জমির ভাগ নিয়ে সন্তানদের দ্বন্দ্ব, ১৬ ঘণ্টা পড়ে ছিল বাবার মরদেহ
Published: 27th, March 2025 GMT
বাড়ির উঠানে বাবার মরদেহ রেখে জমির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সালিসে ব্যস্ত ছিলেন সন্তানেরা। সালিস বৈঠক শেষে ১৬ ঘণ্টা পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মেম্বার ও এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে মরদেহের দাফন করা হয়।
বুধবার (২৬ মার্চ) ভোর ৬টার দিকে হাবিবুর রহমান বিশ্বাস (৭২) নামের ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। এরপর দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা বাড়ির উঠানে পড়ে ছিল তার মরদেহ। রাত ১০টার দিকে তাকে দাফন করা হয়। সন্তানদের এমন কীর্তিতে হতবাক হয়েছেন গ্রামবাসী।
ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকায়। হাবিবুর রহমান বিশ্বাস পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। তার চার স্ত্রী ও নয় সন্তান রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ছোট স্ত্রী ও তার ছেলে সোহেল বিশ্বাসের সঙ্গে কোটা গ্রামে বসবাস করতেন। মৃত্যুর পূর্বে ছোট স্ত্রীর নামে ৮৩ শতাংশ জমি লিখে দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকবার সালিসের আয়োজন করেছিলেন অন্য স্ত্রী ও সন্তানেরা। কিন্তু, নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন হাবিবুর রহমান।
বুধবার বার্ধক্যজনিত কারণে হাবিবুরের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে আসেন অন্য স্ত্রীর ছেলে আতাউর রহমান, সুমন, আনোয়ার ও হাফিজুর। এসময় জমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত বাবার মরদেহ দাফনে বাধা সৃষ্টি করেন তারা। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মেম্বার ও এলাকাবাসীকে ডেকে বাড়ির উঠানের এক পাশে সালিস বসানো হয়। সে সময় বাড়ির উঠানে খাটিয়ার ওপর হাবিবুর রহমানের মরদেহ পড়ে ছিল দীর্ঘ সময়।
মৃতের ছেলে সোহেল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাবার কবর পর্যন্ত খুঁড়তে দেয়নি সৎ ভাইয়েরা। আমার মায়ের নামে লিখে দেওয়া ৮৩ শতাংশ জমির মধ্য ৫০ শতাংশ তাদের নামে লিখে দেওয়ার শর্তে মুচলেকা দেওয়ার পর কবর খুঁড়তে ও দাফন করতে দেয় তারা।’’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, ‘‘মৃত্যুর ১৬ ঘণ্টা পর বাবার মরদেহ দাফন করতে হয়েছে। আল্লাহ ওদের বিচার করবেন।’’
সালিসে উপস্থিত ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘‘জমি সংক্রান্ত বিরোধ সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। রাত ১০টার পর মরদেহের দাফন করা হয়েছে।’’
চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘মরদেহ ফেলে রাখার ঘটনা দুঃখজনক। বিষয়টি জানার পর আমার প্রতিনিধি, মেম্বার ও এলাকাবাসী সালিসের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক সমস্যার মীমাংসা করেছেন।’’
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ব ব র রহম ন ব ব র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
মোটরসাইকেল চোরকে থানায় এনে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে
জয়পুরহাটের কালাইয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মোটরসাইকেল চোরকে ধরার পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কালাই থানার ওসি জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রোববার বিকেলে মোটরসাইকেলের মালিক কালাই পৌরশহরের থুপসাড়া মহল্লার আব্দুল খালেকের ছেলে আবু ইউসুফ নিজেই সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন।
আবু ইউসুফ জানান, শনিবার রাতে চোরকে তার বাড়ি থেকে ধরে এনে থানা হাজতে সারারাত রেখে টাকা নিয়ে রোববার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আটক মনোয়ার হোসেন উপজেলার পুনট ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত কাছেম উদ্দিনের ছেলে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মার্চ বিকেলে কালাই পৌরশহরের থুপসাড়া মহল্লার আবু ইউসুফ নিজ বাড়ির রাস্তার পাশে তার ব্যবহৃত পালসার মোটরসাইকেলটি রেখে ভিতরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির বারান্দা থেকে মোটরসাইকেলের পাশে দুইজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখতে পান তিনি। সন্দেহ হলে বাড়ির পিছন গেট হয়ে বাইরে আসামাত্র মোটরসাইকেলটি ওই দুই ব্যক্তি নিয়ে যায়। তখন মোটরসাইকেলের মালিকও তাদের পিছনে ধাওয়া করে ধরার চেষ্টা করেন, কিন্তু ধরতে পারেননি। এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী একটি অফিসের সিসিটিভি থেকে ভিডিও সংগ্রহ করেন এবং তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ওইদিনের ভিডিও ও চোরের ছবি পোস্ট করেন। সেই সঙ্গে কালাই থানায় সরবরাহ করেন।
ফেসবুক পোস্টের জেরে গত ২৯ মার্চ স্থানীয় লোকজন ওই ছবি শনাক্ত করেন এবং মোটরসাইকেল মালিককে জানান। এরপর ইউসুফ শনিবার সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন এবং ইন্সপেক্টর তদন্ত এসএম কামাল হোসাইনকে চোর শনাক্তের বিষয়ে জানান। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে চোরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল মালিক আবু ইউসুফ বলেন, চোরকে শনাক্তের পর আটক করতে আমি নিজেই পুলিশকে সহযোগিতা করেছি। রাতে যখন চোর মনোয়ারকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি থানায় গিয়েছি। তখন ওসি আমাকে বলেন, ‘রাত অনেক হয়েছে, রোববার সকালে আসো, মামলা নিয়ে চোরকে জেল-হাজতে পাঠানো হবে।’ কিন্তু সকালে থানায় গিয়ে শুনি চোরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ কেন ছেড়ে দিল? তাকে থানায় এনে যদি ছেড়ে দেওয়া হবে, তাহলে নিয়ে আসা হলো কেন? এ নিয়ে আমি হতাশ।
আবু ইউসুফের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, এত প্রমাণ দেওয়ার পরও ওসি কীভাবে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে থানায় এনে ছেড়ে দেয়। আবার বলেছেন, ‘ছেড়ে দিয়েছি তো কী হয়েছে, তদন্ত করছি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিনহাজুল ইসলাম চৌধুরি টোপন বলেন, সিসিটিভি ভিডিওতে যে ছবি দেখা যাচ্ছে, সেই ব্যক্তি মনোয়ার, এতে কোনো ভুল নেই। ছবি দেখেই গত রাতে পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সকালে শুনলাম রাতেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন জানান, অভিযোগকারীর দেওয়া ছবি সরবরাহের ভিত্তিতে একজন ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল, পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় তদন্ত চলমান।
মুঠোফোনে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।