ডারোন আসিমোগলু ও জেমস এ রবিনসন তাঁদের বই হোয়াই নেশনস ফেইল: দ্য অরিজিনস অব পাওয়ার, প্রসপারিটি অ্যান্ড পোভার্টি-এ একটি জাতির ব্যর্থতার কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। বইয়ের উপসংহার হচ্ছে, কোনো দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য বা ব্যর্থতা ভৌগোলিক অবস্থান, সংস্কৃতি বা প্রাকৃতিক সম্পদের দ্বারা নির্ধারিত হয় না। নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
এই বইয়ে দুটি বিপরীতধর্মী প্রতিষ্ঠানের আলোচনা আছে। প্রথমটি হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান, যা লেখকদের মতে, সমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। কারণ, এগুলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি তৈরি করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত হয় নিরাপদ সম্পত্তির অধিকার দ্বারা (যেখানে রাষ্ট্র ব্যক্তির এবং ব্যবসার মালিকানা ও বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখে), আইনের শাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতি, ন্যায্য ও উন্মুক্ত বাজারব্যবস্থা, রাজনীতিতে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ আর সৃষ্টিশীল ধ্বংস (সৃষ্টিশীল ধ্বংস একটি প্রক্রিয়া, যা নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে, যদিও এটি প্রচলিত শিল্প ও ক্ষমতাসীন অভিজাতদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে)।
দ্বিতীয় ধরনের প্রতিষ্ঠান হলো শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান, যা লেখকদের মতে দারিদ্র্যের মূল কারণ। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠান সম্পদ ও ক্ষমতা একটি ক্ষুদ্র অভিজাত গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত করে, যা সামগ্রিক সমৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত হয়—দুর্বল সম্পত্তির অধিকার (যেখানে সরকার বা অভিজাতেরা ইচ্ছামতো সম্পদ দখল করতে পারে), স্বৈরতান্ত্রিক শাসন (যেখানে একটি ছোট গোষ্ঠী রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়), সীমিত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (শুধু অভিজাতদের লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে) এবং উদ্ভাবনের দমন (যেকোনো নতুন প্রযুক্তি বা ব্যবসাকে বাধা দেওয়া হয়, যদি তা বিদ্যমান অভিজাতদের স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়)।
ইতিহাস নির্মিত হয় সংকটকালীন সন্ধিক্ষণ দ্বারা—গবেষণাধর্মী এ বইয়ের এটা হলো উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। সংকটকালীন সন্ধিক্ষণ যেমন গণ-অভ্যুত্থান, যুদ্ধ, বিপ্লব ইত্যাদি, যা একটি জাতির গতিমুখ পরিবর্তন করে দিতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একটি দেশের বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোই নির্ধারণ করে যে দেশটি এসব সন্ধিক্ষণের সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে কি না। ফলে সব দেশ সমানভাবে এই পরিবর্তন থেকে উপকৃত হয় না।
লেখকদ্বয় এ বিষয়ে ১৬৮৮ সালে সংঘটিত ইংল্যান্ডের গ্লোরিয়াস রেভল্যুশনের উদাহরণ দিয়েছেন। এই বিপ্লবের আগে ইংল্যান্ড ছিল একটি নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের শাসনে পরিচালিত। কিন্তু বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা সংসদের হাতে স্থানান্তরিত হয়, যা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পথ সুগম করে। এই পরিবর্তন এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল, যেখানে ব্যবসা ও উদ্যোক্তারা বিকাশ লাভ করতে পেরেছিলেন। এর ফলে শিল্পবিপ্লব ত্বরান্বিত হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হয়।
বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাঙালি জাতির সামনে একটি নতুন পথ নির্মাণের অনন্য সুযোগ এসেছিল, যা পূর্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। এই স্বাধীনতার মুহূর্তটি সমৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি বহন করেছিল। তবে ১৬৮৮ সালের গ্লোরিয়াস রেভল্যুশনের মতো, যা ইংল্যান্ডে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন করেছিল, বাংলাদেশ একই ধরনের অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। হোয়াই নেশনস ফেইল.
