জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত বদলে জনপ্রতি ১২ ডলার নির্ধারণ করেছে, আগে যেখানে ছিল সাড়ে ১২ ডলার। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য দিয়েছে।

সংশোধিত ব্যবস্থার অধীনে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা প্রতি মাসে জনপ্রতি ১২ ডলার করে পাবেন। আগে তাদের বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ৫০ ডলার। 

চলতি মাসের শুরুতে ডব্লিউএফপি সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছিল, জরুরি আর্থিক সহায়তার ঘাটতির কারণে এপ্রিল মাসে খাদ্য রেশন অর্ধেক করে জনপ্রতি মাত্র ৬ ডলার করতে তারা বাধ্য হতে পারে। ২০২৩ সালেও একই রকম হ্রাস করা হয়েছিল। ওই সময় খাদ্য রেশন জনপ্রতি ৮ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছিল। অপুষ্টি মারাত্মক রূপ নেওয়া তা আবার বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলারে ফিরিয়ে আনা হয়।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী জয়নুল মোস্তফা রয়টার্সকে বলেন, “আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমরা এখন অন্তত বেঁচে থাকতে পারব। অন্যথায়, আমরা কেবল অনাহারে থাকতাম।”

ডব্লিউএফপির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা ‘দাতাদের কাছ থেকে সময়োপযোগী অনুদানের মাধ্যমে’ তহবিলের ঘাটতি পূরণ করেছেন। তবে তিনি এর বিশদ জানাননি।

পৃথকভাবে, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ডব্লিউএফপির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন ডলারের নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে সম্প্রতিক জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করেন, তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে যান। তখন খাদ্য সহায়তা কমানো নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছিলেন গুতেরেস। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিপীড়িত ও বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জোরালো আহ্বান রেখেছিলেন। 

১৪ মার্চ আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্প পরির্দশনের সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রোহিঙ্গা জনগণের দুর্ভোগ এড়াতে প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিতে জাতিসংঘ সম্ভাব্য সবকিছু করবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছিলেন, “আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি যে, এটি (সংকট) এড়াতে আমরা সবকিছু করব এবং তহবিল প্রাপ্তির ব্যাপারে আমাদের সহায়তা করতে পারে; এমন সব দেশের সঙ্গে আমি কথা বলে যাব।”

‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের কথা ভুলে যাবে- এটা মেনে নেওয়া যায় না’ মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, (রোহিঙ্গাদের বিষয়ে) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি সোচ্চার হয়ে কথা বলবেন।

গুতেরেস বলেন, “রোহিঙ্গাদের জরুরিভিত্তিতে আরো সহায়তা প্রয়োজন। (শরণার্থী শিবিরে) এই জনগোষ্ঠীর মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করার জন্য এই সহায়তার খুবই প্রয়োজন।”

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, “মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকারকে সম্মান জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব কিছু করা জরুরি।”

জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের বাংলাদেশ সফরে এসে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কয়েক দিনের মাথায় সুখবর পেল রোহিঙ্গারা, আপাতত চাপমুক্ত হলো বাংলাদেশও।

মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের মুখে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। 

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত সাড়ে সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। উরপন্তু ২০২৪ সালেও মিয়ানমার থেকে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

আশ্রয় শিবিরগুলোর তত্ত্বাবধানকারী বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাসসকে বলেছেন, কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক ১২ মার্কিন ডলার ও ভাসানচরে অবস্থানরতদের জন্য ১৩ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার কথা চিঠি দিয়ে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।

মিজানুর রহমান আরো বলেন, ডব্লিউএফপি নিশ্চিত করেছে যে তহবিল সংকট সত্ত্বেও খাদ্য সহায়তা একই রকম থাকছে। ডব্লিউএফপি এর আগে তহবিল সংকটের কথা বলে রোহিঙ্গাদের জন্য এপ্রিল থেকে মাসিক খাবারের বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে জনপ্রতি ৬ ডলারে নামানোর কথা জানিয়েছিল। চলতি মাসের ৫ তারিখ খাদ্য সহায়তা কমানো-সংক্রান্ত ডব্লিউএফপির একটি চিঠি পেয়েছিল আরআরআরসি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় জানিয়েছে, খাদ্য রেশন শরণার্থীদের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।

এক বিবৃতিতে কার্যলয় বলেছে, “আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে এই জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচিগুলো দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা যায়।”

ঢাকা/শাহেদ/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য বল ছ ল ন শরণ র থ সহ য ত তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘সুপার সানডেতেও’ পারল না ধোনির চেন্নাই, হাসারাঙ্গার ঘূর্ণিতে রাজস্থানের স্বস্তি

বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ‘শুক্রবার রাতের ব্লকবাস্টারে’ অসহায় আত্মসমপর্ণ করেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। সেই ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারের নয় নম্বরে নেমে সমালোচিত হয় ধোনি ও চেন্নাইয়ের টিম ম্যানেজমেন্ট।

কাল অবশ্য নিজের স্বচ্ছন্দ্যের পজিশন সাতেই ফিরেছেন ধোনি। কিন্তু একটি করে চার ও ছক্কায় তাঁর ১১ বলে ১৬ রান কোনো কাজে আসেনি। ‘সুপার সানডেতে’ চেন্নাইও পেরে ওঠেনি। ম্যাচ কিছুটা জমিয়ে তোলার আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত রাজস্থান রয়্যালসের কাছে ৬ রানে হেরে গেছে।

গুয়াহাটিতে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ১৮২ রান করে রাজস্থান। চেন্নাই ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রানে থামে। বোলিংয়ে রাজস্থানের নায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। লঙ্কান এই লেগ স্পিনার ৩৫ রানে ৪ উইকেটে নিয়ে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন। তবে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের (৩৬ বলে ৮১ রান) সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা হাসারাঙ্গার সতীর্থ নীতীশের হাতে উঠেছে।

এবারের আইপিএলে এটিই রাজস্থানের প্রথম জয়। আর চেন্নাইয়ের টানা দ্বিতীয় হার। আজকের জয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে তলানিতে নামিয়ে পয়েন্ট তালিকার নয়ে উঠে এসেছে রাজস্থান। চেন্নাই আছে সাতে।

 সংক্ষিপ্ত স্কোর

রাজস্থান রয়্যালস: ২০ ওভারে ১৮২/৯

(নীতীশ ৮১, পরাগ ৩৭, স্যামসন ২০, হেটমায়ার ১৯; নুর ২/২৮, পাতিরানা ২/২৮, খলিল ২/৩৮, জাদেজা ১/১০)।

চেন্নাই সুপার কিংস: ২০ ওভারে ১৭৬/৬

(রুতুরাজ ৬৩, জাদেজা ৩২*, ত্রিপাঠি ২৩, দুবে ১৮, ধোনি ১৬; হাসারাঙ্গা ৪/৩৫, আর্চার ১/১৩, সন্দ্বীপ ১/৪২)।

ফল: রাজস্থান রয়্যালস ৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নীতীশ রানা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