বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান। একক পরিচয়ে সন্‌জীদা খাতুনের বহুমাত্রিক জীবনের পরিচয় দেওয়া যায় না। তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষক ও গবেষক, শিল্পী ও সংগীতজ্ঞ, দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় অধিকারকর্মী। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের শিল্প–সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি তাঁর সহযোদ্ধা, সহশিল্পী, শিক্ষার্থী ও গুণমুগ্ধরা শোক প্রকাশ করেন। তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ফারহীন খান জয়িতা। লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

সন্‌জীদা খাতুন, আমার মিনু নানু। আমার মায়ের বড় চাচি এবং মায়ের গুরু। কোনো এক অজানা কারণে তাঁকে আমি ভয় পেতাম। আর বরাবরই আমি একটু পালিয়ে বেড়ানো মানুষ। বড় মানুষদের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি। কিন্তু আমার সাথে তাঁর এক অদ্ভুত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল হঠাৎ, যখন আমি সিক্স কি সেভেনে পড়ি। মা আমাকে নিয়ে প্রায়ই যাওয়া শুরু করল মিনু নানুর বাড়িতে। ভয় তখন কাটতে শুরু করেছে একটু একটু। যেতাম, টুকটাক গান শিখতাম আর নানান রকম গল্প শুনতাম। প্রথম যে গানটি শিখিয়েছিলেন, সেটি হলো ‘দেশে দেশে ভ্রমি তব দুখ গান গাহিয়ে.

..’

তাঁর (সন্‌জীদা খাতুন) মুখ থেকে শুনলাম ছায়ানট গড়ে ওঠার গল্প। জানতে চাইলাম, ওই আমলে, ১৯৬১–৬২ সালের কথা, আমাদের নিজের দেশ হয়নি। রবীন্দ্রনাথের গান যখন নিষিদ্ধ করা হলো, তখন কী ভেবে ‘রবীন্দ্র জয়ন্তী’ করার সাহস হলো? গান গাইবার স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করার কথা মাথায় এলো কী করে? তার ওপর আবার তাঁর সরকারি চাকরি! এসব বিদ্রোহী কাজকর্মের জন্য তাঁকে ‘শাস্তিমূলক বদলি’ করা হয়েছিল ঢাকার বাইরে কোথাও। কোথায় এখন আর মনে পড়ছে না।

গল্পের মূল আকর্ষণ পয়লা বৈশাখ। ‘কেন? কী ভেবে?’ বললেন, মানুষের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব ছাড়া আর কিছু তখন ছিল না। একটা কিছু করতে হতো, যা সকল মানুষকে একটা সুতোয় বাঁধতে পারে। জাতি–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে! ১৯৬৭ সালে জায়গা খুঁজতে গিয়ে পেলেন রমনার অশ্বত্থগাছের মূল। কিন্তু তাঁরা নাম দিলেন বটমূল। সেটার কী একটা ব্যাখ্যা দিলেন, আজ পরিষ্কার মনে পড়ছে না। সেটা মুখ্য নয়।
মুখ্য হলো—সেই থেকে পয়লা বৈশাখ, একটা উৎসব, আপামর মানুষের হলো।

জয়িতা তাঁর লেখার সঙ্গে এই স্থিরচিত্রটিও পোস্ট করেছেন তাঁর ফেসবুকে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গণহত্যার প্রতিবাদ করে গাজাবাসীর জন্য রাইখানদের প্রার্থনা

গণহত্যার প্রতিবাদ করে জালিম ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে মজলুম গাজাবাসীর মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছে পটুয়াখালীর রাখাইন সম্প্রদায়।

গাজায় গণহত্যা ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের শিকার ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জন্য কুয়াকাটায় মাহা সাংগ্রাই জলকেলি উৎসবে এক মিনিট নীরাবতা পালন করে রাখাইন সম্প্রদায়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুক্রবার রাখাইন জলকেলি উৎসবের শুরুতে গাজায় গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছবি: রাইজিংবিডি 

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে

অবশেষে জিম্বাবুয়ে সিরিজ সম্প্রচারকারী চ্যানেল পেলো বিসিবি

শুক্রবার দুপুরে (১৮ এপ্রিল) কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার-সংলগ্ন রাখাইন মাঠে জলকেলি উৎসবের প্রারম্ভে সবাই দাঁড়িয়ে এই নীরবতা পালন করেন।

রাখাইনদের অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গাজাবাসীর জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয় বলেও জানিয়েছেন সম্প্রদায়টির ধর্মগুরুরা।

গণহত্যা অভিযানে গাজা ও ফিলিস্তিন নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাখাইনদের এসব উদ্যোগ মানবতার জন্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সেখানকার মানুষ।

রাখাইন জলকেলি উৎসব দেখতে আসা কলাপাড়ার আলীপুর এলাকার বাসিন্দা মো. হোসেন মিয়া বলেন, “আজ জলকেলি দেখতে রাখাইন মাঠে এসেছি। এখানে এসে একেবারেই অবাক হয়েছি। তারা অনুষ্ঠানের শুরুতেই গাজাবাসীর জন্য নীরবতা পালন করেছে।”

“নিপীড়িত গাজাবাসীর জন্য তাদের সহমর্মিতা আমাকে আপ্লুত করেছে,” বলেন হোসেন মিয়া।

মহিপুর থেকে আসা মো. আবদুস সালাম বলেন, “এমনিতেই রাখাইনদের সঙ্গে আমাদের একটি সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। আজ তারা গাজাবাসীর জন্য প্রার্থনা করেছে। তাদের প্রতি আমাদের সম্মান আরো বেড়ে গেল।”

মিশ্রীপাড়া সীমা বৌদ্ধবিহারের উপাধ্যক্ষ উত্তম মহাথের বলেন, “আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে গাজাবাসীর জন্য প্রায়ই বিশেষ প্রার্থনা করি। শুধু গাজাবাসীই নয়, পৃথিবীর সকল দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ যুদ্ধ বন্ধ হোক- এটাই আমাদের প্রার্থনা।”

“ আমরা মানুষ হিসেবে সবাইকে সবার প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের অনুরোধ জানাচ্ছি,” বলেন উত্তম মহাথের।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “গাজাবাসীর প্রতি রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এক মিনিট নীরবতার মাধ্যমে মানবতার সঙ্গে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রীতি তারা দেখিয়েছেন, এ জন্য তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

“রাখাইন সম্প্রদায় ভিন্ন ধর্মালম্বী হলেও মানবতার ধর্ম সবার এক। তাই রাখাইন সম্প্রদায় এই নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের সম্প্রীতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল।”

শুক্রবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী রাখাইন জলকেলি উৎসব, যাতে শামিল হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বিদেশিরাও।

উৎসব শুরুর দিন ঐতিহ্যবাহী জলকেলিতে মেতে উঠতে দেখা যায় রাখাইনদের। তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের আনন্দ করতে দেখা যায়। উৎসবে সহায়তা করছে স্থানীয় প্রশাসন।

ঢাকা/ইমরান/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার: নিরাপত্তা উপদেষ্টা
  • ‘পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে তৈরি বস্ত্রের প্রসার করতে হবে’
  • গণহত্যার প্রতিবাদ করে গাজাবাসীর জন্য রাইখানদের প্রার্থনা
  • বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসবের সমাপ্তি
  • কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের তিন দিনের সাংগ্রাইং উৎসব শুরু
  • শাকিবের জন্য এলাহি আয়োজন
  • হবিগঞ্জে বোরো ধান কাটা উৎসব উদযাপন
  • হাওরে ধান কাটার উৎসব
  • সাংগ্রাই জলোৎসবে মৈত্রী বর্ষণে পরিশুদ্ধ হৃদয়
  • মারমাদের মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব যে কারণে হয়, যেভাবে এল