ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনের ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত। এই রায়ের কপি পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে আদালত থেকে ঘোষণা করা হয়েছে এ বিষয়ে আপনাদের করণীয় কি-সাংবাদকদের প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, “আদালতের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আইন-বিধি অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। রায়ের কপি পাওয়ার পরে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।”

আরো পড়ুন:

‘বিএনপিতে সংস্কারপস্থিদের স্থান হবে না’ 

দলীয় সিদ্ধান্ত পেলে মেয়র পদে শপথ: ইশরাক

তিনি বলেন, “রায়ের কপি পাওয়ার পর দেরি বা বিলম্ব করার কোনো অবকাশ নেই। সিদ্ধান্ত যেটাই হোক না কেন আমরা দ্রুত গতিতে করি। যত দ্রুত সিদ্ধান্তগুলো দিতে পারব, ফাইলগুলো ক্লিয়ার করতে পারব আমাদেরও কাজের চাপ কমে, আমরা স্বস্তি পাই। রায়ের কপি পাওয়ার পরে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

এর আগে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল বাতিল করে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করে রায় দেন আদালত।

নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো.

নুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের আদেশে নৌকা প্রতীক নিয়ে ডিএসসিসির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র হিসেবে সরকারের গেজেট বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন। রায় ঘোষণার সময় ইশরাক হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে ডিএসসিসি নির্বাচন ও ফলাফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেছিলেন ইশরাক হোসেন।

এ মামলায় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়।

ইশরাক হোসেনের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, “অনিয়ম, দুর্নীতি ও অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে আমরা নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা করেছিলাম। একইসঙ্গে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণার আবেদন করি। আদালত আজ আমাদের পক্ষে রায় দিলেন।”

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর থেকে তারা শপথগ্রহণ করে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

নির্বাচনি আইনানুযায়ী, ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তিকে আবেদন করতে হয়। মামলার পর পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবেন ট্রাইব্যুনাল। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি রায়ে খুশি না হলে ৩০ দিনের মধ্যে তিনি নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন। নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনাল ১২০ দিনের মধ্যে আপিলটি নিষ্পত্তি করবেন।

ইশরাক হোসেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।

ঢাকা/হাসান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ড এনস স ইশর ক হ স ন ব যবস থ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

পড়েন এক কলেজে, অন্য কলেজে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

নোয়াখালীর সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ। এই কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মুরাদ হোসেন ওরফে রাব্বি। তিনি কলেজটিরই ছাত্র নন। মুরাদ হোসেন নোয়াখালী সরকারি কলেজে স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন।

গত ২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এই কলেজ শাখার কমিটি ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করা হয়। ওই কলেজের ছাত্র না হওয়ার পরও মুরাদ হোসেনকে কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করায় নেতা–কর্মীদের একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে কলেজটির ছাত্র না হলেও এইচএসসিতে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজে পড়েছেন মুরাদ হোসেন। ২০২০ সালে তিনি কলেজটি থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষে নোয়াখালী সরকারি কলেজের বিবিএস (স্নাতক) প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। তাঁর রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর যাচাই করে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ শাখা ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, কলেজ শাখার কমিটিতে পদ পেতে হলে ওই কলেজের শিক্ষার্থী হতে হবে, এটি অনেকটা অলিখিত সাংগঠনিক নিয়ম ও ঐতিহ্য হিসেবে পালন হয়ে আসছে। কিন্তু ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। এই কলেজের শিক্ষার্থী বাদ দিয়ে অন্য কলেজের শিক্ষার্থীকে সাধারণ সম্পাদক করা দুঃখজনক।

জানতে চাইলে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতি করে আসছেন। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ কমিটিতে আমার নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু কমিটির অনুমোদন হতে দেরি হয়েছে।’

বর্তমানে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের কোনো কমিটি নেই। তবে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান মো. নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক কলেজের ছাত্র আরেক কলেজ কমিটির নেতা হতে পারবেন না, এমন কথা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ নেই। তা ছাড়া মুরাদ হোসেন এর আগে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।’ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি বিষয়টি দেখছেন, পরে এ বিষয়ে জানাবেন।’ তবে পরে আর তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের চর্চা অতীতে হয়নি। তবে ভুলক্রমে যদি এটি হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে এটিকে বিতর্ক তৈরির সুযোগ না দিয়ে শুদ্ধ করা উচিত। তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ওই ছাত্রনেতা এরই মধ্যে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে তাঁর ছাত্রত্ব স্থানান্তরের আবেদন করেছেন। কিন্তু দাপ্তরিক কারণে সেটি বিলম্ব হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যাদের নির্বাচন থেকে বাদ দেবেন, তারা কী ঘরে বসে আঙুল চুষবে
  • তথ্য গোপন করে পদ নেওয়া নোয়াখালীর সেই ছাত্রদল নেতাকে অব্যাহতি
  • পড়েন এক কলেজে, অন্য কলেজে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক