৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৭০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির অনুমোদন
Published: 27th, March 2025 GMT
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চালের একটি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৭০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির ২টি প্রস্তাবসহ মোট ৩ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৬৭৭ কোটি ৫৬ লাখ ১১ হাজার ২০০ টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.
সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১০ এর আওতায় ৫০ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দেশের সরকারি খাদ্য মজুদ বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ৫০ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৭টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৬টি প্রস্তাব আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লি. ভারত এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন ৪২৪.৭৭ মা. ডলার হিসেবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয়ে ব্যয় হবে ২ কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মা. ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রা ২৫৯ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে চালের মোট চাহিদা ৩৯.৭৮ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ক্রয় চুক্তি হয়েছে ৭ লাখ মেট্রিক টন।
সূত্র জানায়, সভায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে চতুর্থ লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি (ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিএডিসি কর্তৃক সৌদি আরব থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ডিএপি সার আমদানি করা হয়। ইতঃপূর্বে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় গত ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর তারিখে পুনরায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সার আমদানি চুক্তিতে উল্লিখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে সৌদি আরব থেকে চতুর্থ লটে ৪০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন ডিএপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ব্যয় হবে ২ কোটি ৫১ লাখ মা. ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সারের দাম পড়বে ৬২৭.৫০ মা. ডলার। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিএডিসি কর্তৃক ডিএপি সার আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ৮.৭৯ লাখ মেট্রিন টন; এ পর্যন্ত
আমদানি হয়েছে ৪.৫৭ লাখ মেট্রিক টন।
সভায় অপর এক প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় রাশিয়া থেকে নবম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিএডিসি কর্তৃক রাশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এমওপি সার আমদানি করা হয়। ইতঃপূর্বে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় ২০২৪ সালের ১৬ মে তারিখে পুনরায় চুক্তি নবায়ন করা হয়। সার আমদানি চুক্তি অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে রাশিয়া থেকে নবম লটে ৩০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন এমওপি সারের বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ৯১ লাখ ৯১ হাজার ১০০ মা. ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১২ কোটি ১৩ লাখ ১৪ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন এমওপি সারের দাম পড়বে ৩০৬.৩৭ মা. ডলার। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিএডিসি কর্তৃক এমওপি সার
আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৭৯ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে আমদানি করা হবে ২.৫৯ লাখ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১.২৩ লাখ মেট্রিক টন।
ঢাকা/হাসনাত/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ষ ট র য় পর য য় স র আমদ ন র ম ট র ক টন প রস ত ব ৫০ হ জ র দরপত র মন ত র কর ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
সবুজ প্রকৃতির অপরিহার্য প্রাণী
গতকাল ১৭ এপ্রিল ছিল ‘বিশ্ব বাদুড় ভালোবাসা দিবস’। বিষয়টি অনেকের কাছে অদ্ভুত লাগছে নিশ্চয়। ইংরেজিতে দিনটিকে বলা হয়েছে ‘গ্লোবাল ব্যাট অ্যাপ্রিসিয়েশন ডে’। বাংলা অভিধানে অ্যাপ্রিসিয়েশন শব্দটির নানা অর্থ খুঁজে যা পেলাম, তার মধ্যে ভালোবাসা শব্দটিই ভালো লাগল। সে যা-ই হোক, বাদুড়কে ভালো করে জানাশোনা, গবেষণা করা, বাদুড়ের নানা উপকারিতা কিংবা ক্ষতিকর দিক সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যেই এই দিনের সূচনা করেছে আন্তর্জাতিক বাদুড় গবেষণা সংস্থা ব্যাট কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল। কারণ, বাদুড়কে সাধারণত বেশির ভাগ মানুষ ক্ষতিকর কিংবা ভীতিকর প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে গবেষকেরা বলছেন, বাদুড়ের ক্ষতি যৎসামান্য, সে তুলনায় উপকারিতার পরিমাণ অনেক বেশি।
