Samakal:
2025-12-14@06:57:33 GMT

বাঁধন

Published: 27th, March 2025 GMT

বাঁধন

দ্বিধান্বিত 
যেদিন প্রসব বেদনা উঠল তোমার, সারা হাসপাতালে স্যাভলনের গন্ধ আর যেন সুগন্ধি বাগানের ঘ্রাণ বইছিল। 
অবশ্য তোমার প্রসব বেদনার চাইতে অন্য কোনো একটা কথা কিছুতেই কান স্পর্শ করছিল না। তা শোনার অবস্থাও ছিল না আমার। কিন্তু যত তোমার আর্তচিৎকার প্রকট হয়, যেন ভ্রমছুট হয়, চারপাশে কত মানুষের কত রকম হাহাকার।
তোমার বেদনার চিল্লানি আর কিছু একটা বলতে চাওয়ার শব্দ এমন অন্ধকার বোধ দিচ্ছিল আমাকে, আমার মাথা কাজ করছিল না, শুধু বলছিলাম, একটু সহ্য করো, এইতো পাশে আছি।
কিন্তু ধীরে ধীরে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল, তোমার মুখ, তোমার অবয়বের সাথে আমার দেহের দীর্ঘ সাঁতার, স্মরণে যত আসে যত তত মনে হয়, এই বেদনার অর্ধেক ভার যদি নিতে পারতাম? 
কত কষ্টে তোমাকে পেয়েছি আমি। হাজব্যান্ডের সাথে ছাড়াছাড়ির পরে শূন্যতার দিকে সারাক্ষণ চেয়ে থাকতে, আমি মহাহিংসুটে, দারুণ খুশি ছিলাম তোমাদের এই বিচ্ছেদে। কারণ, তুমি আমাকে ছেড়ে ওর কাছে যখন চলে গেলে, হুহু নদীর দিকে, পুড়ে যেতে সূর্যাস্ত আর মরে যেতে থাকা প্রভাতের দিকে খালি চরাচর বুকে নিয়ে চেয়ে থাকতাম।
কাজ কাকে বলে, ঘুম কাকে বলে, ভুলে গেছিলাম। ফলে প্রচুর ঈর্ষায় প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেছি, কীভাবে তোমাদের বিচ্ছেদ হয়।
দিনরাত শেষে আমার চেষ্টা সফল হলো। একদিন ফিরে এসে বললে, ও প্রচণ্ড ঠকিয়েছে আমাকে, ও মানুষের জাত না.

..
ওকে দেখিয়ে দিতেই মূলত তুমি দ্রুত আমাকে বিয়ে করো।
নার্স সামনে এসে দাঁড়ালে আমি ট্রেচারে তোমাকে আমূল জড়িয়ে ধরি, তুমি নিস্তেজ কণ্ঠে বললে, তুমি শুনবে না কী বলছি?
আমি কান পাতি, সরি, সরি, বলো। 
তোমার চোখে করুণ রক্তাভ অগ্নি। তুমি আমার হাত চেপে বললে, সবসময় কোনো নারীও বলতে পারে না, তার সন্তানের বাবা কে? হয় না এমন? 
অদ্ভুত প্রচ্ছায়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। ভেতরে বল্লম পুঁতে কেউ। পাশ দিয়ে মড়া নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে যেতে থাকে কোনো পরিবার, স্যাভলনের গন্ধ যেন পচা কমোডের ভেতর থেকে উঠে আসে, যেন হাড় চুরচুর হয়, রক্ত বেরোয় না। জানালায় পাঙাশ মাছের পেটের মতো ভোর নামছে।
হতভম্ব বোধে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, যখন ভেতরে চলে যাচ্ছিলে, অদ্ভুত সান্ত্বনা তোমার, জানু, আমি কিন্তু কনফার্ম না।


(আমি খুব চুজি একজন। হাজার ফেসবুক ফ্রেন্ড আছে। আমি বেশির ভাগ অণুগল্প, কবিতা পোস্ট করি। কে লেখা পড়ে আর না পড়ে মন্তব্য করে বুঝি। 
কিন্তু হাতেগোনা যারা আমার লেখা পড়ে মন্তব্য করে, ঘুরেফিরে সেই ছয় সাত, বা আট নয় শুধু তারাই, সব লেখায় কমেন্ট করেন মুগ্ধতা নিয়ে। নিয়মিত। মুখস্থ হয়ে গেছে নাম। বাকি হাজার হাজার চুপ। ছবিতে লাইক চলে, গল্প-কবিতায় মন্তব্য জরুরি, আমার মনে হয়। ফলে, এত হাজার হাজার, কেন? একমাত্র অণুগল্পেই ট্যাগ করতে বাধ্য হই। নইলে এলাম কেন, ফেসবুকে?) 

