কেউ একজন বড় ভুল করেছেন: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Published: 27th, March 2025 GMT
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ সিগন্যাল-এ যুদ্ধ-পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।
রাষ্ট্রীয় সফরে জ্যামাইকায় গিয়ে সিগন্যাল কেলেঙ্কারি নিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এ সময় তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, কেউ একজন বড় ভুল করেছেন এবং একজন সাংবাদিককে (সিগন্যালের গ্রুপ চ্যাটে) যুক্ত করেছেন।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বলছি না, তবে আপনাদের ওই বিষয়ে কথা বলার কথা নয়।’
সিগন্যাল গ্রুপে নিজের ভূমিকাকে এতটা বড় করে দেখছেন না রুবিও। তিনি বলেন, তাঁর দিক থেকে যোগাযোগের বিষয়টি যাচাইয়ে তিনি বার্তা দিয়েছিলেন। হামলার পর অভিনন্দন জানাতে তিনি আবার বার্তা দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিগন্যালে দেওয়া তথ্য বাইরে প্রকাশের ইচ্ছা থেকে দেওয়া হয়নি। অবশ্য প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, এসব তথ্যের কোনোটিই মার্কিন বাহিনীর সদস্যদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে না।
গ্রুপ চ্যাটে দেওয়া কোনো তথ্য গোপনীয় ছিল কি-না এমন প্রশ্নে রুবিও বলেন, ‘পেন্টাগন বলেছে এমন তথ্য ছিল না।’
আরও পড়ুন‘যুদ্ধ–পরিকল্পনা’ ফাঁস হওয়ায় চাপে ট্রাম্প প্রশাসন৪ ঘণ্টা আগেইয়েমেনের হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা নিয়ে সিগন্যাল অ্যাপে হওয়া আলাপের বিবরণ বুধবার প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিক। গ্রুপ চ্যাটের তথ্য ফাঁস হওয়ার এ ঘটনায় বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
এই বিস্তারিত বিবরণ বের হওয়ার আগেই মঙ্গলবার থেকে বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে শুনানি চলছে। ডেমোক্র্যাটদের দাবি, হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা প্রকাশ হওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এতে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে।
আরও পড়ুনজেরার মুখে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধানেরা, ট্রাম্প বললেন গোপনীয় কিছু ছিল না২৫ মার্চ ২০২৫কয়েক দিন ধরে ইয়েমেনে হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলার পরিকল্পনা নিয়ে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজসহ ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় আরও কিছু কর্মকর্তা সিগন্যাল অ্যাপে আলাপ করছিলেন।
এই চ্যাট গ্রুপে ভুলক্রমে দ্য আটলান্টিকের সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকেও যুক্ত করা হয়েছিল। মাইক ওয়ালৎজ ভুলবশত গোল্ডবার্গকে চ্যাট গ্রুপে যুক্ত করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার আটলান্টিকে ওই গ্রুপ চ্যাটের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র কর ছ ন হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
শখের কলের গান ও একজন আব্দুল আলী
নিমাই দাঁড়ারে, তীর ভাঙা টেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়, কালা আমায় পাগল করলি রে, কাওয়ায় কমলা খাইতে জানে না, মেরা জুতা হে জাপানি, ঠাকুর জামাই এলো বাড়িতে– কালের সাক্ষী হয়ে থাকা জনপ্রিয় এসব গান সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে অহরহ শুনতে পেতাম অথবা দূরের কোনো গ্রাম থেকে গানের আওয়াজ বাতাসে ভেসে আসত কানে। সেসব দিন কেবল আমাদের জীবন থেকেই হারিয়ে যায়নি; বরং হারিয়ে যেতে বসেছে এ গল্পগুলো। ইন্টারনেটের সাহায্যে ইউটিউব কিংবা গুগলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে গান শোনা অতি সহজ হয়েছে। অথচ কয়েক দশক আগেও গান শোনার প্রধান মাধ্যম ছিল মাইক। ছিল কলের