ঈদযাত্রায় সদরঘাটে নেই চিরচেনা হাঁকডাক
Published: 27th, March 2025 GMT
ঈদযাত্রায় রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চে যাত্রী নেওয়ার সেই চিরচেনা হাঁকডাক নেই। পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে যাত্রীও। তারপরেও বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছেন লঞ্চ মালিকেরা। অনেকেই আবার সড়ক ছেড়ে স্বস্তির নৌপথ বেছে নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, পন্টুনে বাঁধা সারি সারি লঞ্চ। চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রীর কিছুটা চাপ থাকলেও বরিশাল-ঝালকাঠি-ভোলা-বরগুনা রুটের লঞ্চগুলো অনেকটাই ফাঁকা। লঞ্চের কাউন্টারগুলোতে সুনসান নীরবতা। যাত্রীদের টিকিট কেনার হিড়িক নেই। অথচ বছর দুয়েক আগেও রমজানের শুরু থেকেই সরগরম থাকতো এসব কাউন্টার। স্টাফদের দম ফেলার ফুরসত যেখানে থাকতো না, সেখানে এখন যাত্রী সংকট।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সূত্রে জানা যায়, আগে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর ৩৫ শতাংশ নৌপথে যেতেন। পদ্মা সেতু চালু ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এখন তা প্রায় ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালে পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলমুখী লঞ্চযাত্রী অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে মহাসড়ক নির্মাণ ও বিভিন্ন নদীর ওপর সেতু হওয়া এবং সদরঘাটমুখী সড়কে তীব্র যানজটের ভোগান্তির কারণে লোকজন এখন লঞ্চে তেমন একটা যাতায়াত করতে চান না। তবে পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি ও স্বস্তির যাত্রার জন্য আবার অনেকে নৌপথে চলাচল করে।
লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, আগে ঢাকা থেকে ৪৩টি নৌপথে ২২৫টির মতো লঞ্চ চলাচল করত। এখন লঞ্চের সংখ্যা ১৯০টি। যাত্রী সংকট কমেছে নৌপথও। এখন রুট ৩৫টি। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলে বিভিন্ন পথে। বরিশাল, ভান্ডরিয়া ও ঝালকাঠিগামী লঞ্চযাত্রী একেবারেই কমে গেছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে ১৮টি লঞ্চ চললেও এখন চারটিতে নেমে এসেছে। কখনো কখনো একটি লঞ্চও চলে। তবে চাঁদপুর, ভোলার চরফ্যাসন, লালমোহন ও বরগুনা রুটে লঞ্চ তেমন কমেনি।
স্থানীয় যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে সদরঘাটের চাপ কমলেও গত কয়েক দিনে যাত্রীর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ঈদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে লঞ্চগুলোর রং করা হচ্ছে। যদিও আগের মতো ভিড় এবং লোকজনের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি।
লঞ্চের ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়া হতো। কিন্তু ঈদের সময় ডেকের ভাড়া ৪০০, সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ২০০ ও ডাবল কেবিনের ভাড়া দুই হাজার ৪০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ভাড়া না বাড়ানোর দাবি জানান লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা।
সুন্দরবন লঞ্চের স্টাফ আবির হোসেন বলেন, ‘গত এক যুগ ধরে আমি লঞ্চে স্টাফ হিসেবে আছি। আগে এমন সময় এক মুহূর্তে লঞ্চ ভর্তি হয়ে যেত আর এখন যাত্রী খরা, খালি লঞ্চ ছাড়তে হয়।’
টিকিট বিক্রির বিষয়ে আবির আরও বলেন, ‘এখন অগ্রিম টিকিট তেমন বিক্রি হয় না। যাওয়ার উদ্দেশ্যে এলেই সহজে টিকিট পাওয়া যায়। কেবিন, সোফা কিংবা লঞ্চের ডেকের ভাড়া আগের মতোই রয়েছে।’
যুবরাজ লঞ্চে বরিশালে বাড়িতে যাওয়ার জন্য কেবিন বুক করেছেন মাহতাব লিমন। তিনি বলেন, ‘আগে সপ্তাহ খানেক আগেও লঞ্চের কেবিন পাওয়া যেত না। কিন্তু আজ ঘাটে এসে কেবিন পেয়ে গেছি। আগের মতো ভিড় নেই। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে বাসেই যাতায়াত করতাম। কিন্তু ঈদের মধ্যে বাস বেপরোয়া ভাবে চালায় আবার টিকিটের দামও বেশি। তাই লঞ্চেই বাড়িতে যাচ্ছি।’
ব্যাংক কর্মকর্তা নীলা বেগম বরগুনায় বাবার বাসায় ঈদ করবেন। এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সদরঘাটে এসেছেন তিনি। নীলা বেগম বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান আজ থেকে ছুটি হয়ে গেছে। আজ থেকেই ভিড় কিছুটা বাড়লেও ২৭ রমজান থেকে সেটি আরও বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের প্রত্যাশা ২৭ রমজান থেকে লঞ্চের যাত্রী আরও বাড়বে। সুন্দরবন লঞ্চের ম্যানেজার মুসাব্বির বলেন, ‘বরিশালের মানুষের যাতায়াতের প্রিয় বাহন লঞ্চ। এখনও সবাই ছুটি পায়নি। ছুটি পেলে লঞ্চের যাত্রী আরও বাড়বে।’
ঈদুল ফিতরে নৌপথে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বুধবার থেকে সদরঘাট হতে বরিশালে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছে। যা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ফিরতি যাত্রীদের জন্য চালু থাকবে।
ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক বন্দর কর্তৃপক্ষও। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) স্পষ্ট নির্দেশনা, কোনো অনিয়মে ছাড় নয়। অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই কেড়ে নেওয়া হবে লঞ্চের লাইসেন্স। এছাড়া ঈদযাত্রা ভোগান্তিমুক্ত ও নিরাপদ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর এবং ঘাট এলাকায় যানজট নিরসনেও নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি।
ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লঞ্চ মালিকরা নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটালেই তাদের লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এছাড়াও সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়ার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের রুট পারমিট বাতিল করে দেব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদয ত র পদ ম স ত প রস ত ত ঈদয ত র সদরঘ ট বর শ ল আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাজে উঠতে গিয়ে পা পিছলে নদীতে নিখোঁজ নাবিক
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে জাহাজে উঠার সময় পা পিছলে এক নাবিক নদীতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। নিখোঁজের পর থেকে তার সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে নৌ-পুলিশসহ ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড।
শনিবার রাত ১০টার দিকে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) এক নম্বর জেটি থেকে এফভি পারটেক্স-১ জাহাজে ওঠার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ দুলাল মিয়া নোয়াখালী জেলার চরজব্বার থানার আবদুর রবের ছেলে। মাছ ধরার জাহাজ এফভি পারটেক্স -১ এ কর্মরত ছিলেন তিনি। নিখোঁজের ২০ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ওই নাবিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় সোমবার পারটেক্স কোম্পানির এফভি পারটেক্স-১ জাহাজের ম্যানেজার মো. সেলিম সিএমপি কর্ণফুলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম উল্লাহ জানান, শনিবার রাত ১০টার দিকে বিএফডিসি ১ নম্বর জেটি থেকে এফভি পারটেক্স-১ জাহাজে ওঠার সময় অসাবধানতাবশত দুই জাহাজের ফাঁকে কর্ণফুলি নদীতে পড়ে যান ফিশ মাস্টার দুলাল মিয়া।
রাতে, খবর পাওয়া মাত্র ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি, কোস্টগার্ড ও সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালায় রোববার বিকেলে পাঁচটা পর্যন্ত ওই নাবিকের সন্ধান মেলেনি।