আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি নিয়ে এগোবে এনসিপি
Published: 27th, March 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কিন্তু নির্বাহী আদেশের বদলে তারা চায় বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে আপাতত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল চায় দলটি। এই দাবিতে তারা কর্মসূচি পালন করে যাবে।
বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো যাতে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে না পারে, সেটিও চায় এনসিপি। তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে।
এই মুহূর্তে এনসিপি আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে বিচারিক প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন ধাপ পার করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দিকেই আমাদের এগোতে হবে। সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক, এনসিপিঅন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে এনসিপির নেতারা সতর্ক থাকবেন। সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে যেসব প্রচার চালানো হচ্ছে, সেগুলো তাঁরা সমর্থন করবেন না। তবে বিরাজনীতিকরণ ও রাজনীতির সামরিকীকরণের যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান থাকবে দলটির।
এনসিপির শীর্ষস্থানীয় তিনজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে দলের এই রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়টি জানা গেছে।
জানতে চাইলে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে এনসিপি আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে বিচারিক প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন ধাপ পার করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দিকেই আমাদের এগোতে হবে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে গঠিত দল এনসিপি যাত্রা শুরু করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। দলটির নেতারা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি করে আসছেন। তবে ২০ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের নিন্দা জানায়। তবে দলীয়ভাবে এনসিপি নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বদলে নিবন্ধন বাতিলের দাবি সামনে আনার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে। দলের সূত্র বলছে, তাঁরা চান না আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাক। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ারও বিপক্ষে এনসিপির নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার হওয়ার পর বিচারিক প্রক্রিয়ায় দল নিষিদ্ধে সময় লাগবে। নিবন্ধন বাতিল করা হলে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে না।
এনসিপি নেতারা আরও মনে করেন, অধ্যাপক ইউনূস যেহেতু বলেছেন, আওয়ামী লীগকে অন্তর্বর্তী সরকারের নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই, সেহেতু সেই অবস্থান বদলের সুযোগ কম। তবে চাপ তৈরি করে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করানোর সুযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তাঁদের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে দল নিষিদ্ধ না করার কথা বলা হয়েছে। এরপর তাঁরা চিন্তাভাবনা করে নিবন্ধন বাতিলের দাবিটিকে সামনে আনার সিদ্ধান্ত নেন। এই নেতা আরও মনে করেন, পরে আদালতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে সেটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করার সুযোগ থাকবে না।
আওয়ামী লীগ যাতে রাজনীতিতে সক্রিয় না হতে পারে এবং তাদের পুনর্বাসনের কোনো চেষ্টা যাতে কেউ করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবে এনসিপি। ২২ মার্চ পুরান ঢাকায় এক ইফতার অনুষ্ঠানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কোনো ধরনের পরিকল্পনা করা হলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
একই দিন বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে এক কর্মসূচি থেকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তাঁরা নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চান না। দলটির দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি।
দলীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর আরও কর্মসূচি দেবে এনসিপি।
সেনাবাহিনী নিয়ে কথা বলতে সতর্কতা
২০ মার্চ দিবাগত রাতে হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘রিফাইন্ড (পরিশুদ্ধ) আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। তাঁদের সেনানিবাসে ডেকে নিয়ে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হাসনাতের এই বক্তব্যের পর নানা আলোচনা তৈরি হয়। পরে সেনা সদর দপ্তর সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, হাসনাতের পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্টান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়।’ ১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সঙ্গে হাসনাত ও সারজিস আলমের (এনসিপির মুখ্য সংগঠক, উত্তরাঞ্চল) বৈঠকটি হয়েছিল। তবে তাঁদের ডেকে নেওয়া হয়নি; বরং হাসনাত ও সারজিসের আগ্রহেই বৈঠকটি হয়েছিল।
সেনা সদর ‘ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগের’ দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে আরও বলেছিল, হাসনাতের বক্তব্য ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার।’
পরদিন সারজিস ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে লেখেন, ওই বৈঠক তাঁদের ডেকে নেওয়া হয়নি। তাঁরাই দেখা করতে চেয়েছিলেন। ‘চাপ দেওয়া হয়েছে’ বলেও তিনি মনে করেন না। হাসনাতের ফেসবুক পোস্টকে শিষ্টাচার–বিবর্জিত বলে উল্লেখ করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
দলের ভেতরে আলোচনার বদলে প্রকাশ্যে বক্তব্য এনসিপির নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করে। এরপর এনসিপির নীতিনির্ধারকেরা সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার বিষয়ে একমত হন।
এনসিপির দুজন শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সেনাপ্রধানকে অপসারণের যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, সেগুলো তাঁরা সমর্থন করবেন না। কারণ, এর ফলে দেশ আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে। তবে তাঁরা বার্তা দেবেন যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোই নেবে, অন্য কেউ নয়।
২২ মার্চ শাহবাগে এক কর্মসূচিতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের অবস্থান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। সেনাবাহিনীকে যারা অপব্যবহার করতে চায়, আমাদের অবস্থান তাদের বিরুদ্ধে।’
ঈদের পরে কী কর্মসূচি
সেনা অভ্যুত্থানের গুজব, আওয়ামী লীগের ‘পুনর্বাসন’ ও আওয়ামী লীগের ঝটিকা কর্মসূচি প্রতিহত করতে ঈদের পরে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি রাখার চিন্তা রয়েছে এনসিপিতে। তবে কী কর্মসূচি পালিত হবে, তা ঠিক হয়নি।
দলের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের বিচার ও নিবন্ধন বাতিলের দাবিকে সামনে রেখে কর্মসূচিগুলো দেব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র ন ত প রথম আল ক র অবস থ ন র জন ত ক আম দ র দলট র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে চাকরি, বয়স ৪৮ হলেও আবেদন
বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি কর্মকর্তা নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এ ব্যাংকে রিটেইল বিজনেস ডিভিশনে ভাইস প্রেসিডেন্ট বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদায় হেড অব কার্ড বিজনেস পদে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
পদের নাম: হেড অব কার্ড বিজনেস
পদসংখ্যা: ১
যোগ্যতা: স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অন্তত ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর মধ্যে কার্ড ডিভিশনে নেতৃত্বের পর্যায়ে অন্তত দুই বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নেতৃত্বের সক্ষমতা থাকতে হবে।
বয়স: ১২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সর্বোচ্চ ৪৮ বছর
কর্মস্থল: ঢাকা
বেতন: উল্লেখ নেই
আরও পড়ুনবেসরকারি ব্যাংক নেবে অফিসার, স্নাতক পাসে আবেদন২৯ মার্চ ২০২৫আবেদন যেভাবেআগ্রহী প্রার্থীদের এই লিংক থেকে নিয়োগসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জেনে Apply Online বাটনে ক্লিক করে আবেদন করতে হবে।
আবেদনের শেষ সময়: ১২ এপ্রিল ২০২৫।