চাঁদাবাজি আর বরদাশত করা হবে না: আসিফ মাহমুদ
Published: 27th, March 2025 GMT
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে এমন একটি পরিস্থিতি মধ্য দিয়ে সময় পার করেছি যে, অনেকেই মনে করেন চাঁদা দেওয়া আমার দায়িত্ব। আমরা চাঁদাবাজদের স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই- জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর চাঁদাবাজির প্র্যাকটিস আর বরদাশত করা হবে না।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ মাঠে মাসব্যাপী হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জে চাঁদা আদায়ে বাধা দেওয়ায় কয়েকজনকে মারধর করার প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সহস্র শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতার পেয়েছি, সেখানেও আগের মতো চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর মতো ঘটনাগুলো চলমান, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের সৌভাগ্য সমাজে এখনও সচেতন মানুষ আছে। যারা এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও প্রতিবাদ করেছে।
তিনি বলেন, আমি সারাদেশের তরুণদের আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যেখানে বিভিন্ন সমিতির নামে
টোকেন ধরিয়ে চাঁদাবাজি দেখবেন সেখানেই প্রতিবাদ করবেন, রুখে দাঁড়াবেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী চাঁদাবাজি দমনে কাজ করেছে। আপনারা তাদের সহযোগিতা করুন।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদরা জীবন দিয়েছেন একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য। ফ্যাসিবাদী সময়ে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়ে যারা সমাজ-তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করেছে তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, তরুণ প্রজন্ম ও শিশু-কিশোররা আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আমরা তাদের যেভাবে গড়ে তুলব তারা ঠিক সেভাবেই গড়ে উঠবে এবং আমরা সে রকমই একটি বাংলাদেশ পাব।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তরুণদের মাদক থেকে দূরে সরিয়ে খেলাধুলা এবং বিভিন্ন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের রোডম্যাপ চাই
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রত্যাশা ছিল, বল প্রয়োগভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে নাগরিক অধিকারভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন। কিন্তু অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকে রাখার ঘটনা একটা ভয়ানক বার্তা দিচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকার কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য সন্দেহভাজন যে কাউকে আটক করতে পারে। এই আইন বাতিলের কথা বিএনপি ’৯১-এর নির্বাচনী ইশতেহারে রাখলেও ক্ষমতায় গিয়ে তা অক্ষত রাখে। বাংলাদেশের পরবর্তী প্রতিটি সংসদ এই আইন বাতিল না করে তা রক্ষা করে গেছে।
জুলাই আন্দোলন বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সব জনবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী আইন ও ব্যবস্থার মূলোৎপাটনের দাবি জানায়। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কাঠামোর বিলুপ্তি দাবি করে। অর্থাৎ আমাদের রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে হবে বল প্রয়োগের ভিত্তিতে নয়; বরং জনগণের সার্বভৌমত্ব, মর্যাদা ও নাগরিক অধিকারকে ভিত্তি করে। জুলাই ঘোষণাপত্র বা প্রোক্লেমেশনে স্পষ্টভাবে এ ঘোষণা থাকার কথা ছিল– বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু হবে জনগণের সার্বভৌমত্ব, যা ব্যক্তির মর্যাদা, অধিকার ও বিকাশ নিশ্চিত এবং সুরক্ষিত করবে। এই প্রোক্লেমেশন এখনও হাজির না করতে পারা জুলাইকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে।
একবার ভাবুন– বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, র্যাব আইন, ৭০ অনুচ্ছেদসহ সব জবরদস্তিমূলক আইন অক্ষত রয়েছে; সব ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতি অক্ষত রয়েছে; আপনি শুধু সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। এই সরকার কীভাবে আপনার নাগরিক অধিকার, আপনার স্বাধীনতা এবং আপনার মর্যাদা নিশ্চিত করবে? আপনার সংবিধান আবার একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন বা সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র আরোপ করার জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ বা বাধা
