Samakal:
2025-03-30@21:23:41 GMT

ছুটি! ছুটি!

Published: 27th, March 2025 GMT

ছুটি! ছুটি!

‘ছুটি! ছুটি!’
আনন্দে উদ্বাহু হয়ে সে কি দৌড় রাজার।
শুন্ডির রাজা।
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবির শুন্ডি।
ছুটি কেমন নিশ্চয় তার শ্রেষ্ঠ একটা চিত্রকল্প এই সাদাকালো দৃশ্যটা। চিরকালীন। শুন্ডি রাজ্য সব মানুষের আছে। সব মানুষ শুন্ডির রাজা। ছুটি চায়। যদি পায় ওই।–আনন্দে উদ্বাহু হয়ে দে দৌড়! জীবন থেকে ছুটি পেয়ে দৌড় দেওয়ার কথা বলছি না। জগতে আছি, জাগতিক থাকি। আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি/ আহা হা হা হা।– আহা, ওহো, ওরে, হায় হায়– রবীন্দ্রনাথের আগে পরে বাংলা গানে তেমনভাবে নাই। কিছু জিনিস মনে হয় শুধু রবীন্দ্রনাথে থাকলেই ভালো।–কি জানি কিসের লাগি প্রাণ করে হায় হায়। যায় চলে যায় বসন্তের দিন। এই সময় ঈদের ছুটি পড়েছে। নয় দিনের ছুটি। মুস্তফা সিলুক বানায়। সে একটা সিলুক দিয়েছে,
: যে চায় সে পায়
যে চায় না সে ও পায়।
কী বল তো?
: কী?
: সরকারি ছুটি।
বোকা বোকা সিলুক।
‘মুস্তফা, তোরে আমি সিলুক সম্রাট উপাধি দিলাম।’
সিলুক সম্রাটের সঙ্গে ঢের ছুটি আমি ‘কাটায়েছি’। হেঁটে হেঁটে দিক বিদিকের রাস্তায়। সিলুক সম্রাটের সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের কেন দেখা হয় নাই, চিন্তা করে পাই না।
‘দেখা হইসিল। নিরালা মানুষ।’
‘কে? জীবনানন্দ দাশ না তুই? টাউনের মানুষ তোরে চিনল না মুস্তফা।’
বর্তমানে সদা টলটলায়মান মুস্তফা স্কুল কলেজ লাইফে কবিতা পড়ত–সুরঞ্জনা, ওই খানে যেও নাকো তুমি। চিঠি লিখেছিল সুরঞ্জনাকে। টাউনের সেরা খান্ডারনি সুরঞ্জনা মুস্তফার বাসায় হামলা দিয়েছিল, ‘কোনখানে যাব না রে? আমি কার কাছে যাই?’
–পুরনো সেই দিনের কথা।
সুরঞ্জনা তিন সন্তানের জননী এখন। টাউনে যাবে এই ঈদের ছুটিতে?
আজ বৃহস্পতিবার। ২৭ তারিখ। ঈদের আগে শেষ কর্মমুখর দিন। স্কুল কলেজ আগে ছুটি হয়ে গেছে। আজ থেকে অফিস আদালত ছুটি। মানুষজন দ্যাশের বাড়িতে ছুটবেন। কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে, কেউ পরিবার পরিজনের কাছে।–আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে! জনমদুখী ভাইকে কল দিলাম, ‘জনমদুখী ভাই, কী করেন?’
‘আর কি দাদা!’
‘ঈদে কি করবেন? কোথাও যাবেন?’
‘আরে না-আ! কোথায় যাব?’
হায়রে! জনমদুখী ভাই একটা নিরানন্দ ঈদের ছুটি কাটাবেন! ছেলে মেয়ে থাকে বিদেশে। তারা নিয়ে গেছে তাদের মাকে। দুই বছর আট মাস ছাব্বিশ দিন আগে। ফেরত আর দিচ্ছে না। দুই বছর আট মাস ছাব্বিশ দিন ধরে জনমদুখী ভাই তুলেমূলে একা। কী দুঃখের কথা! জনমদুখী ভাই বই লিখেন। 

বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা থাকে, ‘স্ত্রী তার একমাত্র প্রেমিকা।’ ছেলে মেয়ে এই দিকটা বিবেচনা করে দেখবে না? অবিবেচকের দল হয়েছে! প্রেমবিহীন, প্রেমিকাবিহীন জনমদুখী ভাই তবে আনন্দিত থাকবেন কী কী পয়েন্টে? এটা সম্ভব?
সম্ভব। চাবিকাঠি সেই মহিলার হাতে, ছেলে মেয়ে নাতি নাতকুরের সঙ্গে যিনি এখন মহা আনন্দে আছেন বৈদেশে। দয়াবতী মহিলা। নিশ্চয় সেই বন্দোবস্ত করবেন। ঈদের ছুটি বলে কথা।
‘চিন্তা করবেন না, জনমদুখী ভাই।’
ছুটি কী? ছুটি অর্থ?
চলন্তিকা আধুনিক বঙ্গ ভাষার অভিধান দেখলাম।
ছুটি] বন্ধ, দৈনিক কর্মসময়ের অবসান (‘পাঁচটায়–’। পর্বাদির জন্য কর্মের বিরাম (‘পূজার–’); কর্ম হইতে কিছু কালের জন্য অবকাশ গ্রহণ (‘তিন মাসের–’)। কর্ম হইতে নিষ্কৃতি (‘এইবার আমার–’)। (‘–হওয়া, লওয়া, দেওয়া, পাওয়া’)।
এই ছুটিটা ঈদের ছুটি। উৎসবের ছুটি। উৎসবমুখর এই ছুটিতে কম মানুষ কম দুঃখে থাকুক।
যত হাসি তত কান্না
বলে গেছেন রাম শন্না
আর?
যত দুঃখ তত আনন্দ
বলে গেছেন পরমানন্দ
পরমানন্দ কে?
শুন্ডির রাজা।
ছুটি! ছুটি!
এইসব ইতংবিতং লিখে কে আর? 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ র ছ ট আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত সকাল ১০টায়, শুরু হবে ৩ দফা গুলিতে

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগায় জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। ঐতিহ্য অনুসারে তিন দফা গুলি ফুটিয়ে শুরু হবে জামাত। এটি বিশ্বের বুকে এক বিরল দৃষ্টান্ত ও ঐহিত্য। জামাতে ইমামতি করবেন শহরের বড় বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে রেললাইন পেরিয়ে নরসুন্দা নদীর উত্তর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যাবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ। এটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৭৫০ সালে। তবে ১৮২৮ সালে প্রথম সর্ববৃহৎ সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সেই থেকেই ‘সোয়ালাকিয়া’ শব্দ থেকে উচ্চারণ বিবর্তনের মাধ্যমে এর নামকরণ হয়েছে ‘শোলাকিয়া’। আর ১৮২৮ সালের জামাত থেকেই ক্রমিক নম্বর ধরে এবারের জামাতকে বলা হচ্ছে ১৯৮তম জামাত।

জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপির পাশাপাশি সেনা সদস্য এবং ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা। মাঠে থাকবে পুলিশের চারটি ও র‌্যাবের দুটি ওয়াচ টাওয়ার। ঈদের দিন দূরের মুসল্লিদের আসার জন্য সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে দুপুর ১২টায় দুটি ট্রেন আবার গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এছাড়া ঈদের আগের দিনই দূরবর্তী যেসব মুসল্লি চলে আসছেন, আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মসজিদের তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে যে বিপুল পরিমাণ মুসল্লির আগম ঘটে, তাতে মূল ঈদগায় স্থান সঙ্কুলান হয় না। জামাতের পরিসর আশপাশের খালি জায়গা, পার্শ্ববর্তী সকল রাস্তা, নরসুন্দা নদীর বিশাল সেতু, পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ির আঙিনায়ও বিস্তার লাভ করে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি ১১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। থাকবে ক্যামেরাবাহী ড্রোন ও বাইনোকুলার। চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে মুসল্লিদের ঈদগায় প্রবেশ করতে হবে। কেবল মাত্র জায়নামাজ ও মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইস, ব্যাগ এবং ছাতা নিয়ে প্রবেশ না করতে মুসল্লিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এবারের জামাতে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম হবে বলে তিনি মনে করছেন। র‌্যাব-১৪ ময়মনসিংহ অঞ্চলের কমান্ডিং অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি নায়মুল হাসান বলেছেন, পর্যাপ্ত র‌্যাব সদস্য মোতায়েন ও টহল অবস্থায় থাকবেন। সাদা পোশাকেও অনেকে দায়িত্ব পালন করবেন। ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার কারণে একই বছরের ঈদুল আযজহার সময় থেকেই  নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শহরকে বেশ কিছু তোরণ ও উৎসব পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ঈদগায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে। ফায়ার সার্ভিস ও মেডিক্যাল টিম মোতায়েন থাকবে। মুসল্লিদের অজুর সুব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত শৌচাগারও করা হয়েছে।

শোলাকিয়ার একটি বিরল ঐতিহ্য হচ্ছে গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু। জামাত শুরুর ১৫ মিনিটি আগে তিনটি, ১০ মিনিট আগে দুটি এবং ৫ মিনিট আগে একটি শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে নামাজের সংকেত দেয়া হয়। এক সময় সুতলির মধ্যে তিনবার সারিবদ্ধ পটকা ঝুলিয়ে সুতলির নিচের মাথায় আগুন দিয়ে পটকা ফাটানো হতো। সুতলি বেয়ে আগুন ওপরের দিকে যেত, আর একের পর এক পটকাগুলো ফুটতো। মাঝে মাঝে পটকা নষ্ট থাকতো বলে আওয়াজের তালের ব্যত্যয় ঘটতো। যে কারণে এখন শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরুর সংকেত দেওয়া হয়। এই ঐতিহ্য দেশে অদ্বিতীয় ও নজিরবিহীন বলে কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