে ওঠেনি। ঈদের আগে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার বাজার করবেন ভোক্তারা। এই দুই দিনে বেচাকেনা বাড়তে পারে। সারা বছর সেমাই বেচাকেনা হয় না তেমন। বছরে মোট বেচাকেনার ৯০ শতাংশই বিক্রি হয় ঈদের সময়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে বর্তমানে প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাইয়ের চাহিদাই বেশি। চালের গুঁড়া ও ময়দার তৈরি চিকন সেমাইয়ের চাহিদা কম। সব মিলিয়ে সেমাইয়ের চাহিদা অন্যান্য বছরের চেয়ে কম। মানুষ এখন বাংলা সেমাই বা চিকন সেমাই তেমন কেনেন না। তবু পুরোনো ব্যবসায়ীরা দোকানে এসব সেমাই রাখেন ঈদ ঘিরে। গত বছর খোলা চিকন সেমাই প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকার আশপাশে ছিল। এ বছরও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে চিকন সেমাই।

লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকার আশপাশে। তবে দামি লাচ্ছা সেমাইও রয়েছে।  চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন বাজার ও সুপারশপ ঘুরে জানা যায়, বিভিন্ন ব্যান্ডের ঘি ও কিশমিশযুক্ত সেমাই বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ওয়েলফুড, কুপারস প্রভৃতি। এসব সেমাই পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ ও ৪০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটেও। সে ক্ষেত্রে প্রতি প্যাকেটের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

এদিকে বড় বড় কোম্পানি সেমাইয়ের বাজারে আসার পর ছোট ছোট কোম্পানির সংখ্যা কমছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, বনফুল, কিষোয়ানসহ অনেক শিল্পগোষ্ঠী বর্তমানে সেমাই বাজারজাত করছে। চট্টগ্রাম নগরে চাক্তাই এলাকায় একসময় ৩৫টির বেশি সেমাই উৎপাদনকারী কারখানা ছিল। এখন সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫-২০টিতে।

বহদ্দারহাট বাজারে মুদিদোকানি নাজিম হোসেন বলেন, একসময় সেমাই ছাড়া ঈদ চিন্তা করা যেত না। বনেদি পরিবারগুলো কয়েক কেজি সেমাই নিয়ে যেত। এখান অন্যান্য খাবারের চাহিদা বেড়েছে। স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ায় মিষ্টান্ন খাওয়া কমিয়েছে মানুষ। তাই সেমাইয়ের কদরও কমেছে।

বাদাম-কিশমিশের হালচাল

ঈদ ঘিরে সেমাইয়ের দাম কমলেও সেমাই তৈরির উপকরণের দাম বেড়েছে বাজারে। গত বছরের তুলনায় চিনাবাদাম, কাজুবাদাম ও কাঠবাদামের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে প্রায় ৩০০ টাকা কমেছে পেস্তাবাদামের দাম। তবে দামে পরিবর্তন হয়নি কিশমিশের।

চট্টগ্রাম নগরের খুচরা বাজারগুলোতে বাদাম ও কিশমিশের সরবরাহ হয় ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ থেকে। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগে প্রতি কেজি চিনাবাদামের দাম ছিল ১২০ টাকা। বর্তমানে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকা দরে। এ ছাড়া কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এক মাস আগে দাম ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকার আশপাশে।

ভালো মানের পেস্তাবাদাম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৫০ টাকা কেজি দরে। গত বছরের তুলনায় দাম কমেছে ৩০০ টাকা। অন্যদিকে কাঠবাদাম বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে। প্রতি কেজি কিশমিশ বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকার আশপাশে। এক মাস আগেও দাম প্রায় একই ছিল।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদ ঘিরে বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বিক্রেতা মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রোজার ১৫ দিন আগে বাদাম-কিশমিশের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে বাজারে এখন তেমন বেচাকেনা নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ক র আশপ শ এসব স ম ই গত বছর

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদের সেমাই, বাদাম ও কিশমিশের দাম যেমন

অতি চিকন করে বানানো আটার ফালি। তাতে মেশানো হয় দুধ ও চিনি। এরপর চলে রান্না; এর ওপর বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে পরিবেশন করা হয়। ঈদুল ফিতরের অবিচ্ছেদ্য এই মিষ্টান্নের নাম সেমাই। ঈদের দিন অতিথি আপ্যায়নে যার কদর যুগ যুগ ধরে।

একসময় হাতে তৈরি সেমাইয়ের কদর ছিল ঘরে ঘরে। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট কারখানায় উৎপাদন করা হতো খোলা সেমাই। এখন সময়ের বিবর্তনে বাজার দখল করে নিয়েছে প্যাকেটজাত সেমাই। ঈদের বাজারে কমবেশি সব পণ্যের দাম বাড়লেও প্যাকেটজাত সেমাইয়ের দাম বাড়েনি। গত বছরে মতো একই দামে বিক্রি হচ্ছে এসব সেমাই।

বিক্রেতারা বলছেন, এবারও সেমাইয়ের চাহিদা কম। ফলে বাজারে দামের তেমন পার্থক্য নেই। লাচ্ছা ও চিকন—দুই ধরনের সেমাই এখন বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে খোলা ও মোড়কজাত দুভাবেই বিক্রি হয় সেমাই। চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে জানা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

২০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত চিকন সেমাইও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। ব্র্যান্ডভেদে ঘি ও কিশমিশযুক্ত প্যাকেটজাত সেমাই পাওয়া যাচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। গত এক বছরে এসব সেমাইয়ের দাম বাড়েনি বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।  বরং এ বছর প্যাকেটভেদে দাম কমেছে ৫ টাকা পর্যন্ত।

কমেছে খোলা সেমাইয়ের কদর

গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেমাইয়ের বাজার এখন জমে ওঠেনি। ঈদের আগে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার বাজার করবেন ভোক্তারা। এই দুই দিনে বেচাকেনা বাড়তে পারে। সারা বছর সেমাই বেচাকেনা হয় না তেমন। বছরে মোট বেচাকেনার ৯০ শতাংশই বিক্রি হয় ঈদের সময়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে বর্তমানে প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাইয়ের চাহিদাই বেশি। চালের গুঁড়া ও ময়দার তৈরি চিকন সেমাইয়ের চাহিদা কম। সব মিলিয়ে সেমাইয়ের চাহিদা অন্যান্য বছরের চেয়ে কম। মানুষ এখন বাংলা সেমাই বা চিকন সেমাই তেমন কেনেন না। তবু পুরোনো ব্যবসায়ীরা দোকানে এসব সেমাই রাখেন ঈদ ঘিরে। গত বছর খোলা চিকন সেমাই প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকার আশপাশে ছিল। এ বছরও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে চিকন সেমাই।

লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকার আশপাশে। তবে দামি লাচ্ছা সেমাইও রয়েছে।  চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন বাজার ও সুপারশপ ঘুরে জানা যায়, বিভিন্ন ব্যান্ডের ঘি ও কিশমিশযুক্ত সেমাই বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ওয়েলফুড, কুপারস প্রভৃতি। এসব সেমাই পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ ও ৪০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটেও। সে ক্ষেত্রে প্রতি প্যাকেটের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

এদিকে বড় বড় কোম্পানি সেমাইয়ের বাজারে আসার পর ছোট ছোট কোম্পানির সংখ্যা কমছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, বনফুল, কিষোয়ানসহ অনেক শিল্পগোষ্ঠী বর্তমানে সেমাই বাজারজাত করছে। চট্টগ্রাম নগরে চাক্তাই এলাকায় একসময় ৩৫টির বেশি সেমাই উৎপাদনকারী কারখানা ছিল। এখন সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫-২০টিতে।

বহদ্দারহাট বাজারে মুদিদোকানি নাজিম হোসেন বলেন, একসময় সেমাই ছাড়া ঈদ চিন্তা করা যেত না। বনেদি পরিবারগুলো কয়েক কেজি সেমাই নিয়ে যেত। এখান অন্যান্য খাবারের চাহিদা বেড়েছে। স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ায় মিষ্টান্ন খাওয়া কমিয়েছে মানুষ। তাই সেমাইয়ের কদরও কমেছে।

বাদাম-কিশমিশের হালচাল

ঈদ ঘিরে সেমাইয়ের দাম কমলেও সেমাই তৈরির উপকরণের দাম বেড়েছে বাজারে। গত বছরের তুলনায় চিনাবাদাম, কাজুবাদাম ও কাঠবাদামের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে প্রায় ৩০০ টাকা কমেছে পেস্তাবাদামের দাম। তবে দামে পরিবর্তন হয়নি কিশমিশের।

চট্টগ্রাম নগরের খুচরা বাজারগুলোতে বাদাম ও কিশমিশের সরবরাহ হয় ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ থেকে। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগে প্রতি কেজি চিনাবাদামের দাম ছিল ১২০ টাকা। বর্তমানে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকা দরে। এ ছাড়া কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এক মাস আগে দাম ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকার আশপাশে।

ভালো মানের পেস্তাবাদাম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৫০ টাকা কেজি দরে। গত বছরের তুলনায় দাম কমেছে ৩০০ টাকা। অন্যদিকে কাঠবাদাম বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে। প্রতি কেজি কিশমিশ বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকার আশপাশে। এক মাস আগেও দাম প্রায় একই ছিল।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদ ঘিরে বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বিক্রেতা মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রোজার ১৫ দিন আগে বাদাম-কিশমিশের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে বাজারে এখন তেমন বেচাকেনা নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