‘অভ্যুন্থানে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব’
Published: 27th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘‘যারা নিহত হয়েছেন, আমরা তাদের আর ফিরে পাব না। তবে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা সর্বদা তাদের সার্বিক সহায়তা ও সহযোগিতার জন্য পাশে থাকব।’’
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আড়াইহাজার উপজেলায় নিহত-আহতদের পরিবারে মাঝে আর্থিক সহায়তা ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদে অডিটরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন জেলা প্রশাসক। সেখানে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এ সময় আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তঅ সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, আড়াইহাজার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নঈম উদ্দীন, গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক এবং আড়াইহাজার পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আরো পড়ুন:
কিশোরগঞ্জে পাওনা টাকা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১
রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.
একইদিন অনুষ্ঠান শেষে জেলা প্রশাসক ইউনাইটেড স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাব ‘ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার ক্লাব’ আয়োজিত ‘স্বপ্নের দোকানের’ শুভ উদ্বোধন করেন।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ করা হবে। সেখানে উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘‘মানুষ তখনই আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে পরিগণিত হবে, যখন সে তার মানবতার হাত প্রসারিত করবে।’’
এছাড়াও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আড়াইহাজার শহর বাইপাস সড়কের শুভ উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি জেলা প্রশাসনের গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
ঢাকা/অনিক/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত গণঅভ য ত থ ন দ র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের রোডম্যাপ চাই
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রত্যাশা ছিল, বল প্রয়োগভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে নাগরিক অধিকারভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন। কিন্তু অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকে রাখার ঘটনা একটা ভয়ানক বার্তা দিচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকার কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য সন্দেহভাজন যে কাউকে আটক করতে পারে। এই আইন বাতিলের কথা বিএনপি ’৯১-এর নির্বাচনী ইশতেহারে রাখলেও ক্ষমতায় গিয়ে তা অক্ষত রাখে। বাংলাদেশের পরবর্তী প্রতিটি সংসদ এই আইন বাতিল না করে তা রক্ষা করে গেছে।
জুলাই আন্দোলন বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সব জনবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী আইন ও ব্যবস্থার মূলোৎপাটনের দাবি জানায়। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কাঠামোর বিলুপ্তি দাবি করে। অর্থাৎ আমাদের রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে হবে বল প্রয়োগের ভিত্তিতে নয়; বরং জনগণের সার্বভৌমত্ব, মর্যাদা ও নাগরিক অধিকারকে ভিত্তি করে। জুলাই ঘোষণাপত্র বা প্রোক্লেমেশনে স্পষ্টভাবে এ ঘোষণা থাকার কথা ছিল– বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু হবে জনগণের সার্বভৌমত্ব, যা ব্যক্তির মর্যাদা, অধিকার ও বিকাশ নিশ্চিত এবং সুরক্ষিত করবে। এই প্রোক্লেমেশন এখনও হাজির না করতে পারা জুলাইকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে।
একবার ভাবুন– বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, র্যাব আইন, ৭০ অনুচ্ছেদসহ সব জবরদস্তিমূলক আইন অক্ষত রয়েছে; সব ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতি অক্ষত রয়েছে; আপনি শুধু সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। এই সরকার কীভাবে আপনার নাগরিক অধিকার, আপনার স্বাধীনতা এবং আপনার মর্যাদা নিশ্চিত করবে? আপনার সংবিধান আবার একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন বা সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র আরোপ করার জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ বা বাধা
দেওয়ার জন্য সব কঠোর জবরদস্তিমূলক আইন প্রয়োগ করা হবে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করতে হলে কোনো অবস্থাতেই, কোনো অজুহাতেই নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করা যাবে না। রাষ্ট্রের সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা। এ দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে জরুরি অবস্থা মানে সরকারের গদি অরক্ষিত হয়ে পড়া। তাই নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করে জরুরি অবস্থা দেয় তারা।
রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের যে অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছে, তা-ই অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার উৎস। নতুন গণক্ষমতা মানেই নতুন আইন, নতুন সংবিধান। যারা এখন মৌলিক রাষ্ট্র কাঠামোগত সংস্কার ছাড়াই দ্রুত সংসদীয় নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাইছেন, তারা মূলত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবী সম্ভাবনাকে ধ্বংস করতে চাইছেন। তারা বর্ষার এই বিপ্লবকে শুধু ভোট বাক্সে সীমাবদ্ধ করে দিতে চাচ্ছেন।
শেখ হাসিনার আমলে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে জালিয়াতির নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখা আর জুলাই বিপ্লবীদের রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’কে এক করে দেখিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন বানচাল করতে চাইছেন কিছু রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবী। অথচ দুটো এক না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংস্কারপন্থিরা নির্বাচন চাইছেন, কিন্তু তা সংস্কারের পর। আর শেখ হাসিনা কথিত উন্নয়নের দোহাই দিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেননি। ফলে যারা দুই বিপরীত বিষয়ের তুলনা দিচ্ছেন, তাদের কথায় বড় শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। শেখ হাসিনা এবং তাঁর অনুগত বুদ্ধিজীবীরা প্রচার করেছেন– ‘কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন’, যা পাকিস্তান আমলের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মডেল। এখানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার এবং পুনর্গঠনের কথা বলা হচ্ছে। যে রাষ্ট্র কাঠামোতে ফ্যাসিবাদ স্তরে স্তরে বিদ্যমান, তার বিলোপ সাধন এই অন্তর্বর্তী সরকার না করলে তা নতুন নির্বাচিত সংস্কার করবে বলে আস্থা রাখা কঠিন। তখন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা আর দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনের অজুহাত তোলা হবে। এ দেশের শাসকগোষ্ঠী ’৭২-এ এসব করেনি, ’৯০-এও করেনি। বরং সংসদ হয়ে উঠেছে জনগণকে নির্যাতন করা আর তাদের অধিকার হরণের আইন প্রণয়নের কেন্দ্র। ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর নির্বাচিত সংসদ যেমন ২৭টি সংস্কার প্রস্তাব মানেনি, একই রকম এখনও নতুন সংসদ সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে বলে আমাদের আস্থা নেই।
দুনিয়াজুড়েই ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর নতুন সংবিধান করে আগে রাষ্ট্র গঠন বা পুনর্গঠনের ব্যবস্থা করা হয়, তারপর সংসদ বা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেওয়া হয়। ইউনূস সরকারকেই তাই রাষ্ট্র সংস্কার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে হবে এবং রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের রোডম্যাপ দিতে হবে। এ জন্য সাংবিধানিক সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা রাজনৈতিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন, নাগরিক অধিকার হরণকারী আইনি কাঠামো উচ্ছেদ বা ব্যাপক সংস্কার, গণবিরোধী আমলাতন্ত্র, জবরদস্তিমূলক নিরাপত্তা সংস্থা, বিজনেস অলিগার্ক নিয়ন্ত্রিত লুটেরা অর্থনৈতিক কাঠামোর বৈপ্লবিক সংস্কারের রোডম্যাপ দিতে হবে। বল প্রয়োগের ভিত্তিতে নয়, বরং জনগণের সার্বভৌমত্ব, মর্যাদা ও নাগরিক অধিকারকে ভিত্তি করে রাষ্ট্র গঠন করতে হবে এবং তার জন্য নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের রোডম্যাপ দিতে হবে। নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কার এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের পর একটি সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে।
ড. যোবায়ের আল মাহমুদ: সহযোগী অধ্যাপক, ফার্মাসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়