তুরস্কের প্রতিটি শহরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা বিরোধী দলীয় নেতার
Published: 27th, March 2025 GMT
তুরস্কের প্রধান বিরোধী দলের নেতা ওজগুর ওজেল বলেন, আগাম নির্বাচনের ডাক কিংবা ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে কারাগার থেকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত দেশটির প্রতিটি শহরে তাঁদের বিক্ষোভ চলবে। বিবিসিকে তিনি এ কথা বলেছেন।
ওজগুর ওজেল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) চেয়ারম্যান। একরেম ইমামোগলুও একই দলের নেতা। ওজেল বলেছেন, দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শনিবার ইস্তাম্বুলে বড় ধরনের বিক্ষোভ হবে। তাঁর মতে, এর মধ্য দিয়ে ২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ইমামোগলুকে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট করার জন্য দলের প্রচারণার সূচনা হবে।
ওজেল ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমরা যে শহরেই যাব, সেখানেই তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।’
ইস্তাম্বুলে দলের সদর দপ্তরে বসে বিবিসির সঙ্গে কথাগুলো বলেন ওজেল। তিনি আরও বলেন, ‘একরেম ইমামোগলুর প্রতি বিশ্বাস ও গণতন্ত্র এ বিক্ষোভকে আরও বড় এবং শক্তিশালী করে তুলবে।’
এক সপ্তাহ আগে ইমামোগলু গ্রেপ্তার হন। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সড়কে বড় জমায়েত করছে বিরোধী দল। গত এক দশকে তুরস্কে এত বড় বিক্ষোভ হতে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুনতুরস্কে কারাবন্দী ইমামোগলু বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত, চলছে এরদোয়ানের ধরপাকড়২৪ মার্চ ২০২৫তুরস্কে গণহারে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিক্ষোভ নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাত তুর্কি সাংবাদিকও আছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন ধরে রেখেছেন। তিনি এ বিক্ষোভকে ‘পথ সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করছে এবং জনগণের সম্পদ নষ্ট করছে। এরদোয়ান মনে করেন, বিরোধী দলের এ ‘শো’ ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাবে।
ইমামোগলুকে ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে সিলিভরি কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সেখানে ইমামোগলুর সঙ্গে দেখা করে ফেরার পর বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন ওজেল। তিনি বলেন, ইমামোগলুকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো আছে এবং এখন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি।
ওজেল বলেছেন, ইস্তাম্বুলের মেয়রকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণও দিয়েছেন তিনি। যেমন ইমামোগলুর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ হলো, তিনি বহু বছর আগে সস্তায় জমি কিনেছিলেন। আর কম দাম হওয়ার মানে এটি ঘুষ হতে পারে। ওজেল বলছেন, এটা সত্য নয়। জমির জন্য জমা দেওয়া অর্থের একটি অংশ হিসেবে ওই সামান্য পরিমাণ অর্থ জমা দেওয়া হয়েছিল।
ইমামোগলুর বিরুদ্ধে একটি অপরাধ সংগঠন প্রতিষ্ঠা, ঘুষ নেওয়া, চাঁদাবাজি ও সরকারি টেন্ডারে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে। ইমামোগলু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি তাঁর গ্রেপ্তারের ঘটনাটিকে অভ্যুত্থান বলে উল্লেখ করেছেন।
তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির আদালতগুলো স্বাধীন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো তা মনে করে না।
ওজেল মনে করেন, ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করার কারণ একটাই। আর তা হলো তাঁকে তুরস্কের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট না হতে দেওয়া। জনমত জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছে, কারাগারে না থাকলে ইমামোগলু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন।
ওজেল বলেন, ‘পুরো বিশ্বের সামনে এরদোয়ান তিনবারের নির্বাচনে বিজয়ীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। হুট করে তিনি এমন একজনকে জেলে পাঠিয়েছেন যিনি, সাধারণ রাজনৈতিক উপায়ে তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছিলেন। এটা অনেকটা এমন যে ফুটবল খেলায় আপনি জিতে যাচ্ছেন জেনে প্রতিপক্ষ এসে বল টুকরা টুকরা দিয়ে কেটে ফেলছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত রস ক র প এরদ য় ন
এছাড়াও পড়ুন:
সংঘর্ষ ও খুনের পর মিরসরাই বিএনপির তিন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত
সংঘর্ষ ও খুনের পর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত তিনটি কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট পৌরসভার তিনটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত বিএনপির কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশেষ একটি পক্ষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এলাকায় জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একজন নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার হন এবং ১৫ জন গুরুতরভাবে জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাম্প্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিরসরাইয়ের জনগণের পাশে থাকার লক্ষ্যে অনুমোদিত তিন কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হলো।
কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির বিষয়ে পরবর্তী করণীয় বসে ঠিক করা হবে। কমিটি গঠনের পর হত্যাসহ নানা নৈরাজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮ মার্চ মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারিয়ারহাট বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন ঘোষিত বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও আজিজুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব মনোনীত করা হয়। ঘোষিত এই কমিটির বিরোধিতা করে ২৫ মার্চ দুপুরে মিরসরাই উপজেলা সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারীরা। সেই ঝাড়ুমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন আহ্বায়ক কমিটিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিএনপির দুই পক্ষের এমন উত্তেজনা শুরু হলে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ফুল দিতে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কায় ২৬ মার্চ সকালে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য মিরসরাই উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। সেদিন বেলা ১১টায় মিছিল গণজমায়েত করে প্রশাসনের দেওয়া ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে যান মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের অনুসারীরা। এরপর উপজেলার বারিয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মইনুদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মোহাম্মদ জাবেদ নামের এক যুবক নিহত হন। সংঘর্ষের সেই ঘটনায় বিএনপির আরও অন্তত ১৩ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন।