হামাসের মুখপাত্র আবদেল-লতিফকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
Published: 27th, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মুখপাত্র আবদেল-লতিফ আল-কানৌয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ভোরে হামাস-পরিচালিত আল-আকসা টেলিভিশন জানিয়েছে, জাবালিয়ায় আল-কানৌয়ার তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালানো হলে তিনি নিহত হন। এ হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। খবর রয়টার্সের।
অন্যদিকে গাজা সিটিতে পৃথক হামলায় কমপক্ষে ছয়জন এবং দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একজন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
আরো পড়ুন:
সামরিক প্রধান দেইফের নিহতের খবর স্বীকার হামাসের
টঙ্গীতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ
এই সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েল হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইসমাইল বারহুম এবং আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা সালাহ আল-বারহুমকে হত্যা করে। বারহুম এবং আল-বারহুম উভয়ই হামাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ২০ সদস্যের শীর্ষ সংস্থা- রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ছিলেন।
হামাস সূত্র অনুসারে, ২০২৩ সালের শেষের দিকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক ব্যুরোর ১১ জন নিহত হয়েছেন।
টানা ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত মঙ্গলবার থেকে গাজায় পুনরায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনি নতুন করে নিহত হয়েছেন আর সর্বমোট নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদরাতের আমল ও ঈদের প্রস্তুতি
নতুন চাঁদ রমজানের সিয়াম সাধনার পর ঈদের আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। ‘হিলাল’ অর্থ নতুন চাঁদ, যা বাংলা উচ্চারণে ‘হেলাল’। যে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা যায়, সে রাত হলো চাঁদরাত। প্রতি মাসের চাঁদরাত গুরুত্বপূর্ণ। আরবি চান্দ্রবৎসরের নবম মাস রমজান, দশম মাস শাওয়াল। প্রতি মাসের ২৯ তারিখ নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত এবং সেদিন নতুন চাঁদ দেখা না গেলে ৩০ তারিখও নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করা সুন্নত। চান্দ্র তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া।
রমজান মাসের শেষে পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। শাওয়াল মাসের চাঁদরাত হলো ঈদের রাত। ঈদের রাত ইবাদতের ফজিলতপূর্ণ রাতগুলোর অন্যতম। চাঁদরাতের প্রথম সুন্নত ও ফরজে কিফায়া আমল হলো সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ দেখা। চাঁদ দেখলে বা চাঁদ দেখার সংবাদ পেলে বিশেষ দোয়া পড়া সুন্নত। (মুসনাদে আহমাদ: ১৪০০, রিয়াদুস সালেহিন: ১২৩৬)
হজরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমানি ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’
রমজান মাসের শেষে পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। শাওয়াল মাসের চাঁদরাত হলো ঈদের রাত। ঈদের রাত ইবাদতের ফজিলতপূর্ণ রাতগুলোর অন্যতম‘আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় করো। আর তুমি যা ভালোবাসো এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তৌফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
রমজানের শেষে পয়লা শাওয়াল চাঁদরাত তথা ঈদের রাতের আমল হলো মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ যথাযথভাবে আদায় করা; রাতের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে পবিত্রতা অর্জন করা; সম্ভব হলে গোসল করা; ইবাদতের উপযোগী ভালো পোশাক পরা; সুগন্ধি ব্যবহার করা; মাগরিবের পর আওয়াবিন নামাজ পড়া এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া; রাত জেগে নফল ইবাদত করা; নফল নামাজ পড়া (তাহিয়্যাতুল ওজু, দুখুলুল মসজিদ, তওবার নামাজ, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুশ শোকর ইত্যাদি); কোরআন তিলাওয়াত করা, দরুদ শরিফ পাঠ করা, ইস্তিগফার করা, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে মশগুল থাকা।
প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘যখন ঈদের দিন তথা ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ বান্দাদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, ‘হে আমার ফেরেশতারা! যে শ্রমিক তার কাজ পূর্ণ করেছে, তার বিনিময় কী?’ তারা বলবে, ‘তাদের বিনিময় হলো তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে প্রদান করা।’ আল্লাহ বলবেন, ‘হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দা-বান্দিরা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেছে, তারপর সালাত ও দোয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। আমার সম্মান, মহত্ত্ব, করুণা, মাহাত্ম্য ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি তাদের প্রার্থনা কবুল করব।’ এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের মন্দ আমলগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দিলাম।’ নবীজি (সা.) বলেন, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাবে।’ (খুতবাতুল আহকাম, পৃষ্ঠা ১৬২-১৬৬)
ঈদের প্রস্তুতি ও ঈদের দিনের আমল হলো, নামাজের আগে শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা; হাত-পায়ের নখ কাটা, ক্ষৌরকর্ম করা, ঈদের রাতে ঘুমানোর আগে চোখে সুরমা ব্যবহার করা, ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, ফজরের নামাজ পুরুষেরা মসজিদে জামাতে আদায় করা এবং নারীরা নিজ গৃহে নিভৃতে আওয়াল ওয়াক্তে পড়া, ভোরে মিসওয়াক করা ও গোসল করা, সকালে খেজুর বা মিষ্টান্ন দ্বারা প্রাতরাশ গ্রহণ করা, সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্দর ও উত্তম ইসলামি সুন্নতি পোশাক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় পরিধান করা, টুপি ও পাগড়ি পরিধান করা, আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা, সদকাতুল ফিতর আদায় করা, ঈদের মাঠে যাওয়া-আসার পথে নিম্নস্বরে তাকবির বলা।
সম্ভব হলে ঈদগাহে বা খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করা। সুযোগ থাকলে স্থানীয় কবর ও আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করা। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, দেখা-সাক্ষাৎ করা ও খোঁজখবর নেওয়া এবং একে অপরকে আদর-আপ্যায়ন করা। আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জন যাঁরা দূরে অবস্থান করছেন, তাঁদের সঙ্গে ফোনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]