গবেষণাপত্রটির যুক্তি হলো দরিদ্র দেশগুলো দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকে থাকে। কারণ, শাসক শ্রেণি পরিবর্তন প্রতিহত করে এবং বিস্তৃত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির চেয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে অগ্রাধিকার দেয়। এমনকি যখন অর্থনৈতিক সংস্কার চালু করা হয়, তখনো সেগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে অভিজাতদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়।
পাকিস্তান এই প্রবণতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি এমন শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে, যা ক্ষমতাকে একটি ছোট অভিজাত গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত করে। শাসকেরা বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বজায় রাখে। ফলে প্রকৃত অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া সত্ত্বেও এই সম্পদ মূলত শাসক শ্রেণি এবং সামরিক বাহিনীর হাতেই কেন্দ্রীভূত থেকেছে, সাধারণ নাগরিকদের উন্নয়নে বা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়নি।
লেখকেরা একটি সংক্ষিপ্ত কাঠামো উপস্থাপন করেছেন, যা দেখায় কীভাবে একটি দেশ সাফল্য অর্জন করতে পারে। তাঁদের মতে, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে হলে শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা একান্ত দরকার। অর্থনৈতিক উন্নয়ন তখনই টেকসই হয়, যখন তার পূর্বে কার্যকর রাজনৈতিক সংস্কার ঘটে। ক্ষমতার বিস্তৃত বণ্টন উদ্ভাবন, স্থিতিশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। দেশগুলো দুর্ভাগ্য বা সম্পদের অভাবের কারণে ব্যর্থ হয় না; বরং তারা এমন একটি ব্যবস্থার মধ্যে আটকে থাকে, যেখানে ক্ষমতা ও সম্পদ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। একমাত্র পথ হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে এবং সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশের অবস্থান হোয়াই নেশনস ফেইল বইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করা দরকার, যে বই লিখে এই লেখকেরা নোবেল প্রাইজসহ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। লেখকদের মতে, একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় তার প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও প্রকৃতির দ্বারা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতির কারণে কি বাংলাদেশ রাষ্ট্র ব্যর্থতার ঝুঁকিতে রয়েছে? দেশটি কি জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকারী অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পেরেছে, নাকি শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান দ্বারা শাসিত হচ্ছে, যেখানে ক্ষমতা ও সম্পদ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত?
দুর্ভাগ্যবশত, বাস্তবতা হতাশাজনক। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কখনোই সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি। বরং একের পর এক সরকার আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের গুণগত মানের আরও অবনতি হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার শোষণমূলক ব্যবস্থা আরও গভীরভাবে প্রোথিত করেছে, ক্ষমতা আরও কেন্দ্রীভূত করেছে এবং গণতান্ত্রিক শাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছ।
দেশ ভবিষ্যতে সমৃদ্ধির দিকে যাবে কি না, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হলো সমাজ কতটা বিভাজিত। একটি বহুবিভাজিত সমাজের পক্ষে উন্নতির পরাকাষ্ঠায় পৌঁছানো কঠিন। এখানে ‘বিভাজন’ বিষয়টি ভালো করে বোঝা দরকার।
ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ইউরোপ বহু অভিবাসীর দেশ। অভিবাসীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে এসব দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অতএব, তাঁদের ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস, মত, পথ—সব আলাদা। কিন্তু তাঁরা যখন কাঙ্ক্ষিত দেশটিতে গিয়ে উপস্থিত হন, তখন তাঁরা ওই দেশটির দর্শন, আদর্শ, সংবিধান, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা হৃদয়ে গ্রহণ করে ওই সমাজেরই অংশ হয়ে যান। ফলে সমাজের বিভাজিত হওয়ার সুযোগ থাকে না।
বাংলাদেশের মতো জাতিগত বিভাজনবিহীন দেশ খুবই কম আছে পৃথিবীতে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীভুক্ত মানুষের সংখ্যা খুবই অল্প। যাঁরা আছেন, তাঁরাও জাতীয় মূলধারাকে গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রের দর্শন, আদর্শ, সংবিধান ইত্যাদি তাঁরা মেনে নিয়েছেন। বরং মেনে নেননি বাঙালিদেরই একটি বড় অংশ। এই অর্থেই বাংলাদেশের সমাজ একটি বহুবিভাজিত সমাজ। ধর্মীয় বা জাতিগত বিভাজনের চেয়েও ভয়ংকর ক্ষতিকর রাষ্ট্র–সম্পর্কিত দর্শন ও ইতিহাস বিষয়ে মতানৈক্য।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টির বিরুদ্ধে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশের দর্শন, আদর্শ, সংবিধান মানেন না। যাঁরা পক্ষে ছিলেন, তাঁরাও বহুধাবিভক্ত—যেমন জাতির পিতা, রাষ্ট্রধর্ম, স্বাধীনতাসংগ্রামে ও মুক্তিযুদ্ধে কার কী অবদান ইত্যাদি বিষয় এই মতৈক্যের জায়গা। সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে রাষ্ট্রের মূলনীতি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নাম পরিবর্তন, জাতির পিতার বিধান বাতিল, রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা ইত্যাদি সমাজে আরও বিভাজন তৈরি করবে বলে মনে হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা সংবিধান সংস্কারের সুপারিশের ক্ষেত্রে দেখলাম, বিএনপি সংবিধান সংস্কারে অনেক প্রস্তাবের সঙ্গে সম্মত নয়।
বাংলাদেশে ঐকমত্য হয় না কারণ মানুষের মুক্তি আমাদের লক্ষ্য নয়। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিজস্ব বিশ্বাস বা পূর্বধারণা কার্যকর দেখতে চায়। আমাদের কোনো কিছুতেই ঐক্য নেই। দেশে উন্নয়ন ঘটলেও ধ্বংস হয়ে গেছে সব অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান। আর আমাদের সমাজ বিভাজিত। তবে কি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে আমাদের সব আয়োজন? সেটি না হোক।
এন এন তরুণ অর্থনীতির অধ্যাপক, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। সাউথ এশিয়া জার্নালের এডিটর অ্যাট লার্জ। [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ধ নত র জন ত ক ব যবস থ কর ছ ন কর ছ ল ব ভ জন দ র মত র জন য আম দ র ল খকদ বইয় র গ রহণ সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
বন্ধুর মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল এসএসসি পরীক্ষার্থী
দিনাজপুরের বিরামপুরে বন্ধুর মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় হাসান আলী (১৬) নামের এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিরামপুর পৌর শহরের দোয়েল স্টুডিও মোড়ে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় হাসানের বন্ধু মোটরসাইকেলের চালক নাঈম হোসেন (১৭) আহত হয়েছে।
নিহত হাসান আলী পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চকপাড়া লিচুবাগান এলাকার ঝালমুড়ি বিক্রেতা মিলন ইসলামের ছেলে। সে চলমান এসএসসি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী ছিল। হাসান উপজেলার আমানুল্লাহ আদর্শ বিদ্যানিকেতনের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিল বলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রশিদ জানিয়েছেন। আহত নাঈম হোসেন একই এলাকার নিয়ামুল হকের ছেলে।
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আজ বেলা ১১টার দিকে হাসান তার বন্ধু নাঈমের মোটরসাইকেলে করে বিরামপুর শহরে ঘুরতে যায়। নাঈম মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল, হাসান পেছনে বসে ছিল। পথে পৌর শহরের দোয়েল স্টুডিও মোড়ে পৌঁছালে গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা পণ্যবাহী একটি পিকআপ মোটরসাইকেলের পেছনে ধাক্কা দিলে তারা মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। এ সময় হাসান আলী পিকআপের চাকায় পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক তাহাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হাসান আলীকে মৃত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছিল। সে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিরামপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় হাসান আলী নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। নিহতের প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ঘটনার পর পিকআপ ভ্যানের চালক গাড়ি নিয়ে পালিয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।