স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন
Published: 27th, March 2025 GMT
এখন থেকে স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে তাদের ব্যবসাকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে পারবেন। একজন উদ্যোক্তা বিদেশে আইনগত কোনো সত্তায় বিনিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার বিদেশে নিতে পারবেন। এর জন্য আর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগবে না। তবে বৈদেশিক মুদ্রা নিজস্ব উৎস থেকে নিতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ করে বা পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার মাধ্যমে নেওয়া যাবে না। এ ছাড়া এ ধরনের কোম্পানি বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে সোয়াপ পদ্ধতিতে শেয়ার বিনিময় করতে পারবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না লাগলেও কোন কোন শর্তে ব্যাংকগুলো গ্রাহকের পক্ষে বিদেশে তহবিল পাঠাবে, তা প্রজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে অনুমোদনের ভিত্তিতে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করা যায়। শুধু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের আবেদন করতে পারে। বিনিয়োগ করতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান মাত্র ২৩টি।
স্টার্টআপ হলো নতুন এমন ব্যবসায়িক উদ্ভাবন, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্টার্টআপ উদ্যোগ উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, দেশের স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে তাদের মাধ্যমে দেশে বিদেশিদের বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক মুদ্রা আসতে পারে। বিনিয়োগ সম্মেলনের ঠিক আগে এ কারণে এই উদ্যোগ নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বিদেশি স্টার্টআপে ক্ষুদ্র বিনিয়োগের পাশাপাশি নিজস্ব শেয়ার বা সিকিউরিটিজের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানির শেয়ার ‘সোয়াপ’ পদ্ধতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সোয়াপ বা অদলবদল পদ্ধতির মাধ্যমে শেয়ার বিনিময় হবে। এতে দেশের বাইরে কোনো অর্থ নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। বরং বিদেশিরা বাংলাদেশি কোম্পানির শেয়ার পাবেন। আর বাংলাদেশি উদ্যোক্তা পাবেন বিদেশি কোম্পানির শেয়ার। এভাবে পাওয়া শেয়ারও বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, অল্প কিছু ডলার বিনিয়োগ করে বিদেশে কোম্পানির অংশীদার হওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের মূলধনি হিসাব নিয়ন্ত্রিত থাকায় এ ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। যে কারণে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর কার্যকারিতা ও সফলতার ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পালনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো বাইরে বিনিয়োগের অর্থ পাঠাতে পারবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে না। এতে দীর্ঘ মেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রাপ্রবাহ বাড়বে। কেউ অপব্যবহার করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদেশে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনকারীর উদ্ভাবনী ধারণা থাকতে হবে, যা বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণসহ পরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও আয় নিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করবে। ব্যাংকগুলোকে উদ্ভাবন, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা, বিজনেস মডেল, দেশের সম্ভাব্য আর্থিক সুবিধা ইত্যাদি বিবেচনা করে তহবিল পাঠাতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।