ঈদে মাংস খেতে একটু একটু করে টাকা জমান ‘মাংস সমিতিতে’
Published: 28th, March 2025 GMT
ব্যাটারিচালিত তিন চাকার রিকশাভ্যান চালান বাবলু মিয়া (৪৮)। এই আয়ে কোনোরকমে চলে তাঁর চার সদস্যের সংসার। বছরে দুই বা তিন দিন গরুর মাংস খাওয়ার সুযোগ মেলে, তা–ও ঈদের সময়টায়। একবারে কিনতে গেলে আর্থিক চাপ পড়ে, এ কারণে তাঁরা গ্রামের বাসিন্দারা মিলে ‘মাংস সমিতি’ করেছেন।
প্রতি সপ্তাহে বাবলু মিয়া এই সমিতিতে ১০০ টাকা করে জমা রাখেন। জমা করা এই অর্থ দিয়ে গরু কেনেন সমিতির সবাই। এরপর গরু জবাই করে সবাই মিলে মাংস ভাগ করে নেন। গ্রামে বা পাড়ামহল্লায় এই সমিতি ‘মাংস সমিতি’ নামে পরিচিত।
বাবলু মিয়ার বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দীঘি দক্ষিণপাড়া গ্রামে। এ গ্রামের ২৫ থেকে ৩০ জন মিলে এই মাংস সমিতি করেন। ঈদের আগে গরু কিনে মাংস ভাগাভাগি করে নেন।
বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমরা দিন আনি, দিন খাই। ভ্যান চালাইয়্যা যা রোজগার হয়, তা দিয়্যা টেনেটুনে সংসার চলে। ঈদের আগে বউ-পোলাপানের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে হয়। ঈদে আরও বাজারসদাই আছে। সব মিল্যা ঈদের আগে বেশি ট্যাহা খরচ হয়। তার ওপর মাংসের জন্য চাপ বেশি পড়ে। এ কারণে মাংস সমিতিতে নাম লিখাইছিলাম। এবার সমিতির সবাই মিল্যা গরু কিনা জবাই করছি। ভাগে সাড়ে ৭ কেজি করে মাংস পাইছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবলু মিয়ার মতো মানিকগঞ্জে বিভিন্ন এলাকার দিনমজুর, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ বছরজুড়ে মাংস সমিতিতে চাঁদা দেন। সাপ্তাহিক অথবা মাসিক হিসেবে তাঁরা এই সমিতিতে টাকা দিয়ে থাকেন। জমা দেওয়া এই টাকা দিয়ে তাঁরা ঈদের আগে গরু কিনে মাংস ভাগাভাগি করে নেন।
সদর উপজেলার দীঘি, দীঘি দক্ষিণপাড়া, নতুন বসতি, কয়ড়া, ছুটি ভাটবাউর, ভাটবাউর, ডাউটিয়া, মুলজান ও বাগজান গ্রামে মাংস সমিতি আছে। কয়েক গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় মাংস সমিতি গঠন করা হয় থাকে। দেড় থেকে দুই যুগ ধরে চলছে এই উদ্যোগ। সাধারণত ২০ রমজান থেকে গরু কিনে মাংস ভাগাভাগি করে নেন সমিতির অনেকে। আবার কোনো কোনো সমিতির সদস্যরা ঈদের আগের দিনও গরু কিনে মাংস ভাগ করেন। এতে ঈদে পরিবারগুলোর আর্থিক চাপ কমে, পাশাপাশি বাড়তি আনন্দ করতে পারে।
সদর উপজেলার ছুটি ভাটবাউর গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, তাঁদের সমিতির সদস্যরা সারা বছর টাকা জমা রাখেন। গত রোববার সমিতির সদস্যরা সবাই মিলে গরু কিনে মাংস ভাগ নিয়েছেন। প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা দরে সাড়ে ৭ কেজি মাংস পেয়েছেন। তিনি বলেন, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাস ৭৫০ টাকা। ঈদের আগে দাম আরও বেড়ে যায়। তবে সমিতির মাধ্যমে প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়ে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।
মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার মানরা গ্রামের মাংস ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, অনেক এলাকার মানুষ সমিতি করে গরু কিনে মাংস ভাগ করে নিচ্ছেন। প্রতিদিন এসব সমিতির দুই থেকে তিনটি গরু কাটছেন তিনি। দিন দিন সমিতির সংখ্যাও বাড়ছে বলে তাঁর ধারণা।
কম দামে ভালো মানের মাংস পাওয়ার জন্য গ্রামে ও পাড়ামহল্লায় এই সমিতির প্রতি অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন, এমন মন্তব্য সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ভ গ কর সব ই ম ল র সদস য র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দোহায় পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা
আর্থনা সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছেছেন ।
প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি সোমবার (২১ এপ্রিল) কাতারের স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে দোহায় হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধান উপদেষ্টাকে বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানান কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’।
সরকারপ্রধানের চার দিনের এ সফরের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আর্থনা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি এ সফরে কাতারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ২৪ এপ্রিল মধ্যরাতের পর তার দেশে ফেরার সূচি রয়েছে।
সফরে জ্বালানি উপদেষ্টার যাওয়ার তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, “কাতারের সঙ্গে আমাদের এলএনজি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। ভিসা সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে আলাপ করবেন। এছাড়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়েও আলাপ হবে। কাতারের উদ্যোক্তাদের নিয়ে ২৩ এপ্রিল বাণিজ্য সম্মেলন হবে, আশা করি সাড়া পাব।”
কাতারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আড়াই ঘণ্টার একটি সম্মেলন হবে, এমন তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সম্পৃক্ত অনেকেই অংশ নেবেন। আশা করি ফলপ্রসূ বৈঠক হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা সম্মেলনের প্রাক-প্রস্তুতি বৈঠক এটি।”
কাতার প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, “এ পরিকল্পনা আমাদের অনেক দিন ধরেই আছে। এ বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। যাতে করে দেশটির বাজার আমাদের জন্য উন্মুক্ত হয়। আরো শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে নেয়, সে বিষয়ে আমরা দেখছি।”
“একইভাবে অন্যান্য যেসব দেশে আমাদের ভাই-বোনেরা কাজ পেতে পারেন তা নিয়ে কাজ করছি।”শ্রমবাজারগুলোতে আরো ভালো বেতনে, বেশি সংখ্যক কর্মী যাতে যেতে পারেন সেটা সরকারের অগ্রাধিকার বলে তুলে ধরেন তিনি।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চার নারী ক্রীড়াবিদ সরকার প্রধানের সফরসঙ্গী হয়েছেন। এই চার জন হলেন- ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।
তথ্যসূত্র: বাসস
ঢাকা/ইভা