‘আল কুদস’ ফিলিস্তিনের রাজধানী। এটা মুসলিমদের প্রিয় ভূখণ্ড। এখানে মসজিদে আকসা অবস্থিত, যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। কোরআন মাজিদে এটিকে পবিত্র ও বরকতপূর্ণ ভূমি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী-রাসুলদের মধ্যে ইব্রাহিম, মুসা, ঈসা (আ.)-সহ অনেকে এখানে প্রেরিত হন। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজের রজনীতে মসজিদে আকসায় ভ্রমণ করেন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘পবিত্র মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করালেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশে আমি বরকত দান করেছি। যেন আমি তাঁকে আমার নিদর্শনাবলি দেখাতে পারি।’ সূরা ইসরা: ১

ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘আল কুদস’ বা ফিলিস্তিনের পবিত্র নগরী এশিয়া ও আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর গৌরবময় সভ্যতা, সোনালি ইতিহাস এবং ধর্মীয় লীলাভূমির কারণে এটি মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি– সবার কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে পরিগণিত। মুসলমানদের কাছে এটি মসজিদে আকসাকে কেন্দ্র করে ঐক্যের প্রতীক ও ইমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ; খ্রিষ্টানদের কাছে যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধকরণ গির্জা এবং ইহুদিদের কাছে প্রাচীন জেরুজালেমের জন্য বিশেষ মর্যাদার স্থান।

দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রা.

) হাত ধরে আল কুদস ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামের ছায়াতলে আবদ্ধ হয়।
সেই থেকে মুসলিমরা জেরুজালেমের ধর্মীয় মর্যাদা ও পবিত্রতা অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের জন্যও উন্মুক্ত রেখেছে। পক্ষান্তরে খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের পৌরাণিক বানোয়াট কল্পকাহিনি ও অন্ধ ধর্মীয় বিশ্বাসে জেরুজালেমকে নিজেদের একচেটিয়া অধিকারে রাখার প্রবণতা পেয়ে বসে। এ উদ্দেশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তারা করেছে নির্মম নির্মূল অভিযান ও রোমহর্ষক গণহত্যা।
১০৯৯ সালে খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা নামধারী মুসলিম শাসকদের সহায়তায় সমগ্র সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম দখল করে। তারা বায়তুল মুকাদ্দাসকে গির্জায় পরিণত করে এবং মসজিদে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সেদিন মুসলমানদের রক্তে প্লাবিত হয়েছিল পবিত্র আল কুদসের ভেতর ও বাহির। এর ফলে ছেদ পড়ে ৪৬২ বছরের মুসলিম শাসনের। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ফিলিস্তিনের মুসলিমরা ১১৮৭ সালে সুলতান গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবির হাতে পুনরায় জেরুজালেমকে হস্তগত করে। 
১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯২০ সালে তারা সেখানে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এর কিছুদিনের মধ্যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। তার পর থেকে হামলা-পাল্টা হামলা চলতেই থাকে।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৪৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর ৩৭টি বড় ধরনের গণহত্যা চালিয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আজকের ২০২৫ সালের রমজানের শেষ শুক্রবার পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলিদের গণহত্যা, জাতিগত নিধন, জোরপূর্বক বাস্তচ্যুতি, বোমাবর্ষণ, টার্গেট কিলিং, যুদ্ধকৌশল হিসেবে দুর্ভিক্ষ, নির্যাতন, ধর্ষণ অতীতের সব পরিসংখ্যান অতিক্রম করেছে। এতে অন্তত প্রত্যক্ষ মৃত্যু ৬১ হাজার ৭০০-এর বেশি, যার মধ্যে ১৭ হাজারই শিশু। পরোক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা সম্ভবত কয়েক গুণ। ৮০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত।
ফিলিস্তিন সমস্যা শুধু তাদের নিজস্ব বিষয় নয়। এটি বিশ্বব্যাপী একটি মানবতাবাদী ইস্যু। দানব ইসরায়েল ফিলিস্তিন ইস্যুকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনি এটিকে বিশ্বমানবতার সমস্যা উল্লেখ করে মসজিদুল আকসাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনের মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার ‘বিশ্ব কুদস দিবস’ ঘোষণা করেন। মুসলিম বিশ্ব এই দিবসকে প্রতিবছর কুদস দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। এই দিন বিশ্বজুড়ে জনগণের ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ফিলিস্তিনিদের আশা-আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত রাখা এবং ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এই প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে সফলতা লাভে সক্ষম হবে।

মুহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ: অধ্যক্ষ, 
বসুরহাট ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনের গাজায় পাশবিক হামলা ও নিরীহ গাজাবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে শুক্রবার (২৮ মার্চ) বাদ জুমআ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে মিছিলটি প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিলে বিক্ষোভকারীরা ইন্তিফাদা ইন্তিফাদা, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ, জায়োনবাদ নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তিপাক ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

মিছিল শেষে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি হয়। মানববন্ধনে বক্তারা ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

বক্তারা বলেন, আজ সারা বিশ্বের মুসলিমরা যেখানে রমজান, ইফতার, সাহরি করছে সেখানে ফিলিস্তিনের শিশু-নারীরা লাশের মিছিলে শরিক হচ্ছে। বিনা নোটিশে ইসরায়েল আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের ওপর হামলা করছে। তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছে। বক্তারা ইহুদীবাদী সেনাদের এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং তাদের এই নৃশংস অপরাধযজ্ঞ বন্ধ করতে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

বক্তারা বলেন, আজ রমজানের শেষ শুক্রবার, আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস। মুসলমানদের প্রথম কেবলা পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস দখলমুক্ত করার আন্দোলনে বিশ্ব মানবতাকে উজ্জীবিত করার প্রতীকী দিন এটি।

বিশ্বজুড়ে দিনটি এমন এক সময় পালিত হতে যাচ্ছে যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক হামলা অব্যাহত রয়েছে।

সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে পুনরায় সামরিক আগ্রাসন শুরু করে। নতুন করে শুরু হওয়া এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৭৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ এবং ১,৩৬৭ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে ৭ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে গাজায় শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০,০৮২ জনে এবং আহতের সংখ্যা ১,১৩,৪০৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইসরাইলের আগ্রাসন পুনরায় শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে।

বক্তারা বলেন, ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ী হওয়ার পর ইমাম খোমেনি (র) ফিলিস্তিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস পালনের আহ্বান জানান। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি দখলদার ইহুদীবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে সংগ্রামের পতাকা উড্ডীন করেন এবং কুদস শরীফ ও ফিলিস্তিনের ইসলামি ও পবিত্র ভূমির মুক্তির বিস্মৃত লক্ষ্য ও আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করেন। ইমাম খোমেইনী (র.) এর পক্ষ থেকে রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে আল কুদস দিবস নামকরণ ছিল একটি বৃহৎ বুদ্ধিবৃক্তিক ও গঠনমূলক রাজনৈতিক উদ্যোগ যা ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের গতিপথকে পাল্টে দেয় এবং এই পথটিকে আরো আলোকিত ও মসৃণ করে তোলে।

বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আল কুদস কমিটি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা তারিকুল হাসান।

ঢাকা/হাসান/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই হত্যার কিছু মামলার অভিযোগপত্র মের মধ্যে
  • উপদেষ্টাদের বিদেশ সফর কমিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া উচিত: রাশেদ খান
  • সামনের নির্বাচন গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে: আখতার হোসেন
  • নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমূল সংস্কার দরকার: আখতার হোসেন
  • ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ
  • গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