আনিসুল ইসলাম। চাকরি করেন চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায়। পরিবার থাকেন ঢাকায়। ঈদের ছুটিতে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে আজ বৃহস্পতিবার বাসায় ফিরছেন তিনি।

শুধু আনিসুল ইসলাম নন, ঈদের টানা ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন সাধারণ মানুষ। আজ ছিল ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস। এদিন ছুটি শেষে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় তৈরি হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছাড়ছে। তাই স্টেশনে যাত্রীদের ভোগান্তি তুলনামূলক কম। 

ট্রেনের ছাদে কিংবা হুড়োহুড়ি করে কাউকে ট্রেনে চড়তে দেখা যায়নি। গত বুধবার থেকে নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি চলছে বিশেষ ট্রেন চলাচল। বাতিল করা হয়েছে আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটিও। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে স্টেশনে শত শত মানুষের ভিড় ছিল। কারও গন্তব্য চাঁদপুর, কারও আবার ফেনী, কুমিল্লা বা ঢাকা। আবার কেউ কেউ যাচ্ছেন ময়মনসিংহ ও সিলেটে। তাদের সবাই জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রামে থাকেন। কেউ পরিবার নিয়ে থাকেন। কেউ আবার একা। কারও হাতে ঈদ উপহার। কেউ আবার এলাকায় গিয়ে করবেন ঈদ মার্কেট। ঈদ আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন সবাই।  

আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘ছুটি না থাকায় কয়েক মাস পরপর বাড়ি যাওয়া হয়। এবার লম্বা ছুটি পেয়েছি। তাই বাড়িতে গিয়ে ছেলেদের নিয়ে মার্কেটে যাবো। পরিবারের অন্য সদস্যদের কেনাকাটা করবো। সবাই মিলে ঘোরাঘুরি করে কেনার অন্যরকম আনন্দ রয়েছে।’

চট্টগ্রামের চন্দনাইশের মোরশেদুল আলম। তার কর্মস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গত ঈদেও ছুটি পাননি। এবার ঈদে ছুটি পেয়ে চট্টগ্রাম ফিরেছেন। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে নেমেই আনন্দে উচ্ছসিত তিনি। 
কক্সবাজারগামী ট্রেনে করে যাবেন চন্দনাইশ। মোরশেদুল আলম বলেন, ‘বাড়িতে মা ও ভাই বোন সবাই আছে। ঈদে বাড়ি ফিরতে না পারলে কষ্ট হয়। মন খারাপ থেকে। এবার ছুটি পেয়ে ভালো লাগছে। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভালো সময় কাটবে বলে আশা করছি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

‘উপকূলে জরায়ু সংক্রমণ ব্যাপকহারে বেড়েছে’

নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে অবস্থিত আন্তর্জাতিক গবেষণা, শিক্ষা ও পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কেআইটি রয়্যাল ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউটে গবেষণা করছেন নাজনীন নাহার। নারীর স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে তাঁর গবেষণাকর্ম রয়েছে। তিনি কথা বলেছেন সমতার সঙ্গে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে কেমন প্রভাব পড়ছে?
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছি। এর প্রভাব আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যা, মৌসুমি খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, এমনকি হিট ওয়েভ বা তাপপ্রবাহ উল্লেখযোগ্য। উত্তরাঞ্চলে খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি উল্লেখযোগ্য।
স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর এর প্রভাব কতটা গভীর?
স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে এবং এ তাপমাত্রা বাড়ার কারণে হিটস্ট্রোকের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে মানসিক স্বাস্থ্যেও অনেক বড় প্রভাব পড়েছে। নিয়মিত দুর্যোগ এবং দুর্যোগসংক্রান্ত সমস্যা মানুষকে মানসিকভাবে ব্যাপক আঘাত করে। কারও কারও এ ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সারাজীবন লেগে যেতে পারে।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এটি ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা গর্ভবতী হচ্ছেন, লবণাক্ত পানি ব্যবহার এবং খাওয়ার কারণে তাদের গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিন ইনফেকশনের মতো বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে  যারা জীবন-জীবিকার জন্য অনেক বেশি সময় লবণাক্ত পানিতে সময় কাটাচ্ছেন। কাঁকড়া চাষ বা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করার জন্য যারা নিয়মিত নোনাপানিতে যান, তাদের বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ এবং নারীর জরায়ু সংক্রমণ ব্যাপকহারে বেড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি খাত। এর ফলে আমাদের অনেকেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যারা আগে নিজেদের ফসল নিজেরাই উৎপন্ন করতেন, তারা এখন পেশা পরিবর্তন করার কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ অপুষ্টিতে ভোগার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে  লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় খাবার পানির স্বল্পতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে দূষিত বা নোনাপানি পান করছেন। এর ফলে অনেক ধরনের পানিবাহিত রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যারা দায়ী, তাদের কেন আমরা এখনও দায়বদ্ধতার জায়গায় আনতে পারছি না?
অর্থনৈতিক ও ক্ষমতা কাঠামোর কারণে এটি সম্ভব হয়নি। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলো অর্থনৈতিক ও ক্ষমতার দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। মূলত মুনাফানির্ভর ব্যবস্থা জলবায়ুর সুবিচার অর্জনে একটি বড় বাধা। আন্তর্জাতিক দরকষাকষির ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শক্তিশালী নেতৃত্বই পারে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের অগ্রগতি কতটুকু?
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলাকে আমরা দু’ভাবে দেখতে পারি। প্রথমত, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব যেন আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে পারি এবং দ্বিতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে ধীর করতে ব্যবস্থা নিতে পারি। জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্যোগ যেন আমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য আমরা জলবায়ুর অভিযোজন পদ্ধতিগুলো অনুশীলন করতে পারি। আমরা যত বেশি উদ্ভাবনী শক্তি অর্জন করতে পারব, আমাদের টিকে থাকা ততটা সহজ হবে। একইভাবে ভবিষ্যতে যেন জলবায়ুর প্রভাব বেশি ত্বরান্বিত না হয়, তার জন্য এখন থেকে আমাদের জলবায়ু প্রশমনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার হতে পারে ভালো একটি উদ্যোগ। একইসঙ্গে সব সমস্যার প্রকৃতিবান্ধব সমাধানকে প্রাধান্য দিতে হবে। এখন আমাদের জন্য বেশি জরুরি হলো– জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী দেশগুলোকে দায়বদ্ধতার জায়গায় আনা, ক্ষতিপূরণে তাদের বাধ্য করা। এ সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের বহুমুখী সমন্বিত কার্যকরী পরিকল্পনা দরকার। 
lসমতা ডেস্ক

সম্পর্কিত নিবন্ধ