ঔষধ শিল্পসংশ্লিষ্টরা যাহাতে অকস্মাৎ ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি করিতে না পারেন, তজ্জন্য চিকিৎসা সামগ্রীর মূল্য ধার্য করিয়া দেওয়ার দাবি অনেক দিনের। আমরা দেখিয়াছি, ইতোপূর্বে ঔষধের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির ফলে রোগীরা সংকটে পড়িয়াছেন। জীবন রক্ষাকারী শতাধিক ঔষধের মূল্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকিলেও অবশিষ্টগুলি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানই ধার্য করিয়া দেয়। সেই কারণেই স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করিতে সকল প্রকার ঔষধের মূল্য সরকার হইতে ধার্য করিয়া দেওয়ার দাবি জোরালো হইয়াছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের জনমত জরিপে। বুধবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই জরিপে ঔষধের মূল্যসহ স্বাস্থ্য খাতের মানোন্নয়নে ১১ প্রকার পদক্ষেপের কথা বলিয়াছেন অংশগ্রহণকারীরা।
দেশের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার যেই কমিশন গঠন করিয়াছে, সেই কমিশনের জন্যই বিবিএস এই জরিপ করিয়াছে, যথায় আরও দেখা যাইতেছে, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা লইয়া মানুষ সন্তুষ্ট নহে। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যয়বহুল। তথায় অস্ত্রোপচার ব্যয় সাধারণের আয়ত্তের বাহিরে এবং ঔষধের মূল্যও তথৈবচ। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের হাসপাতালেই রোগীদের অবহেলার শিকার হইবার অভিযোগ বিস্তর। বেসরকারি হাসপাতালসমূহে চিকিৎসা ব্যয় হ্রাসকরণে যদ্রূপ ঔষধ, অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসকের পরামর্শ মূল্য নির্ধারণে মত দিয়াছেন ভোক্তারা, তদ্রূপ রোগীদের স্মার্ট হেলথ কার্ড ও স্বাস্থ্য বীমা প্রচলনের দাবিও তাহাদের। বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকিলেও যথায় এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নাই, তথায় এইরূপ চিকিৎসক নিয়োগেরও দাবি উঠিয়াছে বিবিএসের জরিপে। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হইল, রোগীর চিকিৎসা ব্যয় হ্রাসকরণে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির দাবি উঠিয়াছে।
ইহা স্পষ্ট, নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে ঔষধের মূল্য নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট নহে। জরিপে অন্য যেই সকল বিষয় উঠিয়া আসিয়াছে, সেইগুলিতেও নজর দিতে হইবে। এই ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিতে পারে। আমরা মনে করি, কমিশন এই জরিপ হইতে স্বাস্থ্যক্ষেত্র সম্পর্কিত জনপ্রত্যাশা অনুধাবন করিতে পারিবে। একদিকে দেশে হাসপাতালসমূহে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা না পাইবার অভিযোগ, অন্যদিকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে যাইবার প্রবণতা– এই উভয় সংকটের সমাধানও জরুরি।
তবে কিছু নির্দেশনার মাধ্যমে সরকার ঔষধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করিতে পারে। এই ক্ষেত্রে কোম্পানিসমূহকে ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি অপেক্ষা উৎপাদন ব্যয় হ্রাসকরণে বরং মনোযোগী হইতে হইবে। এই লক্ষ্যে ঔষধ কোম্পানিসমূহ মার্কেটিংসহ চিকিৎসকদের উপহারে যেই অর্থ ব্যয় করিতেছে, উহা হ্রাস করিতে হইবে। এতদ্ব্যতীত লেবেল, কার্টন ও চাকচিক্যময় মোড়ক সামগ্রীর ব্যয়ও হ্রাস করা জরুরি। এমন অতিরিক্ত ব্যয় পরিহার করিলে ঔষধের ব্যয় কমিবে এবং সাধারণ মানুষ উপকৃত হইবে। পাশাপাশি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকেও তৎপর হইতে হইবে। অধিদপ্তর-নির্ধারিত মূল্য উপেক্ষা করিয়া ঔষধের মূল্য কোম্পানি আপন খেয়ালে বৃদ্ধি করিলে ব্যবস্থা লইতে হইবে।
