Samakal:
2025-03-30@22:00:12 GMT

বাঁধন

Published: 27th, March 2025 GMT

বাঁধন

দ্বিধান্বিত 
যেদিন প্রসব বেদনা উঠল তোমার, সারা হাসপাতালে স্যাভলনের গন্ধ আর যেন সুগন্ধি বাগানের ঘ্রাণ বইছিল। 
অবশ্য তোমার প্রসব বেদনার চাইতে অন্য কোনো একটা কথা কিছুতেই কান স্পর্শ করছিল না। তা শোনার অবস্থাও ছিল না আমার। কিন্তু যত তোমার আর্তচিৎকার প্রকট হয়, যেন ভ্রমছুট হয়, চারপাশে কত মানুষের কত রকম হাহাকার।
তোমার বেদনার চিল্লানি আর কিছু একটা বলতে চাওয়ার শব্দ এমন অন্ধকার বোধ দিচ্ছিল আমাকে, আমার মাথা কাজ করছিল না, শুধু বলছিলাম, একটু সহ্য করো, এইতো পাশে আছি।
কিন্তু ধীরে ধীরে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল, তোমার মুখ, তোমার অবয়বের সাথে আমার দেহের দীর্ঘ সাঁতার, স্মরণে যত আসে যত তত মনে হয়, এই বেদনার অর্ধেক ভার যদি নিতে পারতাম? 
কত কষ্টে তোমাকে পেয়েছি আমি। হাজব্যান্ডের সাথে ছাড়াছাড়ির পরে শূন্যতার দিকে সারাক্ষণ চেয়ে থাকতে, আমি মহাহিংসুটে, দারুণ খুশি ছিলাম তোমাদের এই বিচ্ছেদে। কারণ, তুমি আমাকে ছেড়ে ওর কাছে যখন চলে গেলে, হুহু নদীর দিকে, পুড়ে যেতে সূর্যাস্ত আর মরে যেতে থাকা প্রভাতের দিকে খালি চরাচর বুকে নিয়ে চেয়ে থাকতাম।
কাজ কাকে বলে, ঘুম কাকে বলে, ভুলে গেছিলাম। ফলে প্রচুর ঈর্ষায় প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেছি, কীভাবে তোমাদের বিচ্ছেদ হয়।
দিনরাত শেষে আমার চেষ্টা সফল হলো। একদিন ফিরে এসে বললে, ও প্রচণ্ড ঠকিয়েছে আমাকে, ও মানুষের জাত না.

..
ওকে দেখিয়ে দিতেই মূলত তুমি দ্রুত আমাকে বিয়ে করো।
নার্স সামনে এসে দাঁড়ালে আমি ট্রেচারে তোমাকে আমূল জড়িয়ে ধরি, তুমি নিস্তেজ কণ্ঠে বললে, তুমি শুনবে না কী বলছি?
আমি কান পাতি, সরি, সরি, বলো। 
তোমার চোখে করুণ রক্তাভ অগ্নি। তুমি আমার হাত চেপে বললে, সবসময় কোনো নারীও বলতে পারে না, তার সন্তানের বাবা কে? হয় না এমন? 
অদ্ভুত প্রচ্ছায়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। ভেতরে বল্লম পুঁতে কেউ। পাশ দিয়ে মড়া নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে যেতে থাকে কোনো পরিবার, স্যাভলনের গন্ধ যেন পচা কমোডের ভেতর থেকে উঠে আসে, যেন হাড় চুরচুর হয়, রক্ত বেরোয় না। জানালায় পাঙাশ মাছের পেটের মতো ভোর নামছে।
হতভম্ব বোধে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, যখন ভেতরে চলে যাচ্ছিলে, অদ্ভুত সান্ত্বনা তোমার, জানু, আমি কিন্তু কনফার্ম না।


(আমি খুব চুজি একজন। হাজার ফেসবুক ফ্রেন্ড আছে। আমি বেশির ভাগ অণুগল্প, কবিতা পোস্ট করি। কে লেখা পড়ে আর না পড়ে মন্তব্য করে বুঝি। 
কিন্তু হাতেগোনা যারা আমার লেখা পড়ে মন্তব্য করে, ঘুরেফিরে সেই ছয় সাত, বা আট নয় শুধু তারাই, সব লেখায় কমেন্ট করেন মুগ্ধতা নিয়ে। নিয়মিত। মুখস্থ হয়ে গেছে নাম। বাকি হাজার হাজার চুপ। ছবিতে লাইক চলে, গল্প-কবিতায় মন্তব্য জরুরি, আমার মনে হয়। ফলে, এত হাজার হাজার, কেন? একমাত্র অণুগল্পেই ট্যাগ করতে বাধ্য হই। নইলে এলাম কেন, ফেসবুকে?) 

রূপের গল্প
মেয়েটির চোখের পাগল ছিল সে। প্রোফাইলের ছবিতে তার চোখ দেখেই টানা বিমোহিত হয়েছিল। 
এভাবেই যোগাযোগ। ক্রমান্বয়ে প্রেম।
ছেলেটি মেঘ ও জলস্রোতে ভাসতে থাকে। একদিন মেয়েটি তার দীর্ঘচুলের একটা ছবি পোস্ট করে। 
ছেলেটা কিছুক্ষণ কথা বলার ভাষা খুঁজে পায় না... এ তোমার চুল? হায় হায়! কেটে ছোট করেছ কেন?
আমি প্রথমেই যদি এই চুলের তোমাকে দেখতাম, প্রেমে পাগল হয়ে যেতাম!
এখন তাহলে কী? পাগল হওনি? ধুর, কী যে বলো! আমি কী তেমন মিন করেছি?
ছেলেটার রাত্রির মধ্যে কলরোল ভস্মতার ছড়াছড়ি তাকে অদ্ভুত এক যাতনার মধ্যে ফেলে দেয়। আহা!
ওই চোখের মেয়ের অত সুন্দর দীর্ঘ চুল! যদি থাকত? সে কী তাহলে সেকেলে?
তার বাবা যেমন মার চুল দেখে পাগল হয়ে বিয়ে করেছিলেন, সেও আধুনিক যুগে এসেও...
ছটফট করতে করতে ফোন দেয়, ঘুমোচ্ছিলে?
কেন? আরষ্ট কণ্ঠে মেয়েটি বলে, কিছু বলবে?
মানে, ছেলেটি মশারি পেরোনো ঘরের আলোছায়ায় চোখ ঘোরায়, চুল কাটার বুদ্ধিটা তোমাকে কে দিয়েছিল?
কী? চুল কাটা? আমি নিজের ইচ্ছেয় কেটেছি।
প্রচুর ছেলে আমাকে ফেলে আমার চুলের প্রেমে পড়ত।
আসলে মূল কারণ অন্য, একটা ইন্টারভিউয়ে পড়েছিলাম, অমিতাভ বচ্চন জয়া ভাদুড়ির চুল দেখে প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছিলেন। আমি তাজ্জব! জয়া এটা মেনে নিল? তারা নিজেদের শিক্ষিত দাবি করে? 
এসবকে ভালোবাসা বলে? 
ছেলেটি চুপসে গিয়ে তোতলায়, তোমার চোখের প্রেমে পড়ে কেউ?
আরে? পড়েনি আবার, কিন্তু আমার চোখ যেহেতু, 
বাদ দাও, আসলে এসবকে প্রেম বলে? 
তা ঠিক বলেছ। আসলেই সম্পর্কের মধ্যে মানুষ বড় ব্যাপার, মানুষের মন বড় ব্যাপার। 
রহস্যময় কণ্ঠে হাসে মেয়েটি, সত্যিই তা বিশ্বাস করো? 
ছেলেটির কণ্ঠ যেন চেঁচায়, অবশ্যই।
এখন বলো, আমাদের কবে দেখা হবে? 
মেয়েটি বলে, কত দূরে থাকি, পাসপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কীভাবে দেশে ফিরি?
এইভাবে দিনরাত্রি চলতে থাকে।
ছেলেটা বিভোর হয়ে মেয়েটির চোখ দেখে আর ভাবে, ভাগ্যিস, চোখ ছোটবড় করা যায় না।
দাম্পত্যে সুখী ছিল ছেলেটা। 
মেয়েটিকে এ ব্যাপারটা পুরো গোপন করে গিয়েছিল। 
তার স্ত্রী স্বামীর পরকীয়া টের পেয়ে যায়। এরপর ঝগড়া, অশান্তি, বলা যায় বউয়ের ভালো উপার্জনেই তাদের সংসার চলত।
প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে অপমানবোধ থেকে তার স্ত্রী প্রথমে বাবার বাড়ি চলে যায়, এরপর ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে বলে, আর যদি এক পা এগোও, তবে তোমাকে পুলিশে দেব।
ছেলেটা একদিকে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
কারণ মেয়েটি তাকে বলেছিল অগাস্টে সে দেশে আসবে। 
এখন জুলাই চলছে। 
ছেলেটা পাগলের মতো হাউমাউ করে বলে, এবার এসে তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো, আমি সুইসাইড করব।
হঠাৎ চারপাশ স্তব্ধ। যেন অজগরের মতো পেঁচিয়ে নামতে থাকে অন্ধকার। 
মেয়েটি কোথাও নেই। দিন যায়, মাস যায়... কোনো খবর নেই।
না ফেসবুকে, না ফোনে। ছেলেটা অফিস যাওয়া ভুলে যেতে থাকে। 
দুটো অদ্ভুত চোখ তার চারপাশে দিনরাত চক্রাকারে পাক খেতে থাকে। 
ছেলেটা নিঃসীম এক শূন্যের মধ্যে ঝুলতে থাকে। 
হঠাৎ মধ্যরাতে ফোন, মেয়েটি অস্ফুট কণ্ঠে বলে, আমি আর কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না গো!
মানে? ছেলেটার সর্ব অস্তিত্বে বিদ্যুৎতরঙ্গ ছুটে যায়।
তোতলায় মেয়েটি, আসলে, মানে তোমাকে বলা হয়নি, আমি দুরারোগ্য অসুখে যখন দিনের পর দিন অন্ধ হচ্ছিলাম, তখন একটা ঝুঁকির 
অপারেশন করিয়েছি। পজেটিভ সম্ভাবনা ছিল না। তাও সাহস করেছি। ব্যর্থ হয়েছি।
ছেলেটার কণ্ঠ শুকিয়ে শিরদাঁড়ায় টান পড়ে যেন, সে শব্দ হারিয়ে ফেলে, তুমি আমাকে...
কেন বলিনি? মেয়েটির কণ্ঠ রহস্যময় হয়ে ওঠে, আসলে আমার দৃষ্টি তোমার বিষয় ছিল না। কেন তুলব সে প্রসঙ্গ? 
আমার চোখ কিন্তু দেখতে আগের মতোই আছে।
এত তাজ্জব হচ্ছ কেন? থাকলে হা হা তুমিই তো বলেছিলে, প্রেম থাকলে মানুষ বড় ব্যাপার, তার মন বড় ব্যাপার... v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বড় ব য প র আম র চ

