ঈদের আগে চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে ২৯৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে শেষ দুই দিনে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের আয়। ফলে প্রথমবারের মতো ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে দরকার আর অল্প কিছু প্রবাসী আয়ের। আজ বৃহস্পতিবারও প্রবাসী আয় আসছে, যার হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। মাস শেষ হতে আরও চার দিন বাকি। প্রবাসী আয়ের ধারা বিবেচনা করলে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, চলতি মাসে নতুন রেকর্ড করতে যাচ্ছে প্রবাসী আয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার। এ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলার এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম ঈদ সমাগত। বিদেশ থেকে প্রবাসীরা বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত অর্থ পাচার কমে আসায় প্রবাসীরা তাঁদের আয় পাঠাতে বৈধ পথকে বেছে নিয়েছেন। এর ফলে পবিত্র রমজান মাসে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলেন, ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতাও কমেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে।

মার্চ মাসের রেমিট্যান্সের প্রবাহ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয় আসে ১৬৬ কোটি ডলার। চার দিন পরে অর্থাৎ ১৯ মার্চে ব্যাংকিং চ্যানেল তথা বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ২২৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু ১৯ মার্চ এক দিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। আবার ১ থেকে ২২ মার্চ তথা মাসের প্রথম ২২ দিনে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪৩ কোটি ডলার, যা ২৪ মার্চে বেড়ে ২৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। আর ২৬ দিনে আয় বেড়ে হয় ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি ও দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে এসেছে।

সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় বছরের অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি আসে। গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাঁচ দিনেই ৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার করে এসেছিল। পরের চার দিনে প্রবাসীরা অর্থ পাঠানো আরও বাড়িয়ে দেন।

দেশে গত বছরের আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ বছরের জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে।

সব মিলিয়ে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই–মার্চে প্রবাসীরা দেশে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা করে প্রবাসী আয়ের ডলার কেনা এখন অনেকটা কমে এসেছে। এর ফলে ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যেই রয়েছে। এতে পণ্য আমদানিতেও ডলারের দাম কম পড়ছে। ফলে আমদানি খাদ্যপণ্যের দাম সেভাবে বাড়েনি। আগে একসময় প্রতি ডলারের দাম ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র একই সময় ম স র প রথম প রব স র গত বছর এস ছ ল সময় র

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেটে কোনো থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না

আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে কোনো ধরনের থোক বরাদ্দের প্রস্তাব না করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজেটে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হয়, এমন সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের প্রাক্কলন এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন তা মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে সংকুলানযোগ্য হয়।

অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় আলোচনার ভিত্তিতে যে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, ওই ব্যয়সীমাই সর্বোচ্চ বরাদ্দ এবং এ বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো অবকাশ নেই।

সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে এক পরিপত্রের মাধ্যমে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিপত্রে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতাভুক্ত সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে বাজেট প্রণয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বিস্তারিত বাজেট প্রাক্কলন এবং একইসঙ্গে পরবর্তী ২০২৬-২০২৭ ও ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরের প্রক্ষেপণ প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ বলেছে, বাজেট প্রস্তাব আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ (১ ও ২), পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাতে হবে।

পরিপত্রে বলা হয়, সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে প্রণীত বাজেট কাঠামো এরইমধ্যে অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রি-পক্ষীয় সভায় পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং ওই সভার পর্যবেক্ষণের আলোকে একটি সম্মত বাজেট কাঠামো প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের বাজেট প্রণয়নে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ত্রিপক্ষীয় (অর্থ বিভাগ-পরিকল্পনা কমিশন-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান) সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজস্ব ও প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা এবং ব্যয়সীমার আলোকে বিস্তারিত বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রয়োজনে সংশোধন ও পুনর্নিধারণ করতে হবে।

পরিপত্রে বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, বিভাগগুলোকে চারটি নীতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোতে বর্ণিত কৌশলগত উদ্দেশ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ‘রি-স্ট্রাটেজিসিং দ্য ইকোনমি অ্যান্ড মবিলাইজিং রিসোর্সেস ফর ইক্যুয়িটেবল অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক টাস্কফোর্স রিপোর্ট এবং মন্ত্রণালয়, বিভাগের নিজস্ব নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত সরকারের নীতি ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা এবং মধ্যমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে সক্ষম হয়;

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সরকারের মৌলিক নীতি নির্ধারণী দলিলগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দারিদ্র নিরসন, নারী ও শিশু উন্নয়ন, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় সহায়ক কার্যক্রমে বরাদ্দ বাড়াতে সক্ষম হয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং নারী ও শিশু উন্নয়নে প্রদেয় সেবার মান ও পরিমাণ বাড়ে;

জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় বাড়ার সামঞ্জস্য রাখা, যাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়;

মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের কৌশলগত ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রাক্কলন, প্রক্ষেপন প্রণয়নে ত্রিপক্ষীয় সভায় নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রকল্পওয়ারি বরাদ্দ পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পুনর্নিধারণ করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রদত্ত মোট এডিপি ব্যয়সীমা কোনোভাবেই অতিক্রম করা যাবে না।

প্রদত্ত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য (ডিপিএ/আরপিএ), নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি বাবদ ব্যয় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্প সাহায্য, নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি ব্যয় বিবেচনা করে প্রকল্পের প্রাক্কলন বা প্রক্ষেপণ তৈরি করতে হবে। এ বাবদ ব্যয়সীমার অতিরিক্ত কোনো অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হবে না। এছাড়া, অননুমোদিত কোনো প্রকল্প বা স্কিমের জন্য কোনো বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না। অন্যদিকে অনুমোদিত সব প্রকল্পের জন্য প্রক্ষেপণে বরাদ্দ রাখতে হবে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি-তে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তব পরীক্ষা করে প্রচলিত নিয়মে ব্যবস্থা নেবে পরিকল্পনা কমিশন।

সরকারি অনুদানে পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বরাদ্দ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার চলতি অর্থবছরের নিজস্ব আয় ও আয়ের উৎসসমূহ পর্যালোচনা করতে হবে। ত্রি-পক্ষীয় সভায় সম্মত প্রাক্কলিত ও প্রক্ষেপিত আয় সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে দেখাতে হবে। নিজস্ব আয়ের অর্থ বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্য ব্যয়সীমা বা সরকারি অনুদানের পরিমাণ নির্ধারণ করে তার ভিত্তিতে বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রণয়ন করতে হবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছোট বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গতি কম
  • বাজেটে কোনো থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না
  • সমঝোতায় বাধা যেখানে
  • এপারের সিমেন্টে নজর আরাকান আর্মির
  • বিশ্ববাণিজ্যে এগিয়ে কারা
  • এডিপির ব্যয় আগের চেয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা কম
  • চলতি অর্থবছরের জুলাই–মার্চে পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন
  • বাজেট ২০২৫-২৬: বেশি জোর থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে
  • ১৫ বছর পর আজ বাংলাদেশ–পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক
  • বন্দর থেকে ১০০ কোটি টাকা গৃহকর পেল চসিক