রূপের গল্প
মেয়েটির চোখের পাগল ছিল সে। প্রোফাইলের ছবিতে তার চোখ দেখেই টানা বিমোহিত হয়েছিল। 
এভাবেই যোগাযোগ। ক্রমান্বয়ে প্রেম।
ছেলেটি মেঘ ও জলস্রোতে ভাসতে থাকে। একদিন মেয়েটি তার দীর্ঘচুলের একটা ছবি পোস্ট করে। 
ছেলেটা কিছুক্ষণ কথা বলার ভাষা খুঁজে পায় না... এ তোমার চুল? হায় হায়! কেটে ছোট করেছ কেন?
আমি প্রথমেই যদি এই চুলের তোমাকে দেখতাম, প্রেমে পাগল হয়ে যেতাম!
এখন তাহলে কী? পাগল হওনি? ধুর, কী যে বলো! আমি কী তেমন মিন করেছি?
ছেলেটার রাত্রির মধ্যে কলরোল ভস্মতার ছড়াছড়ি তাকে অদ্ভুত এক যাতনার মধ্যে ফেলে দেয়। আহা!
ওই চোখের মেয়ের অত সুন্দর দীর্ঘ চুল! যদি থাকত? সে কী তাহলে সেকেলে?
তার বাবা যেমন মার চুল দেখে পাগল হয়ে বিয়ে করেছিলেন, সেও আধুনিক যুগে এসেও...
ছটফট করতে করতে ফোন দেয়, ঘুমোচ্ছিলে?
কেন? আরষ্ট কণ্ঠে মেয়েটি বলে, কিছু বলবে?
মানে, ছেলেটি মশারি পেরোনো ঘরের আলোছায়ায় চোখ ঘোরায়, চুল কাটার বুদ্ধিটা তোমাকে কে দিয়েছিল?
কী? চুল কাটা? আমি নিজের ইচ্ছেয় কেটেছি।
প্রচুর ছেলে আমাকে ফেলে আমার চুলের প্রেমে পড়ত।
আসলে মূল কারণ অন্য, একটা ইন্টারভিউয়ে পড়েছিলাম, অমিতাভ বচ্চন জয়া ভাদুড়ির চুল দেখে প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছিলেন। আমি তাজ্জব! জয়া এটা মেনে নিল? তারা নিজেদের শিক্ষিত দাবি করে? 
এসবকে ভালোবাসা বলে? 
ছেলেটি চুপসে গিয়ে তোতলায়, তোমার চোখের প্রেমে পড়ে কেউ?
আরে? পড়েনি আবার, কিন্তু আমার চোখ যেহেতু, 
বাদ দাও, আসলে এসবকে প্রেম বলে? 
তা ঠিক বলেছ। আসলেই সম্পর্কের মধ্যে মানুষ বড় ব্যাপার, মানুষের মন বড় ব্যাপার। 
রহস্যময় কণ্ঠে হাসে মেয়েটি, সত্যিই তা বিশ্বাস করো? 
ছেলেটির কণ্ঠ যেন চেঁচায়, অবশ্যই।
এখন বলো, আমাদের কবে দেখা হবে? 
মেয়েটি বলে, কত দূরে থাকি, পাসপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কীভাবে দেশে ফিরি?
এইভাবে দিনরাত্রি চলতে থাকে।
ছেলেটা বিভোর হয়ে মেয়েটির চোখ দেখে আর ভাবে, ভাগ্যিস, চোখ ছোটবড় করা যায় না।
দাম্পত্যে সুখী ছিল ছেলেটা। 
মেয়েটিকে এ ব্যাপারটা পুরো গোপন করে গিয়েছিল। 
তার স্ত্রী স্বামীর পরকীয়া টের পেয়ে যায়। এরপর ঝগড়া, অশান্তি, বলা যায় বউয়ের ভালো উপার্জনেই তাদের সংসার চলত।
প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে অপমানবোধ থেকে তার স্ত্রী প্রথমে বাবার বাড়ি চলে যায়, এরপর ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে বলে, আর যদি এক পা এগোও, তবে তোমাকে পুলিশে দেব।
ছেলেটা একদিকে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
কারণ মেয়েটি তাকে বলেছিল অগাস্টে সে দেশে আসবে। 
এখন জুলাই চলছে। 
ছেলেটা পাগলের মতো হাউমাউ করে বলে, এবার এসে তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো, আমি সুইসাইড করব।
হঠাৎ চারপাশ স্তব্ধ। যেন অজগরের মতো পেঁচিয়ে নামতে থাকে অন্ধকার। 
মেয়েটি কোথাও নেই। দিন যায়, মাস যায়... কোনো খবর নেই।
না ফেসবুকে, না ফোনে। ছেলেটা অফিস যাওয়া ভুলে যেতে থাকে। 
দুটো অদ্ভুত চোখ তার চারপাশে দিনরাত চক্রাকারে পাক খেতে থাকে। 
ছেলেটা নিঃসীম এক শূন্যের মধ্যে ঝুলতে থাকে। 
হঠাৎ মধ্যরাতে ফোন, মেয়েটি অস্ফুট কণ্ঠে বলে, আমি আর কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না গো!
মানে? ছেলেটার সর্ব অস্তিত্বে বিদ্যুৎতরঙ্গ ছুটে যায়।
তোতলায় মেয়েটি, আসলে, মানে তোমাকে বলা হয়নি, আমি দুরারোগ্য অসুখে যখন দিনের পর দিন অন্ধ হচ্ছিলাম, তখন একটা ঝুঁকির 
অপারেশন করিয়েছি। পজেটিভ সম্ভাবনা ছিল না। তাও সাহস করেছি। ব্যর্থ হয়েছি।
ছেলেটার কণ্ঠ শুকিয়ে শিরদাঁড়ায় টান পড়ে যেন, সে শব্দ হারিয়ে ফেলে, তুমি আমাকে...
কেন বলিনি? মেয়েটির কণ্ঠ রহস্যময় হয়ে ওঠে, আসলে আমার দৃষ্টি তোমার বিষয় ছিল না। কেন তুলব সে প্রসঙ্গ? 
আমার চোখ কিন্তু দেখতে আগের মতোই আছে।
এত তাজ্জব হচ্ছ কেন? থাকলে হা হা তুমিই তো বলেছিলে, প্রেম থাকলে মানুষ বড় ব্যাপার, তার মন বড় ব্যাপার... v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বড় ব য প র আম র চ

এছাড়াও পড়ুন:

বিজয় যখন কড়া নাড়ছে

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঠিক আগমুহূর্তে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাড়া জাগায়। দেশবাসীসহ বিশ্ব জানতে পারে, জাতিগত গণহত্যার মধ্যেই চলেছিল পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। এখানে সে সময়ের একটি আলোচিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

আত্মসমর্পণের আগে

ঢাকায় বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণের আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী শহরের বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করেছে এবং তাঁদের মধ্যে পঞ্চাশের বেশি লোককে গুলি করে হত্যা করেছে। আকস্মিক সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে নিবিড় পরিকল্পনার আওতায় বাঙালি এলিট নিধনের অংশ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এটা অবশ্যই কমান্ডিং অফিসার জেনারেল নিয়াজিসহ পাকিস্তান হাই কমান্ডের পূর্ণ জ্ঞাতসারে ঘটেছে।

এসব মৃতদেহের আবিষ্কার ঢাকা শহরে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, পাল্টা হত্যাকাণ্ড ও দাঙ্গার জন্ম দিতে পারে, এমনকি মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যেও সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে।

ঢাকার মূল শহরের পাশের রায়েরবাজারে কতগুলো বিচ্ছিন্ন গর্তে নিহত বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়। আমি নিজে ৩৫টি গলিত দেহ দেখেছি। আপাতদৃষ্টে মনে হয়, তাঁরা চার-পাঁচ দিন আগে নিহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি হবে। ঢাকায় অপহরণ করা এ ধরনের লোকের সংখ্যা অন্তত ১৫০ হতে পারে।

ইউপিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রধান হৃদ্​রোগ চিকিৎসক ফজলে রাব্বী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী রয়েছেন। ঢাকার মধ্যবিত্ত এলাকা ধানমন্ডির বাইরে একটি ইটখোলাকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। যদিও কচুরিপানার নীল-সাদা ফুল কর্দমাক্ত জলাশয়ে শোভা পাচ্ছে। স্থানটি লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন। আজ ঢাকার শত শত মানুষ মাটির বাঁধ দিয়ে হেঁটে হেঁটে এখানে এসেছে, তাদের অনেকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে নিরুদ্দিষ্ট স্বজনদের।

