৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশে আগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলো চলছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এ মন্তব্য করেন।

আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শত-সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন স্বাধীনতার কথা বলছি। কিন্তু আগের মতো এখনো সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলো চলমান রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে যে কেউ একটা টোকেন ধরিয়ে দিল, আমাকে ৫০ টাকা ১০০ টাকা দিতে হবে। আবার যারা চাঁদা আদায় করে, তারা মনে করে চাঁদাবাজি তাদের অধিকার। তারা মনে করে অতীতে এভাবে চলে আসছে, এখন কেন চলবে না?’

চাঁদাবাজদের হুঁশিয়ারি করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যারা মনে করে চাঁদা নেওয়া আমার অধিকার, আমি তাদের একটি বার্তা দিতে চাই—জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর এ ধরনের কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদেরা যে জন্য রক্ত দিয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। পূর্ববর্তী সময়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ যে বিষয়গুলো সমাজকে ধ্বংস করেছে, তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করেছে—সেই বিষয়গুলো শক্ত হাতে দমন করা হবে।’

নিজের উপজেলা মুরাদনগরে চাঁদাবাজির প্রেক্ষাপট নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য এখানে এমন মানুষজন আছেন, যাঁরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। যাঁরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এটা আমাদের গর্ব, এখানেও এমন মানুষজন আছেন। সারা দেশের তরুণ সমাজকে আহ্বান জানাতে চাই, যেখানেই চাঁদাবাজি দেখবেন, সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের দমন করতে কাজ করে যাচ্ছে। আমি মুরাদনগরবাসীকে অনুরোধ জানাব, আপনারা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের সঠিক তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন।’

তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা বেশি আয়োজন করতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘তরুণ ও শিশু-কিশোরেরাই আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আমরা তাদের যেভাবে গড়ে তুলব, ভবিষ্যতে ঠিক তেমনি একটি বাংলাদেশ পাব। তরুণদের মাদক থেকে দূরে রেখে খেলাধুলা এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতায় বেশি যুক্ত করতে হবে। আজকের এই হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা একটি অনন্য উদ্যোগ। এমন আয়োজনের জন্য আমি উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো.

আমিরুল কায়ছার, জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা আহ্বায়ক উবায়দুল হক সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠান শেষে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় তিন ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী নয়জনের মধ্যে ল্যাপটপ ও সনদ বিতরণ করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে বিএনপি ও এনসিপির শোডাউন-জনসভা ঘিরে উত্তেজনা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুরাদনগরের রাজনৈতিক মাঠ ক্রমেই উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। শনিবার মুরাদনগরে বিএনপি ও এনসিপি শোডাউন করে জনসভা আহ্বান করেছে। তবে দুই দলের কেউই প্রশাসনের কাছে শোডাউন ও জনসভার অনুমতি চেয়ে লিখিত কোনো আবেদন করেনি বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সংঘাতের আশংকায় উভয় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

বিএনপি নেতারা বলেন, ১৯ এপ্রিল শনিবার আন্দিকোট ইউনিয়নের হায়দরাবাদ সামসুল হক কলেজ মাঠে পূর্ব থেকেই জনসভার ডাক দিয়েছে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের। জনসভা সফল করতে এলাকায় পোষ্টার  সাটানো ও মাইকিং করে চালানো হয়েছে প্রচারণা।

অপরদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনপিসি) নেতারা বলেন, তারাও একই দিনে (শনিবার) একই সময়ে বিএনপির সভাস্থলের পার্শ্ববর্তী আকবপুর ইউনিয়নের পীর কাশিমপুর হাইস্কুল মাঠে বাঙ্গরা দলটির বাজার শাখার উদ্যোগে জনসভার ডাক দিয়েছে। ওই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন মাষ্টারের নামে পোষ্টার সাটানোসহ প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

বিএনপির সাথে একই দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির জনসভা ডাক দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি একটি নতুন দল। তাদেরকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। তবে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি তাদেরকে কখনোই প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করে না। মুরাদনগরে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৯০% ভোট পাবে দাদা কায়কোবাদ।

বিএনপির জনসভার আয়োজনের খরচের উৎস জানতে চাইলে মহিউদ্দিন অঞ্জন সমকালকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত টাকা এবং দলীয় ফান্ড থেকেই এই জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে। এ সময় তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির জনসভার খরচের বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, মুরাদনগরে প্রত্যেকটি জায়গা থেকে এখন চাঁদাবাজি করছে জাতীয় নাগরিক পার্টির লোকজন।

তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির লোকজনের চাঁদা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মুরাদনগর উপজেলা শাখার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক উবাইদুল হক সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিটি অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের চাঁদাবাজি আড়াল করতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের ওপর মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দিচ্ছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি তার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করবে জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার মধ্য দিয়ে।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান জানান, জনসভা করার বিষয়ে দুই দলের কারো পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি চাওয়া হয়নি। বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি।

অনুমতি না চাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসভা বন্ধ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও জানান, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা
  • মুরাদনগরে বিএনপি ও এনসিপির শোডাউন-জনসভা ঘিরে উত্তেজনা
  • সেতুর অভাবে দুর্ভোগ তিন উপজেলাবাসীর