সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের যে সুপারিশ করেছে, তাতে আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে দলটি। এর পাশাপাশি বহুত্ববাদের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করার ওপর জোর দিয়েছে তারা।

সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ পাঁচটি কমিশনের সুপারিশের ওপর এনসিপির দলীয় মতামত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিতে একমত ও ২৯টিতে আংশিক একমত হয়েছে তরুণদের দলটি।

একই দিনে বিএনপিও ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত জমা দিয়েছে। বিএনপির মতামতের সঙ্গে এনসিপির মতামতের বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য দেখা গেছে। যেমন বিএনপি সংবিধানের মূলনীতির বদল চায় না কিন্তু এনসিপি চায়। বিএনপি সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর বহাল রাখার পক্ষে আর এনসিপি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী চার বছর করার পক্ষে। এ ছাড়া একই ব্যক্তির রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা না হওয়ার সুপারিশে বিএনপি ভিন্নমত জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে এনসিপির মত আলাদা।

সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশের সঙ্গেই আমরা একমত হয়েছি। বিএনপির মতামতের সঙ্গে আমাদের বড় পার্থক্য হচ্ছে, বিএনপি মনে করছে, নির্বাচিত সংসদের কাছে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের এখতিয়ার থাকে। কিন্তু আমরা মনে করি, সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচিত গণপরিষদই সব দিক থেকে যৌক্তিক পদ্ধতি।এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক ও দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার

এনসিপি তাদের মতামতে মিশ্র নির্বাচনপদ্ধতির কথা বলেছে। নিম্নকক্ষ বা সংসদে বিদ্যমান আসনভিত্তিক পদ্ধতি এবং উচ্চকক্ষ তথা জাতীয় পরিষদে আনুপাতিক ভিত্তিতে আসনের কথা বলেছে দলটি। যেমন কোনো দল জাতীয় পর্যায়ে ৩৫ শতাংশ ভোট পেলে উচ্চকক্ষে ৩৫টি আসন পাবে। ভোটাররা একবারই ভোট দেবেন।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব নির্বাচন সরাসরি নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠান এবং একজন প্রধান স্থানীয় সরকার কমিশনার ও চারজন কমিশনার নিয়ে স্থানীয় সরকার কমিশন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই দুটি বিষয় বাদে বাকি সব বিধান হয় গণপরিষদ নির্বাচন অথবা গণপরিষদ কাম সংসদ তথা নির্বাচিত গণপরিষদের (যা সংবিধান প্রণয়ন শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনসভায় রূপ নেবে) মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছে এনসিপি।

জানতে চাইলে এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক ও দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশের সঙ্গেই আমরা একমত হয়েছি। বিএনপির মতামতের সঙ্গে আমাদের বড় পার্থক্য হচ্ছে, বিএনপি মনে করছে, নির্বাচিত সংসদের কাছে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের এখতিয়ার থাকে। কিন্তু আমরা মনে করি, সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচিত গণপরিষদই সব দিক থেকে যৌক্তিক পদ্ধতি।’

সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ–সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এর সঙ্গেও এনসিপি একমত।যেসব সুপারিশে একমত

ঐকমত্য কমিশনে জমা দেওয়া মতামতে সংসদের মেয়াদ চার বছর করার সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে এনসিপি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে এনসিপি একমত। ওই সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী, বহুজাতি, বহুধর্মী, বহুভাষী ও বহুসংস্কৃতির দেশ, যেখানে সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে।’ এনসিপি এর সঙ্গে সহমত জানিয়ে এভাবে লেখার প্রস্তাব দিয়েছে, ‘বহুত্ববাদের অর্থ হবে বহুজাতি, বহুধর্মী, বহুভাষী ও বহুসংস্কৃতির দেশ।’ অর্থাৎ তারা বহুত্ববাদের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করার ওপর জোর দিচ্ছে।

সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ–সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এর সঙ্গেও এনসিপি একমত।

কমিশন সুপারিশ করেছে, সংসদের নিম্নকক্ষে একজন সংসদ সদস্য একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও রাজনৈতিক দলের প্রধান—এগুলোর যেকোনো একটির বেশি পদে অধিষ্ঠিত হবেন না। এ বিষয়ে এনসিপির মত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারেন; তবে এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের প্রধান নন, মন্ত্রিদের মধ্যে ‘ফার্স্ট অ্যামং দ্য ইকুয়ালস’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি নামে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। সুপারিশ অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শপথ না নেওয়া পর্যন্ত এনসিসি সদস্যরা বহাল থাকবেন। এই দুই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের জন্য এনসিসির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠানোর সুপারিশের বিষয়ে এনসিপি একটি মন্তব্য যুক্ত করেছে। তারা বলেছে, এনসিসির সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে এসব নিয়োগ দিতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়ে এনসিপি মন্তব্য করেছে, এনসিসি নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। রাষ্ট্রপতি ও আগের সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এনসিসির অন্য সদস্যদের থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা যেতে পারে। এই সরকারের মেয়াদ ৭০ থেকে ৭৫ দিন হওয়া যথেষ্ট। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা সমন্বয় কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে এনসিপি।

এনসিপি তরুণ-তরুণী বিবেচিত হওয়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ করার কথা বলেছে। আর প্রার্থিতার ন্যূনতম বয়স ২৩ এবং ভোটাধিকারের বয়স ১৬ বছর করার পক্ষে মত দিয়েছে।দ্বিমত যেসব প্রস্তাবে

সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ ও ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলো ব্যবহারের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। তবে এনসিপি ‘প্রজাতন্ত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ বহাল রাখার পক্ষে।

কমিশনের প্রস্তাব, রাজনৈতিক দলগুলো সংসদের নিম্নকক্ষের মোট আসনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ আসনে তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে প্রার্থী মনোনীত করবে এবং সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বয়স কমে হবে ২১ বছর।

এনসিপি তরুণ-তরুণী বিবেচিত হওয়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ করার কথা বলেছে। আর প্রার্থিতার ন্যূনতম বয়স ২৩ এবং ভোটাধিকারের বয়স ১৬ বছর করার পক্ষে মত দিয়েছে।

এনসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার কথা বলেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এটি সম্ভব না হলে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ বা রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়া এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারকদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। এই সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে এনসিপি বলেছে, সে ক্ষেত্রে এনসিসি নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে পারে।

আছে সম্পূরক প্রস্তাবও

সংস্কার কমিশন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। তদন্ত ও অনুসন্ধানের জন্য অভিযোগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠানোর ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধানের পাশাপাশি এনসিসির থাকবে। এর সঙ্গে একমত হয়ে এনসিপি বলেছে, এনসিসির বিরুদ্ধেও প্রয়োজন অনুযায়ী তদন্ত ও অনুসন্ধান করতে পারবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, কেবল এনসিসির সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। তবে জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকদের কোনো অধিকার রদ বা স্থগিত করা ও আদালতে যাওয়ার অধিকার বন্ধ বা স্থগিত করা যাবে না। এই সুপারিশের সঙ্গে আংশিক একমত হয়ে এনসিপি বলেছে, সংসদ চলাকালে উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না।

সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, বিশেষ কার্যাবলি কিংবা সংবিধানে উল্লেখিত বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করবেন। এনসিপির মতামত হচ্ছে, রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এই পরামর্শ হবে নন-বাইন্ডিং (বাধ্যতামূলক নয়)। এনসিপির বক্তব্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান একই ব্যক্তি হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারবেন, যদি প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার ‘ফার্স্ট অ্যামং দ্য ইকুয়ালস’ হন।

অর্থবিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যদের তাঁদের মনোনয়নকারী দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে বলে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এনসিপি অর্থবিলের পাশাপাশি দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ থাকা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ছ প র মত মত র সরক র র প র ষ ট রপত এনস প র ম ন ম নকক ষ বছর কর র মত দ য় ছ প রস ত ব র এনস প হওয় র স এনস স র মন ত র অন য য় সদস য ব এনপ অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

কতগুলো বিষয়ে একমত, তা এখনই বলতে পারব না: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার দিনভর বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, মৌলিক অধিকারসমূহ, আইন বিভাগের সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের কথা হয়েছে। বৈঠক শেষে বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে তাঁরা একমত হয়েছেন, তবে সেগুলো এখন সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন না।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিএনপির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এই দলে সালাহউদ্দিন আহমদ ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সচিব নিরুজ্জামান খান অংশ নেন। দুপুরে মধ্যাহ্নবিরতি দিয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এদিনের মতো আলোচনা শেষ হয়।