বিশিষ্টজনদের অপহরণ করে তুলে নেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকালেই। পাঞ্জাবি সেনাদের কয়েকটি স্কোয়াড নির্দিষ্ট ঠিকানায় হাজির হয়ে নির্ধারিত পুরুষ ও নারীকে সশস্ত্র পাহারায় উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। তাঁদের সম্ভবত রায়েরবাজার ইটখোলায় এনে মাটির বাঁধের পাশে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করেছে, যাতে তাঁরা হুমড়ি খেয়ে নিচের জলাশয়ে পড়ে যান।

ড. আমিনুদ্দিন বেঙ্গল রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান, অক্সফোর্ডের পিএইচডি। পাকিস্তানি সেনারা যখন তাঁকে তুলে নেয়, সেই মঙ্গলবার সকাল সাতটায় তাঁকে শেষবারের মতো দেখা যায়। নাজিউর রহমান বললেন, ‘আমি দুঃখিত, আমাকেও যেতে হচ্ছে, খুঁজে দেখি।’ ততক্ষণে তিনিও উলের মাফলার দিয়ে নাক-মুখ পেঁচিয়ে নিয়েছেন।

গতকাল আমি কেবল তিন ঘণ্টা ঢাকায় ছিলাম, ততক্ষণে ইটভাটার এই খবর তেমন ছড়ায়নি। জনতা উত্তেজিত, তবে আচরণে অদ্ভুত কোমলতা। ভারতীয় সেনাদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছে, গাড়িতে এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে।

সেদিনও অনেক গোলাগুলি হয়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অবস্থানরত সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি তখনো বিস্ফোরণোন্মুখ। বাঙালিরা অভিযোগ করছে, বিহারি এই বিদেশিরা বহু বছর আগে মুসলমান হিসেবে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, তারা বাঙালি হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের সাহায্য করেছে। আট মাস আগে আমি যখন যশোরে ছিলাম, এ কারণেই সেখানে বেসামরিক বিহারিদের হত্যা করা হয়। ঢাকায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড যশোরের হত্যাকাণ্ডের চেয়ে শতগুণ বেশি ভয়াবহ একটি ব্যাপার। কাজেই একধরনের প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপার অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।

ইতিমধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাহারায় সেনানিবাসে বন্দী পাকিস্তানি সেনারা এখনো সশস্ত্র, যদি প্রয়োজন পড়ে! ঢাকা যখন জেনে যাবে পাকিস্তানি সেনারা কত পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তখন দেখা দেবে সত্যিকারের সংকট। যা-ই ঘটুক, পরাজিত পাকিস্তানি সেনাদের জন্য সহানুভূতিপ্রবণ হওয়া বাঙালিদের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এ রকম একটি সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী এভাবে খেলাচ্ছলে অপ্রয়োজনে, উন্মত্তের মতো খুন করতে পারে, তা অবিশ্বাস্য।

যদি পাইকারি হত্যাকাণ্ডকে সংবাদপত্র গণহত্যা আখ্যায়িত করে, তা অবশ্যই ভয়ংকর; কিন্তু পরিকল্পিতভাবে বাছাই করে জাতির সবচেয়ে যোগ্য, বুদ্ধিমান ও গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ ও নারী হত্যার মাধ্যমে যদি জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেওয়া হয়, সেই ‘এলিটোসাইড’ এলিট হত্যা যে আরও বেশি ভয়ংকর।

গত মঙ্গলবারের অনেক আগেই পাকিস্তান শেষ হয়ে গেছে। যেসব কর্মকর্তা এই পরিকল্পনা করেছেন, তাঁরাও তা অবশ্যই জানেন। কাজেই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকেও ধসিয়ে দেওয়া। বহুদিন ধরেই অনুমান করা হচ্ছিল, পাঞ্জাব মরুভূমির রুক্ষ সেনারা বাঙালিদের প্রতি হিংস্র বর্ণবাদী ঘৃণা লালন করে আসছে। এখন দেখা যাচ্ছে, তারা বুদ্ধিভিত্তিক ঈর্ষাও লালন করছে, যার প্রকাশ ঘটেছে এই ব্যাপক হত্যাকাণ্ডে।

ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ: এম এ মোমেন

দ্য সানডে টাইমস, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১

প্রথম আলো, ২৬ মার্চ ২০১১, পুনর্মুদ্রিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