দেওয়ার জন্য সব কঠোর জবরদস্তিমূলক আইন প্রয়োগ করা হবে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করতে হলে কোনো অবস্থাতেই, কোনো অজুহাতেই নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করা যাবে না। রাষ্ট্রের সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা। এ দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে জরুরি অবস্থা মানে সরকারের গদি অরক্ষিত হয়ে পড়া। তাই নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করে জরুরি অবস্থা দেয় তারা।
রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের যে অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছে, তা-ই অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার উৎস। নতুন গণক্ষমতা মানেই নতুন আইন, নতুন সংবিধান। যারা এখন মৌলিক রাষ্ট্র কাঠামোগত সংস্কার ছাড়াই দ্রুত সংসদীয় নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গাইছেন, তারা মূলত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবী সম্ভাবনাকে ধ্বংস করতে চাইছেন। তারা বর্ষার এই বিপ্লবকে শুধু ভোট বাক্সে সীমাবদ্ধ করে দিতে চাচ্ছেন।
শেখ হাসিনার আমলে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে জালিয়াতির নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখা আর জুলাই বিপ্লবীদের রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’কে এক করে দেখিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন বানচাল করতে চাইছেন কিছু রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবী। অথচ দুটো এক না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংস্কারপন্থিরা নির্বাচন চাইছেন, কিন্তু তা সংস্কারের পর। আর শেখ হাসিনা কথিত উন্নয়নের দোহাই দিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেননি। ফলে যারা দুই বিপরীত বিষয়ের তুলনা দিচ্ছেন, তাদের কথায় বড় শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। শেখ হাসিনা এবং তাঁর অনুগত বুদ্ধিজীবীরা প্রচার করেছেন– ‘কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন’, যা পাকিস্তান আমলের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মডেল। এখানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার এবং পুনর্গঠনের কথা বলা হচ্ছে। যে রাষ্ট্র কাঠামোতে ফ্যাসিবাদ স্তরে স্তরে বিদ্যমান, তার বিলোপ সাধন এই অন্তর্বর্তী সরকার না করলে তা নতুন নির্বাচিত সংস্কার করবে বলে আস্থা রাখা কঠিন। তখন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা আর দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনের অজুহাত তোলা হবে। এ দেশের শাসকগোষ্ঠী ’৭২-এ এসব করেনি, ’৯০-এও করেনি। বরং সংসদ হয়ে উঠেছে জনগণকে নির্যাতন করা আর তাদের অধিকার হরণের আইন প্রণয়নের কেন্দ্র। ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর নির্বাচিত সংসদ যেমন ২৭টি সংস্কার প্রস্তাব মানেনি, একই রকম এখনও নতুন সংসদ সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে বলে আমাদের আস্থা নেই।
দুনিয়াজুড়েই ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর নতুন সংবিধান করে আগে রাষ্ট্র গঠন বা পুনর্গঠনের ব্যবস্থা করা হয়, তারপর সংসদ বা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেওয়া হয়। ইউনূস সরকারকেই তাই রাষ্ট্র সংস্কার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে হবে এবং রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের রোডম্যাপ দিতে হবে। এ জন্য সাংবিধানিক সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা রাজনৈতিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন, নাগরিক অধিকার হরণকারী আইনি কাঠামো উচ্ছেদ বা ব্যাপক সংস্কার, গণবিরোধী আমলাতন্ত্র, জবরদস্তিমূলক নিরাপত্তা সংস্থা, বিজনেস অলিগার্ক নিয়ন্ত্রিত লুটেরা অর্থনৈতিক কাঠামোর বৈপ্লবিক সংস্কারের রোডম্যাপ দিতে হবে। বল প্রয়োগের ভিত্তিতে নয়, বরং জনগণের সার্বভৌমত্ব, মর্যাদা ও নাগরিক অধিকারকে ভিত্তি করে রাষ্ট্র গঠন করতে হবে এবং তার জন্য নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের রোডম্যাপ দিতে হবে। নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কার এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের পর একটি সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে।
ড. যোবায়ের আল মাহমুদ: সহযোগী অধ্যাপক, ফার্মাসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়