দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দাবানলে কমপক্ষে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো কয়েকটি এলাকায় আগুন জ্বলছে। এই দাবানল ইতিমধ্যে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দাবানলের রেকর্ড গড়েছে।

দাবানলে আরও ২৬ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের ১২ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগের বয়স ৬০ থেকে ৭০ এর কোটায়। দাবানলের কারণে ২৩ হাজারের মতো মানুষকে বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু বলেছেন, ‘নজিরবিহীন এই সংকট আমাদের জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের রেকর্ড বই নতুন করে লিখছে।’

আগুনে উইসেয়ং শহরের ১ হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো মন্দির পুড়ে গেছে। ওই শহরের অনেক সাংস্কৃতিক নিদর্শন সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নেওয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার সানচেয়ং কাউন্টিতে দাবানলের সূত্রপাত হয়। এরপর আগুন উইসেয়ং কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়ে। ঝোড়ো ও শুষ্ক বাতাসে একপর্যায়ে আগুন পার্শ্ববর্তী কয়েকটি কাউন্টিতেও ছড়িয়ে পড়ে।

দাবানলের এ ঘটনায় মঙ্গলবার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে জাতীয় অগ্নিনির্বাপণ সংস্থা। বুধবার উইসেয়ংয়ের পাহাড়ি এলাকায় আগুন নেভানোর সময় একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট নিহত হন।

দাবানল নিয়ন্ত্রণে কয়েক হাজার অগ্নিনির্বাপণ কর্মীর পাশাপাশি পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। দেশটিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারও আগুন নেভানোর কাছে অংশ নিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানলের ঘটনা তেমন ঘটে না। তবে এবারের দাবানল ইতিমধ্যে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির রেকর্ড গড়েছে। দাবানলে ১৭ হাজার হেক্টরের মতো বন ধ্বংস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে এটি দেশটির ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত, গ্রামে শোকের ছায়া

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ায় হয়ে অংশ নিয়ে নিহত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আকরাম হোসেন নামে এক যুবক। তিনি উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মোরশেদ মিয়ার ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আকরাম ছিলেন সবার বড়। সংসারের হাল ধরতে ওয়েল্ডার হিসেবে রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। আকরামের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে।

স্থানীয়রা জানান, অনটনের সংসারে ছেলে আকরামকে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ওয়েল্ডারের কাজ শেখান বাবা মোরশেদ মিয়া। দালালের মাধ্যমে প্রায় আট মাস আগে তাকে রাশিয়ায় পাঠান। খরচ হয় ৬ লাখ টাকার বেশি। রাশিয়ায় পৌঁছে আকরাম একটি চীনা প্রতিষ্ঠানে কাজ পান। পারিশ্রমিক হিসেবে যে বেতন পেতেন তাতে নিজের খরচ শেষে মাসে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারতেন। গত আড়াই মাস আগে রাশিয়ার এক দালালের খপ্পরে পড়ে অধিক উপার্জনের আশায় আকরাম দেশটির সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক পদে যোগ দেন। পরে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে অংশ নেন। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের ছবিও পোস্ট করেন আকরাম।

নিহতের পিতা মোরশেদ মিয়া জানান, সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সদস্যদের কথা অমান্য করলে তাকে মারধর করতেন। গত কয়েকদিন আগে সে জানিয়েছিল যে, রাশিয়ায় তার ব্যাংকে বাংলাদেশি ৪ লাখ টাকা জমা হয়েছে। গত রোববার বেলা ১১টার দিকে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়। তখন পরিস্থিতি ভালো নয় বলে জানিয়েছিল। শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর রাশিয়া থেকে ফোন করে একজন জানান, ইউক্রেনের হামলায় আকরাম নিহত হয়েছে। আকরামের লাশ দ্রুত দেশে ফেরত আনতে সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।

নিহত আকরামের মা মোবিনা বেগম বলেন, ছেলের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হলেও গত ১৩ এপ্রিল থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। 

স্থানীয় লালপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, শুনেছি রাশিয়ার সরকার তাকে নাগরিকত্ব দিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধে পাঠিয়েছিল। রাশিয়া তার সহকর্মী মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন আকরাম ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছে। 

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া জানান, বিষয়টি জানার পরপরই প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