ঈদের ছুটি মানেই গ্রামের বাড়ি কিংবা বাইরে ঘুরতে যাওয়া। আর এই ছুটি নেহাত সংক্ষিপ্ত নয়। তাই ছুটিতে যাওয়ার আগে বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নিরাপদ রাখা অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘ ছুটিতে বাড়িতে না থাকলে অযথা বিদ্যুৎ খরচ রোধ করাসহ দুর্ঘটনা এড়ানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অনলাইনে বিভিন্ন গৃহস্থালি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেবা এক্সওয়াইজেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলমুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়িতে না থাকলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এখন অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি, তাই এটা খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির নিরাপত্তা ও যন্ত্রপাতির নিরাপত্তার জন্য আপনার সব দিকেই নজর দেওয়া প্রয়োজন।’

আরও পড়ুনঈদে দীর্ঘ যাত্রার আগে-পরে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন২৫ মার্চ ২০২৫ফ্রিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ি খালি থাকলে ফ্রিজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা উচিত। যদি কিছু খাবার সংরক্ষণ করতে হয়, তবে ফ্রিজের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন রেখে যেতে পারেন। ফ্রিজ খালি থাকলে, এর দরজা সামান্য খোলা রেখে দিন, যাতে ভেতরে দুর্গন্ধ না জমে এবং ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ভালো থাকে।

ওয়াই-ফাই রাউটার ও ইন্টারনেট ডিভাইস বন্ধ রাখুন

ঈদের ছুটিতে বাড়ির বাইরে থাকলে ওয়াই-ফাই রাউটার চালু রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ খরচ বাড়ায়। তাই নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রাউটার এবং অন্যান্য ইন্টারনেট ডিভাইস বন্ধ রাখুন।

এসি ও গিজার বন্ধ করুন

ঈদের ছুটিতে বাড়িতে না থাকলে এসি ও গিজার বন্ধ রাখুন। এসব যন্ত্র চালু থাকলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয় এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।

আরও পড়ুনঈদে বাড়ি না থাকলেও গাছে পানি দেওয়া যাবে যেভাবে০৯ এপ্রিল ২০২৪ডিভাইসের প্লাগ খুলে রাখুন

টেলিভিশন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, চার্জার এবং অন্যান্য ডিভাইসের প্লাগ খুলে রাখুন। এতে বিদ্যুতের অপচয় রোধ হবে এবং শর্টসার্কিটের ঝুঁকি কমবে।

অটোমেটিক লাইটিং ব্যবস্থা রাখুন

বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অটোমেটিক টাইমার সুইচ বা স্মার্ট লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইট জ্বলবে ও নিভে যাবে, যা চোরের উপদ্রব ঠেকাতে সহায়ক।

সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রাখুন

বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে সেটি চালু তো রাখতেই হবে। এতে দূরে থাকলেও বাড়ির ভেতর–বাইরে নজরদারি করতে পারবেন। সিসিটিভির সঙ্গে ইন্টারনেটের সংযোগ থাকে, এর ফলে ওয়াই–ফাই সিস্টেমও সচল রাখতে হবে।

বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা করুন

ছুটিতে বের হওয়ার আগে বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ে সন্দেহ থাকলে পরীক্ষা করুন। বাড়ির প্রধান সুইচ বন্ধ করা সম্ভব হলে তা বন্ধ করে দিতে পারেন। তবে ফ্রিজ বা নিরাপত্তা ডিভাইসের জন্য প্রয়োজনীয় লাইন চালু রাখুন। ত্রুটিপূর্ণ তার বা যন্ত্র থাকলে, ছুটির আগেই তা মেরামত করে ফেলুন।

আরও পড়ুন৯ দিনের ছুটিতে বাসা ছাড়ার আগে এই ৬টি কাজ করে যান২৫ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীর এক মোকামেই দিনে ছয় কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি

রাস্তায় সারি করে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। নদীর ঘাটে ভেড়ানো ট্রলার থেকে এসব ট্রাক কাভার্ড ভ্যানে তরমুজ তুলছেন শ্রমিকেরা। তরমুজ নিয়ে ব্যস্ত শ্রমিক, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি এ দৃশ্য দেখা গেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের রামনাবাদ নদীর তীরের আমখোলা মোকামে। এখান থেকে প্রতিদিন দুই শ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে তরমুজ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমের এ সময় প্রতিদিন এই মোকামে প্রায় ছয় কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলায় এবার তরমুজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। এবার ফলনের পাশাপাশি কৃষক তরমুজের দামও ভালো পাচ্ছেন। এক কানি (আড়াই একর) জমিতে তরমুজ চাষ করে সব খরচ বাদ দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা লাভ হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা তরমুজ নিয়ে আমখোলা মোকামে বিক্রি করতে আসছেন। জেলার একাধিক মোকাম থেকে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন শ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে তরমুজ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

সরেজমিনে আমখোলা মোকামে দেখা যায়, নদীপথে তরমুজ নিয়ে রামনাবাদ নদীর তীরে ভিড়ছে ট্রলার। ট্রলার থেকে ও কাভার্ড ভ্যানে তরমুজ তুলছেন শ্রমিকেরা।

ঢাকার গাজীপুর থেকে আমখোলা মোকামে তরমুজ কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী মো. জামান চৌধুরী বলেন, তিনি পটুয়াখালী থেকে ২০ বছর ধরে তরমুজ কিনে গাজীপুরে তাঁর আড়তে বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৭০ লাখ টাকার তরমুজ কিনেছেন। ঈদ পর্যন্ত তিনি এখান থেকে তরমুজ কিনবেন। তাঁর মতো আরও দেড় থেকে দুই শ ব্যবসায়ী আমখোলা মোকাম থেকে তরমুজ কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করছেন। প্রতিটি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে তিন থেকে চার লাখ টাকার তরমুজ পরিবহন করা হয়।

এবার পটুয়াখালী জেলায় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। গত বছর জেলায় ২৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছিল।

আমখোলা মোকামের শ্রমিক সরদার মো. ইমরান বলেন, এখানে দিন–রাত প্রায় পাঁচ শ শ্রমিক তরমুজ ট্রাকে ভরার কাজ করছেন। প্রতিটি তরমুজ ট্রাকে তুলতে তাঁরা দেড় টাকা মজুরি পাচ্ছেন। ঈদ পর্যন্ত এই মোকামে ট্রলার থেকে ট্রাকে তরমুজ তুলে দেওয়ার কাজ করবেন তাঁরা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় এবার পটুয়াখালীতে তরমুজ উৎপাদন বেড়েছে। এ কারণে কৃষকেরা এবার বেশি লাভ করছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে হয়নি, তেমনি ভাইরাসের সংক্রমণও হয়নি। তাই এবার ভালো ফলন হয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার পটুয়াখালী জেলায় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। গত বছর জেলায় ২৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছিল।

গত বছ‌রে এক কা‌নি জ‌মি‌র তরমুজ বিক্রি করে  সা‌ড়ে ছয় লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এবার তরমুজ আবাদের সময় আবহাওয়া অনুকূ‌লে থাকায় এক কা‌নি জ‌মি‌র তরমুজ বিক্রি করে আট লাখ টাকা পাওয়া গেছে। শিপলু হাওলাদার , কৃষক , ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন , রাঙ্গাবালী উপজেলা

রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের কৃষক মো. মওদুদ খলিফা বলেন, এ বছর তিনি তিন কানি জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে প্রতি কানি জমিতে তাঁর তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রতি কানির তরমুজ বিক্রি করে তিনি ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ১৬ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন।

রাঙ্গাবালী উপ‌জেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন ইউ‌নিয়‌নের  কৃষক শিপলু হাওলাদার ব‌লেন, গত বছ‌রে এক কা‌নি জ‌মি‌র তরমুজ বিক্রি করে  সা‌ড়ে ছয় লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এবার তরমুজ আবাদের সময় আবহাওয়া অনুকূ‌লে থাকায় এক কা‌নি জ‌মি‌র তরমুজ বিক্রি করে আট লাখ টাকা পাওয়া গেছে।

তরমুজ তোলার শেষ সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন তরমুজ খেত থেকে তোলা সম্ভব, যার পাইকারি বাজার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকা।নজরুল ইসলাম, উপপরিচালক, পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

সোনার বাংলা ট্রাক–কাভার্ড ভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক মো. মহসিন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, আমখোলা এলাকায় ৫০টি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি রয়েছে। এখান থেকে প্রতি দিন ২০০ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ সরবরাহ করা হচ্ছে ।

পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এবার জেলায় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। গত বছর ২৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছিল। তরমুজ তোলার শেষ সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন তরমুজ খেত থেকে তোলা সম্ভব, যার পাইকারি বাজার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