ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউসিএ) ছয় মাস ধরে ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট ৬৪টি পক্ষের মতামত নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। এই প্রতিবেদনের শিরোনাম—‘ইতিহাস সুরক্ষা, বদলের পথে হাঁটা: ঐক্যবদ্ধ, সুসংহত, বৈশ্বিক ভবিষ্যৎ’। সেখানে বলা হয়েছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পেছনে পড়ে গেছে এবং ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে’।

জস বাটলার, হিদার নাইট ও প্যাট কামিন্সের মতো ক্রিকেটার ছাড়াও ক্রিকেট প্রশাসক, মিডিয়া পার্টনার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

বৈশ্বিকভাবে ক্রিকেট পরিচালনা আরও উন্নত করতে চার দল নিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্ব ও আরও ন্যায়সংগত রাজস্ব বণ্টনের সুপারিশ করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।

আরও পড়ুনদুই–তিন দিন পরে বাসায় যেতে পারেন তামিম, নেওয়া হবে বিদেশেও১৭ ঘণ্টা আগেদ্বিস্তরের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিবছর চারটি সংক্ষিপ্ত মেয়াদের উইন্ডো রাখার কথা বলা হয়েছে। বাকি সময়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলো হবে। প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত সমাধান হলো, এ চারটি উইন্ডোর বাইরে দীর্ঘ সময়ের কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিযোগিতাগুলোর পাশাপাশি খেলা হবে।

প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনটি সংস্করণ পুনর্বিন্যাস করে দুই বছর মেয়াদি চক্রে অবনমন-উত্তরণ ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। এ মডেল অনুযায়ী দলগুলোকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

টেস্ট ক্রিকেটের আবেদন ধরে রাখতে দ্বিস্তরের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। শীর্ষ আট দল খেলবে প্রথম বিভাগে। পরের চারটি দল খেলবে দ্বিতীয় বিভাগে। প্রথম বিভাগের শীর্ষ চার দল উন্নীত হবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে। প্রথম বিভাগের তলানিতে থাকা দল এবং দ্বিতীয় বিভাগের শীর্ষ দলের মধ্যে প্লে-অফ ম্যাচের মাধ্যমে পরের চক্রের জন্য উত্তরণ-অবনমন ঠিক করা হবে।

আরও পড়ুনসাইফার্ট-তাণ্ডবে পাকিস্তানের লজ্জার রেকর্ড ২০ ঘণ্টা আগেআরও ন্যায়সংগত রাজস্ব বণ্টন

প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হয়, ‘নির্দিষ্ট কিছু বাজারের ওপর অতিনির্ভরতা এবং অন্যদের প্রতি কম বিনিয়োগ’ খেলাটিকে জর্জরিত করছে। এটা উল্লেখযোগ্য, ক্রিকেটের মোট বৈশ্বিক রাজস্বের ৮৩ শতাংশ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় ক্রিকেটের ‘তিন মোড়ল’খ্যাত ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্রিকেট অর্থনীতির প্রায় অর্ধেকটা জুড়েই ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) পরিচালিত ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আইপিএল। কিন্তু অন্য বোর্ডগুলোর সঙ্গে আইপিএলের মাত্র ০.

৩ শতাংশ রাজস্ব ভাগ করে নেওয়া হয়। খেলোয়াড়দের সঙ্গে ১০ শতাংশের কম অর্থ ভাগ করা হয়। এ ভারসাম্যহীনতা নিরসনে প্রতিবেদনে রাজস্ব বণ্টনের সীমা বেঁধে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ২৪টি দেশের প্রতিটির সঙ্গে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ রাজস্ব বণ্টনের সুপারিশ করা হয়। এর অর্থ হলো, বিসিসিআই বর্তমানে যে পরিমাণ রাজস্বের ভাগ (৩৮.৫ শতাংশ) পায়, তা কমে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে নেমে আসবে।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রস্তাবিত এসব পরিবর্তন কার্যকর হলে বৈশ্বিক ক্রিকেটের সম্প্রসারণ হবে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের টিকে থাকা’ও নিশ্চিত হবে এবং রাজস্বও বেড়ে ২৪ কোটি ডলারে ঠেকতে পারে।

ক্রিকেটের বৈশ্বিক পরিচালনা কাঠামো ও আইনকানুনের পরিবর্তন

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, খেলাটির বিকাশের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। খেলোয়াড় থেকে লিগ ও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো অরক্ষিত।

প্রতিবেদনের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘সংক্ষেপ এই বৈশ্বিক খেলার সত্যিকারের অভিভাবক হিসেবে কেউ আসলে দায়িত্বে নেই।’ সবচেয়ে শক্তিশালী বোর্ডগুলো খেলাটি চালাচ্ছে, যেখানে লিগ, ফ্র্যাঞ্চাইজি, খেলোয়াড় কিংবা নারীদের প্রতিনিধির উপস্থিতি খুবই নগণ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এসব বিষয় ঠিক করতে ডব্লিউসিএ গ্লোবাল গেম লিডারশিপ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যারা আইসিসি বোর্ডে বিভিন্ন রকম সুপারিশ করতে পারবে।

