স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা বার্তায় সম্পর্ক জোরদারের বার্তা ট্রাম্পের
Published: 27th, March 2025 GMT
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের কথা জানান।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বার্তা প্রকাশ করা হয়।
বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “আমেরিকান জনগণের পক্ষ থেকে, আমি আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”
গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী সময় প্রসঙ্গে চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, “এই পরিবর্তনের সময় বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বর্ধিত নিরাপত্তার জন্য সক্ষমতা তৈরির একটি সুযোগ এনে দিয়েছে।”
আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখতে উন্মুখ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি লেখেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী, আমরা আমাদের (দুই দেশ) দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে পারবে। আমরা আমাদের সম্পর্ক জোরদার করবো এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করবো।”
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আপনার এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।”
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ র জনগণ স ব ধ নত
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনীতিতে উত্তাপ: নতুন দল, সুইং ভোটার ও মাইনাস ফর্মুলা
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরবর্তিত রাজনীতি জমে উঠেছে। নানা বাগ্বিতণ্ডা, পক্ষ–বিপক্ষে তর্ক–বিতর্ক, আলোচনা, সমালোচনা সবই চলছে। ক্ষণে ক্ষণে দেখা যাচ্ছে উত্তপ্ত পরিস্থিতিও। ‘সংস্কার’ ‘নির্বাচন’ ‘নিষিদ্ধ’ ‘ফেসবুক পোস্ট’ ‘ভূরাজনীতি’ ‘বিভক্তি’ ‘কারও এজেন্ডা’ ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পরিণতি’ ‘বৈঠক’ ‘বিবৃতি’ ‘পাল্টা বিবৃতি’ নানা পক্ষের নানা রকম কথায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের পরিস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে’ সব পক্ষ নিজেদের অবস্থান থেকে নানা ভাষায় হুংকার দিচ্ছে। যদিও পাশাপাশি চলছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠক।
ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের প্রচণ্ডতায় ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন, পলায়নে ও পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার চমৎকার সুযোগ এসেছিল আমাদের সামনে। সেই প্রত্যয়ে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের বিষয়ে মতামত দিচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এমন এক প্রসঙ্গে কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘নেতারা আমার সঙ্গে বৈঠকে আলাপ–আলোচনায় বিভিন্ন বিষয়ে একমত পোষণ করেন, বাইরে গিয়েই সাংবাদিকদের সামনে বলেন ভিন্নকথা।’ এমন দ্বিচারিতা যেন বাংলাদেশের রাজনীতিকদের নিত্যদিনের চর্চিত বিষয়।
যদিও জুলাই-আগস্ট ২০২৪–এর আন্দোলনে রাজপথে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাজপথে নেমে আসা দেশের সব শ্রেণি–পেশার মানষের মধ্যে গড়ে ওঠা ঐক্য বৃহৎ শক্তিতে রূপ নেবে, একটা শক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, পরিস্থিতি এখন বদলে যাচ্ছে দ্রুত। বাংলাদেশের রাজনীতির চিরাচরিত চরিত্র এবং সেই চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে। একেক পক্ষের চাওয়া-পাওয়া, দাবি, আকাঙ্ক্ষা একেক রকম। এঁদের কেউ বুঝেশুনে অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির আলোকে নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল অনুযায়ী কথা বলছেন; কেউ আবার ভাবাবেগে আক্রান্ত কথাবার্তার আবরণে ইস্যু তুলে পরিস্থিতি ও জনমত নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু তারুণ্যনির্ভর নেতাদের চিন্তাচেতনায় যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁদের ইদানীংকার কর্মকাণ্ড তাঁদেরকে যে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষগুলোর সামনে ভুল বার্তাসহ দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে, তা উপলব্ধি করার সক্ষমতাও হয়তো এঁদের তৈরি হয়নি এখনো। দিন দিন এটা স্পষ্ট হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর আন্দোলনের তেজ এক কথা নয়।
আবার চর্চিত নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শ কর্মী–সমর্থকদের মনোবলকে পুঁজি করে কোনো কোনো দল মধ্যপন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে কুশলী খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
