পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সরকারের কাছ থেকে ইমরান খানের মুক্তির বিষয়ে কোনো ছাড় না পাওয়ায় পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে ঈদের তিন দিন কারাগারের সামনে বিক্ষোভের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান এবং পিটিআই খাইবার পাখতুনখাওয়া চ্যাপ্টারের প্রধান জুনায়েদ আকবর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দলীয় কর্মীরা ঈদুল ফিতরের তিন দিনই আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বিক্ষোভ করবেন। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়, তাহলে সরকারকে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আলোচনায় তার গুরুত্ব প্রদর্শন করতে হবে।

জুনায়েদ আকবর বলেন, ‘বিরোধী জোটে সবকিছু আদর্শ নয়, তবে জোটকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তেহরিক-ই-তাহাফুজ-ই-আইন-ই-পাকিস্তানের (টিটিএপি) দলগুলো আমাদের সমর্থন করছে। এখন আমরা সংসদের অংশ নয়, এমন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা জামায়াতে ইসলামির নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি এবং আমি আশাবাদী যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

জোট গঠন বিষয়ে পিটিআইয়ের এই নেতা আরও বলেন, দলগুলোর মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এ ধরনের ছোটখাটো বাধা জোটের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।

জুনায়েদ আকবর বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের পর আমরা ইসলামাবাদে বিক্ষোভ করব। কিন্তু এর আগে ঈদের সময় আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হবে।’

দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের জন্য ছাড় পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে পিটিআই। বিশেষ করে জাফর এক্সপ্রেস ঘটনার পর সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক ব্রিফ করা জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভায় ইমরানকে যুক্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ইমরান খানকে কারামুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে পিটিআই। দলটির নেতারা ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা চালান; কিন্তু সরকার তাতেও অনুমতি দেয়নি। এর আগে সরকারের সঙ্গে পিটিআইয়ের আলোচনাও বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে পিটিআই আবার আন্দোলন করে সরকারকে চাপে রাখার পথে হাঁটতে শুরু করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমর ন খ ন প ট আই সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিবেশীকে বাঁচাতে গিয়ে যেভাবে ‘ফেঁসে’ গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

চট্টগ্রামে প্রতিবেশীকে অপহরণকারীদের কাছ থেকে রক্ষা করতে এসে উল্টো ফেঁসে গেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে বারবার বলার পরও ওই শিক্ষার্থীকে করা হয় মামলার আসামি। যান কারাগারে। গ্রেপ্তার তিন আসামিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। ভুক্তভোগীর পরিবারের ফোন পেয়ে ওই ছাত্র ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলের ক্লোজ সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁকে ধরা হয়েছে।

ছয় দিন কারাভোগের পর জামিন পেয়ে বেরিয়ে এলেও ট্রমায় রয়েছেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের এই শিক্ষার্থী। বের হচ্ছেন না বাসা থেকে। শিক্ষার্থীর পাশাপাশি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাঁর পরিবারও। পুলিশের যাচাই-বাছাইয়ে সতর্ক না হওয়ায় তাঁদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

৬ মার্চ রাতে নগরের আকবর শাহ থানার প্রভাতি স্কুলের বিপরীতে অবস্থিত বাসা থেকে আবেদীন আল মামুন ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. শহীদুল ইসলামকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য পরিচয়ে। পরে আবেদীন আল মামুনের স্ত্রী ফাতেমা আক্তারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ নগদে আদায় করা হয়, বাকি ১৫ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে নগর পুলিশ পুরো শহরে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে ফয়’স লেক চক্ষু হাসপাতালের সামনে আবেদীন আল মামুন ও তাঁর গাড়িচালককে রেখে চলে যান অপহরণকারীরা। এর আগে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, পাহাড়তলী কর্নেল হাট ও আকবর শাহ এলাকায় অপহৃত ব্যক্তিদের ঘোরানো হয়।

ঘটনার শিকার আবেদীন আল মামুন চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) তৈরি পোশাক কারখানা প্যাসিফিক জিনসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক। তিনি সীতাকুণ্ড থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই ঘটনায় তাঁর গাড়িচালক শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আকবর শাহ থানায় অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা করেন। ঘটনার দিন রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নাজমুল আবেদীন, নইমুল আমিন, আরাফাত হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার বাদী শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এজাহারে আমি শুধু সই করেছি। বাকি সব পুলিশ করেছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী ফোন পেয়ে এসেছিলেন। তিনি জড়িত নন।’

