সামনে মাছ ধরা বন্ধের সময়, নারী মৎস্যজীবীদের নিয়ে ভাবুন
Published: 27th, March 2025 GMT
নদীমাতৃক বাংলাদেশে এখনো ‘মাছে ভাতে’ বাঙালির পরিচয়। গ্রাম থেকে নগর—সবখানেই এ দেশের মানুষের খাদ্যজাত প্রোটিনের মূল উৎস হচ্ছে মাছ।
শুধু দারিদ্র্যের সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ করেই নয়, অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের খাবারের থালায় মাছ তুলে দেয় এই মৎস্যজীবী সম্প্রদায়।
ঝড়ঝঞ্ঝা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে অনেক মাছ ধরার নৌকাই আর কূলে ফেরে না। এই জেলেদের মধ্যে রয়েছে নৌকাবাসী সম্প্রদায়ও। নৌকা যাদের শুধু জীবিকার সম্বল নয়, সেই সঙ্গে তাদের আবাসস্থল ও পরিবার।
মৎস্যজীবী বা জেলে শব্দগুলো শুনলেই আমাদের কল্পনায় রোদে পোড়া কর্মঠ পুরুষের অবয়ব ভেসে উঠলেও প্রকৃত চিত্রে বিপুলসংখ্যক নারীও এই পেশায় সম্পৃক্ত।
পরিবারের পুরুষদের সঙ্গে তাঁরাও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মাছ ধরা থেকে শুরু করে সংরক্ষণ ও বিপণন পর্যন্ত।
আরও পড়ুননিঝুম দ্বীপে এই নৈরাজ্য বন্ধ করুন০৫ মার্চ ২০২৫তবু সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে এখনো তাঁরা অনেক ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে নারীরা প্রতিনিয়ত সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকেন।
তাঁদের সন্তানদের জন্যও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ। পেশাজীবী হিসেবে মৎস্যজীবীদের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার একটি বিশেষ পরিচয়পত্র বা ‘জেলে কার্ড’ প্রদান করে থাকে, যার মাধ্যমে তাঁরা সরকারি সুবিধা ও ভর্তুকি পেয়ে থাকেন।
প্রতিবছর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল (৬০ দিন), ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই (৬৫ দিন), ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বরসহ (২২ দিন) আরও কিছু স্বল্পকালীন সময়ব্যাপী সরকারিভাবে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এই সময়কালে জেলে কার্ডধারীরা সরকারি ভর্তুকি পান।
সীমিত আকারে শুরু হলেও নারী মৎস্যজীবীদের বৃহদাংশই এখনো জেলে কার্ড পাননি। তাই সরকারি কোনো ভর্তুকি বা সুবিধা তাঁরা পান না।
এ ছাড়া নৌকাবাসী সম্প্রদায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ চলাকালীন সময়ে নিয়ম মেনে বড়শি বা মুইজাল দিয়ে ছোট মাছ ধরলেও অনেক সময়ই নানা রকম প্রশাসনিক বাধার সম্মুখীন হয়।
শুধু মাছ ধরেই যাঁদের জীবন চলে, ভর্তুকির অভাবে তাঁদের জীবনে নেমে আসে অনিশ্চয়তা।
আরও পড়ুনমাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা১১ অক্টোবর ২০১৮মৎস্যজীবী নারীদের এই দুর্ভোগ নিরসনে এবং তাঁদের অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অক্সফাম বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তায় ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহ-অর্থায়নে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) ‘এমপাওয়ারিং উইমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টরস ইন বাংলাদেশ’(ইডব্লিউসিএসএ) প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে সংবাদকর্মী, সমাজকর্মী, তরুণ সম্প্রদায়, মৎস্যজীবী সমিতি এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় মৎস্যজীবী নারীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ নির্মাণের প্রচেষ্টা চলছে।
এই প্রকল্পের অধীন নারীদের জেলে কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য সরকারি বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।
নারীদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকারি ভর্তুকির আওতায় তাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।
মৎস্যজীবী সংগঠনগুলোতে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাঁদের নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নৌকাবাসী ও মৎস্যজীবী শিশুদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি নারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়েও কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। জেলে সম্প্রদায়, বিশেষ করে তাদের নারীরা, সমাজের এক অবহেলিত অংশ। তাঁদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।সমাজে নারীদের অধিকার ও আইনি সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, যাতে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারেন এবং প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হন।
নৌকাবাসী ও মৎস্যজীবী শিশুদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি নারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়েও কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
জেলে সম্প্রদায়, বিশেষ করে তাদের নারীরা, সমাজের এক অবহেলিত অংশ। তাঁদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
ইডব্লিউসিএসএ প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে এই সম্প্রদায়ের নারীরা নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বাবলম্বী জীবন যাপন করতে পারেন।
অমিত মল্লিক উন্নয়নকর্মী
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর দ র জন য প রকল প ভর ত ক সরক র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
মোটরসাইকেল চোরকে থানায় এনে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে
জয়পুরহাটের কালাইয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মোটরসাইকেল চোরকে ধরার পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কালাই থানার ওসি জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রোববার বিকেলে মোটরসাইকেলের মালিক কালাই পৌরশহরের থুপসাড়া মহল্লার আব্দুল খালেকের ছেলে আবু ইউসুফ নিজেই সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন।
আবু ইউসুফ জানান, শনিবার রাতে চোরকে তার বাড়ি থেকে ধরে এনে থানা হাজতে সারারাত রেখে টাকা নিয়ে রোববার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আটক মনোয়ার হোসেন উপজেলার পুনট ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত কাছেম উদ্দিনের ছেলে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মার্চ বিকেলে কালাই পৌরশহরের থুপসাড়া মহল্লার আবু ইউসুফ নিজ বাড়ির রাস্তার পাশে তার ব্যবহৃত পালসার মোটরসাইকেলটি রেখে ভিতরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির বারান্দা থেকে মোটরসাইকেলের পাশে দুইজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখতে পান তিনি। সন্দেহ হলে বাড়ির পিছন গেট হয়ে বাইরে আসামাত্র মোটরসাইকেলটি ওই দুই ব্যক্তি নিয়ে যায়। তখন মোটরসাইকেলের মালিকও তাদের পিছনে ধাওয়া করে ধরার চেষ্টা করেন, কিন্তু ধরতে পারেননি। এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী একটি অফিসের সিসিটিভি থেকে ভিডিও সংগ্রহ করেন এবং তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ওইদিনের ভিডিও ও চোরের ছবি পোস্ট করেন। সেই সঙ্গে কালাই থানায় সরবরাহ করেন।
ফেসবুক পোস্টের জেরে গত ২৯ মার্চ স্থানীয় লোকজন ওই ছবি শনাক্ত করেন এবং মোটরসাইকেল মালিককে জানান। এরপর ইউসুফ শনিবার সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন এবং ইন্সপেক্টর তদন্ত এসএম কামাল হোসাইনকে চোর শনাক্তের বিষয়ে জানান। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে চোরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল মালিক আবু ইউসুফ বলেন, চোরকে শনাক্তের পর আটক করতে আমি নিজেই পুলিশকে সহযোগিতা করেছি। রাতে যখন চোর মনোয়ারকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি থানায় গিয়েছি। তখন ওসি আমাকে বলেন, ‘রাত অনেক হয়েছে, রোববার সকালে আসো, মামলা নিয়ে চোরকে জেল-হাজতে পাঠানো হবে।’ কিন্তু সকালে থানায় গিয়ে শুনি চোরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ কেন ছেড়ে দিল? তাকে থানায় এনে যদি ছেড়ে দেওয়া হবে, তাহলে নিয়ে আসা হলো কেন? এ নিয়ে আমি হতাশ।
আবু ইউসুফের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, এত প্রমাণ দেওয়ার পরও ওসি কীভাবে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে থানায় এনে ছেড়ে দেয়। আবার বলেছেন, ‘ছেড়ে দিয়েছি তো কী হয়েছে, তদন্ত করছি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিনহাজুল ইসলাম চৌধুরি টোপন বলেন, সিসিটিভি ভিডিওতে যে ছবি দেখা যাচ্ছে, সেই ব্যক্তি মনোয়ার, এতে কোনো ভুল নেই। ছবি দেখেই গত রাতে পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সকালে শুনলাম রাতেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন জানান, অভিযোগকারীর দেওয়া ছবি সরবরাহের ভিত্তিতে একজন ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল, পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় তদন্ত চলমান।
মুঠোফোনে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।