আসমা, নাজমা আর ফাতেমা ছিলেন পিঠাপিঠি তিন বোন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মর্টার শেল হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তাঁরা। চট্টগ্রামের চকবাজারের কাছে ঘাসিয়াপাড়ায় এক বাড়ির পাশে মসজিদ–সংলগ্ন একই কবরে দাফন হয়েছিল তিন বোনের। সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মর্টার শেল হামলায় একসঙ্গে নিহত হয়েছিলেন আশ্রয় নিয়ে পালিয়ে থাকা ১৬ জন। আহত হয়েছিলেন অনেকেই।

১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের ঘাসিয়াপাড়ার সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কখনো ইতিহাসে গুরুত্ব পায়নি, কেউ আগ্রহ দেখাননি বলে অভিযোগ করলেন নিহত তিন বোনের বড় ভাই। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক নিজের বোনদের স্মৃতিচারণা করতে করতে দেখালেন বোনদের ব্যবহার করা পোশাক। এত বছর পরও বোনদের স্মৃতিকথায় কণ্ঠ ধরে এল তাঁর।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এই তিন বোনের স্মৃতি নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ‘ত্রিবেণী’ শিরোনামে প্রদর্শনী।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এই তিন বোনের স্মৃতি নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ‘ত্রিবেণী’ শিরোনামে প্রদর্শনী। গতকাল বুধবার দুপুরে সেই প্রদর্শনীতে বসে মোজাহেরুল হক অভিযোগ করলেন—মুক্তিযুদ্ধের এমন অনেক আত্মত্যাগের ঘটনা আছে, যা কোথাও স্থান পায়নি। কথা প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর্ব, ক্যাডেট কলেজে পাকিস্তানি সেনাদের হামলা, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যাওয়া এবং সেই সময়ে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে বিহারি ও বাঙালিদের মধ্যকার ধারাবাহিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা। তিনি তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবেন বলে তখন আশ্রয় নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ওয়াহিদউদ্দিন আহমেদের বাড়িতে।

মোজাহেরুল হকের বাবা তখন রেলওয়ের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা। অন্য সন্তানদের নিয়ে শহরের দামপাড়া এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ঘাসিয়াপাড়ার এক বাড়িতে। সেখানে মেঠো পথ ধরে অনেকখানি হেঁটে গিয়ে পৌঁছেছিলেন সেই বাড়িতে। তখন সেখানে সব মিলিয়ে আশ্রিত ছিলেন অন্তত ৬৫ জন মানুষ। এই বাড়িতে মর্টার শেল নিক্ষেপ করে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা।

এ বাড়িতে সকালের প্রাণহানির পর খোঁড়া হয়েছিল কয়েকটি কবর। একটি কবরে দাফন করা হয়েছিল দুই বোনকে। তবে তৃতীয়জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে সেই কবর খুঁড়েই রাখা হয়েছিল বলে জানান নিহত বোনদের বড় ভাই। সন্ধ্যায় সেখানে জায়গা হয়ে যায় তৃতীয় বোনেরও।

১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল সকালের সেই হামলায় একসঙ্গে প্রাণ হারান ১৬ জন। তাঁদেরই তিনজন মোজাহেরুল হকের ছোট বোন। নিহত তিন বোনের মধ্যে বড় আসমা বেগম তখন চট্টগ্রাম গার্লস কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। নাজমা ও ফাতেমা নামের অন্য দুই বোন চট্টগ্রাম পুলিশ হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। মর্টার শেলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আসমা ও ফাতেমা। চারপাশে পাকিস্তানি সেনারা ঘিরে রেখেছিল, তাই কোনো চিকিৎসা নেওয়ারও সুযোগ ছিল না। রক্তক্ষরণ হতে হতে বিকেলের দিকে মারা যায় কিশোরী নাজমা।

এ বাড়িতে সকালের প্রাণহানির পর খোঁড়া হয়েছিল কয়েকটি কবর। একটি কবরে দাফন করা হয়েছিল দুই বোনকে। তবে তৃতীয়জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে সেই কবর খুঁড়েই রাখা হয়েছিল বলে জানান নিহত বোনদের বড় ভাই। সন্ধ্যায় সেখানে জায়গা হয়ে যায় তৃতীয় বোনেরও।

এই তিনজনের স্মৃতি বলতে এখনো রয়েছে একটি সাদা-কালো ছবি, তাঁদের ব্যবহার করা তিনটি জামা ও দুটি শাড়ি। এই স্মৃতি গত ৫৪ বছর যত্ন করে রেখেছে পরিবারটি। সেই স্মৃতি নিয়ে কাজ করেছেন এই প্রজন্মের একদল তরুণ শিল্পী। জলরং, তৈলচিত্র ও দৃশ্যমাধ্যমেও তিন বোনকে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এমন ৪৫টি শিল্পকর্ম নিয়ে শুরু হয়েছে ত্রিবেণী প্রদর্শনী।

২৬ মার্চ শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। গতকাল দুপুরে প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি সম্মান না জানালে জুলাই বিপ্লবের শহীদদেরও আমরা ভুলে যাব।’

ত্রিবেণী প্রদর্শনীতে দেয়ালে ঝোলানো তিন বোনের পোশাক, চেয়ারে রাখা তাঁদের শাড়ির পাশাপাশি জ্বলজ্বল করছে হাতে আঁকা ছবিতে তিন বোনের মুখাবয়ব। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা পাঁচ দশকের বেশি সময় পরও এতটুকু ম্লান হয়নি পরিবারের কাছে। শহীদ বোনদের ভাই বললেন, ‘ওদের মৃত্যু আমার সামনে হয়নি, তখন আমি মুক্তিযুদ্ধে যাব বলে রাঙ্গুনিয়ায় ছিলাম। জেনেছি তিন মাস পর মা–বাবার কাছে। এত বছর পর এখনো মনে হয়, আমার বোনেরা বেঁচে আছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমার তিন বোন শুয়ে আছে একটি কবরে। তাদের জন্য পৃথক কবর খোঁড়ার সুযোগটুকুও তখন পাওয়া যায়নি।’

জলরং, তৈলচিত্র ও দৃশ্যমাধ্যমেও তিন বোনকে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এমন ৪৫টি শিল্পকর্ম নিয়ে শুরু হয়েছে ত্রিবেণী প্রদর্শনী।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ হ র ল হক ব নদ র হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষ পাঁচ গান

গেল কয়েক সপ্তাহে চলচ্চিত্রের গানের পাশাপাশি কয়েকজন গায়ক-গায়িকার গান প্রকাশিত হয়েছে ইউটিউবে। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে রয়েছে কোন গানগুলো, একনজরে দেখে নিতে পারেন ট্রেন্ডিংয়ে থাকা গানগুলো।

‘চাঁদ মামা’
প্রকাশের ২০ দিনে ইউটিউবে আড়াই কোটি ভিউ পার করেছে ‘বরবাদ’ সিনেমার ‘চাঁদ মামা’ গানটি। ৩ মিনিট ৩ সেকেন্ড ব্যাপ্তির গানটি কথা-সুর করার পাশাপাশি এতে কণ্ঠ দিয়ে প্রীতম হাসান। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন দোলা রহমান। ইউটিউবে ১ কোটি ৫৯ লাখের বেশি এবং প্রীতম হাসানের ইউটিউব থেকে ১ কোটি ১ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে। দুটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশ পাওয়ায় গানটি ড্রেন্ডিংয়ে এক ও দুই নম্বরে অবস্থান করছে।

‘তুমি আমায় ভালোবাসো’
প্রথমবার জনপ্রিয় টিভি শো ‘ইত্যাদি’তে গান গেয়ে বাজিমাত করেছেন নায়ক সিয়াম আহমেদ। ঈদের বিশেষ ইত্যাদিতে ‘তুমি আমায় ভালোবাসো’ শিরোনামে সিয়ামের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। এই দুই শিল্পী একসঙ্গে কখনও অভিনয় না করলেও ইত্যাদিতে তারা একসঙ্গে গাইলেন একটি চমৎকার রোমান্টিক গান। গানটির কথা লিখেছেন কবির বকুল, সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন ইমরান মাহমুদুল। গেল ৫ এপ্রিল গানটি প্রকাশ্যের পর আজ বিকেল পর্যন্ত ৫৬ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ এটি দেখে। ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে এটি তিন নম্বরে রয়েছে।

‘কন্যা’
এবার ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমার গানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল নুসরাত ফারিয়া-ও সজলের ‘জ্বীন ৩’ ছবির গান ‘কন্যা’। রবিউল ইসলাম জীবনের কথায় গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান মাহমুদুল ও দিলশাদ নাহার কনা। কণ্ঠের পাশাপাশি ‘কন্যা’র সুর সংগীতও করেছেন ইমরান। ১৭ মার্চ গানটি ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়। প্রকাশে কয়েকদিন পরই এটি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে চলে আসে। ৩০ দিন পরও গানটি ইউটিউবের ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গানটি ভিউ পেয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ ৪১ হাজারের বেশি। বর্তমানে এটি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে এটি রয়েছে চার নম্বরে।

‘ঈদ মোবারাক’
গেল ২৪ মার্চ প্রকাশ পায় ‘ঈদ মোবারাক’ শিরোনামে একটি গান। গত ২৪ দিনে ৬৮ লাখ ১৬ হাজারের বেশি দেখেছে সিথি খানের গাওয়া গানটি। হানিফ খানের লেখা ও আহমেদ সজীবের সংগীত আয়োজনে গানটি বর্তমানে ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের পাঁচ নম্বরে অবস্থান করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাল্টিপ্লেক্সে ১১ থেকে ২৮, সিঙ্গেল স্ক্রিনে তিনগুন বাড়ল জংলির হল
  • মাল্টিপ্লেক্সে ১১ থেকে ২৮,  সিঙ্গেল স্ক্রিনেও তিনগুন বাড়ল জংলির হল
  • পাকিস্তানের বিবৃতিতে নেই ক্ষমা প্রার্থনার প্রসঙ্গ
  • ইসরায়েলি হামলায় একসঙ্গে পরিবারের ১০ সদস্য নিহত
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একসঙ্গে নিহত হলেন পরিবারের ১০ সদস্য
  • বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে: পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব
  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে পাঁচ গান
  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষ পাঁচ গান
  • আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস
  • বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠক আজ