আইসিসির বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর চেয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে, যা খেলাটির আন্তর্জাতিক বাস্তবতার সঙ্গে বেমানান বলে দাবি করা হয় প্রতিবেদনে। এ ধারণা সেকেলে এবং লিগগুলোর পরিচালনাবিধি পাল্টানোর সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট স ট চ য ম প য়নশ প ফ র য ঞ চ ইজ র স প র শ কর প রস ত পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শেষ মুহূর্তে কসমেটিকস জুয়েলারি ও জুতার দোকানে ভিড়

ঈদ উপলক্ষে মার্কেট, শপিংমল এবং ফুটপাতের দোকানগুলো  জমজমাট। ঈদের আনন্দ রাঙিয়ে তুলতে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা চলছে। বিশেষ করে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ি, কানের দুল, জুতা কিনছেন তরুণীরা। ফলে অন্যান্য জিনিসের তুলনায় প্রসাধনী সামগ্রী ও জুতার দোকানে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। 

সবাই চায় সুন্দরভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে। ঈদে সাজগোজ নিয়ে বাড়তি আগ্রহ থাকে তরুণ-তরুণী উভয়েরই। যে কারণে সেলুন-পার্লারেও ভিড় বেড়েছে। নিজের রুচি ও আভিজাত্য প্রকাশ পায় সাজসজ্জায়। ঈদে নতুন পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে এ কারণে অনেকেই খুঁজছেন সাজসজ্জার সামগ্রী। 

রবিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট, খিলগাঁও তিলপাপাড়া জামে মসজিদ মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, ফর্চুন শপিংমল ও শান্তিনগরের ইস্টার্ন প্লাস শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এদিন মৌচাক মার্কেটের পাশের গলিতে অস্থায়ী দোকানগুলোতে নারীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিক্রেতারা দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। একই রকম চিত্র দেখা গেছে খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেটে। তবে শপিংমলগুলোতে তুলনামূলক ভিড় কম লক্ষ্য করা গেছে।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ডিজাইনের চুড়ি জোড়াপ্রতি ১০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, কানের দুল জোড়াপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ২০০০ টাকায়, গহনার সেট ২০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকায়, মেকআপ বক্স ১৫০ থেকে ২০০০ টাকায়, লিপস্টিক ৫০ থেকে ১০০০ টাকায়, আইলাইনার ৩০০ থেকে ১২০০ টাকায়, মাস্কারা ১০০ থেকে ৪০০ টাকায়, জুতা-স্যান্ডেল ২০০ থেকে ৪০০০ টাকায় এবং চুলের ক্লিপ ১০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ঈদ হচ্ছে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে। এখন বেশ গরমও পড়েছে। তাই ঈদের সাজগোজের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে। এবারের ঈদে হালকা ও স্নিগ্ধ সাজসজ্জার প্রতি তরুণীদের ঝোঁক রয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, পোশাক-আশাক কেনাকাটা আগেই হয়েছে। শেষ সময়ে কসমেটিকস, জুয়েলারি ও জুতার দোকানে ভিড় বেশি রয়েছে। বেশিরভাগ তরুণী এখন কসমেটিকস, গহনা ও অলঙ্কার কিনছেন। বিশেষ করে পোশাকের সাথে ম্যাচিং করে লিপস্টিক, চুড়ি ও জুতা-স্যান্ডেল কিনছেন।

মৌচাক মার্কেটের গহনা ও কসমেটিকস বিক্রেতা ফিরোজ হাসান বলেন, ঈদের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় রয়েছে। সকাল বা দুপুরের চেয়ে সন্ধ্যায় মার্কেটে ক্রেতারা বেশি আসছেন। ক্রেতারা পচ্ছন্দমতো কসমেটিকস, গহনা ও অলঙ্কার কিনছেন। কেউ কেউ পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে গহনা ও অলঙ্কার কিনছেন।

এই মার্কেটের ক্রেতা ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রোদেলা রহমান বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে মৌচাক মার্কেটে কম দামের আকর্ষণীয় ডিজাইনের গহনা এসেছে, যা মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। আমি কানের দুল ও চুলে ক্লিপ কিনেছি। দাম ঠিকঠাক আছে।

খিলগাঁও তিলপাপাড়া জামে মসজিদ মার্কেটের চায়না সুজ দোকানের বিক্রেতা মো. রহমান বলেন, ঈদে জুতা কেনার চাহিদা থাকে। বাজারে ক্রেতা সমাগম রয়েছে। ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই জুতা বিক্রি হচ্ছে।

মার্কেট করতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রামিসা রহমান বলেন, ঈদের বাজার করতে এসেছি, জুতা কিনেছি। এবার জুতার দাম বেশি মনে হচ্ছে। তবে দামাদামি করে নিতে পারলে ক্রেতা সঠিক দামে জুতা কিনতে পারবেন।

ঢাকা/এনটি/

সম্পর্কিত নিবন্ধ