কদর মানে সম্মানিত, কদর মানে নিয়তি। শবে কদর ফারসি, আরবিতে লাইলাতুল কদর, মানে কদরের রাত। এ সম্পর্কে কোরআন মজিদে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাজিল হয়েছে।
আল্লাহ যে রাতে কোরআন অবতীর্ণ করেছেন, সে রাতকে বরকতময় করেছেন। সেটিই কদরের রাত। আল্লাহ বলেন, ‘হা-মিম, শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি তো এ (কোরান) অবতীর্ণ করেছি এক লাইলাতুল মোবারক (সৌভাগ্যের রাত্রিতে)। আমি তো সতর্ককারী। এ-রাত্রিতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়। আদেশ তো আমারই। আমিই রাসুল পাঠিয়ে থাকি, এ তোমার প্রতিপালকের তরফ থেকে অনুগ্রহ। তিনি সব শোনেন, সব জানেন।’ (সুরা দুখান, আয়াত: ১-৬, কোরান শরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন।)
আরও পড়ুনসুরা মাউনে মানুষদের মধ্যে দুটি দলের কথা বলা হয়েছে১৭ এপ্রিল ২০২৩রমজানের তিনটি অংশ—রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত। হাদিসে আছে, রমজানের প্রথম অংশ রহমতের, মাঝখানের অংশ ক্ষমার, শেষ অংশ মুক্তির।
আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে আমার দাসগণ! তোমরা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, জান্নাত অনুগ্রহের ব্যাপারে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ্ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।' (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)।
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘যারা পথভ্রষ্ট তারা ছাড়া আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’ (সুরা হিজর, আয়াত:৫৬)।
যারা হতাশ হয় না, আল্লাহ তাদের তিনটি নেয়ামত দান করেন, বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, গুনাহ মাফ করেন, কঠিন কাজ সহজ করে দেন।
আরও পড়ুনসুরা জুমার সারকথা১৬ এপ্রিল ২০২৩কদরের রাতে পুরো ত্রিশ পারা কোরআন একত্রে লাওহে মাহফুজ থেকে অবতীর্ণ করেন। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে তেইশ বছর ধরে প্রয়োজনমতো বিভিন্ন উপলক্ষে দুনিয়ায় নাজিল হতে থাকে। কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। অর্থাৎ, এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
রোজার মাস জুড়ে বিশেষত শেষ দশকে কদরের রাত খোঁজা মোস্তাহাব; আরও নির্দিষ্ট করে বললে, শেষ দশকের বিজোড় রাত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতে। বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সা.
আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ (কোরান) অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল কাদরে (মহিমার রাত্রিতে)। মহিমার রাত্রি সম্বন্ধে তুমি কী জান? মহিমার রাত্রি হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সে-রাতে প্রত্যেক কাজে ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল) অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে। এ শান্তি! ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সুরা কদর, আয়াত: ১-৫)
আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩বুখারির হাদিস থেকে আরও জানা যায়, হজরত উবাদা ইবনুস সামিত (রা.) বলেছেন, নবীজি (সা.) আমাদের লাইলাতুল কদর সম্পর্কে অবগত করার উদ্দেশ্যে বের হন। পথের মধ্যে দুজন ঝগড়াঝাঁটিতে লিপ্ত হয়। তখন নবীজি (সা) বলেন, আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানানোর জন্য বের হয়েছিলাম; কিন্তু তখন অমুক অমুক বিবাদে লিপ্ত থাকায় তা (লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। হয়তো এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তোমরা তা অনুসন্ধান করো (রোজার) বেজোড় রাতে।
লাইলাতুল কদরে দোয়া করা মুস্তাহাব। নবীজি (সা.) আয়িশা (রা.)–কে এই দোয়া শিখিয়েছেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা ফু আন্নি। এর অর্থ, আল্লাহ, আপনি ক্ষমাকারী, আপনি মাফ করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫১৩)
আরও পড়ুনসুরা আর রাহমান কোরআনের প্রসিদ্ধ একটি সুরা১৫ এপ্রিল ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কদর র র ত আল ল হ ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যা: আরাভ খানসহ ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় দুবাইয়ে পলাতক আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানসহ ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন-আরাভ খানের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া (২১), মামুন ইমরানের বন্ধু রহমাত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩)।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আরাভ খান ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া পলাতক রয়েছেন। অপর ৬ আসামির মধ্যে রহমাত উল্লাহ, সারোয়ার হোসেন জামিনে থেকে আদালতে হাজির হন। অপর চার আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে ৬ আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আরাভ খান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এর আগে কয়েক দফা রায় পেছানো হয়। সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল রায় পিছিয়ে আজকের দিন ধার্য করা হয়।
২০১৮ সালের ৭ জুলাই বনানীতে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। ৯ জুলাই গাজীপুরের জঙ্গল থেকে মামুন ইমরান খানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পরে তার ভাই বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ রহমত উল্লাহ ও রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় ওরফে হৃদিসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, রবিউল ইসলামের (আরাভ খান) নেতৃত্বে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করত একটি চক্র। তাদের লক্ষ্য ছিল রহমত উল্লাহকে আটকে ‘অশালীন’ ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আদায় করা। সেজন্য ওই চক্র জন্মদিনের নাটক সাজিয়ে রহমতকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল বনানীর ওই বাসায়। বন্ধু রহমতের সঙ্গে সেখানে গিয়ে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা মামুন।
ঢাকা/মামুন/ইভা