Samakal:
2025-04-22@02:31:40 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

Published: 27th, March 2025 GMT

ব্যবসায় সুদিন নেই বেজ নারীদের

আগে ঈদ এলে বেচাকেনা কয়েক গুণ হতো। এখন গ্রামের নারীরা হাট-বাজার তথা শহর থেকে মালপত্র কিনে ফেলেন। তাই আগে থেকে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। কোনো দিন ২-৩শ, কোনো দিন বেশি বেচাকেনা হলে ৪-৫শ টাকা আয় করা যায়। এ আয় দিয়ে নিত্যদিনের খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়ে। জানাচ্ছিলেন বেজ (বেদে) সম্প্রদায়ের নেওয়ারুন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরার মতো গরিব মাইনষের ঈদ-পরব নাই।’ 
নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করা বেজ সম্প্রদায়ের মানুষের পরিবার চলে নারীর উপার্জনে। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় নৌকা ছেড়ে তাদের একাংশ স্থায়ী ঠিকানার সন্ধান পেলেও ভাগ্যের চাকার বদল ঘটেনি। 
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা তীরের নতুনবস্তী গ্রামের খাসভূমিতে বসবাস করছে কয়েকশ বেজ পরিবার। প্রতিদিন সকাল হলেই বিভিন্ন বয়সী শতাধিক নারী মাথায়  পণ্যসামগ্রীর বোঝা নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের উদ্দেশে বের হোন। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চুড়ি-ফিতা, নারীর অন্তর্বাস, কসমেটিক্স, ইমিটেশন ও সিরামিকের তৈজসপত্র। প্রত্যন্ত লোকালয়ে মাথায় বোঝা নিয়ে ঘুরে বিক্রির আয়ে চলে তাদের নিত্যদিনের পারিবারিক খরচ।
বেজ সম্প্রদায়ের এমন এক নারী ফুলতেরা বেগম (৬০)। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা তিনি। গত ২০ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর চর এলাকায় বসবাস করে আসছেন। প্রতিদিনের জীবন সম্পর্কে ফুলতেরা বেগম বলেন, ‘রাত পোহাইলে কেমনে ভাত চাইট্টা (অল্প-স্বল্প) খাইয়া মাথায় বোঝা লইয়া বাইর হইতাম এই চিন্তায় থাকি। হাঞ্জা (সন্ধ্যা) হইলে বাড়িত আইয়া রান্না-ভারা করে জামাই (স্বামী), হুরুতারে (ছেলে-মেয়ে) খাওয়াইয়া কেমনে চাটিত (বিছানায়) পড়তাম এটাই চিন্তা থাকে। শরীর এর বাইরে অন্য কিছু সায় দেয় না।’ 
ঈদ উদযাপনের বিষয়ে কথা হয় এ সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গে। তারা একই সুরে বলেন, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের আবার ঈদের আনন্দ! ওইদিন তারা গাঁওয়ে (ব্যবসার উদ্দেশে গ্রামে বের হওয়া) যেতে পারেন না, আয়-উপার্জনও হয় না। এদিন তাদের ব্যবসা হয় না। 
ঈদ কোন দিন আয় আর কোন দিন যায় ইতা (এসব) নিয়ে তেমন ভাবনা-চিন্তা নাই– বললেন বেজ সম্প্রদায়ের লাকি বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ‘আগে মা-মই (খালা) ও দাদি-নানিরা নৌকায় থাইক্কা একেক জায়গায় একেক সময় নৌকা ভিড়াইয়া চুড়িবাঙ্গী (চুড়ি-ফিতা) বেইচা জীবন-জীবিকা চালাইতেন। এখন দিনের পরিবর্তন হইছে, গাঙ-বিল ভরি গেছে। আগের মতো অবাদে (অবাধে) নৌকা চলাচলের সুযোগ কমে গেছে। এখন চর এলাকায় সরকারি (খাস) জমিতে ঘর বানাইয়া তারা কয়েকশ পরিবার থাকে। দিন আনি দিন খাই, সকলে মিলেমিশে এক জাগাত এখন বসবাস করি। এই-ই আমাদের আনন্দ।’ 
সিরামিকের থালা-বাটি, কাচের গ্লাস গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন মাহফুজা বেগম (৫০)। তিনি জানান, তাঁর ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাঁকে ঈদ উপলক্ষে একটা শার্ট-কিংবা প্যান্ট কিনে দিতে হবে। না হলে বন্ধুদের কাছে শরমিন্দা (লজ্জা) পাবে ছেলে। 
ব্যবসায় আগের সুদিন নেই জানিয়ে আক্ষেপ জানিয়ে সেবিনা বেগম (৪০) জানান, আগে বেজ সম্প্রদায়ের নারীরা গ্রামে গ্রামে চুড়ি-ইমিটেশন সামগ্রী বিক্রির জন্য বেরিয়ে গেলে তাদের স্বামীরা নৌকায় ছেলেমেয়েদের দেখভাল করতেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় এবং স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠায় সংসারে আয় বাড়তে তাদের স্বামীরাও নানা পেশায় জড়িয়েছেন। ছাতা মেরামত, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন পরিবারের পুরুষরা। এতেও পরিবারের ভরণ-পোষণে কষ্ট হয়। ছেলেমেয়ের জন্য ঈদে নতুন কাপড় কেনা দূরে থাক, একটু সেমাই আর মুরগির মাংস দিয়ে খাওয়াতে পারলেই গরিবের আনন্দ। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস পর ব র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

