ঈদের বাকি আর মাত্র ৪ দিন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবীরা। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুরের পর থেকে মহাসড়কে যাত্রীদের ঢল নেমেছে। 

এদিকে, যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে পরিবহনগুলোর বিরুদ্ধে। তবে বাড়ি ফেরার আনন্দে অতিরিক্ত ভাড়া মেনে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন তারা। 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে মানুষ বাড়ি ফিরছেন। এই দুই মহাসড়কের সবচেমে ব্যস্ততম এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা ও চন্দ্রা স্টেশনে যাত্রী ও পরিবহনগুলো ভিড় করছে। গাজীপুরের কারখানাগুলো বেশ কিছুতে আজকেও ছুটি দেওয়া হয়েছে। যানজট এড়ানোর জন্য ঘরমুখো যাত্রীরা আগেভাগে বাড়ি ফিরছেন। যাত্রীদের অনেকে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করলেও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা তা অস্বীকার করেছেন। 

আরো পড়ুন:

ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু সড়কে স্বস্তির ঈদযাত্রা

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট

শিল্পঅধ্যুষিত গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় লাখ লাখ কর্মী কাজ করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের অনেক কারখানা ছুটি হয়েছে। এরপর থেকে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় যাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে আছেন। তবে কোথাও যানজট পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গণমানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে জেলা, মহানগর ও ট্রাফিক বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

পরিবহন মালিক ও শিল্প কারখানা সূত্র জানা গেছে, আজ থেকে মহাসড়কে চাপ বাড়বে। কেননা আজ হতে কারখানাগুলো ধাপে ধাপে ছুটি হবে। কিছু কারখানা আগামীকাল শুক্রবার (২৮ মার্চ), বাকিগুলো শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরের মধ্যে ছুটি হবে। বিকেল হতে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। এটি আগামী শনিবার পর্যন্ত চলমান থাকবে। 

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ সময় থেকে অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষের। চন্দ্রা হতে সিরাজগঞ্জের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। নাদের পরিবহন ইঞ্জিন কাভারে জনপ্রতি ভাড়া নিচ্ছে ১ হাজার। সায়মা স্পেশালে রাজশাহীর জন্য ভাড়া নিচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার করে। একতা পরিবহন পাবনায় ভাড়া নিচ্ছে ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ করে।

ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের সহকারী মমিন বলেন, ‘‘ঈদে একটু বেশি ভাড়া নিবে, এটা মেনে নিতে হবে। ঈদের সময় যাত্রী বেশি থাকে, যানজট থাকে। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক সময় থেকে ভাড়া তুলনামূলক বেশি হয়।’’  

মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক কারখানা শ্রমিক বলেন, ‘‘আজ দুপুরের পর আমাদের কারখানা ১০ দিন ছুটি দিয়েছে। চন্দ্রায় থেকে বগুড়া সাধারণ সময় যেসব গাড়িতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া, সেসব গাড়িতে আজ ৮০০ থেকে ১ হাজার নিচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করে না, করলেও লাভ হয় না।’’  

নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি রইচ উদ্দিন জানান, বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড.

নজমুল করিম খান জানান, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে যানজট নিরসনে মহাসড়ক দখলমুক্ত রাখা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধসহ সার্বিক নিরাপত্তায় জিএমপি পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত কাজ করছে। পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দলও (ভলান্টিয়ার) সহায়তা করছে। ছিনতাই প্রতিরোধে সাদা পোশাকে কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। যানবাহন যেন চলন্ত থাকে, রাস্তায় কোথাও থামা যাবে না। সামান্য থামলেই দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। 

তিনি আরো জানান, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এবার ৫০০ পুলিশ কর্মকর্তা কাজ করছেন। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন থেকে স্বেচ্ছাসেবক সরবরাহ করা হয়েছে। 

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন ঈদ উৎসব ঈদ ক জ করছ পর বহন ক জ কর য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-বরিশাল রুটে ৫০০ টাকার ভাড়া ৮০০ নেওয়ার অভিযোগ 

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে লাখ লাখ মানুষ ইতিমধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। যারা ব্যস্ততার কারণে যেতে পারেননি তাদের মধ্যে অনেকে শেষ মূহুর্তে বাড়ি যাচ্ছেন। এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হলেও ঢাকা-বরিশাল রুটের বিভিন্ন বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। 

রবিবার (৩০ মার্চ) ঢাকার গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। 

ঈদের ছুটি হওয়ায় ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ কম। কাউন্টারের পরিবহনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। পরিবহনগুলো যাত্রীর জন্য ডাকাডাকি করছেন। তবে ঢাকার-বরিশাল, ঢাকা-মাদারীপুর, ঢাকা-খুলনাসহ বিভিন্ন রুটের পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।   

আনন্দ পরিবহন ও ইলিশ পরিবহনের বাস কাউন্টার থেকে সকাল ১০টার দিকে ঢাকা–বরিশালগামী নন-এসি বাসের টিকিট ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে ১৬০০ টাকা দিয়ে দুটি টিকিট কাটেন মো. আবুল হোসেন নামের এক যাত্রী।

তিনি বলেন, “তিন-চারটি কাউন্টার ঘুরলাম। রানিং বাসের টিকিট সব বুকিং। আনন্দ  তাজ ও ইলিশ পরিবহনের টিকিট আছে। দুটি গাড়িতে একই ভাড়া চায়। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। কী আর করবো। ৫০০ টাকার টিকিট ৮০০ টাকা দিয়ে কিনে বাড়ি যাচ্ছি।” 

ইলিশ পরিবহনের সুপার ভাইজার মো. সুরুজ   বলেন, “ঢাকা থেকে বরিশালে যাত্রী রেখে ফেরার সময় খালি গাড়ি আসবে।  পানি দিয়ে গাড়ি চলে না। তেলের খরচ, টোল দিয়ে আসতে হয়। তাই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।” 

অন্যরুটেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। রাজধানীর পল্টন থেকে মাদারীপুর যাওয়ার উদ্দেশে এ টার্মিনালে পরিবার নিয়ে আসেন ছলিম উল্লাহ। তিনি চন্দ্রা পরিবহন থেকে পরিবারের সবার জন্য তিনটি টিকিট সংগ্রহ করেন। প্রতিটি টিকিট ৬০০ টাকা করে।  

ছলিম উল্লাহ বলেন, “প্রতি মাসে আমি বাড়ি যাই। তখন ৩৫০ টাকা করে রাখা হয়। এখন ৬০০ টাকা করে টাকা লাগলো।”

বরিশাল রুটের আনন্দ তাজ পরিবহনের ম্যানেজার খবির মোল্লা বলেন, “ঈদের টানা ছুটি হওয়ায় রাস্তায় যাত্রী কম। অনেক সময়  পর সব আসনের টিকিট বিক্রি হয়। পাশাপাশি যাত্রী নামিয়ে আসার সময় খালি গাড়ি ও টোল দিয়ে আসতে হয়। এ জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে সামান্য বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।”

ফুলবাড়িয়া পুলিশ কন্ট্রোল রুম এলাকায় দায়িত্বরত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বুলবুল বলেন, “গত ঈদের সময় বাসের যে ভাড়া ছিল এবার সেই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে না পারে সেজন্য মনিটরং করা হচ্ছে। কেউ অভিযোগ করলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম বিপুল বলেন, “গুলিস্তান থেকে বরিশাল, মাদারীপুর, ফরিদপুর, খুলনাসহ বেশ কিছু রুটে প্রায় ৬০০ গাড়ি চলছে। ঈদের সময় গাড়িগুলো যাত্রী নিয়ে গিয়ে খালি আসে। এজন্য গত বছরের যে ভাড়া আমরা ঈদে নিয়েছিলাম, এ বছরও সেই ভাড়া আমরা নিতে বলেছি। যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা কোনোভাবেই আদায় করা যাবে না। বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাসের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/এএএম/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা-বরিশাল রুটে ৫০০ টাকার ভাড়া ৮০০ নেওয়ার অভিযোগ