প্রতিবেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে অপহরণকারীরা আসার পর ফোন করে ডেকে আনা হয় বলে জানান ঘটনার শিকার আবেদীন আল মামুন। তিনি বলেন, ‘অপহরণকারীরা আমাকে যখন বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর হাত ধরেছিলাম। তাঁকে আমি নিজেই আমার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম।’

প্রতিবেশীর বিপদে সাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মামলায় জড়ালেন বলে জানান আবেদীন আল মামুনের স্ত্রী চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী আয়শা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসায় আমার স্বামীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি পরিচয়ে অপহরণ করতে লোকজন এলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে আমি ফোন করি। আমার ফোন পেয়ে তিনি বাসায় আসেন। তিনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন আমার স্বামীকে বাঁচাতে। শেষে অপহরণকারীরা যখন আমার স্বামীকে নিয়ে যান, তখন তাঁকেও আমার স্বামী সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী ঘটনার সময় কেন পুলিশকে ফোন করেননি, প্রশ্নের উত্তরে আয়শা আক্তার বলেন, ‘অপহরণকারীরা আমার স্বামীকে পুলিশে দিতে চেয়েছিলেন, সেই কারণে আমরাই পুলিশকে ফোন দিতে নিষেধ করেছি। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধরে থানায় আনার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তিনি নির্দোষ। এরপরও পুলিশ তাঁকে ছাড়েনি।’

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার ওপর হামলার অভিযোগের নগরের কোতোয়ালি থানার একটি মামলার আসামি আবেদীন আল মামুন।

৩ আসামির জবানবন্দিতেও নাম নেই শিক্ষার্থীর

আদালত সূত্র জানায়, অপহরণও মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামি নাজমুল আবেদীন, নইমুল আমিন ও আরাফাত হোসেন ৮ মার্চ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তাঁরা তিনজনই বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার সময় ভুক্তভোগীর স্ত্রী ফোন করার পর ওই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁকে তাঁরা কেউ ডাকেননি। ১০ থেকে ১৫ দিন আগে পরিকল্পনা করে তাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। আবেদীন আল মামুনকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও টাকার লোভে পড়ে অপহরণ করেন তাঁরা।

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ১২ মার্চ জামিনে মুক্তি পান। আদেশে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিক উল্লেখ করেন, তিন আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অনুযায়ী এই আসামি (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী) জড়িত নন। এ ছাড়া ভুক্তভোগী, তাঁর স্ত্রী, মামলার বাদীও আদালতে হাজির হয়ে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীকে তাঁরা ডেকে এনেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আকবর শাহ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ভালো ছেলে হিসেবে জানি।’

ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে ডেকে এনেছেন থানায় গিয়ে বলার পরও কেন আসামি করা হয়েছে জানতে চাইলে আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ফুটেজে ছিল তাই ধরা হয়েছে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই কেন করা হয়নি উত্তরে ওসি বলেন, তদন্তে যা হওয়ার হবে।

ট্রমায় শিক্ষার্থী

প্রতিবেশীকে বাঁচাতে এসে মামলায় ফেঁসে গিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বাসা থেকে বের হতে পারি না। মানুষকে মুখ দেখাতে পারি না।’

শিক্ষার্থীর ব্যবসায়ী বাবা বলেন, ‘পুলিশকে ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বারবার বলার পরও শোনেনি। প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে গিয়ে ছেলে আমার নিজেই বিপদে পড়ে গেছে। হয়েছে মামলার আসামি। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) রইছ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে দোষী প্রমাণিত না হলে মামলা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে বাদ দেওয়া হতে পারে।

আসামি আটকের পর যাচাই-বাছাইয়ে পুলিশকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেলেও কার কী ভূমিকা ছিল, তা দেখার দরকার ছিল পুলিশের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘পুরোনো সংস্কৃতি চর্চা করতে চাইলে আমরা আবারও জুলাইতে ফিরে যাব’
  • প্রতিবেশীকে বাঁচাতে গিয়ে যেভাবে ‘ফেঁসে’ গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
  • চট্টগ্রামে থানা ঘিরে পাল্টাপাল্টি অবস্থান বৈষম্যবিরোধী ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের