‘চোখের আলো ফিরে পাব না, তবু দেশটা ভালো থাক’
Published: 27th, March 2025 GMT
বগুড়া শহরের নারুলী উত্তরণ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে রিয়াদ প্রামাণিক। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়। দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও রিয়াদের এক চোখের আলো ফেরেনি। রিয়াদ বলে, ‘বাঁ চোখের আলো চিরদিনের মতো নিভে গেছে। চোখের আলো ফিরে পাব না কোনো দিন, তাতে কষ্ট নেই। তবু দেশটা ভালো থাক। দেশের মানুষ ভালো থাকুক।’
বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ (৩৮)। শহরের কাঁঠালতলা এলাকার একটি ফলের দোকানে কাজ করে সংসার চলত তাঁর। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ক্ষত সারলেও ডান চোখের আলো নিভে যায় মজিদের। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বাকি জীবন কীভাবে চলবেন, সেটা নিয়েই তাঁর দুশ্চিন্তা।
রিয়াদ প্রামাণিক কিংবা আবদুল মজিদ নন; জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে চোখ, পা বা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারানোর ক্ষত বহন করে বেড়ানো আহত ব্যক্তিরা সরকারি সহায়তার চেক নিতে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের শোনান তাঁদের কষ্টগাথা। রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, আর্থিক সহযোগিতা, পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করতে গিয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বগুড়ায় আহত ব্যক্তির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে প্রথম পর্বে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ৩৫ জনের হাতে সরকারি অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেজবাউল করিম, বগুড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল হাসান, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গণেশ দাসসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের অবদান কখনো অর্থ দিয়ে শোধ হবে না। জুলাই যোদ্ধাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। তাঁদের কারণে তাঁরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছেন। বগুড়ায় আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সম্মান ও সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হলো। প্রথম পর্বে ৩৫ জনকে অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আহত ‘এ’ ক্যাটাগরির ১১ জনকে ২ লাখ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির ২৪ জনকে ১ লাখ টাকা করে চেক দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
চেক পেয়ে আবেগাপ্লুত বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের তরুণ আতিকুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করা আতিকুরের ডান পা ভেঙে যায় ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরের কাছে পুলিশের হামলায়। আতিকুর বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এখনো আন্দোলন শেষ হয়নি। নতুন বাংলাদেশ ফিরে পেতে আরও সময় লাগবে হয়তো। কিন্তু আশা ছাড়িনি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ খ র আল
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীতে শেষ মুহূর্তের ঈদ প্রস্তুতি, বিপণী বিতানে কেনাকাটার ধুম
পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এরইমধ্যে বহু মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। আর অনেকেই রয়েছেন শেষ মুহূর্তের ঈদযাত্রায় বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। এরইমধ্যে অনেকটাই ফাকা হয়ে গেছে ঢাকা। তবে ঢাকার বাসিন্দাদের রাতভর কেনাকাটার ব্যস্ততায় কমতি নেই তাতে। চাঁদ রাতে ঢাকার একেবারে ভিন্ন এক চিত্র দেখা গেছে বিভিন্ন বিপণী বিতানে।
রোববার রাত ৯টা থেকে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, বেইলি রোড ও বিজয় সরণি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। বিশেষ করে শহরের বিভিন্ন মার্কেট, শপিং সেন্টার আর সড়ক সংলগ্ন বিপণী বিতানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
বিজয় সরণি ও ধানমন্ডির একটি সড়কে কর্তব্যরত দুই ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, শহরের বাসিন্দারা গরমের কারণে রাতের সময়টাকেই মনে হচ্ছে কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছেন।
ধানমন্ডির দুটি অভিজাত শপিং মল এবং এলিফ্যান্ট রোডে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড়। দোকানগুলোতে বিক্রিও চলছিল অনেক।
উত্তরা থেকে আসা ব্যবসায়ী রেদওয়ান আহমেদ জানান, ঈদের মূল কেনাকাটা শেষ। এই সময়টায় জুতা, স্যান্ডেল, প্রসাধনীর জন্যই মানুষ ভিড় করছে মার্কেটে।
তিনি বলেন, অনেক বছর পর তুলনামূলক সহনশীল ঈদের বাজার। মানুষ কেনাকাটা করতে পারছে বেশ আনন্দে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দফায় দফায় চাঁদাবাজি, উচ্ছৃঙ্খলতা, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা এবার প্রায় নেই বললেই চলে। প্রশাসনের কাছ থেকে তারা সহায়তা পাচ্ছেন প্রত্যাশা মতোই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় ক্রেতা-ব্যবসায়ী উভয় পক্ষ নিশ্চিন্ত। রাত যতই হোক তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আগেও রাতে মানুষের কেনাকাটা চলত। তবে বিগত বছরগুলোতে নানা অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষের মনে দুঃচিন্তা থাকত।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) নজরুল সিলাম দোওনিক সমকালকে বলেন, রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রেক্ষাপট এবং প্রয়োজন অনুসারে করণীয় নির্ধারণ করছে পুলিশ। ঈদের সময় রাজধানীজুড়ে যে জনশুন্যতা সৃষ্টি হবে সেটা যেন অপরাধীদের উস্কে না দেয় সেদিক নজর রাখা হবে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের ভল্টে বড় অংকের অর্থ মজুদ থাকে, জুয়েলারী দোকান এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তায় বিশেষ নির্দেশনা মতো কাজ শুরু হয়েছে। আবাসিক এলাকাগুলোতেও একইভাবে নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে চাই। আপনারা নিশ্চিন্তে ঈদের আনন্দ উপভোগ করুন। পুলিশ জেগে আছে।