বরিশাল নগরের কীর্তণখোলার তীরে স্বজনদের ফেলে যাওয়া নবজাতককে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয় শিশুটিকে। হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউর মুনীর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় শিশুটিকে কেউ দত্তক নিতে রাজি হচ্ছে না।অজ্ঞাত পরিচয়ের শিশুটিকে শনিবার উদ্ধারের পর বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের যৌথ প্রচেষ্টায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তত্ত্বাবধানের জন্য রাকিবুল হাসান ও অ্যাপোলি মৈত্রী নামের দুজন সমাজকর্মী শিশুটির সঙ্গে গেছেন। 

এদিকে কীর্তণখোলার তীরে অজ্ঞাত পরিচয়ের শিশু উদ্ধারের খবর সমকালে প্রকাশের পর অনেকে শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক সমকালকে বলেন, দত্তক নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ করেছিল। কিন্ত শিশুটির শারীরিক অবস্থা জানার পর তারা আর আগ্রহ দেখাননি। 

শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে পরিচালক বলেন, শিশুটির পিঠে মেরদণ্ডের টিস্যু থেকে টিউমারের উৎপত্তি হয়েছে। এটি পুরোপুরি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। চিকিৎসার ওপর ভরসা রেখে শিশুটিকে যতদিন কিছুটা সুস্থ রাখা যায়। 

প্রসঙ্গত, শনিবার রাত ১২টার দিকে নগরীর সংলগ্ন কীর্তণখোলার তীরে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় পরিত্যক্ত বাথরুমে নবজাতকটিকে উদ্ধার হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ফুচকা বিক্রেতা পারভীন বেগম শিশুটিকে উদ্ধার করেন। ধারণা করা হচ্ছে, শারীরিক অবস্থার কারণে স্বজনরা শিশুটিকে ফেলে রেখে যান। 

শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের দায়িত্বরত সমাজসেবা কর্মকর্তা দিলরুবা রিচি বলেন, চিকিৎসায় শিশুটি সুস্থ হলে সমাজসেবার বেবী হোমে হস্তান্তর করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

তিস্তা প্রকল্প ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ইতিবাচক সাড়া চীনের

চীন বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বহুল আলোচিত তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে দেশটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রসারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বর্তমানে চীনে পড়াশোনা করছেন, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে খলিলুর রহমান এ তথ্য জানান।

খলিলুর রহমান বলেন, ‘চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০টি চমৎকার বর্ষ অতিক্রম করেছি আমরা। আগামী ৫০ বছর কেমন করে আমরা আমাদের দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলব, তার একটি শক্ত ভিত্তি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তৈরি করে দিয়েছেন।’

খলিলুর রহমান আরও বলেন, তার (দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের) একটি দিক হচ্ছে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং অন্য দিকটা শিল্পায়ন। এই দুটি স্তম্ভ তাঁরা শক্ত করে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন। এগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ হচ্ছে দুই দেশের মানুষের। তার একটি প্রধান বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক।

খলিলুর রহমান বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বলেছেন, আমরা এক-দুজন নয়; বরং হাজার হাজার বাংলাদেশি চাইছি, যাঁরা চীনে শিক্ষা নিতে যাবেন। আগামী এপ্রিল মাসে কুনমিং শহরের গভর্নর বাংলাদেশে আসছেন। ওই সফরে শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমরা চাইছি, যেন বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী চীনে শিক্ষার সুযোগ লাভ করতে পারেন। এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। একই সঙ্গে উভয় দেশের মানুষের সঙ্গে সংযোগ ও শিক্ষার প্রসারের জন্য ঢাকা ও চীনে দুটি কালচারাল সেন্টার স্থাপন করা হবে।’

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে ৭৫০ মিলিয়নের মতো ঋণের কথা আমরা বলছি। এর মধ্যে অর্ধেক চট্টগ্রামের চীনা শিল্পাঞ্চল উন্নয়নের জন্য। অন্যদিকে মোংলা বন্দরে আমাদের একটি আধুনিকীকরণের প্রকল্প চলছে। যেহেতু চীন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণের কাজ করছে, এটার পাশপাশি ওখানেও একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করার চিন্তাভাবনা করছে। তারা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা রাজি থাকলে সেখানে দ্বিতীয় ইকোনমিক জোন নিয়ে তারা কাজ করবে এবং সেখানে বিনিয়োগ করবে।’

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘চীনের ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রতিশ্রুতির কথা আমরা বলছি। এই অর্থ আগের সব বড় বড় অঙ্কের থেকে একটি বড় কারণে ভিন্ন। কারণ, আগে যে বড় অঙ্কের অর্থ নিশ্চিত করে আসা হয়েছে, সেগুলো ছিল ঋণ। ঋণের একটা ইতিবাচক দিক হলো, নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা চলে আসে, নেতিবাচক হলো, এই টাকা আমাদের ফেরত দিতে হয়। সুতরাং আমাদের অর্থনীতিতে এই টাকা ঢোকে এবং সুদসহ বের হয়ে যায়। সেই জায়গায় যদি বিনিয়োগ আসে, সেটি আমাদের অর্থনীতিতে থেকে যায়। এই টাকা কখনো এই দেশ থেকে যাবে না। এই বিনিয়োগের ফলে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে, সেটা ঋণ থেকে কখনোই হয় না।’

আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ইতিবাচক, তবে প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি ৯ ঘণ্টা আগে

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘এবার এই ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৩০টি চীনা কোম্পানি। এটি মূলত চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনা শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে। প্রায় ৮০০ একর জমির ওপর এই শিল্পাঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। এই জোনের কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু ২০২২ সালের পর এটা নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত তিন মাসে আমরা এখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি এবং অনেকগুলো বড় সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। তাদের সঙ্গে একটা নেগসিয়েশনে এসেছে, যে কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন খুবই কনফিডেন্ট (আত্মবিশ্বাসী) অনুভব করছেন যে এই বছরের কোনো এক সময় আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করব। জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, এখন আমরা নির্মাণ কাজে যাব। সেটার ওপর নির্ভর করেই কিন্তু চীনা কোম্পানি আমাদের এখানে আসার চিন্তা করছে।’

এবারের চীন সফরে স্বাস্থ্যসেবা একটা বড় বিষয় ছিল উল্লেখ করে বিডার চেয়ারম্যান বলেন, ‘১২ শতাংশের মতো এসেছে অনুদান, যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো। এর মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলার কারিগরি সহায়তার জন্য এবং ১০০ মিলিয়ন হাসপাতাল তৈরির জন্য। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে অত্যাধুনিক হাসপাতাল তৈরি করা এবং বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে যাত্রা ভারত-থাইল্যান্ডের দিকে হয়, আমরা চেষ্টা করছি, যাতে চীন থেকে সেই সাপোর্ট পাওয়া যায়।’

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়টি কিন্তু আমাদের জন্য বড় প্রভাব রেখেছে। আমরা অনেক দিন ধরে চীনের বিনিয়োগের কথা বলছি। চীনা বিনিয়োগের যে গুরুত্ব সেটা আমরা আবারও গিয়ে অনুধাবন করেছি। আমরা এই সুযোগ আসলে খুব কম গ্রহণ করেছি। চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা এখনও আছে কিন্তু খুব স্বল্প পরিসরে আছে। আমাদের আরও বেশি হারে চীনে যেতে হবে। চীন এমন একটি মহাদেশ, যেখান থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসা সম্ভব। লাস্ট আগস্ট থেকে এই মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি চীনা কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষে (বেপজা)। এখানে আর্থিক প্রতিশ্রুতি প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলারের মতো।’

ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনঅধ্যাপক ইউনূসের চীন সফর বাংলাদেশে কী প্রভাব ফেলতে পারে২৭ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