এছাড়াও পড়ুন:

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত সকাল ১০টায়, শুরু হবে ৩ দফা গুলিতে

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগায় জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। ঐতিহ্য অনুসারে তিন দফা গুলি ফুটিয়ে শুরু হবে জামাত। এটি বিশ্বের বুকে এক বিরল দৃষ্টান্ত ও ঐহিত্য। জামাতে ইমামতি করবেন শহরের বড় বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে রেললাইন পেরিয়ে নরসুন্দা নদীর উত্তর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যাবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ। এটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৭৫০ সালে। তবে ১৮২৮ সালে প্রথম সর্ববৃহৎ সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সেই থেকেই ‘সোয়ালাকিয়া’ শব্দ থেকে উচ্চারণ বিবর্তনের মাধ্যমে এর নামকরণ হয়েছে ‘শোলাকিয়া’। আর ১৮২৮ সালের জামাত থেকেই ক্রমিক নম্বর ধরে এবারের জামাতকে বলা হচ্ছে ১৯৮তম জামাত।

জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপির পাশাপাশি সেনা সদস্য এবং ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা। মাঠে থাকবে পুলিশের চারটি ও র‌্যাবের দুটি ওয়াচ টাওয়ার। ঈদের দিন দূরের মুসল্লিদের আসার জন্য সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে দুপুর ১২টায় দুটি ট্রেন আবার গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এছাড়া ঈদের আগের দিনই দূরবর্তী যেসব মুসল্লি চলে আসছেন, আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মসজিদের তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে যে বিপুল পরিমাণ মুসল্লির আগম ঘটে, তাতে মূল ঈদগায় স্থান সঙ্কুলান হয় না। জামাতের পরিসর আশপাশের খালি জায়গা, পার্শ্ববর্তী সকল রাস্তা, নরসুন্দা নদীর বিশাল সেতু, পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ির আঙিনায়ও বিস্তার লাভ করে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি ১১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। থাকবে ক্যামেরাবাহী ড্রোন ও বাইনোকুলার। চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে মুসল্লিদের ঈদগায় প্রবেশ করতে হবে। কেবল মাত্র জায়নামাজ ও মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইস, ব্যাগ এবং ছাতা নিয়ে প্রবেশ না করতে মুসল্লিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এবারের জামাতে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম হবে বলে তিনি মনে করছেন। র‌্যাব-১৪ ময়মনসিংহ অঞ্চলের কমান্ডিং অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি নায়মুল হাসান বলেছেন, পর্যাপ্ত র‌্যাব সদস্য মোতায়েন ও টহল অবস্থায় থাকবেন। সাদা পোশাকেও অনেকে দায়িত্ব পালন করবেন। ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার কারণে একই বছরের ঈদুল আযজহার সময় থেকেই  নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শহরকে বেশ কিছু তোরণ ও উৎসব পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ঈদগায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে। ফায়ার সার্ভিস ও মেডিক্যাল টিম মোতায়েন থাকবে। মুসল্লিদের অজুর সুব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত শৌচাগারও করা হয়েছে।

শোলাকিয়ার একটি বিরল ঐতিহ্য হচ্ছে গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু। জামাত শুরুর ১৫ মিনিটি আগে তিনটি, ১০ মিনিট আগে দুটি এবং ৫ মিনিট আগে একটি শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে নামাজের সংকেত দেয়া হয়। এক সময় সুতলির মধ্যে তিনবার সারিবদ্ধ পটকা ঝুলিয়ে সুতলির নিচের মাথায় আগুন দিয়ে পটকা ফাটানো হতো। সুতলি বেয়ে আগুন ওপরের দিকে যেত, আর একের পর এক পটকাগুলো ফুটতো। মাঝে মাঝে পটকা নষ্ট থাকতো বলে আওয়াজের তালের ব্যত্যয় ঘটতো। যে কারণে এখন শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরুর সংকেত দেওয়া হয়। এই ঐতিহ্য দেশে অদ্বিতীয় ও নজিরবিহীন বলে কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