উপন্যাসে পটভূমির সঙ্গে বোঝাপড়া প্রয়োজন
Published: 27th, March 2025 GMT
কেমন আছেন?
ভালো আছি। তবে বয়স বেড়ে গেছে, তাই হয়তো স্মৃতি কমে যাচ্ছে। এটা নিয়ে মাঝে মধ্যে দুশ্চিন্তা হয়।
শুরুতেই শৈশবের কথা কিছু শুনতে চাই। তখন কীভাবে সময় কেটেছে?
শৈশব আমার ভালো কেটেছে। কেটেছে দুরন্তপনায়। উপভোগ করেছি। সেই সময়টা দারুণ মিস করি। আমার রাজশাহীতে জন্ম। অনেক স্মৃতি। রাজশাহী সিল্ক ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর ছিলেন বাবা। আগে বগুড়াতে ছিলেন, তাই শৈশবের অনেকটা সময় আমার বগুড়াতে কাটে। কী যে অপূর্ব সময় ছিল! থাকতাম করতোয়া নদীর পাশে। চারদিকে নিবিড় প্রকৃতি। তখন স্কুলে পড়ি। যেদিকে মন চায় ছুটে যেতাম। কেউ কিছু বলত না। পাড়ার কোনো মানুষ চোখ রাঙিয়ে কথা বলত না, পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ ছিল না। এতে চিন্তা সমৃদ্ধ করতে পেরেছিলাম। তবে মাঝেমধ্যে ভয়ে থাকতাম। কিন্তু সেই ভয় ঘরবন্দি করে রাখতে পারত না। মাঝেমধ্যেই করতোয়া নদীর কাছে চলে যেতাম। ভীষণ ইচ্ছে হতো নদীর ওপার যেতে। ফুল বা পাখি বা ওপার দেখতে কেমন, তা জানতে। একবার মাঝিকে খেয়াঘাট পার হওয়ার জন্য অনুরোধ করি। সে জানায়, তুমি ছোট মানুষ। সেখানে যাওয়া যাবে না। আমি বলেছিলাম, ওপারে আমাকে নিয়ে যান। আমার খুব ইচ্ছে নতুন গাছ ছুঁয়ে দেখা, ফুলের সৌরভে নিজেকে মাতিয়ে রাখব, ফল ছিঁড়ে বাসায় নিয়ে আসব। একসময় সেখানে যাই। নতুন গাছ, ফুল-পাখির সঙ্গে পরিচিত হই। ফুল আর ফল ছিঁড়ে নিয়ে আসতাম। দূর থেকে কাউকে দেখলে ভয়ে লুকোতাম। যদি কিছু বলে। আবার যখন রাজশাহীতে যেতাম তখন পদ্মার নদীর পারে চলে যেতাম। অনেক সময় দলবেঁধে যেতাম, আবার অনেক সময় একাকী চলে গেছি। যখন মন চায় তখনই সেখানে চলে গেছি। চলে যাওয়ার ভেতর ছিল নদীর প্রতি টান, ছিল প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভালোবাসা।
লেখালেখিতে কীভাবে এলেন?
ছোটবেলা থেকে অনেক বই পড়তাম। বই পড়তে পড়তে আমার একটা কিছু অনুভব হতো। এই অনুভব থেকে মনে হয়েছে, আমি একটু লিখি। আমার মা-বাবা কখনও বলেননি যে এটা নিয়ে লিখতে হবে। লেখালেখিটা আসলে আমার নিজের চিন্তা থেকে হয়েছে।
আপনার বিখ্যাত উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’-এর প্রেরণা কারা?
আমার স্বামী আনোয়ার হোসেন খান একজন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ নিয়ে অনেক স্মৃতিচারণ করতেন। আমি সেসব গল্প নিজের ভেতর আত্মস্থ করতাম। আশপাশে অনেকেই ছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতেন। সেসব কথার মালা গেঁথে হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাস লিখি। সেখানে নারী মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে নিজের সন্তানকে বিলিয়ে দিয়েছে। এসব অনেক ঘটনা উপন্যাসের ভেতর নিয়ে এসেছি। আমার স্বামী ও আশপাশের মানুষ এবং মুক্তিযুদ্ধ এই উপন্যাস লেখার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
উপন্যাস নির্মাণের আগে থেকেই ঘটনা সাজিয়ে রাখেন, নাকি লিখতে লিখতে তৈরি হয়?
উপন্যাস লেখার জন্য অবশ্যই আগে থেকে প্রেক্ষাপট নির্মাণ করতাম। লিখতে বসে নির্মাণ হবে, এমন সহজ করে কখনও ভাবিনি। উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখককে ভেবেচিন্তে, সাজিয়ে লিখতে শুরু করতে হবে।
লেখালেখির জন্য নির্দিষ্ট স্থানে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন, নাকি যে কোনো স্থানেই লেখা হয়?
লেখালেখির নির্দিষ্ট স্থান ছিল না। যেখানে খুশি সেখানে বসে লিখতে পারতাম।
নির্দিষ্ট সময় ছিল কি? দিনে বা রাতে কখন বেশি লিখতেন?
নির্দিষ্ট সময় ছিল। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন মাধ্যমে লেখা চাইত। তখন সেই সময় লেখা দিতাম। বিশেষ করে আমি বাংলা একাডেমিতে চাকরি করার সময় অনেক লেখা হয়েছে। সকালে, দুপুরে, বিকেলে বা রাতে নির্জনতায় লিখতে ভালো লাগত, এখনও লাগে।
বর্তমান তরুণদের বই পড়ার অবকাশ পান? এ নিয়ে কিছু বলা সম্ভব?
বই তো কিছু পড়া হয়। কিন্তু বয়স তো বেড়েছে, স্মৃতিশক্তি সব সময় কাজ করে না আগের মতো।
তরুণরা কেমন লিখছে?
তরুণরা ভালো লিখছে। তরুণদের কলমে আমাদের সাহিত্য এগিয়ে যাচ্ছে।
তরুণ লেখকদের জন্য আপনার পরামর্শ?
লেখাটা তাদের সঞ্চয়। তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের যা কিছু অর্জন, বেঁচে থাকার সূত্র ধরে, তা যেন লেখায় আসে। সবার সঙ্গে দেখাশোনা করে, চারপাশ
দেখে উপলব্ধিটুকু লেখার ভেতর আনা উচিত। নতুন ভাবনার দুয়ার খুলতে হবে। পুরোনো কিছুর
সঞ্চয় ভালো হবে না। নতুন ভাবনা বাংলা সাহিত্যকে নতুন পথ দেখাবে। উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে পটভূমি ও পটভূমির সঙ্গে বোঝাপড়া আগে ঠিক করা
দরকার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপন য স ল খ র র জন য অন ক স
এছাড়াও পড়ুন:
বন্ধুগো শোনো...
শ্রোতা প্রাণ খুলে গাইছে, কখনও ফেটে পড়ছে উল্লাসে– এমন দৃশ্যের সাক্ষী হতে চান প্রায় সব শিল্পী। দিলশাদ নাহার কনা এর ব্যতিক্রম নন। নন্দিত এই শিল্পীর চাওয়া পূরণ হয়েছে বহু বছর আগেই; বরং তাঁর গাওয়া গানগুলোর সঙ্গে অনুরাগীদের উল্লাসে মেতে ওঠার দৃশ্য প্রতিনিয়ত দেখা যায়। শুধু তাই নয়, এমন অনেক গান আছে, যা দীর্ঘ সময় শ্রোতামনে অনুরণন তুলে যাচ্ছে। যার সুবাদে কনা নিজেও রপ্ত করে ফেলেছেন উৎসব আয়োজনগুলো জমকালো করে তোলার মন্ত্র। বেশি দূরের নয়, সদ্য পেরিয়ে আসা ঈদ আর বৈশাখী আয়োজনের দিকে যদি নজর দিই। তাহলে দেখা যাবে এই দুই উৎসবের জনপ্রিয় গানগুলোর বেশির ভাগই কনার গাওয়া। শ্রোতার মুখে মুখে ফিরছে ‘জ্বীন-৩’ সিনেমায় ইমরানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর ‘কন্যা’ গানটি। পাশাপাশি ঈদের সিনেমা ‘জংলি’-তে নন্দিত সুরকার প্রিন্স মাহমুদের কথা-সুর ও সংগীতায়োজনে গাওয়া ‘বন্ধুগো শোনো’ গানটিও প্রশংসা কুড়িয়ে