৩০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র
Published: 28th, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানানোর কারণে কমপক্ষে তিনশ’ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন দমন অভিযানে অন্তত ৩০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার গায়ানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
মার্কো রুবিও বলেন,‘প্রতিদিনই আমরা এ কাজ করি। যখন আমরা এসব উন্মাদ খুঁজে পাই তখন তাদের ভিসা বাতিল করি।’
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ করেছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এসব আন্দোলনে জড়িত একাধিক শিক্ষার্থীকে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় এনেছে।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানানোর কারণে তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্কের ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তার আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইফতার করতে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় ওজতুর্ককে আটক করা হয়।
৩০ বছর বয়সী ওজতুর্ক বোস্টন অঙ্গরাজ্যের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরাল পর্যায়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে সোমারভিলে নিজ বাড়ির কাছ থেকে তাকে আটক করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মুখোশ পরিহিত সাদা পোশাকে থাকা সরকারি কর্মীরা ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ বলে তীব্র সমালোচনা করেন মানবাধিকার কর্মীরা।
তবে নিজেদের কর্মকাণ্ডের সাফাই গেয়ে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, শিক্ষার্থীদের এসব আন্দোলন ইহুদীবিদ্বেষী যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ওজতুর্ক হামাসের মতো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থনে কাজ করছিলেন, যে সংগঠনটি মার্কিন নাগরিকদের হত্যা করাকে উপভোগ করে। সবার মনে রাখা উচিত, মার্কিন ভিসা পাওয়া একটি সুযোগ, এটি কারও অধিকার নয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ত ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, তালিকায় আছে বাংলাদেশিরাও
যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। সম্প্রতি প্রায় পাঁচ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন সরকার। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইএলএ) একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এআইএলএর ‘দ্য স্কোপ অব ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশনস অ্যাগেইনস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাতিলকৃত ৩২৭টি ভিসা পর্যালোচনা করেছে এআইএলএ। ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ ভারতের, ১৪ শতাংশ চীনের। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীও এই তালিকায় রয়েছেন। তবে বাংলাদেশিদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
গত চার মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিদেশি শিক্ষার্থীদের ডেটা, তাদের কার্যকলাপ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তৎপরতার ওপর নজরদারি করছে। অনেকের অভিযোগ, এই নজরদারি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে করা হচ্ছে। ফলে কোনো প্রকার অপরাধের ইতিহাস বা ক্যাম্পাস বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ভুলভাবে চিহ্নিত করার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
গত মার্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিভোক’ নামের কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের নজরদারি ও চিহ্নিত করা হবে। রুবিও বলেন, এই শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপও পর্যবেক্ষণ করা হবে। ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ বা ফিলিস্তিন ও হামাসের প্রতি সমর্থনের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (এসইভিআইএস) পোর্টালটির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ভিজিটরদের ট্র্যাক করে।
আইসিই–এর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এসইভিআইএস সিস্টেমে ৪ হাজার ৭৩৬ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই এফ১ ভিসাধারী।
ভিসা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভিসা বাতিলের নোটিশ পেয়েছেন মাত্র ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। সেটিও তারা পেয়েছেন ই–মেইলের মাধ্যমে। এর মধ্যে মাত্র ২ জন শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া নোটিশ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নোটিশ পাননি। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। অনেকে ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ও ব্যাখ্যা তো দূরের কথা, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না।
এআইএলএ এই প্রশাসনিক পদক্ষেপকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, সরকারের এমন পদক্ষেপ বেশ কিছু আইনি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে এবং এর জন্য সম্ভবত আইনি লড়াইয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
এই ভিসা বাতিলের প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ৩২৭টি ঘটনার মধ্যে ৫০ শতাংশই অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (ওপিটি) ধারী। ওপিটি আন্তর্জাতিক এফ১ ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মাস পর্যন্ত কাজের সুযোগ দেয়। এই শিক্ষার্থীরা স্নাতক সম্পন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত। ভিসা বাতিল হওয়ার ফলে এই শিক্ষার্থীরা এখন আর কাজ করতে পারবেন না। ভিসা বাতিলের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যেসব অঙ্গরাজ্য এর মধ্যে রয়েছে—টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, মিশিগান এবং অ্যারিজোনা।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতি এবং স্কুল কর্মকর্তাদের সঙ্গে চিঠিপত্রের পর্যালোচনায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) দেখেছে, গত মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার প্রায় ১ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল বা তাদের আইনি মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে।
আইনি মর্যাদা হারানো অনেক শিক্ষার্থীই ভারত ও চীনের। এই দুই দেশের মোট শিক্ষার্থী আমেরিকার কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও বেশি। তবে আইনজীবীরা বলছেন, এই বাতিলের ঘটনা বিশ্বের কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ নিয়ে ভারত সরকার প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘আমরা জেনেছি, বেশ কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষার্থী তাদের এফ ১ ভিসা স্ট্যাটাসের বিষয়ে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা পেয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমাদের দূতাবাস ও কনস্যুলেট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।’