বোরো ক্ষেতে থোড়ধান। এ সময় সেচের প্রয়োজন বেশি। পরিমিত সেচ দিতে না পারলে ধানে বেশি চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু জলাশয়গুলো শুকিয়ে গেছে প্রায়। এই পরিস্থিতিতে সেচ সংকটে পড়েছেন বোরো চাষিরা।
পানি সংকটের কারণে বোরো ক্ষেতে সময়মতো সেচ দিতে পারছেন না বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চাষিরা। পলি পড়ে ভরাট হয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে জলাশয়গুলো। এই এলাকা কৃষিনির্ভর হলেও জলাশয়গুলোতে পানি সংকটের কারণে অনেক সময় বৃষ্টির ও জোয়ারের ওপর নির্ভর করে সেচ কাজ চালাতে হচ্ছে এলাকার কৃষকের। জলাশয়গুলো ভরাটের কারণে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কর্মহীন কৃষক মাঠে অক্লান্ত শ্রম দিয়েও তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না, চৈত্র-বৈশাখ মাসে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাশয়গুলোর আশপাশের বোরো জমি পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ২০ একরের ঊর্ধ্বে ১২টি জলাশয় ভূমি অফিসের তালিকাভুক্ত। আর ২০ একরের মধ্যে জলাশয় রয়েছে ১৭টি। প্রশাসন থেকে এগুলো ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় এসব জলাশয় পলিমাটি পড়ে ভরাট হতে চলেছে। এসব জলাশয় শুকিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থা হয়েছে। জলাশয়গুলোর ওপর নির্ভরশীল চার হাজার হেক্টর জমি থাকলেও পানি সংকটের কারণে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। বিশেষ করে বালিয়াদহ, গালাচিপা, চন্দনবিল, ডেপারবিল, জয়কালীপুর গ্রুপ ফিশারিজ, মানিকপুর গ্রুপ ফিশারিজ, সাতবিলা বিল এলাকায় সেচ সংকট তীব্র আকার ধারণ করে বোরো মৌসুমে। দীর্ঘদিন ধরে জলাশয় খনন না করার কারণে পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। ফলে কৃষক সেচের পানির জন্য গভীর নলকূপের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। বৃষ্টি ও জোয়ারের ওপর নির্ভর করে বোরো ক্ষেতে সেচকাজ চালাতে হচ্ছে অনেকের। জমিতে সময়মতো সেচ দিতে না পারায় কাঙ্ক্ষিত ফলন ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক।
চাষিরা জানান, থোড়ধানে পরিমিত সেচ দরকার। এখন পানি সংকটে সেচ দিতে পারছেন না। এই সময় ঠিকমতো সেচ দিতে না পারলে ধান বেশি চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ঝুনারচর গ্রামের কৃষক কবির হোসেন জানান, পানি সংকটের কারণে বিলের আশপাশের বোরো ক্ষেতে সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিলে পানি না থাকায় জমিতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না। কিন্তু যখন ধান কাটার সময়, তখন বৃষ্টির পানি এসে সব তলিয়ে যায়।
হায়দরনগর গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বিলে পানি না থাকায় ১ হাজার বিঘা জমিতে বোরো চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। বিলটি খনন করলে এই এলাকার কয়েক হাজার একর জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হবে।’
রুপসদী গ্রামের ব্লক ম্যানেজার সালে আহমেদ জানান, বৃষ্টির ও জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করতে হয় জমিতে সেচ দিতে। বিলে পানি থাকে না ঠিকভাবে। তাই ভরা মৌসুমে জমিতে পানি দিতে পারেন না তারা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য– ফরদাবাদ, রুপসদী, ছলিমাবাদেরসহ বিভিন্ন বিলে শুকিয়ে গেছে প্রায়। পানি সংকটের কারণে সময়মতো জমিতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। এতে আশানুরূপ ফলন পান না। জরুরি ভিত্তিতে জলাশয়গুলো খনন করা দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌসী আরা জানান, পলিমাটি পড়ে ভরাট হওয়া জলাশয়গুলো খননের জন্য তাদের কাছে কোনো প্রস্তাব চাওয়া হয়নি। খননের জন্য যখনই তালিকা চাওয়া হবে তখনই জলাশয়ের তালিকা পাঠানো হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে ট্রেন, স্বস্তিতে যাত্রীরা

নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াচ্ছে ট্রেন। হাতে সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে ট্রেনে উঠছেন যাত্রীরা। সময় হলে আবার কোনো দেরি ছাড়াই ছেড়ে দিচ্ছে ট্রেন। ঈদযাত্রার পঞ্চম দিন আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আজ সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে টিকিটবিহীন যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে কমলাপুরে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি। ট্রেন ছাড়ার আগপর্যন্ত নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ভিড় জমছিল। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ভিড় আবার কমে যেতে দেখা গেছে।

ট্রেন সময়মতো আসা, স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেনে উঠে নির্দিষ্ট আসনে বসতে পারা ও সময়মতো ট্রেন ছাড়া নিয়ে যাত্রীরা স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, অতীতের যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর অনেক স্বস্তি নিয়ে তাঁরা যাত্রা শুরু করতে পারছেন।

আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে চারটি আন্তনগর ট্রেন ছেড়ে যায়। সকাল ১০টায় জামালপুর এক্সপ্রেস, সোয়া ১০টায় পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস, সাড়ে ১০টায় কিশোরগঞ্জগামী কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, পৌনে ১১টায় রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে কিংবা নির্ধারিত সময়ের ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যেই স্টেশন ছেড়ে যায়। এ সময়ে একটি কমিউটার ট্রেনও ছাড়ে। তিতাস কমিউটার ট্রেনটি পৌনে ১০টার পরিবর্তে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে ১০টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর ছাড়ে।

জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আলমাজ মিয়া বলেন, ‘এ বছর বেগ পেতে হয়েছে অনলাইনে টিকিট কাটার ক্ষেত্রেই। স্টেশনে পৌঁছে বা প্ল্যাটফর্মে এসে ট্রেনে সেই তুলনায় কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিটে আগে এসেও দেখলাম ট্রেন নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই ট্রেনে উঠে বসলাম।’ গতকাল তাঁর দুজন বন্ধুও স্বস্তিতে যাত্রার কথা জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সাড়ে ১০টার কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে সকাল সোয়া ৯টার সময়ই প্ল্যাটফর্মে এসে হাজির হন সারাফাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘অতীতে দেখেছি ঈদের সময় কমলাপুর স্টেশন এসেও মানুষের ভিড়ের কারণে নিজের আসনে বসা যেত না। এমন ঝামেলা এড়াতেই আগেভাগে স্টেশনে চলে আসি। প্ল্যাটফর্মে সাড়ে ৯টার সময়ই ট্রেন দিয়ে দেয়। সাড়ে ১০টায় ট্রেন ছাড়বে। এখনো কোনো ভিড় দেখছি না।’

কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ১০টা ৩২ মিনিটে ছেড়ে যায়। ভেতরে দাঁড়ানো যাত্রী খুব একটা ছিল না।

কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, ‘সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৩টি আন্তনগর ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ঢাকা স্টেশন ছাড়ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কমলাপুর স্টেশন থেকে সময়মতো ছাড়ছে ট্রেন 
  • নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে ট্রেন, স্বস্তিতে যাত্রীরা