নিচ্ছে। এই গানেও কনার সহশিল্পী ইমরান। এর বাইরেও আসিফ আকবরের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া অডিও গান ‘ভীষণরকম ভালোবাসি’, আরিটিভির ‘আর মিউজিকে’ অনুষ্ঠানে গাওয়া ফিউশন গান ‘বাউলা কে বানাইলো রে’, ‘মন দিতে চাই’ নাটকে ইমরানের সঙ্গে গাওয়া ‘ভালোবাসা এমনই হয়’, ‘পায়েল’ নাটকে সালমান জাইমের সঙ্গে গাওয়া ‘বুকে লাগে টান’, ‘মন দুয়ারী’ নাটকে নাজির মাহমুদের সঙ্গে গাওয়া ‘তোমার ব্যথায় আমি’ এবং ‘হৃদয়ে রেখেছি গোপনে’ নাটকে ইমরানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুই আমার ভালোবাসা’সহ আর বেশ কিছু গান শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। তাই সময়টা যে এখনও কনার দখলে, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। প্রায় দুই দশক ধরে গানের ভুবনে কনার বিচরণ। দীর্ঘ সংগীত সফরে শিশুশিল্পী থেকে হয়ে উঠেছেন একজন পরিণত ভার্সেটাইল শিল্পী। তা সম্ভব হয়েছে গানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর নিরলস সংগীতচর্চার মধ্য দিয়ে। শ্রোতার কাছে তার সব নিবেদন। সে কারণে আমরা তাঁকে দেখি, দিনমান দেশ-বিদেশের মঞ্চে ছুটে বেড়াতে। গানে গানে সিনেমা, নাটক, অ্যালবাম, বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল থেকে শুরু করে রেডিও, টিভি আয়োজনসহ সব মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁর কণ্ঠ। খ্যাতির মোহে নাকি সাত সুরের মায়াজালে বাঁধা পড়েছেন বলে এই ব্যস্ততা? সে প্রশ্ন করলে কনা হেসে বলেন, ‘খ্যাতির মোহে না, শিল্পী পরিচয় ভালোবাসি বলেই সংগীতে ডুবে আছি। শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছি বলে তাদের প্রত্যাশা পূরণের দায় অনুভব করি। তাই শ্রোতা যতদিন নতুন কিছু চাইবেন এবং চেষ্টা করে যাব তাদের নতুন কিছু দেওয়ার।’ প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে এসব মাধ্যমে সরব থাকার চেষ্টা, তা কি মনের মধ্যে বাড়তি কোনো চাপ তৈরি করে না? ‘একদমই না। কারণ যখন যা করি, তা আনন্দ নিয়েই করি। তাই কোনো কাজে আলাদা কোনো চাপ অনুভব করি না। তা ছাড়া জনপ্রিয়তার মোহে যে কোনো কাজ করার ইচ্ছা কখনও ছিল না। তাই প্রতিটি কাজে থাকে যত্ন ও ভালোবাসার ছাপ।’ কনার এ কথায় বোঝা গেল, সংগীতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা নিবিড় ভালোবাসার। তাই দিনরাত গানের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসেন। এ কারণে গায়কীতে বারবার নিজেকে ভেঙে নতুনভাবে উপস্থাপন করে চলেছেন। সে কারণে আধুনিক মেলো-রোমান্টিক গান থেকে শুরু করে রক, পপ, টোকনো, ফোক ফিউশনসহ বিভিন্ন ধাঁচের গান তাঁর কণ্ঠে শোনার সুযোগ পান সংগীতপ্রেমীরা। আগামীতেও সেই সুযোগ পাবেন– সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কনা নিজে।