রোজার ঈদের আর তিন-চার দিন বাকি। এ উপলক্ষে মানুষের কেনাকাটা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই সময়ে এসে পোশাকের পাশাপাশি জুতার বেচাকেনাও জমে উঠেছে। বিশেষ করে ব্র্যান্ডের জুতার বেচাকেনা ভালো হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।

কোম্পানিগুলো জানায়, জুতা বেচাকেনা এখন পর্যন্ত গত বছরের কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। ঈদের সময় ক্রেতাদের একটি বড় অংশ সাধারণত শেষ দিকে জুতা কেনেন। তাই ব্র্যান্ডগুলো আশা করছে যে শেষ পর্যন্ত তাদের বেচাকেনায় গত বছরের চেয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে।

গত দুদিনে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের জুতার দোকান ঘুরে দেখেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে গিয়ে শতাধিক নন-ব্র্যান্ডের জুতার দোকান রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকানেই স্বল্পসংখ্যক ক্রেতা জুতা দেখছেন। এসব ছোট দোকানের বিক্রেতারা জানান, ব্র্যান্ডের নয়, এমন জুতার বিক্রি গত বছর ঈদের সময়ের তুলনায় খুব বেশি বাড়েনি।

অন্যদিকে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ব্র্যান্ডের জুতার দোকানগুলোতে ভিড় অনেক বেশি। ফলে তাদের বেচাকেনাও প্রত্যাশিত মাত্রার কাছাকাছি রয়েছে। বসুন্ধরা সিটিতে জুতার ব্র্যান্ড অ্যাপেক্সের স্টোর ম্যানেজার রাশেদুর রহমান বলেন, শবে বরাতের পর থেকেই জুতার বেচাকেনা বৃদ্ধি পায়। চাঁদরাত পর্যন্ত এটি চলবে।

কোম্পানিগুলো কী বলছে

দেশে জুতার বাজার কত বড়, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। এই বাজারের ৩০ শতাংশের বেশি ব্র্যান্ডের জুতার দখলে। বাকিটা নন-ব্র্যান্ড, আঞ্চলিক ব্র্যান্ড ও আমদানি করা জুতার দখলে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্র্যান্ডের জুতা বিক্রি প্রতিবছর ১২-১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। আর সারা বছরের বিক্রির ২৫-৩০ শতাংশ হয়ে থাকে ঈদুল ফিতরের সময়ে। এ কারণে ঈদ উপলক্ষে নতুন ধরনের ও নকশার জুতা আনেন অনেক বিক্রেতা। এই যেমন চলতি বছরে ঈদ সামনে রেখে আড়াই হাজার নকশার জুতা নিয়ে এসেছে অ্যাপেক্স। এ ছাড়া ব্র্যান্ডটির প্রায় ৯ হাজার নকশার জুতা সব সময় চলমান থাকে। তাদের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা এখন ৫০৬।

পাশাপাশি এবার ৫০ হাজার টাকা দামের ১২ জোড়া জুতা এনেছে অ্যাপেক্স। এগুলো ভ্যানচুরিনী ব্র্যান্ডের। ইতিমধ্যে কয়েক জোড়া বিক্রি হয়েছে। এটি ইতালি থেকে আনা এবং সম্পূর্ণ হাতে তৈরি বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা।

অ্যাপেক্সের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ফিরোজ মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমরা পণ্যের দাম ধরে রাখতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও পণ্যের মান উন্নত করায় জোর দিয়েছি। সে জন্য বর্তমান কঠিন সময়েও বেচাবিক্রি খারাপ নয়। আশা করছি বিক্রিতে শেষ পর্যন্ত ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।’

বসুন্ধরা সিটিতে বাটার বিক্রয়েকন্দ্রের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, রোজার এক সপ্তাহ আগে থেকে বিক্রি জমতে শুরু করে। প্রথম সপ্তাহে তা পড়ে যায়। এরপর আবার শুরু হয়। এবারের বিক্রি গতবারের চেয়ে ভালো। রাত ১২টা পর্যন্ত শোরুম খোলা। নতুন ১ হাজার ডিজাইন আনা হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার জুতা বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা তাঁর।

দেশের বাজারে ইতালিয়ান ব্র্যান্ড লোটো অনেক দিন ধরেই ব্যবসা করছে। তারা লি কুপারের জুতাও বিক্রি করে। বর্তমানে তাদের ২২২টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। টঙ্গীর মাজুখানে লোটোর নিজস্ব কারখানা রয়েছে। সেখানে তাদের মোট জুতার ৮০ শতাংশই উৎপাদন হয়। বাকিটা আমদানি করা হয়।

