ইচ্ছামতো দখলে বেহাত শতকোটি টাকার জমি
Published: 27th, March 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার শিমরাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমি দখল করে বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে তুলেছে একটি চক্র। উপজেলার সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার মহাসড়ক ঘেঁষে এসব জমি দখল করা হয়েছে। ভাড়া দিয়ে টাকাও আদায় করছে চক্রটি। এর পরও জমি উদ্ধারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সওজের চোখের সামনে দিনের পর দিন এভাবে জমি দখল চলছে। তারা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ৫ আগস্টের আগে মাঝেমধ্যে নামমাত্র উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা মো.
অভিযোগ উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চিটাগাং রোডে গুলিবর্ষণ করে হতাহতের মামলার আসামি উপজেলা জাপার সহসভাপতি আখিনুর চৌধুরীসহ প্রভাবশালী একটি চক্র এ কাজে জড়িত। দলখদাররা বাস কাউন্টার ও ধর্মীয় স্থাপনাও গড়ে তুলেছে। রয়েছে রেস্তোরাঁ, যাতায়াতের পথ, নার্সারি, পুরোনো টায়ারের ব্যবসা, রেস্তোরাঁর মাঠ, বাঁশের আড়ত, এমনকি গাড়ির গ্যারেজও।
সানারপাড় এলাকার ব্যবসায়ী মো. ইউনুছ আলী, সাইনবোর্ডের আব্দুল হান্নান, শিমরাইলের মো. সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, সওজের নজরদারি না থাকায় শত কোটি টাকার জমি অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে গেছে। মিজমিজির বাসিন্দা মো. আবুল কালাম বলেন, সওজের শিমরাইল কার্যালয় থেকে শুরু করে মহাসড়কের সাইনবোর্ড পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশের শত কোটি টাকার জমি যে যার মতো করে দখল করে নিয়েছে। রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ নীরব রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গণশৌচাগার ও দোকানপাট ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা। হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ (টিআই) আবু নাঈম সিদ্দিকী বলেন, ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি পাবলিক টয়লেট, গরুর খামার, দোকানপাটসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে আখিনুর চৌধুরীসহ একটি অসাধু চক্র। টাকা আয়ের ফন্দি হিসেবে জায়গা দখল করা হয়েছে।
মহাসড়কজুড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে আখিনুর চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করে হতাহতের মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁর গাড়ি পার্ক করার জন্য সওজের জায়গা দখল করে আরসিসি ঢালাই করে মাঠ বানানো হয়েছে। রেস্তোরাঁটির মালিক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি একা তো দখল করিনি, সবাই করেছে। যখন সওজের দরকার পড়বে, তখন ছেড়ে দেব।’
সওজের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে নার্সারি করেছেন বলে দাবি ব্যবসায়ী মো. তৌহিদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘যখন তারা চাইবে, ছেড়ে দেব।’ শিমরাইল মোড়ে সাতটি মার্কেট মালিকও সওজের জমি দখল করে অবৈধ স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মার্কেট মালিক দেলোয়ার হোসেন, নুর উদ্দিন ও হাবিবুল্লাহ হবুলও বলেছেন, সওজের যখন প্রয়োজন হবে, তারা জমি ছেড়ে দেবেন।
একই মোড়ে অর্ধশত অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করে বাস কাউন্টার মালিকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মাদানীনগর এলাকায় মহাসড়ক দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা। পুরোনো টায়ারের বৃহৎ মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে মহাসড়কের জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
মহাসড়কের সাইনবোর্ডসহ শিমরাইল পর্যন্ত শত কোটি টাকার জমি দখল হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ সডক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মাদ আহসান উল্লাহ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া আমরা উচ্ছেদে যেতে পারিনি। গত বছরের ১৫ জুলাই উচ্ছেদের কথা ছিল। কিন্তু দেশের অবস্থা তখন স্বাভাবিক ছিল না বলেই উচ্ছেদ করা হয়নি।’
এ কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘কিছু কিছু শিল্পের জন্য অ্যাপ্রোচের অনুমতি রয়েছে। আমাদের অনুমতি না নিয়ে সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত আমাদের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দখল ন র ম ণ কর স ইনব র ড অব ধ স থ ব যবস সওজ র
এছাড়াও পড়ুন:
শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত সকাল ১০টায়, শুরু হবে ৩ দফা গুলিতে
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগায় জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। ঐতিহ্য অনুসারে তিন দফা গুলি ফুটিয়ে শুরু হবে জামাত। এটি বিশ্বের বুকে এক বিরল দৃষ্টান্ত ও ঐহিত্য। জামাতে ইমামতি করবেন শহরের বড় বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে রেললাইন পেরিয়ে নরসুন্দা নদীর উত্তর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যাবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ। এটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৭৫০ সালে। তবে ১৮২৮ সালে প্রথম সর্ববৃহৎ সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সেই থেকেই ‘সোয়ালাকিয়া’ শব্দ থেকে উচ্চারণ বিবর্তনের মাধ্যমে এর নামকরণ হয়েছে ‘শোলাকিয়া’। আর ১৮২৮ সালের জামাত থেকেই ক্রমিক নম্বর ধরে এবারের জামাতকে বলা হচ্ছে ১৯৮তম জামাত।
জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও আনসার-ভিডিপির পাশাপাশি সেনা সদস্য এবং ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা। মাঠে থাকবে পুলিশের চারটি ও র্যাবের দুটি ওয়াচ টাওয়ার। ঈদের দিন দূরের মুসল্লিদের আসার জন্য সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে দুপুর ১২টায় দুটি ট্রেন আবার গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এছাড়া ঈদের আগের দিনই দূরবর্তী যেসব মুসল্লি চলে আসছেন, আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মসজিদের তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে যে বিপুল পরিমাণ মুসল্লির আগম ঘটে, তাতে মূল ঈদগায় স্থান সঙ্কুলান হয় না। জামাতের পরিসর আশপাশের খালি জায়গা, পার্শ্ববর্তী সকল রাস্তা, নরসুন্দা নদীর বিশাল সেতু, পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ির আঙিনায়ও বিস্তার লাভ করে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি ১১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। থাকবে ক্যামেরাবাহী ড্রোন ও বাইনোকুলার। চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে মুসল্লিদের ঈদগায় প্রবেশ করতে হবে। কেবল মাত্র জায়নামাজ ও মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইস, ব্যাগ এবং ছাতা নিয়ে প্রবেশ না করতে মুসল্লিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এবারের জামাতে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম হবে বলে তিনি মনে করছেন। র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ অঞ্চলের কমান্ডিং অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি নায়মুল হাসান বলেছেন, পর্যাপ্ত র্যাব সদস্য মোতায়েন ও টহল অবস্থায় থাকবেন। সাদা পোশাকেও অনেকে দায়িত্ব পালন করবেন। ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার কারণে একই বছরের ঈদুল আযজহার সময় থেকেই নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শহরকে বেশ কিছু তোরণ ও উৎসব পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ঈদগায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে। ফায়ার সার্ভিস ও মেডিক্যাল টিম মোতায়েন থাকবে। মুসল্লিদের অজুর সুব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত শৌচাগারও করা হয়েছে।
শোলাকিয়ার একটি বিরল ঐতিহ্য হচ্ছে গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু। জামাত শুরুর ১৫ মিনিটি আগে তিনটি, ১০ মিনিট আগে দুটি এবং ৫ মিনিট আগে একটি শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে নামাজের সংকেত দেয়া হয়। এক সময় সুতলির মধ্যে তিনবার সারিবদ্ধ পটকা ঝুলিয়ে সুতলির নিচের মাথায় আগুন দিয়ে পটকা ফাটানো হতো। সুতলি বেয়ে আগুন ওপরের দিকে যেত, আর একের পর এক পটকাগুলো ফুটতো। মাঝে মাঝে পটকা নষ্ট থাকতো বলে আওয়াজের তালের ব্যত্যয় ঘটতো। যে কারণে এখন শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরুর সংকেত দেওয়া হয়। এই ঐতিহ্য দেশে অদ্বিতীয় ও নজিরবিহীন বলে কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।