অর্ধেক বেতন পরিশোধেও পিছিয়ে অনেক কারখানা
Published: 27th, March 2025 GMT
সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পের সব কারখানা শ্রমিকের ঈদ বোনাস দেয়নি। চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধেও পিছিয়ে আছে অনেক কারখানা। এর বাইরে বন্ধ থাকা কয়েকটি কারখানার বেতন-ভাতা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধ নিয়ে আগে থেকেই সমস্যা চলছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
ঈদের আগে শ্রম পরিস্থিতির পাশাপাশি শিল্প খাতের শ্রমিকদের বেতন–বোনাস ও ছুটি–সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনার জন্য ১২ মার্চ সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের এই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাসসহ সব পাওনা ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। মালিকপক্ষকে চলতি মার্চ মাসের অন্তত ১৫ দিনের বেতনও দিতে হবে। এর পাশাপাশি রপ্তানি প্রণোদনার দুই হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি জেলার অন্তত ৪৩টি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের বেতন ও ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি কারখানার সংকট পুরোনো। এই কারখানাগুলোর শ্রমিকেরা দাবি আদায়ে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ঈদের ছুটি ও বোনাস বাড়ানোর জন্যও আন্দোলনে নেমেছেন কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে বকেয়া টাকার দাবিতে মানববন্ধন করেন মাহমুদ জিনস কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীরা। তাঁরা বলেন, মাসের পর মাস তারিখ দিয়েও ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করছে না মালিকপক্ষ। ঈদের আগে তাঁদের বকেয়া এক মাসের বেতন ও বার্ষিক ছুটির অর্থ পরিশোধের কথা। এই কারখানা দিয়ে মালিক আরও ৪-৫টি কারখানা করেছেন, তাহলে তাঁরা কেন বকেয়া অর্থ পাবেন না—এই প্রশ্ন করেন শ্রমিকেরা।
অবশ্য ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নির্বিঘ্ন করতে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ সভায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। চলতি সপ্তাহে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান, সড়ক অবরোধ ও বিজিএমইএ ভবন অবরুদ্ধ করার মতো ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করায় গত মঙ্গলবার বন্ধ থাকা ১২টি তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এগুলো হলো রোর ফ্যাশন, স্টাইলক্রাফট ও ইয়াং ওয়ান্স, ডার্ড গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান, মাহমুদ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান, টিএনজেড গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে শুধু স্টাইলক্রাফট চালু রয়েছে।
জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা বাবুল আখতার বলেন, সরকারের আগে থেকে কঠোর হওয়া উচিত ছিল। তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এতটা জটিল হতো না। বর্তমানে কারখানার মালিকের সম্পত্তি বিক্রি বা বন্ধক কিংবা বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর তহবিল থেকে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা প্রয়োজন। সেটি সম্ভব না হলে বেক্সিমকোর শ্রমিকদের যেভাবে টাকা দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই সমস্যাযুক্ত কারখানার শ্রমিকদের পাওনা মেটানো উচিত।
বেতন-ভাতা পরিস্থিতি
ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) ডিজিটাল মানচিত্র অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা আছে ৩ হাজার ৫৫৫টি। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য সচল কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১০৭। গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ৯৪৪টি (৯২ শতাংশ) কারখানা শ্রমিকের ঈদ বোনাস দিয়েছে। আর মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছে ৭৬১টি (৩৬ শতাংশ) কারখানা। এখন পর্যন্ত ১৬টি কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দেয়নি।
অন্যদিকে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সচল সদস্য কারখানা ৬১৩টি। তার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কারখানা ঈদ বোনাস দিয়েছে। চলতি মাসের অর্ধেক বেতন প্রায় ৫০ শতাংশ কারখানা দিয়েছে। এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দেয়নি দুটি কারখানা।
জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ২-৩টি কারখানা ছাড়া সমস্যা নেই। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। অধিকাংশ কারখানাই বৃহস্পতিবার (আজ) শ্রমিকদের পাওনা দিয়ে ঈদের ছুটি দেবে বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলার ১৩টি বস্ত্র ও তৈরি পোশাক কারখানার ঈদ বোনাস অথবা চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করেন ৮ হাজার ৮৮৮ শ্রমিক। কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে এসিএস টেক্সটাইল, টোটাল ফ্যাশন, অবন্তি কালার টেক্স, ক্রোনি অ্যাপারেলস, তোহা নিট ফ্যাশন, ইউরো নিট সোসিং, জননী নিট ফ্যাশন, এশিয়ান টেক্সটাইল, স্টারলেট কম্পোজিট, স্টারলেট অ্যাপারেলস, ফোর ডিজাইন, ইয়াংথ্রি ফ্যাশন ও এক্সাল্ট অ্যাপারেলস।
গাজীপুরের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক কারখানা নিয়েও শিল্প পুলিশ প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২৫টি কারখানা বেতন বা ঈদের বোনাস পরিশোধ করতে পারে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারখানাগুলোতে কাজ করেন ১৭ হাজার শ্রমিক। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে হংকং ফ্যাশন, এনআর ফ্যাশন, আলমা নিটওয়্যার, বেসিক ক্লোথিং, ইন্ট্রামেক্স, স্বাধীন গার্মেন্টস, সোয়ান সোয়েটার, হোম টেক্সটাইল, ন্যাশনাল ফ্যাশন, এইচডিএফ অ্যাপারেলস, জারা কম্পোজিট, আর জে নিটওয়্যার ইত্যাদি।
সাভার-আশুলিয়া এলাকায় ১ হাজার ৮৬৩ শিল্পকারখানা রয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই তৈরি পোশাক। গতকাল পর্যন্ত অর্ধেক কারখানার বোনাস বাকি। চলতি মাসের অর্ধেক বেতন বাকি ৮ শতাংশ কারখানার। এখনো ফেব্রুয়ারির বেতন বকেয়া ৯ শতাংশ কারখানার।
জানতে চাইলে আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বেতন-ভাতা নিয়ে ঝামেলা আছে। তিনি আশা করছেন কালকের দিনই (আজ বৃহস্পতিবার) অনেক কারখানা বোনাস ও বেতন দেবে। এটা শুক্রবার পর্যন্ত চলবে।
সংকট বাড়িয়েছে বন্ধ কারখানা
ময়মনসিংহের ভালুকার রোর ফ্যাশন কর্তৃপক্ষ গত জানুয়ারিতে কারখানা লে-অফ করে। এই কারখানার শ্রমিক সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৬। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে বেতন-ভাতা বাবদ এই কারখানার শ্রমিকের পাওনা ৭০ লাখ টাকা। জানুয়ারি মাসের বেতন ও লে-অফের ক্ষতিপূরণ পাবেন তাঁরা।
দাবি আদায়ে গত রোববার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনের সামনে অবস্থান নেন রোর ফ্যাশনের শ্রমিকেরা। পরদিন সারা দিন বিজিএমইএ ভবনের ফটক অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা। পরে মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। রোর ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুল ইসলাম। যদিও তাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের একই মালিকের স্টাইলক্রাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেড দুই বছর আগে আর্থিক সংকটে পড়ে। তখন শ্রমিক ছাঁটাই করে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করা হয় ইয়াং ওয়ান্স। অল্প শ্রমিক দিয়ে স্টাইলক্রাফট চলছে। তবে প্রায় ২ হাজার শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওনা রয়েছে ২১ কোটি টাকা। তার মধ্যে বকেয়া বেতন ৬ কোটি টাকা। চলতি মাসের শুরুতে ত্রিপক্ষীয় সভায় ঈদের আগে মোট বকেয়া বেতনের ২৫ শতাংশ অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দেন মালিক। তবে শ্রমিকেরা সেটি প্রত্যাখ্যান করে মোট বকেয়ার ২৫ শতাংশ দাবি করেন।
বকেয়া পাওনা আদায়ে স্টাইলক্রাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেডের শ্রমিকেরা গত রোববার শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে অসুস্থ হয়ে রাম প্রসাদ সিং (৪০) নামের একজনের মৃত্যু হয়। এই কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস আলমাস রহমান।
গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপ আর্থিক সংকটে পড়ে গত বছর থেকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করছে না। এখনো ডিসেম্বর মাসের ২০ শতাংশ এবং জানুয়ারি মাসের অর্ধেক বেতন বাকি। গত ফেব্রুয়ারির বেতন ২০ মার্চ ও ঈদ বোনাস ২৩ মার্চ দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়নি কর্তৃপক্ষ। বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে চলতি সপ্তাহে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। এই গ্রুপের শ্রমিক সংখ্যা ৪ হাজার। গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহদাৎ হোসেন শামীম।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিজিএমইএর সদস্য চার-পাঁচটি কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার; প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য প র লস প রথম আল ব ক এমইএ ব জ এমইএ পর স থ ত পর শ ধ ন ঈদ ব ন স দ র বক য় অবস থ ন গতক ল প সরক র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার সব রাস্তা বন্ধ করেই সামনে এগোবে এনসিপি, জানালেন নাহিদ
আরেকটি ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশে আসবে না, তার সব রাস্তা বন্ধ করেই সামনে এগোবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় সংসদের এলডি হলে এই বৈঠক শুরু হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য ছিল, আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অর্থাৎ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কেবল ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। বরং কীভাবে রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন করে, রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক এবং গুণগত সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে, এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল।’
এনসিপির আহ্বায়ক আরও জানান, তাঁর দল পরিষ্কারভাবে বলেছে, সংস্কার বলতে তাঁরা মৌলিক সংস্কারকে বোঝেন। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে সংস্কার করলে রাষ্ট্র কাঠামোর একটি আমূল ও গুণগত পরিবর্তন হবে। বিগত সময়ে আমরা সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ দেখেছি। সংবিধানে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক কাঠামোর বীজ বপন হয়েছিল। ফলে সেই রাষ্ট্র কাঠামোকে অক্ষুণ্ন রেখে যে-ই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাক, তার ভেতরেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা থাকবে, স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকবে।’
রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থাকে জাতীয় নাগরিক পার্টি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যে সুপারিশগুলো পাঠানো হয়েছে, সেগুলোতে আমরা মতামত দিয়েছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা একমত হয়েছি, যেসব জায়গায় আংশিক বা দ্বিমত রয়েছে, সেখানে আমাদের সুপারিশ সংক্ষিপ্ত আকারে দিয়েছি। আজ হয়তো বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ পাব।’
জাতীয় ঐকমত্য ও জুলাই সনদ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জাতির সামনে আমাদের যে অঙ্গীকার, সেটি পূরণ করতে হবে যে, আরেকটি ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশে আসবে না, তার সব রাস্তা বন্ধ করেই সামনে এগোব। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য যার যার জায়গা থেকে কাজ করব।
বেলা সোয়া ১টার দিকে বৈঠকের বিরতিতে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে, তবে তার আগে বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করতে হবে। এ জন্য যেটুকু সময় প্রয়োজন, সেটি সরকার পেতে পারে।
আখতার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভবপর নয়। বরং এখানে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। তার মধ্য দিয়ে সাংবিধানিকভাবে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগগুলো রয়েছে। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলছি। বর্তমান সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কথা বলছি। গণপরিষদের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছি।’
বৈঠকে এনসিপি বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোয় শুধুমাত্র আইন প্রণয়নের ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থান এবং আস্থার ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে বলেও জানান আখতার হোসেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আখতার বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামকরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই 'নির্বাচন' শব্দকে যুক্ত করতে হবে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের যে দায়িত্ব পালন করবেন, আমরা সেদিকে গুরুত্বারোপ করেছি। সেই রূপরেখা কেমন হতে পারে, উপদেষ্টা হিসেবে কারা থাকতে পারেন, সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করছি। আলোচনা শেষ হলে বিস্তারিত বলতে পারব।’
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দুটি নির্বাচন চাচ্ছি, এমন নয়। আমরা একটি নির্বাচনই চাচ্ছি, যেটি আইনসভার নির্বাচন। একই সঙ্গে ওই নির্বাচনটিকেই গণপরিষদের স্ট্যাটাস দেওয়া হবে।’
সংবিধানের বেসিক ফান্ডামেন্টাল রিফর্মেশনের এখতিয়ার শুধুমাত্র গণপরিষদের থাকে বলেন হাসনাত। তিনি বলেন,‘ সে জন্য আমরা আসন্ন নির্বাচনে একই সঙ্গে আইনসভার নির্বাচন ও গণপরিষদের স্ট্যাটাস চাই। যাদের প্রথম কাজ হবে, সংবিধানকে পুনর্লিখন করা। একই সঙ্গে পার্লামেন্টের রুটিন কাজ করবে।’
বিএনপি ও এনসিপি কিছু সুপারিশের ক্ষেত্রে দ্বিমত আছে। সে ক্ষেত্রে ঐক্য কীভাবে সম্ভব- সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে হাসনাত বলেন, ‘আলোচনার মধ্য দিয়ে ঐক্যে পৌঁছাতে হবে। ঐক্য তো দলীয় নয় বরং জাতীয় স্বার্থে।’
বৈঠকে এখন পর্যন্ত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন হাসনাত। সেগুলো হলো, নাগরিকদের অধিকার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর (পিসফুল ট্রানজিশন অব পাওয়ার) এবং সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ।
সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, আমরা এখনো ওই নীতিতেই আছি।’
এর আগে, বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, এক নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের কাজ সবাই মিলে যেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি। যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন ফেরত না আসে।
সংস্কার কমিশনগুলোর পক্ষ থেকে যে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু একমত, কিছু ভিন্নমত আছে। যেসব জায়গায় আংশিকভাবে একমত বা ভিন্নমত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলেন আলী রীয়াজ।
আরও পড়ুনভিন্নমতের জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে আলী রীয়াজ৩ ঘণ্টা আগে