ঘরে বসে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’ কাজ তরুণ প্রজন্মের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। একসময় শীর্ষ ৩-এ থাকলেও সাম্প্রতিক জরিপগুলো বলছে, এ খাতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।  মার্কিন সাময়িকী সিইওওয়ার্ল্ড গত বছরের ১৯ এপ্রিল ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য সেরা ৩০টি দেশের যে তালিকা প্রকাশ করে, সেখানে বাংলাদেশ ছিল ২৯তম অবস্থানে। তালিকায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। বাংলাদেশ থেকে ভালো অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া। এমনকি আমাদের থেকে নানা সূচকে পিছিয়ে থাকা পাকিস্তানও আমাদের ওপরে রয়েছে।

২০১০ সালের দিকে ফ্রিল্যান্সিং কাজের জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্মের তালিকায় আউটসোর্সিংয়ে ঢাকা তৃতীয় শীর্ষ নগরী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপরই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’-এ নজর দেয়। বিগত সরকার নানা চটকদার নামে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার নাম করে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সরকারের আইসিটি বিভাগ– বাড়ি বসে বড়লোক, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং, ফিল্যান্সার টু এন্টারপ্রেনিউর, মোবাইল অ্যাপস প্রশিক্ষক ও সৃজনশীল অ্যাপস উন্নয়ন, হাইটেক পার্কের অধীনে বিভিন্ন ধরনের আইটি প্রশিক্ষণ, নারীর দক্ষতা উন্নয়নে হার পাওয়ার, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে লেভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্সসহ অগণিত প্রকল্প হাতে নেয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ও স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেপ) প্রকল্পের আওতায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। এর পর ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণে যুক্ত হয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরও ‘শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে এ খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির সুযোগ ছিল। কিন্তু তা সেভাবে কাজে লাগানো যায়নি।

ঢাকঢোল পিটিয়ে আইসিটি বিভাগ এ খাত থেকে ২০১৮ সালে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিল; ২০২৫ সালে এসেও সেটি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। আইসিটি খাত থেকে আয়ের অঙ্ক দুই বিলিয়ন ডলারও ছাড়ানো যায়নি। দেশে তরুণ সমাজের মধ্যে বেকারত্বের সমস্যা প্রকট। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, দেশে বর্তমানে ৭ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে রয়েছে। এর মধ্যে ২৬ লাখ মানুষ বেকার। ২৪ লাখ মানুষ প্রতিবছর চাকরির বাজারে ঢুকছে। স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস)-২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা ১ কোটি ২৯ লাখ তরুণ এখন নিষ্ক্রিয়। মানে তারা পড়াশোনায় নেই, কর্মসংস্থানে নেই; এমনকি কোনো প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। বিবিএস নিষ্ক্রিয় তরুণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ধরেছে ১৫ থেকে ২৪ বছর (প্রথম আলো, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। দেশের তরুণ সমাজের বড় অংশ বেকার। হতাশায় ডুবন্ত এসব তরুণের জন্য সত্যিকার অর্থে নিদান হতে পারে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। 
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে আসা অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের বেকার তরুণদের কথা ভাবতেই হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জনশক্তি গড়ায় নজর দিতে হবে। আইসিটিনির্ভর দক্ষ জনশক্তি তৈরির পুরো কার্যক্রমকে একটি ছাতার নিচে আনতে হবে। আইসিটি বিভাগের আওতায় প্রশিক্ষণ-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অথরিটি/সংস্থা চালু করা জরুরি। এ সংস্থাটির কাছে থাকতে হবে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর পুরো ডেটাবেজ। নিবন্ধনের জন্য আইসিটি বিভাগের ‘প্রশিক্ষণ বাতায়ন’ নামে প্ল্যাটফর্ম থাকলেও তেমন হালানাগাদ তথ্য নেই। এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম কার্যকর থাকলে দক্ষ ব্যক্তি নিবন্ধন করতে পারবেন না। একই ব্যক্তি একাধিক ট্রেনিংয়ে যুক্ত হতে পারবেন না। এতে ট্রেনিং কোম্পানির ফাঁকিবাজি বন্ধ হবে। আবার কতসংখ্যক তরুণ প্রশিক্ষণ নিল, তারা কোথায় কী করছে, তাও এখান থেকে জানা যাবে। 

যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বছরের পর বছর দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে আসছে, এ রকম প্রশিক্ষণদাতা প্রফেশনাল কোম্পানিগুলোকে কাজ দিতে হবে। তাতে এসব প্রতিষ্ঠান যেমন দক্ষ ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ পাবে, তেমনি দক্ষ জনশক্তি গড়তেও তারা ভূমিকা রাখতে পারবে। জয়েন্ট ভেঞ্চারের নামে দক্ষ কোম্পানির সঙ্গে রাজনৈতিকসহ নানা বিবেচনায় অদক্ষ কোম্পানির যুক্ত হওয়া কীভাবে ঠেকানো যায়, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। কোম্পানির হাতে যখন কাজ থাকবে তখন তারা বাজার থেকে যোগ্য কর্মী খুঁজে নেবে। না পেলে নিজেরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে তুলবে। কাজ আনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। সরকারের বিনামূল্যে ট্রেনিং দেওয়ার কাজটি যারা পাবে তাদের কার্যক্রম কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে, যেন কোনোভাবেই এ ট্রেনিং নামকাওয়াস্তে না হয়। 

দেশের তরুণ সমাজের কাছে ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’ যেন আলাদিনের চেরাগ। সরকারি-বেসরকারিভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’ বিষয়টিকে এমনভাবে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে, যেন তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর টুকটাক প্রশিক্ষণ নিলেই কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার পকেটে পুরতে পারবে। কিছু অসৎ প্রতিষ্ঠান এ রকম প্রলোভন দেখিয়ে উল্টো প্রতারণা করছে। প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও সরকারকে কঠোর হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তি দিতে এর চেয়ে ভালো আর সহজ বিকল্প এই সময়ে কিছু আছে বলে মনে হয় না। তরুণ প্রজেন্মের কথা মাথায় রেখে এ খাতে দক্ষ কর্মী তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকার মনোযোগী হবে বলে প্রত্যাশা রাখি।

হাসান জাকির: সহকারী সম্পাদক, সমকাল
prantojakir@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ র ল য ন স আউটস র স প রকল প র জন য সরক র আইস ট

এছাড়াও পড়ুন:

আউটসোর্সিং-কর্মীদের কোনা এলাকায় কত বেতন, জানাল অর্থ মন্ত্রণালয়

আউটসোর্সিং সেবা কর্মীদের জন্য ‘সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত জারি জারি করা নীতিমালায় বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী নাগরিকেরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজের সুযোগ পাবেন। এর আওতায় সর্বোচ্চ মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ হাজার ৯৭৮ টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য মাসিক এই সেবামূল্য নীতিমালায় ধার্য করা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, বিশেষ সেবা-১ এর আওতায় সোসিওলোজিস্ট, প্রকৌশল সেবা, প্রশিক্ষণ সেবা, গবেষণা, ব্যবস্থাপনা সেবা, পরিদর্শন সেবা, আইটি সেবা এবং অনুরূপ সেবার ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মাসিক ৪২ হাজার ৯৭৮ টাকা পাবেন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার ক্ষেত্রে পাবেন ৪০ হাজার ৩০২ টাকা। আর অন্যান্য এলাকার জন্য ৩৮ হাজার ৯৬৪ টাকা।

বিশেষ সেবা-২ এর আওতায়  প্রকৌশল সেবা (ডিপ্লোমা), প্রশিক্ষণ সেবা (সহযোগী), পরিদর্শন সেবা (সহকারী), ফোরম্যান, বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি চালনা, টেকনিশিয়ান (সহযোগী) এবং অনুরূপ সেবার ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্তরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মাসিক ২৮ হাজার ৩৬৯ টাকা পাবেন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার ক্ষেত্রে পাবেন ২৬ হাজার ৬৩৬ টাকা। আর অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ হাজার ৭৬৯ টাকা।

আরও পড়ুনমাদ্রাসা ও কারিগরির শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা পাবেন অনুদান, আবেদনের সময় আরও ১০ দিন১৪ এপ্রিল ২০২৫

বিশেষ সেবা-৩ এর আওতায় প্রশিক্ষণ সেবা (সহকারী), টেকনিশিয়ান (সহকারী), গবেষণা এবং অনুরূপ সেবার ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্তরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মাসিক ২২ হাজার ৫৯৮ টাকা পাবেন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার ক্ষেত্রে পাবেন ২১ হাজার ২৭৯ টাকা। আর অন্যান্য এলাকার জন্য ২০ হাজার ৬২০ টাকা।
এই তিনটি সেবা ক্যাটাগরি ‘বিশেষ সেবা-১’, ‘বিশেষ সেবা-২’ এবং ‘বিশেষ সেবা-৩’ এর বাইরে আরও ৫টি সেবার ক্যাটাগরি রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে ক্যাটাগরি-১ হলো:

ড্রাইভার (হেভি), সুপারভাইজার, কেয়ারটেকার, ওয়ার্ড মাস্টার, ইলেক্ট্রিশিয়ান, লিফট মেকানিক, এসি মেকানিক, পাম্প মেকানিক, জেনারেটর মেকানিক, অন্যান্য কারিগরি কাজসংক্রান্ত টেকনিশিয়ান এবং অনুরূপ কাজের সেবা। এ ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্তরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মাসিক ২০ হাজার ২১২ টাকা পাবেন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার ক্ষেত্রে পাবেন ১৯ হাজার ৮০ টাকা। আর অন্যান্য এলাকার জন্য ১৮ হাজার ৫১৪ টাকা।

ক্যাটাগরি-২:

ড্রাইভার (লাইট), স্যানিটারি মিস্ত্রি (প্লাম্বার মিস্ত্রি), রাজমিস্ত্রি (ম্যাসন), কাঠমিস্ত্রি (কার্পেন্টার), রংমিস্ত্রি, পাম্প অপারেটর, এয়ারকন্ডিশন অপারেটর, জেনারেটর অপারেটর, ওয়েম্যান, ওয়েল্ডার, মিটার রিডার এবং অনুরূপ কাজের জন্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মাসিক ১৯ হাজার ৬৩৬ টাকা পাবেন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার ক্ষেত্রে পাবেন ১৮ হাজার ৫৪০ টাকা। আর অন্যান্য এলাকার জন্য ১৭ হাজার ৯৯২ টাকা।

আরও পড়ুনখাদ্য অধিদপ্তরে বিশাল নিয়োগ, ১৩ থেকে ১৯তম গ্রেডে পদ ১৭৯১১১ মার্চ ২০২৫

ক্যাটাগরি-৩:

সহকারী ইঞ্জিন মেকানিক, টেন্ডল, গ্রিজার, টেইলর, ডুবুরি এবং অনুরূপ কাজের সেবার জন্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মাসিক ১৯ হাজার ২৩৬ টাকা পাবেন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার ক্ষেত্রে পাবেন ১৮ হাজার ১৬৫ টাকা। আর অন্যান্য এলাকার জন্য ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা।

ক্যাটাগরি-৪:

লন্ড্রি অপারেটর, ফরাশ জমাদার, সহকারী ইলেক্ট্রিশিয়ান, সুকানি, বাবুর্চি (কুক), গার্ডেনার (বাগানকর্মী), দক্ষ শ্রমিক এবং অনুরূপ কাজের সেবার জন্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মাসিক ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা পাবেন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার ক্ষেত্রে পাবেন ১৭ হাজার ৬২৫ টাকা। আর অন্যান্য এলাকার জন্য ১৭ হাজার ১০৮ টাকা।

ক্যাটাগরি-৫:

সিকিউরিটি গার্ড (নিরাপত্তা প্রহরী), ক্লিনার (পরিচ্ছন্নতা কর্মী), সহকারী গার্ডেনার, ইলেকট্রিক্যাল হেলপার, কার্পেন্টার (কাঠমিস্ত্রি) হেলপার, স্যানিটারি হেলপার, পাম্প হেলপার, গাড়ির হেলপার, এসি মেকানিক হেলপার, চৌকিদার, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, ওটি অ্যাটেনডেন্ট, ইমার্জেন্সি অ্যাটেনডেন্ট, স্ট্রেচার বেয়ারার, ওয়ার্ড বয়, আয়া, সহকারী বাবুর্চি, লিফটম্যান, লাইনম্যান, লস্কর, মেশোন হেল্লার, মেসেঞ্জার, মশালচি, এনিমেল অ্যাটেনডেন্ট, গেস্ট হাউজ অ্যাটেনডেন্ট, হোটেল অ্যাটেনডেন্ট, ডোম, বাইন্ডার, অদক্ষ শ্রমিক এবং অনুরূপ কাজের সেবার জন্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় মাসিক ১৮ হাজার ১৮০ টাকা পাবেন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার ক্ষেত্রে পাবেন ১৭ হাজার ১৭৫ টাকা। আর অন্যান্য এলাকার জন্য ১৬ হাজার ৬৭৩ টাকা।

নীতিমালা অনুযায়ী, আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সেবাকর্মীর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা থাকতে হবে এবং আগ্রহী সেবাকর্মীর বয়সসীমা ১৮-৬০ বছর হবে।

আরও পড়ুনআউটসোর্সিং নীতিমালা জারি: ঈদ-বৈশাখে প্রণোদনা, মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন নারীরা১৫ এপ্রিল ২০২৫

এদিকে আউটসোর্সিং সেবা কর্মীদের জন্য ‘সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০২৫’-এ বলা হয়েছে, বছরে দুটি উৎসবে (ঈদ) এক মাসের সেবামূল্যের অর্ধেক হারে উৎসব প্রণোদনা পাবেন কর্মীরা। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখী প্রণোদনা পাবেন মাসিক সেবামূল্যের এক-পঞ্চমাংশ হারে। বছরে ১৫ দিনের ছুটি পাবেন কর্মীরা। নারী কর্মীদের জন্য ৪৫ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং নারীবান্ধব কাজে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা আছে নীতিমালায়।

নতুন এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য হলো—আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা এবং একই সঙ্গে সেবা কর্মীদের উৎসাহিত করা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন নীতিমালায় পাঁচটি সাধারণ ক্যাটাগরি এবং তিনটি বিশেষ সেবার মাসিক সেবামূল্য বাড়ানো হয়েছে। প্রতি অর্থবছরে প্রতিটি সেবাকর্মীকে দুটি করে ইউনিফর্ম সরবরাহ করা হবে এবং দায়িত্ব পালনের সময় তা পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে তাদের মৌলিক কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। সেবাকর্মীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে নীতিমালায়। তাদের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে।

সেবামূল্য সরাসরি কর্মীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাব অথবা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর মাধ্যমে দেওয়া হবে। এবং মাসিক সেবামূল্য পরিশোধ করা হবে কর্মকালীন মাসের পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহেই। নীতিমালায় বলা হয়েছে, সেবাকর্মীদের সেবামূল্য ও প্রণোদনার পরিমাণ অর্থ বিভাগের সময়োপযোগী নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। নির্ধারিত সেবাঘণ্টাকে সেবা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবে সেবা ক্রয়কারীর চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত সেবার প্রয়োজন হলে, অর্থ বিভাগের সম্মতিক্রমে চুক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আউটসোর্সিং-কর্মীদের কোনা এলাকায় কত বেতন, জানাল অর্থ মন্ত্রণালয়
  • ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অবরুদ্ধ