রানওয়েতে দুই উড়োজাহাজের সংঘর্ষের সময় ফুটবল খেলার ধারাভাষ্য শুনছিলেন কন্ট্রোলাররা
Published: 27th, March 2025 GMT
প্যান অ্যাম ১৭৩৬ ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়ের থেকে ছাড়তে কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হয়ে গিয়েছিল। উড়োজাহাজে বসে থাকতে থাকতে হাঁসফাঁস করছিলেন ফ্লাইটের যাত্রীরা। এর মধ্যেই উড়োজাহাজটি আকাশে ওড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন খবরে যাত্রীরা চঞ্চল হয়ে ওঠেন। তাঁদের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি। কারণ, এই ফ্লাইটের প্রত্যেক যাত্রী বহু প্রতীক্ষিত ভূমধ্যসাগরীয় ক্রুজ ভ্রমণে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।
বিমানবন্দরে দীর্ঘ সময় উড়োজাহাজে বসে থাকার ফাঁকে প্রথম শ্রেণির যাত্রী ক্যারোলিন হপকিন্স তাঁর দুই মেয়ের কাছে চিঠি লেখা শেষ করেন। দেখলেন, পাশে বসা স্বামী ওয়ারেন একটি ম্যাগাজিন আসনের পেছনে থাকা পকেটে গুঁজে রাখলেন। কেবিনের অন্য যাত্রীরাও আরাম করে নড়েচড়ে বসলেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্লাইটটি তাঁদের স্পেনের তেনেরিফ থেকে লাস পালমাস বিমানবন্দরে নিয়ে যাবে। সেখান থেকে তাঁরা বাসে চড়ে অপেক্ষারত ক্রুজ জাহাজে পৌঁছাবেন। পরিকল্পনাটা এমনই ছিল।
পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের যোগাযোগে ভুল–বোঝাবুঝিতে প্রাণ গেল ৫৮৩ জনের
প্যান অ্যাম ১৭৩৬ এবং কেএলএম ৪৮০৫ ফ্লাইটের দুর্ঘটনা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা মনে করা হয়।
তেনেরিফে দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের নিয়মনীতিতে বড় পরিবর্তন আসে।
প্যান অ্যামের বিশাল এই উজোড়াজাহাজ তেনেরিফের একমাত্র রানওয়েতে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিল, কিন্তু হঠাৎ যাত্রীরা বাঁ দিকে প্রচণ্ড মোচড় অনুভব করলেন। যাত্রী ইসোবেল মন্ডা সঙ্গে সঙ্গে জানালার দিকে তাকিয়ে স্বামী টনিকে বললেন, ‘ওই নির্বোধ লোকটা (পাইলট) রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়বে!’
আসলেই পাইলট ক্যাপ্টেন ভিক্টর গ্রাবস ও তাঁর ফার্স্ট অফিসার রবার্ট ব্র্যাগ তখন উড়োজাহাজটিকে রানওয়ে থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কারণ, ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন রানওয়েতে তাঁরা আচমকাই দেখলেন, কেএলএম ৭৪৭ ফ্লাইট তাঁদের দিকে দ্রুততম গতিতে এগিয়ে আসছে। গ্রাবস ও তাঁর ক্রু মরিয়া হয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না।
স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের তেনেরিফ দ্বীপের লস রোদেওস বিমানবন্দরের রানওয়েতে ১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ, স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার কিছু পর প্যান অ্যাম ১৭৩৬ ও কেএলএম ৪৮০৫-এর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুটি উড়োজাহজই ছিল বোয়িংয়ের। চার দশকের বেশি সময় পরেও এই দুর্ঘটনাকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা হিসেবে মনে করা হয়। ওই দুর্ঘটনায় ৫৮৩ জন নিহত হয়েছেন। অনেক যাত্রী আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ‘তেনেরিফের বিপর্যয়’ নামে পরিচিত হয়ে আছে।
দুর্ঘটনার শিকার উড়োজাহাজ দুটি মূলত ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের গ্রান কানারিয়া দ্বীপের রাজধানী লাস পালমাস বিমানবন্দরে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন সকালে দ্বীপপুঞ্জের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ওই বিমানবন্দরের টার্মিনালে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এ কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ আহতও হন। এরপর বিমানবন্দরে একটি টেলিফোনে ফোন করে আরও কয়েকটি ‘বোমা’ হামলা হতে পারে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ যে যুক্তি দেখিয়েছে, তা হলো ভাষাগত বিভ্রান্তি। এটি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এবং কন্ট্রোল টাওয়ারের রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, কর্তব্যরত কন্ট্রোলাররা ফুটবল ম্যাচের ধারাভাষ্য শুনছিলেন।এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সব আগত ফ্লাইট স্থগিত করে এবং কিছু ফ্লাইটকে নিকটবর্তী শহর তেনেরিফে লস রোদেওস বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরামর্শ দেয়। বলা হয়, লাস পালমাস বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ না সবকিছু ঠিক আছে জানায়, ততক্ষণ তাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
সেদিন একসঙ্গে এত বেশি ফ্লাইট অবতরণ করায় লস রোদেওস বিমানবন্দর প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ঘন কুয়াশা, খারাপ আবহাওয়া এবং কেএলএম ফ্লাইট ৪৮০৫-এর পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের মধ্যে যোগাযোগে ভুল–বোঝাবুঝি। যে কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেএলএম উড়োজাহাজের ২৪৮ যাত্রী ও ক্রু সবাই মারা যান। প্যান অ্যাম বিমানে ৩৩৫ জন নিহত হন ও ৬১ জন বেঁচে যান।
বেঁচে যাওয়া যাত্রীর বয়ানসেই ৬১ জন জীবিত যাত্রীর একজন ছিলেন জোয়ানি ফেদারস। তিনি তাঁর বন্ধু জ্যাক রিদাউতের সঙ্গে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের ভূমধ্যসাগরীয় একটি ক্রুজ জাহাজে ওঠার পরিকল্পনা ছিল।
ঘটনার সময় ২৭ বছরের তরুণী ছিলেন জোয়ানি। তিনি পরে দ্য দেতোনা বিচ জার্নালকে বলেন, দুর্ঘটনার ঠিক আগে তাঁদের উড়োজাহাজটিকে রানওয়েতে কেএলএমের খুব কাছাকাছি দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। আচমকা তাঁদের উড়োজাহাজটি বাঁ দিকে মোচড় নেয়। এরপর যা মনে আছে তা হলো, উড়োজাহাজের ছাদ ভেঙে খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছিল। ছোট ছোট আগুন জ্বলছে, চারদিকে ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে ছিল।
জোয়ানি আরও বলেন, ‘আমার সব আংটি হাত থেকে খুলে পড়ে গিয়েছিল। আমার জুতাও খুলে গিয়েছিল।’ তিনি বলেন, তিনি জ্যাককে খুঁজতে থাকেন এবং দেখতে পান, জ্যাক সামনের আসনের ওপর ঝুঁকে পড়ে আছে। তাঁর মাথা অনেকটা কেটে যায়। তাঁরা দুজনই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু চারপাশে অনেক মরদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। কেউ কেউ আগুনে ঝলসে গিয়েছিল।’
জোয়ানি শুধু চাচ্ছিলেন যেন তাঁরা আগুনে পুড়ে মারা না যান। তাই তিনি আর জ্যাকের মাথার মধ্যে ঘুরছিল, দ্রুত উড়োজাহাজ থেকে বের হতে হবে। জোয়ানি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন। প্রথমে তিনি তাঁর সিটবেল্ট খুলে ফেলেন ও উড়োজাহাজের অবশিষ্ট ঝুলে থাকা দরজার দিকে এগিয়ে যান।
জোয়ানি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কাজ শুরু করেন। জ্যাকও তাঁকে সাহায্য করেন। উড়োজাহাজ থেকে লাফ দেওয়ার জায়গাটি ছিল প্রায় দুই তলা উঁচু। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোক তাঁকে লাফ দিতে বলেন এবং বলেন যে তিনি তাঁকে ধরে ফেলবেন। কিন্তু জোয়ানি ওই ব্যক্তির বরাবর না পড়ে নিচে পড়ে যান। শরীরে বেশ আঘাত লাগলেও সেদিকে না তাকিয়ে তিনি কেবল ছুটছিলেন। আর বলছিলেন, ‘না, না, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, এটা সত্যি ঘটছে!’
জোয়ানি বলেন, জ্যাক কিছুক্ষণ পরই তাঁর কাছে পৌঁছান। কারণ, জোয়ানি যখন নেমে আসেন জ্যাক তখন উড়োজাহাজে ছিলেন এবং এক বিমান ক্রুকে সাহায্য করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সে সময় একটি বিস্ফোরণ ঘটে এবং সেই ক্রু নিহত হন।
জ্যাক শেষ মুহূর্তে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। তাঁরা যখন উড়োজাহাজের ধ্বংসস্তূপ থেকে মাত্র ৫০-১০০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে, তখন পুরো উড়োজাহাজ একটি পরমাণু বোমার মতো বিস্ফোরিত হয়।
কেএলএম ফ্লাইট যখন টেক–অফ করার চেষ্টা করছিল, তখন প্যান অ্যাম ফ্লাইটটি উড্ডয়নের জন্য রানওয়েতে উঠেছিল, আর তখনই দুটি উড়োজাহাজের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেএলএম উড়োজাহাজের ২৪৮ যাত্রী ও ক্রু সবাই মারা যান। প্যান অ্যাম উড়োজাহাজে ৩৩৫ জন নিহত হন এবং ৬১ জন বেঁচে যান।দুর্ঘটনার কারণযুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে এসেছিল প্যান অ্যাম ফ্লাইট ১৭৩৬। আর নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শিফোর বিমানবন্দর থেকে এসেছিল কেএলএম এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি। দুটি উড়োজাহাজকেই তেনেরিফে ছোট্ট এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়। এই বিমানবন্দরে শুধু একটি রানওয়ে ছিল। আর বোয়িংয়ে বিমানের জন্য গুটি কয়েক পার্কিংয়ের জায়গা ছিল।
কেএলএমের ক্যাপ্টেন জ্যাকব ভেলধুয়েজেন ভ্যান জান্টেন এখানে বসে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। কারণ, লাস পালমাসে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে তাঁকে আবার ফ্লাইটটি নিয়ে আমস্টারডামে ফিরতে হতো। আর এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে এখানে সময় নষ্ট হচ্ছিল। উড়োজাহাজের ককপিটের কথোপকথনে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এই জায়গার বড় ডাকটিকিট আমি দেখেছি। আর আমরা এখানে বাক্সবন্দী হয়ে আছি।’
আবার বিমানবন্দরের রোববার ছুটির দিনে দুই কন্ট্রোলার দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁরা কখনো এত ফ্লাইট একসঙ্গে আটকে থাকার ঘটনা দেখেননি।
যেহেতু সব রানওয়ে উড়োহাজাজে ভর্তি ছিল, তাই প্রধান রানওয়েটিকে ট্যাক্সিওয়ে হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে উড়োজাহাজগুলো পালাক্রমে রানওয়ে দিয়ে ট্যাক্সি করে দূর গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে টেক-অফ করার সুযোগ পাবে।
সেই সময় বিমানবন্দরে আরও একটি উদ্বেগজনক বিষয় ছিল আবহাওয়া। বিমানবন্দরের চারপাশে মেঘ জমছিল এবং কুয়াশা ক্রমে ঘন হয়ে আসছিল। লাস পালমাস বিমানবন্দর যখন আবার চালু হলো, কন্ট্রোলাররা একটি করে উড়োজাহাজকে দিকনির্দেশনা দিতে শুরু করেন।
কেএলএম উড়োজাহাজের যাত্রীদের টার্মিনালে অপেক্ষা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, আর ক্যাপ্টেন সেই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে ৫৫ টন জ্বালানি ভর্তি করেন, যা দিয়ে তিনি গ্রান ক্যানারিয়ার লাস পালমাস ও সেখান থেকে আমস্টারডামে ফেরত যেতে পারবেন। জ্বালানি ভর্তি করার কারণে কেএলএম বিমানের পেছনে আটকা পড়ে প্যান অ্যাম। জ্বালানি ভর্তি শেষে যাত্রীদের নিয়ে কেএলএম উড়োজাহাজটি যত দ্রুত সম্ভব চলতে শুরু করল। যদিও কুয়াশার কারণে চারপাশে ঝাপসা ছিল।
কেএলএম উড়োজাহাজটি ঘন কুয়াশার মধ্যে রানওয়ে ধরে এগোচ্ছিল, আর প্যান অ্যামও রানওয়ে ধরে চলছিল। তবে প্যান অ্যামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল নির্দিষ্ট একটি এক্সিট দিয়ে বেরিয়ে যেতে, যাতে কেএলএম উড়োজাহাজটি ঘুরে এসে নিরাপদে টেক-অফ করতে পারে।
কন্ট্রোল টাওয়ার প্যান অ্যাম রানওয়ে ছেড়েছে কি না, জানতে চাইলে ক্রু জানান, তাঁরা এখনো পুরোপুরি বেরোতে পারেননি, কিন্তু তাঁরা প্রয়োজনীয় মোড় নিয়েছেন। ঘুরতে শুরু করেছেন। কিন্তু ততক্ষণে কেএলএম উড়োজাহাজটি রানওয়ে ধরে দ্রুত ছুটতে শুরু করেছে। কেএলএম ক্যাপ্টেন যখন প্যান অ্যাম উড়োজাহাজটিকে দেখতে পেলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারে প্যান অ্যাম পাইলট ভিক্টর গ্রাবসের শেষ কথা স্পষ্ট শোনা যায়, ‘ওই যে সে, আমাদের দিকে আসছে।’
কেএলএম উড়োজাহাজটি প্যান অ্যাম উড়োজাহাজের ছাদ ঘেঁষে ওপর দিয়ে গিয়ে আছড়ে পড়ে। এ কারণে দুটি উড়োজাহাজই বিস্ফোরিত হয়। কেএলএম উড়োজাহাজের ২৪৮ যাত্রী ও ক্রু সবাই নিহত হন।
এই দুর্ঘটনার তদন্তও বিমান চলাচলের ইতিহাসের অন্যতম বড় তদন্তের ঘটনা। সেখানে স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ জনের বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগে দুই উড়োজাহাজের ক্রু ও কন্ট্রোল টাওয়ারের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের লগ ছিল তদন্তকারীদের মূল সূত্র।
শেষ পর্যন্ত তদন্তে এই দুর্ঘটরার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়, কেএলএম ক্যাপ্টেন অনুমতি না নিয়েই টেক-অফ করেছিলেন, যদিও ককপিটের সহকর্মীরা তাঁকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন, যা ভয়েস রেকর্ডারে শোনা যায়।
নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ যে যুক্তি দেখিয়েছে তা হলো, ভাষাগত বিভ্রান্তি। এটি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এবং কন্ট্রোল টাওয়ারের রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, কর্তব্যরত কন্ট্রোলাররা ফুটবল ম্যাচের ধারাভাষ্য শুনছিলেন।
আরও একটি কারণ ছিল, কেএলএম উড়োজাহাজের অতিরিক্ত জ্বালানি নেওয়া। এ কারণে ৩৫ মিনিট সময় লাগে। আর ওই সময়ে কুয়াশা আরও ঘনীভূত হয়ে পড়ে।
অতিরিক্ত জ্বালানির কারণে উড়োজাহাজটি গতি ধীর রাখতে হয়েছিল। তাই, প্যান অ্যাম উড়োজাহাজের বেশ ওপর দিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। এই অতিরিক্ত জ্বালানি আগুনকে আরও ভয়াবহ করে তোলে, যে কারণে কেএলএম উড়োজাহাজের কারও বাঁচার সুযোগ হয়নি।
তেনেরিফে দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের নিয়মাবলিতে বড় পরিবর্তন আসে। পাইলট ও কন্ট্রোলারদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ইংরেজি ফ্রেজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতির ওপর জোর দেওয়া হয়। ক্রু রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) ব্যবস্থা উন্নত করা হয়, যাতে জুনিয়র পাইলটরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্যাপ্টেনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।
সূত্র: ইউনিল্যাড, হিস্টরিনেট
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ব পপ ঞ জ দ র ঘটন র ম ফ ল ইট ন র জন য ফ ল ইটট করছ ল ন র কর ড তদন ত র নওয় প ইলট
এছাড়াও পড়ুন:
আলু কিনতে গিয়ে কথা কাটাকাটি, পিটুনিতে নিহত ১
নড়াইলের লোহাগড়ায় আলু কিনতে গিয়ে কথা কাটাকাটির মধ্যে বিক্রেতার পিটুনিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রবিবার (৩০ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পৌরসভার লক্ষ্মীপাশা চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৪৭) উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের মহিষাপাড়া গ্রামের ওলিয়ার ফকিরের ছেলে এবং নড়াইল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক।
অভিযুক্ত ইদ্রিস শেখ (৬০) গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত তাহের শেখের ছেলে। এ ঘটনার পরপরই অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার বিকেলে কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইদ্রিস শেখের দোকানে যান আব্দুল্লাহ আল-মামুন। এ সময় আলুর দর নিয়ে আব্দুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে ইদ্রিস শেখের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ইদ্রিস শেখ প্লাস্টিকের গামলা দিয়ে আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে পিটিয়ে আহত করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে রামপুর এলাকা থেকে অভিযুক্ত ইদ্রিস শেখকে আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’
ঢাকা/শরিফুল/রাজীব