পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে অমতে মেয়ের বিয়ে ও পালিয়ে যাওয়া মানতে না পেরে ছেলের পরিবারকে ডেকে এনে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাতে চিলাহাটি ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের ভাইয়ের তিস্তাপাড়ার বাড়িতে তাদের মারধর করা হয়। এতে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর গর্ভপাত হয়েছে। আর এক বৃদ্ধার দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হারুন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক।

মারধরে আহতরা হলেন– একই এলাকার আব্দুস সাত্তার, তাঁর স্ত্রী ফরিদা খাতুন (৫০), ছোট ছেলে খোকন বাবু ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রেহেনা খাতুন (২০)। 

এ ঘটনায় মঙ্গলবার আব্দুস সাত্তার আটজনের নামে দেবীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে উল্লেখ করেন, তাঁর বড় ছেলে মোস্তাকিম ইসলামের সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের মেয়ে সিফাতে সাদিয়া সুহার সম্পর্ক ছিল। দুই পরিবারকে না জানিয়ে ২০২১ সালে মোস্তাকিম ও সুহা বিয়ে করে। বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হয়। মেয়ের পরিবার বিয়ে মেনে না নেওয়ায় ২০ দিন আগে মোস্তাকিম ও সুহা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। পরে চেয়ারম্যান হারুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় মেয়েকে খুঁজে বাড়ি নিয়ে যান। গত সোমবার সুহা ও মোস্তাকিম ফের বাড়ি ছাড়ে। 

এতে আরও বলা হয়, ওই দিন রাত ৯টায় চেয়ারম্যান হারুনের লোকজন তাদের বাসায় গিয়ে মোস্তাকিমের অবস্থান জানতে চায়। তথ্য দিতে না পারলে তাঁকেসহ স্ত্রী ও ছোট ছেলের স্ত্রীকে জোর করে চেয়ারম্যানের ভাই নূর হোসেনের বাসায় নেওয়া হয়। আর ছোট ছেলে খোকনকে কর্মস্থল থেকে কৌশলে ডেকে নেওয়া হয়। পরে তাদের বেধড়ক মারধর করে চেয়ারম্যানের লোকজন। এতে তাঁর স্ত্রীর দুই হাত ভেঙে যায়। আর ছোট ছেলের চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটে আঘাত করায় তিনি গুরুতর আহত হন। 

এর মধ্যে বিষয়টি জানতে পেরে খোকনের শ্বশুর জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯-এ কল করে দেবীগঞ্জ থানাকে জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। মঙ্গলবার ভোরে তাদের দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গতকাল বুধবার সেখানে রেহেনার গর্ভপাত হয়।
 
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক আবু নোমান বলেন, ভর্তি হওয়ার পর অন্তঃসত্ত্বা নারী ব্লিডিংয়ের কথা জানিয়েছিলেন। আজ (বুধবার) পরীক্ষায় তাঁর গর্ভপাতের তথ্য পাওয়া গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই নারীকে রংপুরে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। 

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ দাবি করেন, ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না। পরে শুনেছেন। আর অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মারধরের তথ্য সঠিক নয়। 

দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোয়েল রানা বলেন, মঙ্গলবার তারা লিখিত অভিযোগ দিলেও কিছু ভুল ছিল। সেগুলো সংশোধন করে আজ (বুধবার) অভিযোগ দিয়েছে। মামলা গ্রহণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে: আলী রীয়াজ 

গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত বিজয়কে বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, এ দেশের ইতিহাসে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা বারবার পর্যদুস্ত হয়ে একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক শাসনে পরিণত হয়। গণতন্ত্রের সংগ্রামের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে বিভিন্নভাবে সে বিজয়কে ভূলন্ঠিত করা হয়েছে। 

শনিবার ঢাকায় সংসদ ভবনের এল ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ শাসনকে পরাভূত করে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে দাবি করে দলটির উদ্দেশে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘদিনের যে ফ্যাসিবাদী শাসন জগদ্দল পাথরের মতো আমাদের বুকের উপর বসে ছিল, তার বিরুদ্ধে জীবনবাজি রেখে লড়াই, অকুতোভয় সংগ্রাম এবং আপনাদের সাথীদের প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সে শাসনকে পরাস্ত করতে পেরেছেন। একটি ফ্যাসিবাদী শাসনকে পলায়ন করতে বাধ্য করেছেন যা বাংলাদেশকে রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে অগ্রসর করেছে। তিনি বলেন, এখন সকলে মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময় এসেছে। ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনও এ দেশে ফিরে না আসে, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্থায়ী রূপ নেয়, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সব রকমের নিপীড়ন যেন আমরা প্রতিহত করতে পারি। 

আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ছাড়াও ছিলেন সামান্তা শারমিন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সারোয়ার তুষার, জাভেদ রাসিন ও নাহিদা সারোয়ার নিভা। 

উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে। ২৩ মার্চ জাতীয় নাগরিক পার্টি কমিশন বরাবর তাদের মতামত জমা দেয়। সে প্রেক্ষিতে দলটির সঙ্গে আজ আলোচনায় বসে কমিশন। দিনব্যাপী এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