বৃদ্ধ বয়সের নিঃসঙ্গতা দূর করতে ৬৬ বছর বয়সে বিয়ে করলেন ২২ বছরের কলেজছাত্রীকে। বর শরিফুল ইসলাম প্রধানের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার এলাকার দক্ষিণ কোর্টতলি রসুলগঞ্জ এলাকায়। আর কনে আইরিন আক্তার একই উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের নজরুল ইসলামের মেয়ে। গত শনিবার (২২ মার্চ) তাদের বিয়ে হয়। মোহরানা করা হয় ১০ লাখ টাকা। তাদের বিয়ের বিষয়টি মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। 

বর শরিফুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘আইরিন ছোট থেকেই পড়াশোনায় অনেক ভালো। সে আমাকে নানা বলে ডাকত। মেধাবী হওয়ায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে তার পড়াশোনায় আমি অনেক সহায়তা করেছি। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকা থেকে তার বিয়ের সম্বন্ধ (আলাপ) এলেও সে রাজি হয়নি। সে অন্যত্র বিয়ে না করায় আশপাশের মানুষ ভাবতো তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। একপর্যায়ে সে (আইরিন) হুট করে আমাকেই বিয়ে করবে বলে জানায়। এতে আমি হতবাক হই। তাকে বিষয়টি ভালো করে বোঝার সময় দিয়েছিলাম কিন্তু নাছোড়বান্দা মেয়েটি আমাকেই বিয়ে করবে। যেহেতু আমিও বিয়ে করিনি, তাই বৃদ্ধ বয়সে নিঃসঙ্গতা দূর করতে আমিও রাজি হলাম। শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করেছি পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে।’ 

এ বিয়ের খবর-ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, কনে বেশে এক তরুণীকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত এক বৃদ্ধ। বিয়ের পর থেকেই জেলাজুড়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে ‘অসম’ এ বিয়ের সংবাদ।

জানা গেছে, আইরিন আক্তারের সঙ্গে বৃদ্ধ শরিফুল ইসলামের দীর্ঘদিনের পরিচয়। আইরিন আক্তার টাঙ্গাইলের একটি ডিপ্লোমা মেডিকেলে পড়াশোনা করেন। ওই ছাত্রীর দুলাভাইয়ের সম্পর্কে নানা শরিফুল ইসলাম প্রধান। পরিচয়ের পর থেকেই আইরিনের পড়াশোনার সব খরচ বহন করছেন শরিফুল। নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালাতে ওই ব্যক্তি ছয় লাখ টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছেন বেশ আগে। সেই টাকার লভ্যাংশ দিয়েই পড়াশোনার খরচ চলে আইরিনের।

স্থানীয়রা জানান, আইরিনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। ফলে চতুর্থ শ্রেণি থেকেই তাঁর পড়াশোনার খরচ দিয়ে আসছেন শরিফুল ইসলাম প্রধান।

জানতে চাইলে আইরিন আক্তার বলেন, ‘সম্পর্কে তিনি আমার নানা। পরিবারের অভাবের কারণে ছোট থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সহায়তা করে আসছেন। কিছুদিন আগে আমার পরিবার আমাকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছিল। আমি ভেবে দেখেছি, অন্য কোথাও আমার বিয়ে হলেও আমার পড়াশোনা আর নাও হতে পারে। ফলে ভেবেচিন্তে আমি ওনাকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই। এতে প্রথমে আমার বাবা রাজি ছিলেন না কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি আমাদের বিয়ে দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারও কোনো চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে আমরা বিয়ে করিনি। জেনে-বুঝেই বিয়ে করেছি। এখন কে কী বলল সেটা আমার দেখার বিষয় না’

এ বিষয়ে শরিফুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘যেহেতু মেয়েটি আমাকে গ্রহণ করে নিয়েছে, সেখানে বয়স কোনো ব্যাপার না। আমি এতদিন বিয়ে করেনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে। এখন বৃদ্ধ বয়সের নিঃসঙ্গতা দূর করতে বিয়ে করেছি। আমি সকল ধর্মের মানুষের কাছে আমাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া চাই।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

গুলিতে ঝাঁঝরা প্রাইভেট কার, কী ঘটেছিল মধ্যরাতে

‘হঠাৎ একের পর এক গুলির শব্দ। মুহূর্তের মধ্যে খেয়াল করলাম, আমাদের গাড়িকে লক্ষ্য রেখে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হচ্ছে। তিন-চারটি বাইক (মোটরসাইকেল) থেকে এলোপাতাড়ি গুলি করা হচ্ছিল। তারা সাত–আটজনের মতো হবে। প্রাণে বাঁচতে আমাদের চালক গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়েও লাভ হয়নি। পেছন থেকে মোটরসাইকেল আরোহীরা ধাওয়া করতে থাকে। আর অনবরত গুলি চালাতে থাকে। একপর্যায়ে গাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে ওরা। এর পরেও কীভাবে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি, তা আল্লাহ জানে।’

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় প্রাইভেট কারে গুলি ছোড়ার ঘটনার এমন বর্ণনা দেন গাড়িতে থাকা মো. রবিউল ইসলাম ওরফে রবিন (২৪)। গুলিতে গাড়িতে থাকা দুজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন আবদুল্লাহ ও মোহাম্মদ মানিক। আর বাঁ পায়ে গুলি লেগে আহত হয়েছেন রবিউল। তিনি নিহত আবদুল্লাহর বন্ধু। পেশায় গাড়িচালক রবিউল। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিউলের সঙ্গে কথা হয় আজ রোববার দুপুরে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রুপালি রঙের একটি প্রাইভেট কার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া এক্সেস রোডে আসতে থাকে। গাড়িটি এক্সেস রোডের মুখে প্রবেশের পর পেছন দিকে তিন–চারটি মোটরসাইকেল সেটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে মোটরসাইকেল আরোহীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়া হয়। পেছন ও পাশ থেকে গুলি করা হয় গাড়িতে। গুলিতে অনেকটা ঝাঁঝরা করে ফেলা হয় গাড়ি। এতে প্রাইভেট কারের দুই আরোহী মারা যান।

এ ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া গাড়ি থাকা রবিউল ইসলাম জানান, চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার হোসেনের ডাকে তাঁরা অক্সিজেন থেকে নতুন ব্রিজ বালুর টাল এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে থেকে ফেরার পথে হামলার মুখে পড়েন। হামলাকারীদের চিনতে না পারলেও সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের লোকজন এর সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করছেন রবিউল। তিনি বলেন, সাজ্জাদের সঙ্গে সারোয়ারের সম্ভবত আগে থেকে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্প্রতি সাজ্জাদের গ্রেপ্তার এবং রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা বেড়েছে। তাই সাজ্জাদের লোকজন সারোয়ারকে খুন করতে এ হামলা চালাতে পারে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন। ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ১৬টি হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।

রবিউলের বাসা নগরের অক্সিজেন এলাকায়। সেখানে পরিবার নিয়ে থাকেন। তিনি দাবি করেন, শনিবার রাত ৯টার দিকে আবদুল্লাহ (পরে গুলিতে নিহত) ফোন করে ঈদের কেনাকাটা করতে যেতে বলেন। এ জন্য আবদুল্লাহ একটি গাড়ি ভাড়া করেন। রাত সাড়ে ১০টায় তাঁকে বাসা থেকে গাড়িতে তুলে নেন। এ সময় গাড়িতে আবদুল্লাহ ছাড়া আরও দুই বন্ধু ছিলেন। এই দুজন হলেন মো. মানিক ও ইমন।

গাড়ি করে বিপণিবিতানের দিকে যাওয়ার সময় আবদুল্লাহর মুঠোফোনে একটি কল আসে বলে জানান রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আবদুল্লাহকে ফোন করেন চান্দগাঁও এলাকার সারোয়ার। সারোয়ারের সঙ্গে আবদুল্লাহর আগে থেকে পরিচয় ছিল এবং তাঁর সঙ্গে রাজনীতি করতেন। সারোয়ার আবদুল্লাহকে ফোন করে নতুন ব্রিজ এলাকায় যেতে বলেন। তারপর তাঁরা বিপণিবিতানে না গিয়ে নতুন ব্রিজের বালুর টালে চলে যান। তখন রাত প্রায় ১২টা।

বালুর টালে যাওয়ার পর সারোয়ারের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয় বলে জানান রবিউল ইসলাম। এ সময় সারোয়ারের সঙ্গে আরও ১০-১২ জন ছিলেন। রবিউল বলেন, সারোয়ারের সঙ্গে আবদুল্লাহ আলাপ করতে থাকেন। খিদে লাগলে তিনি ও ইমন মইজ্জ্যারটেক এলাকায় যান। সেখানে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ছিলেন। মইজ্জ্যারটেক থেকে ফিরে আসার পর তখনো বালুর টালে সারোয়ারের সঙ্গে আবদুল্লাহকে আলাপ করতে দেখেন। বেশ কিছুক্ষণ পর সারোয়ার গাড়ি বের করতে বলেন। সারোয়ারের সঙ্গে থাকা অন্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান। আর সারোয়ার ও আরেকজন তাঁদের গাড়িতে ওঠেন।

ছয়জনকে নিয়ে গাড়ি নতুন ব্রিজ থেকে বহদ্দারহাটের দিকে রওনা দেন বলে জানান রবিউল। চালকের আসনে ছিলেন মানিক। নতুন ব্রিজ থেকে রওনা দেওয়ার দু-তিন মিনিটের মাথায় হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান। তিনি বলেন, তাঁদের গাড়ি ধাওয়া করতে করতে একের পর এক গুলি ছুড়তে থাকে। ৩-৪টি মোটরসাইকেলে ৮-১০ জন লোক এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। টানা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গুলি ছুড়েছে। তারা সবাই হেলমেট পরা অবস্থায় ছিল। এ জন্য কাউকে চিনতে পারেননি।

চারপাশ থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে বলে জানান রবিউল। তিনি বলেন, কীভাবে যে গুলি করেছে, তার বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব। গুলি করতে করতে গাড়ি ঘিরে ফেলে। একটানা গুলি চলতে থাকে। এর মধ্যে গাড়ির পেছন থেকে ছুটে আসা একটি গুলি লাগে আবদুল্লাহর পিঠে। মানিকের গুলি লাগে বগলের নিচে।

এলোপাতাড়ি গুলি থেকে বাঁচার জন্য সবাই মিলে আর্তচিৎকার করতে থাকেন রবিউল ইসলামরা। এর মধ্যে কোনো রকম গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন রবিউল। তিনি বলেন, বাকলিয়া সংযোগ সড়কের মুখে এলে তাঁদের গাড়ি থেমে যায়। সেখানে প্রশাসনের (পুলিশ) গাড়ি দেখতে পান। পুলিশের সামনেই গুলি ছুড়তে থাকে ওরা। তবে মাত্রা কমে আসে। এর মধ্যে তাঁরা যে যেভাবে পেরেছেন গাড়ি থেকে কোনো রকম বের হয়ে আসেন। কে কোনো দিকে বের হয়ে গেছেন, তা খেয়াল করতে পারেননি। তবে গাড়ি থাকা সারোয়ারের গায়ে কোনো গুলি লাগেনি। আর তিনি (রবিউল) বের হয়ে পাশের একটি রেস্তোরাঁর সামনে গিয়ে পড়ে যান। বাঁ পায়ে গুলি লাগায় হাঁটতেও পারছিলেন না। রেস্তোরাঁর লোকজন টেনে তাঁকে ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে একটি টেবিলের ওপর শুইয়ে দেন।

রেস্তোরাঁর শাটার বন্ধ করে দিলেও সেটিকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়তে থাকে বলে জানান রবিউল আলম। তবে দু-তিন মিনিট পর গুলির শব্দ থেমে যায়। এরপর তাঁকে বের করে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অটোরিকশায় তোলেন। সেখানে ছিলেন গুলিতে আহত মানিকও। গুরুতর আহত মানিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে রবিউলকে বলেন, ‘বন্ধু আমি আর বাঁচব না।’

পরে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মানিককে মৃত ঘোষণা করেন। আর রবিউলকে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তবে গাড়ির ভেতর থেকে গুলি করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আহত রবিউল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, তাঁদের গাড়িতে কোনো অস্ত্র ছিল না।

একটি সূত্র জানায়, ১৫ মার্চ ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় আকরাম নামের এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে প্রাইভেট কারে গুলি করা হয়। আকরামের ব্যবহৃত গাড়ি ও এই গাড়ির রং একই। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার পর হুমকির ঘটনায় আকরামের স্ত্রী রুমা আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। এতে সাজ্জাদের স্ত্রী, হাসানসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সুলতানা আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। কী কারণে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তদন্ত করা হচ্ছে। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়া কিংবা জায়গা দখল নিয়ে বিরোধ আছে কি না, সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