ঔষধের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ এই কারণেই জরুরি, উৎপাদিত ঔষধের ৯৭ শতাংশই নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। ইতোপূর্বে ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি রোধে উচ্চ আদালত হইতে নির্দেশনা দেওয়া হইলেও উহা কার্যকর হয় নাই। গত বৎসরও ঔষধের মূল্য ৭ হইতে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হইয়াছে। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার ঔষধের মূল্য নির্ধারণে যদ্রূপ সক্রিয় হইবে, তদ্রূপ স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য অনিয়মের ব্যাপারেও শূন্য-সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করিবে। সর্বোপরি আমরা বিশ্বাস করি, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করিবে। কমিশনের বাস্তবোচিত সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকার যতটা সম্ভব বাস্তবায়ন করিবে এবং পরবর্তী সময়ে যেই সরকার আসিবে উহারাও সংস্কার বাস্তবায়ন বিষয়ে আন্তরিক হইবে। স্বাস্থ্য খাতে সর্বাঙ্গে ব্যথা। এই ব্যাধির প্রতিকারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নাই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঔষধ র ম ল য ব দ ধ ব ব এস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আমাকে এসবে জড়াবেন না: ব্রাজিলের নতুন কোচ কে হবেন, তা নিয়ে নেইমার
দরিভাল জুনিয়র ছাঁটাই হওয়ার পর এখন নতুন কোচের সন্ধানে আছে ব্রাজিল। এর মধ্যে ব্রাজিলের সম্ভাব্য নতুন কোচ হিসেবে একাধিক নামও সামনে এসেছে। দৌড়ে কার্লো আনচেলত্তি এগিয়ে থাকলেও লড়াইয়ে আছেন হোর্হে জেসুস ও ফিলিপে লুইসের মতো নামও।
এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না এলেও, এই তিনজনের মধ্য থেকেই হয়তো কেউ একজন কোচ হিসেবে ব্রাজিলের ডাগআউটে আসতে যাচ্ছেন। ব্রাজিলের নতুন কোচ নিয়োগ সম্প্রতি মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল নেইমারের কাছ থেকেও। তবে বিষয়টি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সাবেক এই বার্সেলোনা তারকা।
ব্রাজিলের কোচ হওয়ার দৌড়ে যাঁরা এগিয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে আনচেলত্তির অধীনে কখনো খেলেননি নেইমার। জেসুসের অধীনে নেইমার খেলেছেন আল হিলালে। আর ফিলিপে লুইসকে নেইমার কোচ নয়, পেয়েছিলেন সতীর্থ হিসেবে। জেসুসের অধীনে খেললেও সেই সময়টা কিন্তু নেইমারের ভালো যায়নি। এমনকি কথার লড়াইয়েও জড়িয়ে পড়েন দুজন।
আরও পড়ুনআনচেলত্তি না এলে ‘প্ল্যান বি’তে যাঁকে কোচ বানাতে চায় ব্রাজিল২৮ মার্চ ২০২৫নেইমারকে সৌদি চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য নিবন্ধিত না–করা জেসুস তাঁকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা যে মানের ফুটবল খেলছি, নেইমার সেই জায়গায় নেই।’ জেসুসের এই কথা ভালোভাবে নিতে পারেননি নেইমার। কোচের ওপর মনঃক্ষুণ্ন হয়ে নেইমার তখন বলেছিলেন, ‘হোর্হে জেসুসের ওপর আমার রাগ হয়েছিল, যখন তিনি বলেছিলেন, দলের বাকিদের মতো আমি একই অবস্থায় নেই।’
সেই একই কোচকে এখন ব্রাজিল ডাগআউটে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে। এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবছেন, জানতে চাইলে এক পডকাস্টে নেইমারের উত্তর ছিল এমন, ‘এসবের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাকে এসবের মধ্যে জড়াবেন না। আমি এখন বাইরে।’
হোর্হে জেসুসও আছেন ব্রাজিলের কোচ হওয়ার দৌড়ে