ঈদযাত্রায় সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীর চাপ নেই
Published: 26th, March 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। তবে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে চিরচেনা সেই ভিড় নেই। নৌপথে নির্বিঘ্নে যাত্রীদের চলাচল নিশ্চিত করতে টার্মিনাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর প্রবেশমুখে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৩৫টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে গেছে। অন্যদিকে টার্মিনালে ভিড়েছে ৪৩টি লঞ্চ।
দুপুর সাড়ে ১২টায় টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর সামনে কর্মচারীরা যাত্রীদের ডাকছেন। তবে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। লঞ্চের ডেকে ফাঁকা জায়গা দেখা যায়। সেখানে কিছু যাত্রী শুয়ে আছেন। এমভি প্রিন্স আওলাদ–৫ লঞ্চের সামনে ‘অগ্রিম টিকিট আছে’ উল্লেখ করে একটি কার্ড কাউন্টার দেখা গেল। কিন্তু টিকিট নিতে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়নি।
বরগুনাগামী এমভি সুন্দরবন–৯ লঞ্চে পুরান ঢাকার মীর হাজিরবাগ এলাকার ভাড়াটে নুর ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। লঞ্চের ডেকে লোহার খুঁটিতে ঝুলিয়ে জাল বুনছিলেন তিনি। ঈদের আগে সদরঘাটের ভিড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিন–চার বছর আগে এই সময় লঞ্চের ডেকে এমন ঠেলাঠেলি হতো যে বসার জায়গা থাকত না। আজ দেখছি ভিন্ন চিত্র। ডেক অনেকটাই ফাঁকা। অনেক যাত্রী শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আমিও সুযোগ বুঝে জাল বুনছি। ঈদের ছুটিতে বাড়ির পুকুরে এই জাল দিয়ে মাছ ধরব।’
খেপুপাড়াগামী এমভি জামাল–৮ লঞ্চের যাত্রী সালেহা বেগম বলেন, ‘আমগো লঞ্চ ছাড়ব সন্ধ্যা ছয়টায়। জ্যামে পড়তে অইব দেইখ্যা আগেভাগে লঞ্চের ডেকে আইয়া বইস্যা রইছি। লঞ্চের ডেকে অনেক জায়গা ফাঁকা আছে। এবার আরামে বাড়ি যাইতে পারমু।’
বরগুনাগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের ডেক এখনো ফাঁকা। সুযোগ বুঝে ডেকের লোহার খুটিতে জাল বুনছেন এক যাত্রী। বুধবার দুপুরে সদরঘাট টার্মিনালে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদরঘ ট ট র ম ন ল
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন পথনকশায় ১৪ মাসে ৬১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে
গ্যাসের সিস্টেম লস (কারিগরি ত্রুটি) কমাতে পথনকশা তৈরি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ৭টি গ্যাস কোম্পানিকে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সিস্টেম লস কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে এ বিভাগ। বিভাগটি বলেছে, কোম্পানিগুলোকে এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেকের নিচে নামিয়ে আনতে হবে গ্যাসের সিস্টেম লস। কাজটি না পারলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভোগ করতে হবে শাস্তি।
সচিবালয়ে আজ বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ পথনকশা চূড়ান্ত করা হয়। জ্বালানিসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে পরিমাণ সিস্টেম লস হয়, তার আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পথনকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিস্টেম লস অর্ধেকে নেমে এলে অন্তত ৫০ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। বর্তমান বাজার মূল্যে এর পরিমাণ ৬১ হাজার কোটি টাকা।
দেশীয় কোম্পানি, আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও চট্টগ্রামের মহেশখালীতে থাকা দুই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল থেকে মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন পিএলসি লিমিটেডে (জিটিসিএল)।
জিটিসিএল পরে মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে ছয় কোম্পানিকে। এগুলো হচ্ছে তিতাস, বাখরাবাদ, কর্ণফুলী, জালালাবাদ, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি। এসব কোম্পানিই পরে গ্যাস সরবরাহ করে গ্রাহকদের। সিস্টেম লসের মধ্যে তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাসেরই বেশি, যা সুন্দরবন গ্যাস ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসের নেই বললেই চলে।
এখন থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে কোন কোম্পানি কোন মাসে সিস্টেম লস কতটা নামিয়ে আনবে, তা বেঁধে দেওয়া হয়েছে পথনকশায়। পথনকশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, তিন মাস পর তা আবার খতিয়ে দেখবেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
তিতাস গ্যাসের গত জানুয়ারি মাসে সিস্টেম লস ছিল ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটিকে এ হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে এবং ডিসেম্বরে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে বাখরাবাদের জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ সিস্টেম লস থাকলেও আগামী বছরের জানুয়ারি ও ডিসেম্বরেও কোম্পানিটিকে এ হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
পথনকশায় সিস্টেম লস কমিয়ে আনার ব্যাপারে তিতাসের ৩৯১ ও বাখরাবাদের ১৩৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী গ্যাসে ২০০, জালালাবাদে ৬৪ এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসে ৩৬ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সিস্টেম লস কমাতে সাতটি ভিজিল্যান্স দল গঠন করা হয়েছে। অবৈধ বিতরণ পাইপলাইন অপসারণ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং বিচ্ছিন্ন করার পর এগুলো আবার পুনঃস্থাপিত হয়েছে কি না, সেগুলো সরেজমিন দেখবে দলগুলো। পুনঃস্থাপনের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোনো ঠিকাদার জড়িত কি না, তা–ও চিহ্নিত করা হবে।
সূত্রগুলো জানায়, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ২ মাসে ৭০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর অবৈধ আবাসিক বার্নার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার। এ সময় ৯৬টি মোবাইল কোর্টসহ ও ১ হাজার ১৮৮টি মোবাইল কোর্ট ছাড়া অভিযান করা হয়েছে।