এর বাইরে নানা মোর্চা ধর্মভিত্তিক নানা প্ল্যাটফর্মের ছায়াতলে থেকে স্বনামে পরিচিত অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চলমান অস্থির এই সময়ে আগামীর রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন, পাশাপশি সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে সবাইকে সংযত থাকতে বলছেন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুবাদে পরিচিত এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই নেতা সেনানিবাসে গিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর পরবর্তী সময়ে তাঁদের ফেসবুক পোস্ট টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে যায়। তাঁদের বক্তব্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত তো হয়ই, নিজেরাও দলের ভেতরে অস্বস্তি তৈরি করেন। যাত্রার শুরুতেই দুই নেতার এমন বক্তব্য বা কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন। তাঁদের অনেক ‘খেয়ালি কাজ’ রাজনৈতিক মহলে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন তাঁদের দলের নেতা–কর্মীরাই। রাজনীতির মাঠে যাঁরা দীর্ঘদিন আছেন, তাঁদের সঙ্গে নবীন নেতৃত্বের চিন্তাচেতনায় বক্তব্য অভিব্যক্তিতে পার্থক্য হবে, এটা জানা কথা। তবে এটা দেশের জনগণ, তথা আগামী দিনে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ভোটারদের জন্য একটা বার্তা।
ভুলে গেলে চলবে না যে নানা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে বিভক্ত রাজনৈতিক বিশ্বাসের বাইরে ভোটারদের একটা বড় অংশ রয়েছে, যারা ‘সুইং ভোটার’ নামে পরিচিত। এঁরাই ’৯১–এর জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা শহরে শেখ হাসিনার মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর নৌকাও ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। সেবার আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ঢাকায় জিততে পারেননি।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু সেবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেখ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হারতে হয়েছিল তেজগাঁও আসনে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, কোতোয়ালি সূত্রাপুরে সাদেক হোসেন খোকার কাছে। সেই ভয়ে শেখ হাসিনা নিজের এলাকার বাইরে প্রার্থী হতে সাহস দেখিয়েছেন খুব কমই। আবার পাঁচ বছরের মাথায় ‘সুইং ভোটার’রা ’৯৬–এর নির্বাচনে কোতোয়ালি সূত্রাপুরে সাদেক হোসেন খোকা ছাড়া আর কোনো বিএনপি প্রার্থীকে ঢাকার কোনোর আসনে জিতে আসতে দেননি। সবাই চড়ে বসেছিল নৌকায়।
মনে রাখতে হবে, রাজপথে আন্দোলনের সময়কার আবেগ আর রাজনীতির বাস্তবতা আলাদা জিনিস। রাজনীতির বড় খেলোয়াড়রা সবাই এখন সম্ভাব্য লাভ–ক্ষতির হিসাব কষায় ব্যস্ত। ওদিকে নানা ঘাত–প্রতিঘাতে পোড় খাওয়া দেশের জনগণও এবার প্রস্তুত। ভোট দেবেন বুঝেশুনে। আগামী দিনের সংসদ সদস্য হিসেবে আইন প্রণয়ন ও দেশ পরিচালনার ভার কাকে দেবেন, সেটাও এবার নির্ধারণ হবে চিন্তার নিরিখে।
একটি বড় দল অনতিবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে বলেছে, রাজনৈতিক সংস্কার নির্বাচনের পর সংসদে বসেই তারা করবে। ‘অনির্বাচিত’ সরকারের রাষ্ট্রীয় সংস্কারের এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। যদিও ‘যে যায় লঙ্কায় সে–ই হয় রাবণ’ এমন আশঙ্কা নানা কারণেই এক্কেবারে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না দেশের জনগণের পক্ষে।
ওদিকে দেশের একটা বড় রাজনৈতিক দলের আশঙ্কা, রাজনীতি থেকে তাদের মাইনাস করা হতে পারে। বলতেই হচ্ছে, বিএনপিকে কোনো কৌশলে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই দেশের রাজনীতির জন্য ভালো হবে না। আওয়ামী লীগ চেয়েছিল বিএনপিকে মাইনাস করতে, তাদের কোণঠাসা করে রাখতে; কিন্তু আমরা দেখলাম কী? আওয়ামী লীগকেই পালিয়ে যেতে হলো দেশ থেকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। শান্তিতে নোবেলজয়ী এই মানুষ ও তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলী উপলব্ধি করতে পারছেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক প্রস্থানের জন্যও একটা গ্রহণযোগ্য অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প নেই। সেই অনুধাবন থেকেই তাঁরা দেশের সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছেন গুরুত্বসহকারে। না হলে যে দীর্ঘ ‘স্বৈরাচারী’ শাসন অবসানের পর ভোটবাক্সে মতামত জানানোর অপেক্ষায় থাকা জনগণের প্রত্যাশা আবারও মাঠে মারা যাবে।
এ কথা মনে রাখতে হবে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিপ্লবপ্রসূত পরিস্থিতিতে দেশের ছাত্র- তরুণ-জনতার পছন্দের সরকার। যে কারণে অনেকে এমনটাও বিশ্বাস করেন যে রাজপথের আন্দোলন–সংগ্রামে জীবন দেওয়া, আহত হওয়া এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে অবিশ্বাস্য রকম কম সময়ের মধ্যে স্বৈরাচারী সরকারকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করার কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের প্ল্যাটফর্ম নানা কারণে সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।
এখন দেখার বিষয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠক ও তাদের প্রস্তাবের আলোকে দেশের নিপীড়িত জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার জন্য চূড়ান্তভাবে কী রূপরেখা তৈরি হয়। স্বাধীনতার ৫৫ বছরের মাথায় উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে উত্তরণের প্রাক্কালে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মুহাম্মদ লুৎফুল হায়দার ব্যাংকার