তপ্ত দুপুরে হাওরের পথে

মাঝ আকাশে সূর্য। প্রখর তীব্রতা নিয়ে যেন ঝরছে রোদ। চামড়াপোড়া এমন থমথমে গরমেও মাঝেমধ্যে শীতল বাতাস শরীর ধুয়ে দিচ্ছে! সুদূরে ডাকছে পাখি। পানি কমে চিকন হয়ে আসা খালে চুপটি মেরে শিকারের আশায় দাঁড়িয়ে আছে একঝাঁক সাদা বক। রাস্তার ধারে ফুটে আছে পিউম ফুল। ডানে-বাঁয়ে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ ধানখেত। খেতে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল-করচে গজিয়েছে কচি পাতা।

সম্প্রতি হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর ঘুরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। বর্ষায় হাওরের যে রূপ, শুকনা মৌসুমে তা একেবারেই বিপরীত। যে হাওর বর্ষায় অনেকটা সমুদ্রের মতো, শুকনা মৌসুমে সেখানেই মাটি ফেটে চৌচির। কিছু খাল-নদীতে পানি থাকলেও তা যৎসামান্য। আবার কোনো কোনো জলাশয় তো শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে! কোথাও একাকী, আবার কোথাও দলবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে হিজল-করচগাছ।

সদ্য শেষ হওয়া চৈত্র মাসের এক দুপুরে হাওরের আঁকাবাঁকা পাকা-কাঁচা রাস্তা ধরে এই প্রতিবেদক যান। বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে রওনা হয়ে লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবন (খরতির জঙ্গল) পেরিয়ে জেলার আজমিরীগঞ্জের পাহাড়পুর বাজার পর্যন্ত যাওয়ার পথে দেখা মেলে শতাধিক গ্রাম, গোটা দশেক হাওর-নদী-বিল-খালের। পথে পথে সৌন্দর্য। মাঠ, হাওরের উন্মুক্ত প্রান্তর যেন এখন সবুজ ঘাসের গালিচা। সেখানে চরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। বক, শামুকখোল পাখিরা জলাশয়ে একসঙ্গে খুঁজছে খাবার।

বানিয়াচং উপজেলা সদর পেরিয়ে হাওরের মূল ভূখণ্ড ঢুকতেই স্বাগত জানায় পাকা একটি সড়ক। সড়ক ধরে কেউ-বা হেঁটে যাচ্ছেন, কেউ-বা যাচ্ছেন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে চেপে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বর্ষায় এই সড়ক পানির নিচে ডুবে থাকে আর হেমন্তে ভেসে ওঠে। সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা, কোথাও আবার পিচহীন। গবাদিপশুর জন্য ঘাস কেটে কেউ-বা সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছেন, কেউ-বা সড়ক-লাগোয়া খাল-নালায় ব্যস্ত মাছ শিকারে। মাথার ওপরে চক্কর খাচ্ছে চিল, সারস, কাক, ফেসকুন্দাসহ নানা জাতের পাখি।

বানিয়াচং উপজেলার খরতির জঙ্গলে হিজল-করচবাগ

সম্পর্কিত নিবন্ধ