বাদুড় মোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ। সে তুলনায় এই বিশাল প্রাণিবৈচিত্র্য নিয়ে বিজ্ঞানীদের জানাশোনা খুবই কম। আর সাধারণ মানুষের মধ্যে তো বাদুড় নিয়ে আছে নানা ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার। বিষম আকার-আকৃতি, গুপ্ত বাসস্থান কিংবা রাতবিরাতে বিচরণ করে বলে বাদুড় নিয়ে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব কুসংস্কার বাসা বেঁধেছে। অনেকে এদের অমঙ্গলের প্রতীক বলেও মনে করেন। আবার অনেকের কাছে বাদুড় নানা ধরনের প্রাণঘাতী জীবাণুবাহক হিসেবে পরিচিত। আসলে প্রাণিজগতের নানা প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়াল, গন্ধগোকুল কিংবা বানর নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের যেমন বাহক; তেমনি বাদুড়ও বিভিন্ন প্রকার জীবাণু বহন করতে পারে। তাই অন্যান্য প্রাণীর মতো বাদুড়েরও কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। যেমন আমাদের দেশে কলাবাদুড় নিপাহ ভাইরাস বহন করে, যা খেজুরের কাঁচা রসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। তেমনি কুকুরের কামড়ে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে জলাতঙ্ক।
এই দিবসে কেন বাদুড়কে ভালোবাসা, কদর করা কিংবা মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটির পেছনে রয়েছে নানা কারণ। দু–একটি বিষয় ছোট করে বলি। বাদুড় যেসব ইকোসিস্টেম সার্ভিস প্রদান করে, তার মধ্যে অন্যতম পেস্ট কন্ট্রোল, উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে উদ্ভিদের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া। গবেষণামতে, তিন শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের পরাগায়ন ফলভোজী বাদুড়ের মাধ্যমে ঘটে। এর মধ্যে আমাদের পরিচিত আম, পেয়ারা ও কলা অন্যতম। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে যে ডোরিয়ান ফল, সেটির পরাগায়ন ঘটে এই বাদুড়ের মাধ্যমে। সারা দুনিয়ায় যে ১ হাজার ৪০০ প্রজাতির খাদ্য উৎপাদনকারী উদ্ভিদ আছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশের পরাগায়নের জন্য নানা ধরনের পরাগায়নকারী প্রাণীর উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। এর মধ্যে নীরবে–নিভৃতে কাজ করে চলেছে নানা জাতের বাদুড়সহ অন্যান্য প্রাণী।
অন্যদিকে সারা দুনিয়ার ১ হাজার ৪০০ প্রজাতির বাদুড়ের মধ্যে ৭০ শতাংশ কীটপতঙ্গ খায়। গবেষণা বলছে, বাদুড় যেসব কীটপতঙ্গ শিকার করে, তার ৬০ শতাংশ ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড়। সাধারণ অবস্থায় একটি বাদুড় প্রতি রাতে তার দেহের ওজনের অর্ধেক পরিমাণ পোকামাকড় শিকার করে। আর গর্ভধারী কিংবা পোয়াতি বাদুড় তার দেহের ওজনের সমপরিমাণ পোকামাকড় শিকার করে প্রতি রাতে। এই পোকামাকড়ের মধ্যে থাকে নানা প্রজাতির মশাও। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা হিসাব করে দেখিয়েছেন, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে বাদুড় প্রতিবছর আনুমানিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ফসলের ক্ষতিসাধন রোধ করে।
যেসব বাদুড় কীটপতঙ্গ শিকার করে, এরা সাধারণত ছোট আকৃতির। সাধারণভাবে এরা আমাদের কাছে চামচিকা নামে পরিচিত। ঘরের কার্নিশে, ঘন গাছের পাতার আড়ালে কিংবা কোনো গাছের কোটরেও এরা সারা দিন বিশ্রাম করে কাটায়। সন্ধ্যা হলেই বেরিয়ে পড়ে খাবারের খোঁজে। এই বর্ষাকালে সন্ধ্যাবেলায় আকাশে তাকালে দেখবেন, অসংখ্য ছোট প্রাণী দিগ্বিদিক উড়ে বেড়াচ্ছে। অনেকে এগুলোকে পাখি ভেবে ভুল করেন। এরা আসলে বাদুড় বা চামচিকা। সন্ধ্যা নামলে ভূমিতল, ফসলের খেত ও গাছপালা থেকে নানা কীটপতঙ্গ, মশা-মাছি বেরিয়ে পড়ে। ঠিক সেই সময় বাদুড়ও বেরিয়ে পড়ে তাদের রাতের খাবার শিকার করতে। উড়ে উড়ে শিকার করে কীট, পোকামাকড়।
সারা দুনিয়ার বাদুড়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। একসময় আমাদের দেশজুড়ে তেঁতুলগাছ, বটগাছ কিংবা বড় আকারের কোনো গাছে যে বাদুড় দল বেঁধে ঝুলে থাকত, সেই বাদুড় আর আগের মতো দেখা যায় না। ঠিক তেমনিভাবে কমছে অন্যান্য জাতের বাদুড়ও। বাদুড়ের আবাস ধ্বংস, বাদুড়ের বিশ্রাম করার জায়গা নষ্ট করে ফেলা, বৃহদাকার গাছ কেটে ফেলা, খাদ্যের জন্য বাদুড় শিকার ইত্যাদি কারণে বাদুড়ের সংখ্যা দিন দিন কমেছে।
মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে পরাগায়নকারী পাখি, প্রজাপতি, মথ, মৌমাছি, বাদুড় প্রভৃতি প্রাণীর উপস্থিতি অপারিহার্য। এগুলোর মাধ্যমে ইকোসিস্টেমের সেবা কার্যকরভাবে অব্যাহত আছে। ফলে আমরা ফসল পাই, অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারি। এসব প্রাণী না থাকলে স্থলজ ইকোসিস্টেম ভেঙে পড়বে, মানুষের অস্তিত্ব পড়বে মহাসংকটে। তাই বিজ্ঞানীরা বলেন, সিম্পল ট্রুথ ইজ, ‘উই ক্যান্ট লিভ উইদাউট দেম’।
এম এ আজিজ, অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়