শুধু রমজান নয়, মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদত
Published: 27th, March 2025 GMT
ইবাদত ও আনুগত্যে অবিচল থাকতে পারা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার অন্যতম প্রমাণ। আল্লাহ বলেন, ‘মৃত্যু পর্যন্ত তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর। (সুরা হিজর, আয়াত: ৯৯)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘বলো বিশ্বাস স্থাপন করেছি আল্লাহর প্রতি এবং অবিচল থাকো।’ (মুসলিম, হাদিস: ৩৮)
আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল হচ্ছে যা স্বল্প হলেও স্থায়ী। তাই রাসুলের (সা.
ইবাদত উপভোগ করুন
টেকসই ইবাদতের শক্তি অর্জনের একটি উপায় হলো, ইবাদতকে উপভোগ্য করে তোলা। মনে এই বিশ্বাস দৃঢ় করা যে, ইবাদতই আমার প্রশান্তি ও আনন্দের প্রধান অনুষঙ্গ। কেননা, মানুষ যা পছন্দ করে, তা তার জন্য উপভোগ্য হয়—বেশি করা কষ্টকর হয় না। রাসুল (সা.) ইবাদত উপভোগ করতেন, ইবাদত তাকে শান্তি দিত। তাই তিনি বেলাল (রা.)-কে বলেছিলেন, ‘বেলাল, নামাজের ব্যবস্থা করো এবং তার মাধ্যমে আমাদের প্রশান্তি দাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৯৮৫)
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমার নয়নের শীতলতা রাখা হয়েছে নামাজে।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৩,৯৩৯)
আরও পড়ুনযে কারণে দোয়া ইউনুস পড়া হয় ০৯ মার্চ ২০২৫রমজানের প্রাপ্তি
‘ইবাদতের মৌসুম’ ছাড়া অন্য সময়ে আলসেমি ও উদাসীনতার মধ্য দিয়ে আমরা যেভাবে সময় নষ্ট করি গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, এ-কারণেই ইবাদতের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ফিকে হয়ে আসে। রমজানে সবচেয়ে বড় পাওনা হচ্ছে, এ-মাস আমাদের এই আত্মবিশ্বাস দান করে যে, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় রাখতে পারলে, তাঁর তৌফিক পেলে এবং যথার্থ চেষ্টা করলে আমরা আমলে অনেক অগ্রবর্তী হতে পারি। রমজানে আমরা এই যে এত এত আমল করেছি, অর্থ হচ্ছে আমরা ইচ্ছে ও চেষ্টা করলে অন্য সময়েও তা করতে পারি।
এখনো রমজান আছে এবং আছে তার বরকতও, জান্নাতের দরজা খোলা আছে এবং বন্ধ আছে জাহান্নামের দুয়ার, আর শয়তানও আছে শৃঙ্খলাবদ্ধ—তাই, এখন, এই সময়েই, শয়তান মুক্ত হওয়ার পূর্বেই আমাদের সারা বছরের ইবাদতের পরিকল্পনা আঁটতে হবে। যেন মৃত্যু পর্যন্ত ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি।
আরও পড়ুনইফতারের পর ঘুম পায় কেন০৯ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র আল ল হ রমজ ন উপভ গ
এছাড়াও পড়ুন:
পটুয়াখালীর এক মোকামেই দিনে ছয় কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি
রাস্তায় সারি করে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। নদীর ঘাটে ভেড়ানো ট্রলার থেকে এসব ট্রাক কাভার্ড ভ্যানে তরমুজ তুলছেন শ্রমিকেরা। তরমুজ নিয়ে ব্যস্ত শ্রমিক, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি এ দৃশ্য দেখা গেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের রামনাবাদ নদীর তীরের আমখোলা মোকামে। এখান থেকে প্রতিদিন দুই শ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে তরমুজ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমের এ সময় প্রতিদিন এই মোকামে প্রায় ছয় কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলায় এবার তরমুজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। এবার ফলনের পাশাপাশি কৃষক তরমুজের দামও ভালো পাচ্ছেন। এক কানি (আড়াই একর) জমিতে তরমুজ চাষ করে সব খরচ বাদ দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা লাভ হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা তরমুজ নিয়ে আমখোলা মোকামে বিক্রি করতে আসছেন। জেলার একাধিক মোকাম থেকে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন শ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে তরমুজ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
সরেজমিনে আমখোলা মোকামে দেখা যায়, নদীপথে তরমুজ নিয়ে রামনাবাদ নদীর তীরে ভিড়ছে ট্রলার। ট্রলার থেকে ও কাভার্ড ভ্যানে তরমুজ তুলছেন শ্রমিকেরা।
ঢাকার গাজীপুর থেকে আমখোলা মোকামে তরমুজ কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী মো. জামান চৌধুরী বলেন, তিনি পটুয়াখালী থেকে ২০ বছর ধরে তরমুজ কিনে গাজীপুরে তাঁর আড়তে বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৭০ লাখ টাকার তরমুজ কিনেছেন। ঈদ পর্যন্ত তিনি এখান থেকে তরমুজ কিনবেন। তাঁর মতো আরও দেড় থেকে দুই শ ব্যবসায়ী আমখোলা মোকাম থেকে তরমুজ কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করছেন। প্রতিটি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে তিন থেকে চার লাখ টাকার তরমুজ পরিবহন করা হয়।
এবার পটুয়াখালী জেলায় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। গত বছর জেলায় ২৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছিল।আমখোলা মোকামের শ্রমিক সরদার মো. ইমরান বলেন, এখানে দিন–রাত প্রায় পাঁচ শ শ্রমিক তরমুজ ট্রাকে ভরার কাজ করছেন। প্রতিটি তরমুজ ট্রাকে তুলতে তাঁরা দেড় টাকা মজুরি পাচ্ছেন। ঈদ পর্যন্ত এই মোকামে ট্রলার থেকে ট্রাকে তরমুজ তুলে দেওয়ার কাজ করবেন তাঁরা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় এবার পটুয়াখালীতে তরমুজ উৎপাদন বেড়েছে। এ কারণে কৃষকেরা এবার বেশি লাভ করছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে হয়নি, তেমনি ভাইরাসের সংক্রমণও হয়নি। তাই এবার ভালো ফলন হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার পটুয়াখালী জেলায় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। গত বছর জেলায় ২৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছিল।
গত বছরে এক কানি জমির তরমুজ বিক্রি করে সাড়ে ছয় লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এবার তরমুজ আবাদের সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এক কানি জমির তরমুজ বিক্রি করে আট লাখ টাকা পাওয়া গেছে। শিপলু হাওলাদার , কৃষক , ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন , রাঙ্গাবালী উপজেলারাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের কৃষক মো. মওদুদ খলিফা বলেন, এ বছর তিনি তিন কানি জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে প্রতি কানি জমিতে তাঁর তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রতি কানির তরমুজ বিক্রি করে তিনি ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ১৬ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন।
রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন ইউনিয়নের কৃষক শিপলু হাওলাদার বলেন, গত বছরে এক কানি জমির তরমুজ বিক্রি করে সাড়ে ছয় লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এবার তরমুজ আবাদের সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এক কানি জমির তরমুজ বিক্রি করে আট লাখ টাকা পাওয়া গেছে।
তরমুজ তোলার শেষ সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন তরমুজ খেত থেকে তোলা সম্ভব, যার পাইকারি বাজার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকা।নজরুল ইসলাম, উপপরিচালক, পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসোনার বাংলা ট্রাক–কাভার্ড ভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক মো. মহসিন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, আমখোলা এলাকায় ৫০টি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি রয়েছে। এখান থেকে প্রতি দিন ২০০ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ সরবরাহ করা হচ্ছে ।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এবার জেলায় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। গত বছর ২৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছিল। তরমুজ তোলার শেষ সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন তরমুজ খেত থেকে তোলা সম্ভব, যার পাইকারি বাজার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকা।