Samakal:
2025-03-30@18:57:44 GMT

জেলে পল্লিতে মলিন মুখ

Published: 27th, March 2025 GMT

জেলে পল্লিতে মলিন মুখ

পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী সিরাজ মিয়ার স্ত্রী। বিয়ের পর আলাদা সংসার হয়েছে বড় ছেলের। অন্য চার ছেলে কর্মক্ষম নয়। বাধ্য হয়ে রান্নাবাড়া করছেন ৬০ বছর বয়সী সিরাজ। নদীতে মাছ ধরা ছাড়া অন্য কাজ শেখেননি। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছয়জনের সংসার চালাতে তাই হিমশিম খাচ্ছেন লক্ষ্মীপুর সদরের চর রমণীমোহন গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ। 
কয়েক দফায় নদীভাঙনের শিকার সিরাজ এখন ঘর বেঁধেছেন নদীতীরের সরকারি জমিতে। এক মাস ধরে আয়ের পথ বন্ধ। আসন্ন ঈদের হাসি নেই তাঁর মুখে। ছেলেদের গায়ে নতুন জামা দেবেন দূরের কথা, ভালো খাবারই জোটে না কতদিন! ঘরে সরকারি সহায়তায় চাল ও রান্না করা ডাল ছাড়া কিছুই নেই। 
মঙ্গলবার এই গ্রামের কয়েকটি পরিবারের একই দশা দেখা গেছে। তাজল ইসলাম নামের আরেক জেলের ঘরে চালও ছিল না। ধারদেনা করে কোনোমতে পরিবার-পরিজনের খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। 
তিনি বললেন, ‘এ বছরের ঈদ আমাদের জন্য নয়। বছরে একবার ঈদে ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনে দিই, এবার তা-ও পারিনি।’
জেলেসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১০০ কিলোমিটার নদীতে দুই মাসের জন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সব জেলের আয়ের পথ থমকে গেছে। ফলে আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের উৎসব পালন করবেন, না দেনা পরিশোধ করবেন– এ নিয়েই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন জেলেরা। 
জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে চারটি উপজেলাই। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতির মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় জেলে সংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। যদিও তাদের মধ্যে সরকারি তালিকায় নিবন্ধিত আছেন ৪৩ হাজার ৪৭২ জন। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৩৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য ২ হাজার ২৬৭ টন ভিজিএফের চাল চাল বরাদ্দ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার মাস প্রতি পরিবার চাল পাবে ৪০ কেজি করে ১৬০ কেজি। যদিও প্রায় সমপরিমাণ জেলে এই সুবিধার বাইরে থেকে যান। 
সরকারের চালে সংসারের সামান্য সুবিধা হলেও অন্য জিনিসপত্র জোগাড়ে এ সময়টিতে বেগ পেতে হয়। রমণীমোহনের জেলে তাজলের পরিবারে সদস্যসংখ্যা ৮ জন। চার ছেলে ও দুই মেয়ে তাঁর। তাদের মধ্যে ২২ বছর বয়সী বড় ছেলে সুজন ভ্যানচালক। তিনিই সংসারের জন্য কিছুটা খরচ দিতে পারেন। এই পরিবারে দিনে চালই লাগে ৬ কেজির মতো। তাজল বলেন, ঈদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেবেন কোথা থেকে, ফিরনি-শেমাই কেনার পয়সাই তো নেই। 
একই গ্রামের অপর জেলে বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী মিনার বেগম বলেন, অন্যদিনের সঙ্গে ঈদের দিন আলাদা করার কোনো উপায় তাদের নেই। নদীতীরের সরকারি জমিতে তোলা ঘরেই থাকেন। এখানে দুই মেয়ে, স্বামী-শাশুড়ি নিয়ে তাঁর সংসারে সদস্য পাঁচজন। স্বামীর আয়েই চলে সংসার। নদীতে মাছ ধরা না গেলে আয় বন্ধ। তখন চুলাই জ্বলে না ঠিকমতো। 
অন্যের বাড়িতে কাজ করেন মিনার বেগম। সেখান থেকে যে অল্প সহায়তা পান, তা দিয়েই দুই মেয়ে ও শাশুড়িকে খেতে দেন। স্বামী-স্ত্রীতে কোনোদিন আধাপেটা খেয়ে থাকতে হয়। দুই বেলা দুই মুঠো ভাত জোগাড় নিয়েই যত দুশ্চিন্তা। ঈদ নিয়ে ভাবার ফুরসত নেই। 
চর রমণীমোহন ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নয়ন আক্তার বলেন, এ বছর মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় জেলেপল্লিতে হতাশা বিরাজ করছে। ভিজিএফের চাল দেওয়ায় কিছু জেলের স্বস্তি হয়েছে। আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এসব নিয়ে যেতেন। এবার এমন অভিযোগ নেই। 
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, জেলেদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ হচ্ছে। আশা করি ঈদ আনন্দময় হবে। ২৮ হাজার ৩৪৪ জেলে পরিবারের জন্য বরাদ্দ এসেছে। নিষেধাজ্ঞার চার মাসে মোট ১৬০ কেজি করে সহায়তা পাবেন তারা। তবে ঈদের উপহার হিসেবে বিতরণের কোনো বরাদ্দ নেই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘সুপার সানডেতেও’ পারল না ধোনির চেন্নাই, হাসারাঙ্গার ঘূর্ণিতে রাজস্থানের স্বস্তি

বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ‘শুক্রবার রাতের ব্লকবাস্টারে’ অসহায় আত্মসমপর্ণ করেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। সেই ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারের নয় নম্বরে নেমে সমালোচিত হয় ধোনি ও চেন্নাইয়ের টিম ম্যানেজমেন্ট।

কাল অবশ্য নিজের স্বচ্ছন্দ্যের পজিশন সাতেই ফিরেছেন ধোনি। কিন্তু একটি করে চার ও ছক্কায় তাঁর ১১ বলে ১৬ রান কোনো কাজে আসেনি। ‘সুপার সানডেতে’ চেন্নাইও পেরে ওঠেনি। ম্যাচ কিছুটা জমিয়ে তোলার আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত রাজস্থান রয়্যালসের কাছে ৬ রানে হেরে গেছে।

গুয়াহাটিতে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ১৮২ রান করে রাজস্থান। চেন্নাই ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রানে থামে। বোলিংয়ে রাজস্থানের নায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। লঙ্কান এই লেগ স্পিনার ৩৫ রানে ৪ উইকেটে নিয়ে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন। তবে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের (৩৬ বলে ৮১ রান) সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা হাসারাঙ্গার সতীর্থ নীতীশের হাতে উঠেছে।

এবারের আইপিএলে এটিই রাজস্থানের প্রথম জয়। আর চেন্নাইয়ের টানা দ্বিতীয় হার। আজকের জয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে তলানিতে নামিয়ে পয়েন্ট তালিকার নয়ে উঠে এসেছে রাজস্থান। চেন্নাই আছে সাতে।

 সংক্ষিপ্ত স্কোর

রাজস্থান রয়্যালস: ২০ ওভারে ১৮২/৯

(নীতীশ ৮১, পরাগ ৩৭, স্যামসন ২০, হেটমায়ার ১৯; নুর ২/২৮, পাতিরানা ২/২৮, খলিল ২/৩৮, জাদেজা ১/১০)।

চেন্নাই সুপার কিংস: ২০ ওভারে ১৭৬/৬

(রুতুরাজ ৬৩, জাদেজা ৩২*, ত্রিপাঠি ২৩, দুবে ১৮, ধোনি ১৬; হাসারাঙ্গা ৪/৩৫, আর্চার ১/১৩, সন্দ্বীপ ১/৪২)।

ফল: রাজস্থান রয়্যালস ৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নীতীশ রানা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