গান নামক আরও একটি যন্ত্র; যা রেকর্ডের মাধ্যমে গান শোনা যেত। কলের গান এ দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে অনেক আগেই। তবে কেউ কেউ সেই স্মৃতি ধারণ করে আছেন এখনও। এমন একজন ব্যক্তি যার নাম আব্দুল আলী। তিনি ঢাকা জেলার দোহারের ঘাটা গ্রামের কুটি ব্যাপারীর ছেলে। পেশায় একজন মাইক ব্যবসায়ী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি নিজেই আটকে গেছেন এক অন্ধপ্রেমে। অসংখ্য কলের গানের সংগ্রাহক তিনি। অন্তত ৭০টি রেকর্ডে ৫ শতাধিক গান রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। কলের গানের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলেও ৬০ দশকের অনেক গান তিনি যত্নে রেখেছেন তাঁর শখের তালিকায়। এটি এখন তাঁর সুখস্মৃতি। মন চাইলেই তিনি এখনও কলের গান শোনেন। অন্যকে শোনান। কেউ কেউ কলের গান দেখতে আসেন তাঁর বাড়িতে। আব্দুল আলীর বয়স এখন ৭৮ বছর। অনেক স্মৃতি মনে করতে পারেন না; আবার যেগুলো মনে আছে, সে কথা ঠিকঠাক গুছিয়ে বলতে পারেন না। তবে জীবনের অধিকাংশ সময় যে পেশায় কাটিয়েছেন সে কথা বলতে তিনি উদগ্রীব! জীবন সায়াহ্নে এসে ফেলে আসা দিনগুলো মনে পড়তেই মুহূর্তেই জীবন রঙিন হয়ে ওঠে।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম আব্দুল আলীর। যখন বাবা মারা যান তখন তাঁর বয়স ১৫। মা, দুই ভাই, দুই বোনের সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে।
ওই বয়সে উপার্জনের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। উপজেলার মধুরচর এলাকার পূর্ব পরিচিত আলেপ সরদারের সঙ্গে ধান কাটার আগের দিন বিকেলে তাদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, ওই বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানের জন্য মাইক ভাড়া করে আনা হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও মাইক বাজাতে পারছেন না মাইকম্যান। তখন তিনি মাইক বাজানোর চেষ্টা করেন এবং হাতের স্পর্শে বেজে ওঠে! তখন আনন্দে ভরে যায় পুরো বাড়ি। ওইদিন খুশি হয়ে দুই পয়সা দিয়ে পুরস্কৃত করা হয় তাঁকে। পরেরদিন ভোরে আলেপ সরদারের সঙ্গে ধান কাটার জন্য চলে যান ফরিদপুরে। দুই মাস ধান কাটার পর ফের বাড়িতে চলে আসেন। কিছুদিন অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজও করেন। নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় উপজেলার জয়পাড়া বাজারে বাদলের মাইকের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। এভাবে কেটে যায় কয়েক বছর। একটা সময় নিজ বাড়িতে মাইকের দোকান দেন। একটি মাইক দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। নাম দেন বুলেট মাইক সার্ভিস। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্যবসা। আব্দুল আলীর শাশুড়ি জমি বিক্রি করে কিছু টাকা দিলে ১৬০ টাকা দিয়ে কলের গান কেনেন। মাইক এবং কলের গান ভাড়ায় দিয়ে আয় থেকে ভালোই চলছিল। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে এর ব্যবহার। একদিকে সংসারে ব্যয় বাড়তে থাকে এবং অন্যদিকে আয় কমতে থাকে। দুই মেয়েকে বিয়েও দেন। এক সময় মাইক ভাড়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন তিনি। হারানো বিজ্ঞপ্তি ও ঘোষণা ছাড়া অন্য কোনো কাজে মাইকের ব্যবহার উঠে যাওয়ায় সীমিত আয় দিয়েই চলে আব্দুল আলীর সংসার।
আব্দুল আলী বলেন, ‘দোহার উপজেলায় সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করেছি। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আমার বাড়িতে আসত মাইক ভাড়ার জন্য। এখন তা কেবলই স্মৃতি। মাইকের দিন শেষ হওয়ায় ঘরেই পড়ে রয়েছে এসব। শখের কলের গানের সেটটি আছে। অনেকে কিনতে চেয়েছেন। বিক্রি করিনি। স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি। জীবিত থাকাকালে বিক্রি করব না। আমার মৃত্যুর পর কেউ যদি বিক্রি করে দেয় তখন আফসোস থাকবে না।’ v