এরপর জাতীয় সংসদের এলডি হলে আলোচনা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম সংবিধান সংস্কার বিষয়ে এবং এর পরবর্তী সময়ে কিছুক্ষণ আগে আমরা বিচার বিভাগ নিয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো বিস্তারিত দফাওয়ারি আমরা আলোচনা করে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে এখন আমি স্পেসিফিক আপনাদের বলতে পারব না, আমরা কতটা একমত।’

সংবিধান সংস্কার নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, ফান্ডামেন্টাল রাইটস এগুলোর ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি এবং কিছু কিছু বিষয়ে আমরা আমাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছি, ওনারাও আমাদের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।’

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে বিএনপি পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চায় বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ওইখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। ওইখানে গণতন্ত্র ,জাতীয়তাবাদসহ সবকিছু আছে রাষ্ট্র ও সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে। দুইটা দুই জিনিস। আমরা বহুত্ববাদের পক্ষে নই, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নই। আমরা বহুত্ববাদের বিরোধিতা করেছি। তবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা আছে, সেই সমস্ত বিষয়ে ওনারা প্রস্তাবনায় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এখানে প্রস্তাব করেছেন। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত তবে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা আপনাদেরকে পরে জানাব।’

বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির দলীয় ফোরামেও আলোচনা হবে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আমাদের মতামত জানিয়েছি, ওনারাও ওনাদের মতামত জানিয়েছেন, কতটুকু গ্রহণ করবেন, সেটা পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে। ৭০ অনুচ্ছেদের অর্থবিল ছাড়া বাকি সব যদি হয়, তাহলে সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বাধা আসতে পারে। সে জন্য আমরা বলেছি, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থা ভোট এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিধানসংশ্লিষ্ট বিষয় বাদে সংসদ সদস্যরা বাকি সব বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।’

সব বিষয়ে গণভোটের প্রয়োজন নেই বলে মনে করে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে গণভোট হতে পারে। এরপরও ভবিষ্যতে সংসদ যদি কোনো বিষয়ে গণভোট আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা মনে করে, তাহলে তারা সেটা চিন্তা করতে পারে। ঢালাওভাবে গণভোট হওয়া অনুচিত হবে। এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবগুলোর ওপর যে মতামত দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তাঁরা বলেছেন, এই ধারণার সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। কারণ, বাংলাদেশে কখনো এনসিসির প্রয়োগ ছিল না। এখন প্রবর্তন করা হলে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সংসদের ইতিহাসে এটা নতুন হবে।

এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে এমন কোনো ব্যবস্থা হলে সেটা অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগ ও আইন সভাকে দুর্বল করে দিচ্ছে কি না, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, যখন সংসদ থাকবে না অথবা ভেঙে যায়, সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে সেই কমিশন খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্য কিছু করে কি না, এগুলো আমরা চিন্তাভাবনা করেছি। তারপরও আমরা বলেছি, বিষয়টা পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে বিস্তর আলোচনার মধ্য দিয়ে গ্রহণ করা হবে কি হবে না, সেটা তখন দেখা যাবে। এখন আমরা নীতিগতভাবে একমত নই।’

আগে দ্বিমত ছিল, এখন একমত হয়েছেন, এমন কিছু আছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অনেক বিষয় আছে। এগুলো কম্পাইল (একসঙ্গে করে) করে আমরা জানাব।’

যেসব বিষয়ে একমত হয়েছেন, তার বাস্তবায়নটা কীভাবে হবে—এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজটা কী? সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো একত্র করে ওনারা রিপোর্ট তৈরি করবে। হয়তো যারা যারা একমত হয়েছে, সেই পক্ষগুলোকে স্বাক্ষর হয়তো করতে বলবে। এটাকে ওনারা জুলাই চার্টার বলবে কি না, এটা ওনাদের বিষয়।’

আগামী রোববার বেলা ১১টা থেকে একই স্থানে কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আবার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আনুপাতিক উচ্চকক্ষ, এনসিসি ও গণভোটে রাজি নয় বিএনপি
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকের পর ইরান বলল, ‘ভালো বোঝাপড়া’ হয়েছে
  • ভিন্নমতের জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে আলী রীয়াজ
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার চেষ্টায় বিএনপি, লক্ষ্য ডিসেম্বরে নির্বাচন
  • বিএনপি-ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ঐকমত্য কম
  • কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে হবে: সালাউদ্দিন
  • কতগুলো বিষয়ে একমত, তা এখনই বলতে পারব না: সালাহউদ্দিন আহমদ