ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে গতকাল বুধবারও বিক্ষোভ করেন তুরস্কের হাজার হাজার মানুষ। এ নিয়ে বিক্ষোভ অষ্টম দিনে গড়াল। এ কয় দিনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ দেড় হাজার মানুষকে আটক করেছে এরদোয়ান সরকার। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের বলপ্রয়োগ ও ব্যাপক ধরপাকড়ের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও অধিকার সংগঠনগুলো।

এ ছাড়া বিক্ষোভের সংবাদ কভারেজ করায় এএফপির সাংবাদিকসহ সাতজন সাংবাদিককে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) গত মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে সিটি হলের সামনে বিক্ষোভ করেছে। এ ছাড়া আগামী শনিবার শহরে বড় বিক্ষোভ মিছিল করার পরিকল্পনা করেছে দলটি।

এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভের সূচনা হয় গত সপ্তাহে বুধবার। ওই দিন ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর সমর্থকেরা রাজপথে নেমে এসে আন্দোলন শুরু করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোগলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। জাতিসংঘ ও অধিকার সংগঠনগুলো বিক্ষোভ দমনে পুলিশের শক্তিপ্রয়োগ ও ব্যাপক ধড়পাকড়ের নিন্দা জানিয়েছে।

মেয়র একরেম ইমামোগলু দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাজধানী আঙ্কারায় তরুণদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, দেশ খুবই নাজুক সময় পার করছে। তিনি সবাইকে ধৈর্য আর কাণ্ডজ্ঞান বিবেচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। এরদোয়ান বলেন, যাঁরা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাঁদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা করুণ পরিণতির পথ বেছে নিয়েছেন।

মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে মিছিলে শামিল হন। তাঁরা সরকার পতনের দাবিতে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের হাতে থাকা ব্যানার ও পতাকায় এরদোয়ান সরকারের পতনসংক্রান্ত দাবির কথা লেখা ছিল।

শিক্ষার্থীদের মিছিল যাতে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে না ওঠে, সে জন্য ইস্তাম্বুলে বিপুল পরিমাণ দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে যেকোনো বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। মূলত উসকানি প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রক্ষার স্বার্থে বিক্ষোভ প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশ কিছু সড়ক। এ পরিস্থিতিতে পুলিশের কাছে পরিচয় আড়াল রাখতে মুখে মাস্ক পরে বহু শিক্ষার্থী মিছিলে অংশ নেন।

এদিকের সপ্তাহজুড়ে রাজধানী আঙ্কারা, বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জানান, ১৯ মার্চের পর থেকে ‘বেআইনি’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত রস ক র প র এরদ য় ন ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

হুইল চেয়ারে বসে অনুষ্ঠানে মোশাররফ করিম

শনিবার রাত ৮টা। রাজধানীর বিমানবন্দর সংলগ্ন সেন্টার পয়েন্ট স্টার সিনেপ্লেক্স।  একে একে আসছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। উপলক্ষ নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবনের ঈদের সিনেমা ‘চক্কর ৩০২’ এর প্রিমিয়ার শো। কিন্তু এই সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা মোশাররফ করিম যখন প্রবেশ করলেন তখন তাঁকে দেখে অবাক হয়েছিলেন উপস্থিত সবাই। কারণ, অন্যদিনের মত স্বাভাবিক ছিলেন না তিনি। পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে হুইল চেয়ারে করে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন এই অভিনেতা।

প্রথমে মোশাররফ করিমকে দেখে অনেকেই মনে করেছিল এটি হয়তো সিনেমার প্রচারণার একটি অংশ। কিন্তু না। মোশাররফ করিম ও নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন জানালেন, এটি সিনেমার প্রচারণার কোনও অংশ না। বাস্তবে তাঁর পায়ে ফোঁড়াজনিত কারণে অস্ত্রোপচার হয়েছে।

শরাফ আহমেদ জীবন সমকালকে বলেন, ‘মোশাররফ ভাইয়ের পায়ে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। তারপরও যে তিনি আজকের প্রিমিয়ারে আসবেন এটা আমরা কল্পনাও করিনি। তিনি তাঁর ডেডিকেশনের জায়গা থেকে এসেছেন। এজন্যই তিনি সেরা। এজন্যই তিনি মোশাররফ করিম। একজন নির্মাতা হিসেবে বলতে পারি, এদেশে তাঁর মত ডেডিকেটেড অভিনেতা পাওয়া সত্যিই কঠিন।’
‘‘
প্রিমিয়ার শোতে অতিথিদের মধ্যে ছিলেন, অভিনেত্রী আফসানা মিমি, বিজরী বরকতুল্লাহ, মেহজাবিন চৌধুরী, রুকাইয়া জাহান চমক, আইশা খান, চক্কর সিনেমার অভিনয়শিল্পী ইন্তেখাব দিনার, সুমন আনোয়ার, রওনাক হাসান, মৌসুমী নাগ ও শাশ্বত দত্তসহ আরও অনেকে।

প্রিমিয়ার শো শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন মোশাররফ। তিনি বলেন, “এখানে উপস্থিত হয়ে আজ সিনেমাটি যারা দেখলেন তারাই বলতে পারবেন এটি কেমন আছে। তবে আমি এটুকু বলতে পারি সবাই দারুণ অভিনয় করেছেন। কারণ, জীবন সবার থেকে অভিনয়টা আদায় করে নিয়েছেন। এছাড়া এখানে নতুন কয়েকজন শিল্পী কাজ করেছেন। তারা কিন্তু কোনও অংশেই কম করেনি। ওদের নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। আশাকরি সিনেমাটি সবার ভালো লাগবে।”

সিনেমাটি দেখার পর অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী বলেন, “দর্শকের সাড়া পাচ্ছে বলেই কিন্তু বাংলাদেশেও থ্রিলার জনরার সিনেমার এখন বানানো হচ্ছে। ওটিটি থেকে বেরিয়ে এখন বড় পর্দাতেও আমরা সেই ধরনের সিনেমাগুলো দেখতে পাচ্ছি। ‘চক্কর’ দেখে বিষয়টি ভালো লেগেছে। মোশাররফ ভাইসহ সবাই অনেক দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। এখানে সুন্দর বার্তা পেয়েছে। শেষে নির্মাতা একটা চমকও আছে। সব মিলিয়ে দারুণ একটি সিনেমা হয়েছে। এমন একটি সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য ‘চক্কর’ টিমকে ধন্যবাদ।”

‘চক্কর ৩০২’ সিনেমার টিজার এসেছে ২৬ মার্চ। ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের টিজারে টিজার অনুসারে, হত্যা রহস্য ঘিরে আবর্তিত হবে গল্প। যেখানে উঠে আসবে জীবনের নানান অন্ধকার।

পরিচালক জীবন বলেন, “গল্পটা আমাদের নিজেদের গল্প, দেশের গল্প। একটা মানুষের সম্পর্কের গল্প। দর্শক যদি গল্পের সঙ্গে, চরিত্রের সঙ্গে নিজেদের কানেক্ট করতে পারে তাহলে সিনেমাটি পছন্দ করবে। এখানে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না।”

২০২১-২২ অর্থবছরে ‘চক্কর’ সিনেমার জন্য অনুদান পান জীবন। প্রথমে সিনেমাটির নাম ছিল ‘বিচারালয়’। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরিবর্তন করে নাম রাখা হয়েছে ‘চক্কর ৩০২’।

সম্পর্কিত নিবন্ধ