এবারের ঈদে পাঁচ শতাধিক নতুন নকশার জুতা এনেছে লোটো ও লি কুপার। লোটোর হেড অব মার্কেটিং আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত বেচাবিক্রি ভালো। আশা করছি শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হবে। কারণ, রোজার ঈদে শেষ দিকে জুতা বিক্রি হয়।

জুতার পুরোনো ব্র্যান্ডের পাশাপাশি নতুন ব্র্যান্ডও বাজারে এসেছে। রিফ ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস নামে দেশের বাজারে জুতার নতুন ব্র্যান্ড এনেছে টি কে গ্রুপ। বর্তমানে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা পাঁচ। জানতে চাইলে রিফ লেদারের পরিচালক মো.

মখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছর দুই আগে আমরা রিফের কারখানায় বিক্রয়কেন্দ্র করেছিলাম। সেই বিক্রয়কেন্দ্রে জুতা বিক্রি গতবারের চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ বেশি। অন্য বিক্রয়কেন্দ্রেও ভালো সাড়া পাচ্ছি। নতুন ব্র্যান্ড হিসেবে আমরা বেশ আশাবাদী।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ক রয়ক ন দ র নকশ র জ ত প রথম আল শ ষ পর য প রব দ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

কাজ শুরু হলেও ক্ষতিপূরণ পাননি ভূমি মালিকরা

এগারো বছর আগে বাবাকে হারান মাগুরা সদর উপজেলার টিলা গ্রামের বাসিন্দা আলিমুন হোসেন। পরিবারে বলতে রয়েছেন মা ও ছোট ভাই। তাদের সম্বল বলতে রয়েছে বসতভিটা আর ভবনহাটি বাজারসংলগ্ন সাড়ে ৮ শতাংশ জমি। নির্মিতব্য সেতুর জন্য সেই জমিটুকুও খুইয়েছেন তিনি। পাননি কোনো ক্ষতিপূরণ। সর্বস্বান্ত হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আলিমুন। গত বছরের শুরুর দিকে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বেনুয়ারচর গ্রামের শরবেত আলীর ৩৬ শতাংশ জমিতে সেতুর কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তিনি কোনো টাকা পাননি। এলজিইডির প্রকল্পের আওতায় ১৯টি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হলেও কেবল ক্ষতিপূরণের আশ্বাস পেয়েছেন জমির মালিকরা। 

এলজিইডির গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দেশের আট বিভাগে ৮২টি সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তার মধ্যে মাগুরা সদর উপজেলার ভবনহাটি বাজারসংলগ্ন সেতুটিও এর আওতাধীন। সেতুর কাজ শুরুর সময় আলিমুন বাধা দিলে স্থানীয় ভবনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হোসেন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে তিনি আর বাধা দেননি। 

আলিমুন হোসেন বলেন, এখানকার জমির বর্তমান বাজারমূল্য শতাংশপ্রতি ৬০ হাজার টাকা। আমার জমিটির বাজারমূল্য ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে ভূমি অধিগ্রহণ না করেই গত নভেম্বরে আমার জমির ওপর সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে। এলজিইডি বা জমি সম্পর্কিত কেউ আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। অতি দ্রুত তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের দাবি জানান। 
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ৪৩টি সেতুর দরপত্র মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাই শেষে ২৪টি সেতু নির্মাণে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। ১৯টি সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। অবশিষ্ট ১৬টি সেতুর দরপত্র প্রক্রিয়াধীন। সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধাপে ধাপে সব সেতু শেষ করতে পারলে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগে উন্নয়ন ঘটবে এবং প্রান্তিক জনপদের মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। পাশাপাশি এটি দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যকে ত্বরান্বিত করবে। 

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের আট বিভাগে ৩৫টি জেলার ৫৮টি উপজেলা নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) নেওয়া হয়। ২০২৭ সালের ৩০ জুন নাগাদ প্রকল্পের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ২১০ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। 
মূলত গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে  কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও প্রকল্প এলাকার অর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, পরিবহন সময়, ব্যয় কমানোসহ কৃষি-অকৃষি পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং দীর্ঘ-স্বল্পমেয়াদি  কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে পল্লি জনপদের মানুষের যোগাযোগ সেবার মান বাড়াতেই  এই প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়। 
জমি অধিগ্রহণের আগেই সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক আবু জাকির মো. সেকেন্দার সমকালকে বলেন, সেতুর নির্মাণ ও জমি অধিগ্রহণের কাজ দুটিই একসঙ্গে চলছে। আশা করছি, শিগগির জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়ে যাবেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